জমির উদ্দিনের একমাত্র সন্তান লাবিদ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তিনি তার পীরের নামে একটি ছাগল জবাই করেন এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য ঐ পীরের নিকট প্রার্থনা করেন । অন্যদিকে জমির উদ্দিনের ব্যবসায়ী বন্ধু আরিফের নিকট থেকে তার এক প্রতিবেশী সাঈদ পাঁচ হাজার টাকা দুই মাস পর ফেরত দেওয়ার শর্তে ঋণ নেয় । সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দুই মাস পর ফেরত না দিলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিষয়টি সমাধান করে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, “আমাদের সবারই কথা ও কাজে মিল রাখা উচিত।”
জনাব ইমরান একজন সরকারি কর্মকর্তা। অফিসে যাওয়ার পথে একজন অসহায় লোক তার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি, কোনোরূপ বিরক্তি প্রকাশ না করে সাধ্যানুযায়ী তাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। ইমরানের প্রতিবেশী জনাব ইরফান খুবই ধার্মিক লোক। তিনি তার সন্তানদের একদিন বোঝাতে গিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কতই না সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করেছেন। মনে রেখ, মানুষের সম্মান ও মর্যাদা সৎকর্মের ওপর নির্ভরশীল। অসৎকর্ম করলে মানুষ পশুর থেকেও নিম্ন স্তরে নেমে যায় ।
মনির ও নাসির একদিন পড়ন্ত বিকেলে ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। মনির তখন সবুজ ধানক্ষেত আর তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী দেখিয়ে নাসিরকে বলে, দেখ প্রকৃতি আমাদের কত কিছু দান করেছে। নাসির তখন বলে, প্রকৃতি বলতে কিছু নেই। জগৎ সংসারের সকল কিছুই মহান এক সত্তার সৃষ্টি। তিনিই সবকিছুর পরিচালক ও একচ্ছত্র মালিক। মনিরের আত্মীয় সাইফুল মনিরকে একদিন বলে, হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর পর গোলাম আহমদ নামে আরও একজন নবি এসেছিলেন। তার ওপরও বিশ্বাস করা জরুরি। একথা শুনে মনিরের বাবা বলেন, প্রকৃত ইমানদার হতে হলে ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের ওপর অবশ্যই ইমান রাখতে হবে।
শান্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রহিম উদ্দিন । একদিন জুমার নামায আদায় করার জন্য প্রথম সারিতে দাঁড়ান। দিনমজুর মফিজ মিয়া তখন নামায আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান সাহেবের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে চেয়ারম্যান সাহেব ধমক দিয়ে মফিজ মিয়াকে বলেন, তুমি পিছনের সারিতে গিয়ে দাঁড়াও। চেয়ারম্যান সাহেবের বড় ভাই ছমির উদ্দিন আরবি বছরের বিশেষ একটি মাসে বেশি বেশি দান-সাদকা করেন এবং সারা মাস ইবাদত পালন করেন। তিনি মনে করেন, ঐ মাসের বিশেষ ইবাদত মানুষকে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে।
জসিম উদ্দিন একজন প্রবাসী। বন্যায় তার এক প্রতিবেশীর ঘর নষ্ট হলে তিনি নিজ খরচে প্রতিবেশীর ঘর নির্মাণ করে দেন। অন্যদিকে জসিম উদ্দিনের বন্ধু সাদিকুল ইসলাম বছর শেষে তার সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে গরিব জহিরকে অটোরিকশা কিনে দিলে তার প্রতিবেশী সুমন সাদিকুল ইসলামকে বলল, অন্যের জন্য তোমার কষ্টার্জিত টাকা খরচ করা সম্পদশালীদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত ।
জনাব মুহাইমিন একজন শিক্ষক। তিনি মহানবি (স.)-এর একটি হাদিস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর তার গ্রামের রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ করেন। ফলে গ্রামের সাধারণ জনগণ উপকৃত হন। এতে তিনি আনন্দ অনুভব করেন। অন্যদিকে জনাব মুহাইমিনের বন্ধু মিনহাজের দোকানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হয় । তার দোকানে কোনো প্রকার ভেজালের সুযোগ নেই, তাই অনেক মানুষ তার দোকান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পছন্দ করেন । মিনহাজের স্ত্রী নুজহা বলেন, সৎ ব্যবসায়িগণ কিয়ামতের দিন শহিদগণের সঙ্গী হবেন।
সাদমান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি যথাসময়ে অফিসে আসা-যাওয়া করেন এবং অধীনস্থদের সঠিকভাবে তদারকি করেন। তার 'ওপর অর্পিত সকল কাজ সঠিকভাবেই করেন। তার স্ত্রী ইসরাত খুব হিসাব করে চলেন। ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর সময় শুধুই ভাড়া দেন এবং টিফিনের খাবার বাসা থেকে তৈরি করে দেন। তিনি সংসারে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করেন ।
ফুয়াদ একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। তিনি তার ফার্মেসিতে ন্যায্যমূল্যের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করেন এবং অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও বিক্রি করেন। অন্যদিকে ফুয়াদের এক প্রতিবেশী তামজিদের ব্যবসায় উন্নতি দেখে সুমন তামজিদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে তার সম্পর্কে নিন্দা করে বেড়ায়। তামজিদের মা সুমনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এ ধরনের মনোভাব মারাত্মক সামাজিক অপরাধ”।
মেহজাবিন আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ সবকিছু দেখেন। মেহজাবিনের ভাই সিয়াম একদিন দেখতে পেল, মানুষের ভিড়ের কারণে একজন বয়স্ক মহিলা বাসে উঠতে পারছেন না। তখন সিয়াম ঐ মহিলাকে সম্মানের সাথে বাসে উঠার ব্যবস্থা করে দিল। সিয়ামের বাবা খুশি হয়ে বললেন, আমাদের সবারই সিনিয়র নাগরিকদের সম্মান দেওয়া উচিত ।
দৃশ্যপট-১ : ‘ক' গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। কারণে-অকারণে ঝগড়া- বিবাদে লিপ্ত হয়। নারীদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়। গ্রামবাসী বিনোদনের জন্য রাতের বেলা মদ্যপান ও জুয়ার আসরে মিলিত হয়।
দৃশ্যপট-২ : মুনাজ একজন দরিদ্র যুবক। তার আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়ে তার চাচা নিজের মেয়েকে মুনাজের সাথে বিবাহ দেন। মুনাজ ও তার স্ত্রী মিলে সংসারের সকল কাজ সম্পন্ন করেন। মুনাজ কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন ।
জনাব হামিদ সাহেব সমাজের একজন দানশীল ব্যক্তি। তিনি নিজ অর্থ ব্যয়ে গ্রামের লোকদের জন্য একটি বড় পুকুর খনন করে দেন। মুসল্লিদের সুবিধার জন্য গ্রামের মসজিদটি সম্প্রসারণ করে দেন। হামিদ সাহেবের প্রতিবেশী জাফর আহমদ পৌরসভার নির্বাচিত কমিশনার। জনাব জাফরের ছেলে মিজান মাদক সেবন করে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। জাফর সাহেব বিষয়টি জানতে পেরে নিজেই তার ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ছেলেকে নিয়ে যাবার সময় পুলিশ অফিসার রোকন উদ্দিন সাহেব বলেন, জাফর সাহেবের মতো সচেতন অভিভাবক তৈরি হলে আমরা সহজেই সমাজকে মাদকমুক্ত করতে পারব।