সাজিদ সাহেব একজন ধনী ব্যক্তি । তিনি সালাত আদায়ের ব্যাপারে খুবই উদাসীন । শুক্রবার দিন সকাল বেলায় বারান্দায় বসে তিনি চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন এতিম ভিক্ষুক এসে তার নিকট কিছু সাহায্য চাইলে, তিনি রেগে গিয়ে তাকে গেটের বাইরে বের করে দেন। অন্যদিকে রমিজ সাহেবের ছেলে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় তার বন্ধুরা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এতে তিনি দুঃখ পান এবং হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে তার প্রতিবেশী আমান সাহেব তাকে ধৈর্যধারণ করার জন্য বলেন । তিনি আরও বলেন, মানবজীবনে সুখ-দুঃখ থাকবেই।
মানিক ও আফজল ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। একদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে মানিক আফজলকে বলে, সকল কাজকর্ম ও সৃষ্টিতে এক আল্লাহকে বিশ্বাস করার মাধ্যমে মানুষের মুক্তি ও সফলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়। অন্যদিকে আফজল মানিককে উদ্দেশ করে বলে, দেখ আমি এগুলো বিশ্বাস না করেও একজন ভালো মানুষ ও ভালো ছাত্র হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। তাই এ বিশ্বাসগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
লতিফ সাহেব একজন ধর্মভীরু ও সম্পদশালী ব্যক্তি। তিনি রমযান মাসে দরিদ্র লোকদের ডেকে যাকাত বাবদ ১ লক্ষ টাকা দান করেন। টাকা পেয়ে গ্রামের দরিদ্র লোকজন খুশি হয়ে তার জন্য দোয়া করেন। অন্যদিকে আবির তার বন্ধু কামালকে নিয়ে' মসজিদে প্রবেশ করে। তারা ইমাম সাহেবের বক্তব্যে জানতে পারে যে, দুনিয়াতে এমন একটি ইবাদত রয়েছে কিয়ামতের দিন প্রথম এটির হিসাব নেওয়া হবে। আর এ বিষয়ের হিসাব যার সহজ হবে, জান্নাতে গমন তার তত সহজ হবে।
মতিন সাহেব বিদেশ থেকে ১০টি ভিসা নিয়ে এসে গ্রামে প্রচার করেন, তার কাছে ২০টি ডিসা আছে। এ খবর পেয়ে আজিজসহ অনেক বেকার ছেলে মতিন সাহেবকে বললেন, তারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক। তখন মতিন সাহেব আজিজকে বললেন, তুমি ২০ জন লোক যোগাড় করে আমার কাছে টাকা জমা দাও। পর্যায়ক্রমে লোক পাঠানোর কথা বলে ১০ জনকে বিমান বন্দরে নিয়ে তাদের সাথে মুতিন সাহেবও বিদেশে চলে যান। বিষয়টি গ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, মানুষের মধ্যে যদি পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় কাজ করে, তাহলে এমন ঘটনার অবতারণা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আবদুল আজিজ ও আবদুর রহমান ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। বর্তমান সময়ে সৃষ্টি হওয়া কিছু কিছু নতুন বিষয়ের শরিয়তের সমাধান সম্পর্কে তাদের মাঝে কথা হচ্ছিল। আবদুল আজিজ বলল, যে সব বিষয়ের সমাধান সরাসরি কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যাবে না সে বিষয়ে আলেমগণ একত্রিত হয়ে পরামর্শ করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমাধান বের করবেন। তার বক্তব্য শুনে আবদুর রহমান বলে, যদি সেটিও সম্ভব না হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে চিন্তা করে কুরআন ও হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা ইসলাম একটি বিজ্ঞানসম্মত ও গতিশীল জীবন ব্যবস্থা । ইসলাম বর্তমান বিশ্বায়নের নতুন নতুন বিষয়ের বিধান প্রদান করে।
জনাব “ক” টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানের ইবাদত সম্পর্কিত আলোচনায় বললেন, ইসলামে এমন একটি ইবাদত রয়েছে যার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে দান করবেন এবং তার অতীত জীবনের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। একজন শ্রোতার এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইসলামে এমন আরও একটি ইবাদত রয়েছে যা নিসাব পরিমাণ মালের মালিকগণের ওপর ফরজ করা হয়েছে। এ ইবাদতটি যথাযথভাবে আদায় করা হলে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় গরিব মানুষদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
সুবর্ণপুর এলাকায় জনাব ইমতিয়াজ সাহেব নিজ উদ্যোগে বেশকিছু ভালো কাজ করতে চাইলে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিরোধিতা করে এবং তাকে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। তখন ইমতিয়াজ সাহেব অন্য এলাকায় গিয়ে বসবাস করেন এবং এক সময় ঐ এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে এলাকার জনগণের কৃত অপরাধ ক্ষমা করে নিজ এলাকায় ফিরে আসতে চাইলে এলাকার লোকজন তাকে গ্রহণ করে। অন্যদিকে এলাকার জনগণের মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য আরিফ নামে এক যুবক একটি সংঘ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সংঘটির উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে ইমাম সাহেব বলেন, এরূপ কর্মকাণ্ডের মধ্যে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন রয়েছে।
আরমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাড়িতে যাওয়ার জন্য ইদুল ফিতরের আগের দিন সুরমা এক্সপ্রেস ট্রেনে সিট নিয়ে বসেন। এমন সময় প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে একজন মহিলা ট্রেনে উঠার সাথে সাথে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়। ভিড়ের মধ্যে মহিলাটি আরমানের সিটের কাছে এসে দাঁড়ালে, মায়ের বয়সী দেখে আরমান সিট ছেড়ে মহিলাকে তার সিটে বসতে দেন। অন্যদিকে মনির সাহেবের প্রতিবেশী আবদুল করিম একজন দরিদ্র লোক। ছেলের চিকিৎসার জন্য আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখন সে ঋণগ্রস্ত। বিষয়টি এলাকার মুরব্বি মনির সাহেবকে বললে তিনি তার সঞ্চিত অর্থ থেকে করিমকে সাহায্য দিয়ে তাকে ঋণ থেকে মুক্ত করে দিলেন। এছাড়াও তিনি তার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করলেন । কারণ মনির সাহেব জানতেন, এ ধরনের কাজ রাসুল (স.)-এর আদর্শ।
জনাব আবদুল হালিম এলাকায় একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। এলাকাবাসী তাদের পানির সমস্যার কথা তাকে জানালে তিনি সমস্যা দূরীকরণে দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন । এছাড়া এলাকার মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। অন্যদিকে শিল্পপতি আশরাফ সাহেব নিজের আত্মীয়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার মোড়ে দেখেন, একজন বৃদ্ধলোক তার পরিবার নিয়ে শীতে কাঁপছে। তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে বৃদ্ধের পরিবারের সকলের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে তাদের মাঝে বিতরণ করেন। তার আচরণে বৃদ্ধ লোকটি আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, আপনার কর্ম সকল মানুষের জন্য অনুকরণীয় ।
আমিন মিয়া রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী রয়েছে। গাভীটি কয়েকদিন যাবত কিছু খায় না এবং এতে গাভীর দুধও কমে গেছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে তার এলাকায় গরুর ফার্মের মালিকের সাথে পরামর্শ করলে, তাকে পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার কথা বলেন। গাভীটি দেখে ডাক্তার বলেন, এটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আমিন মিয়া গাভীটিকে দূরের একটি হাটে নিয়ে অসুখের কথা না বলে বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান আসগর সাহেবের মেয়ে শিউলী দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সে তার বাবার অবস্থানের কারণে নিজেকে বড় মনে করে এবং সহপাঠীদের সাথে সহজে মিশতে চায় না। কিন্তু শিউলীর মা অত্যন্ত ধার্মিক। এজন্য শিউলীর মা তাকে বলে, তোমার কাজটি নিন্দনীয় এবং তা সকল নেক আমলকে ধ্বংস করে দেবে।
কক্সবাজারের উখিয়ার একটি গ্রামে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের লোক বসবাস করে। তাদের প্রত্যেক ধর্মের লোকজন নিজ নিজ উপাসনালয়ে উপাসনা করে। সকলে মিলেমিশে তাদের নিজ নিজ সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। সকলেই সকলের আনুষ্ঠানিক ও ধর্মীয় কাজে সহযোগিতা করে থাকে। তাদের এলাকাটি এখন শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় সীমান্তে হামিদ ও রতন দুই বন্ধুর বাড়ি। ঐ সীমান্তে অনেক সময় চোরাচালান কারবার সংঘটিত হয়। হামিদ ও রতন এলাকাবাসীকে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা বলে, “আমাদের স্বাধীন দেশের সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষায় নিজ প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করব না।”