আনান মিয়া একজন চাকরিজীবী। মসজিদে আযান হলে তিনি জামাতে সালাত আদায় করতে রওয়ানা হলে তার সহকর্মী নজির সাহেব বললেন, আপনি জরুরি কাজ ফেলে কোথায় যান? উত্তরে আনান সাহেব বললেন, অনন্তকালীন জীবনে আমাদের একটি জায়গায় সমবেত করে সকল কাজের হিসাব নেওয়া হবে । অপরদিকে সাদেক সাহেব তার বন্ধু রানা সাহেবের সাথে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় বেড়াতে গেলেন। সেখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে সাদেক সাহেব মুগ্ধ হয়ে বন্ধু রানাকে বললেন, “নিশ্চয়ই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তসহ প্রকৃতির সবকিছু একক স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।”
জনাৰ 'X' একদিন বন্ধুবান্ধবদের সাথে বসে টিভিতে বিশাল হাতির পাল দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বললেন, নিশ্চয়ই এদের লালন-পালন একক স্রষ্টার পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য ফেরেশতাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে জনাব 'Y' তার ছোট ভাইয়ের উদ্দেশে বললেন, তুমি যদি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল কর, তাহলে তোমাকে একটি দামি ঘড়ি কিনে দিব। সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে বড় ভাইয়ের কাছে ঘড়ি দাবি করলে তিনি বললেন, এমন কোনো কথাতো তোমার সাথে ছিল না।
দৃশ্যপট - ১ : মতি মিয়ার বাড়িতে চাচাতো ভাই জুলু মাতবর বেড়াতে এলেন।- জুলু মাতবর নিয়মিত জামাআতে সালাত আদায় করেন। মসজিদে আযান হলে জুলু মাতবর মতি মিয়াকে বললেন, চলুন ভাই, মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে আসি। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ভাইকে দেখানোর জন্য মতি মিয়া তার সাথে মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করল। অপর দিকে আরেকদিন মতি মিয়ার কাছে তার প্রতিবেশী এক টুকরা রশি চাইলে সে বলল, থাকলেই কি সবকিছু দিতে হবে?
দৃশ্যপট - ২ : সাদিয়া একটি গ্রন্থ থেকে কিছু আবৃত্তি করছেন। এমন সময় তার বান্ধবী সামিয়া এসে বলল, তুমি কী আবৃত্তি করছ? আমি তো তোমার সাথে গল্প করতে এসেছি। তখন সাদিয়া বলল, “আমি এমন এক গ্রন্থ থেকে আবৃত্তি করছি যার দশটি অক্ষর উচ্চারণ করলে একশত নেকি পাওয়া যাবে। সুতরাং তোমার সাথে গল্প করে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না।”
আজমল সাহেব মুদি ব্যবসায় করেন। একদিন এক ক্রেতা তার কাছ থেকে ১০ কেজি সরু চাল ক্রয় করে বাসায় নিয়ে তার ইলেকট্রিক নিক্তিতে মেপে দেখলেন যে, তাতে আধা কেজি চাল কম আছে। তিনি আরও লক্ষ করলেন যে তাকে যে চাল দেখানো হয়েছিল তার সাথে মোটা চাল মেশানো আছে। অপরদিকে আ. হান্নান সাহেব একজন সমাজ প্রধান। তার প্রতিবেশী রবিউল একজন খেটে খাওয়া মানুষ। সে দৈনিক রোজগার থেকে আঃ হান্নানের কাছে কিছু টাকা জমা রাখে। মেয়ের বিয়ের সময় রবিউল আঃ হান্নান সাহেবের কাছে তার জমানো টাকা ফেরত চাইলে তিনি যথাযথভাবে তার সমুদয় টাকা বুঝিয়ে দেন।
নান্নু মিয়া একজন চাকরিজীবী। তিনি ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়িতে তার ছোট ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তাকে ঢাকায় এনে নিজ অর্থ ব্যয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। দরিদ্র প্রতিবেশী রবিনের মেয়ের বিয়েতেও তিনি প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অপরদিকে জসিম একজন শ্রমজীবী। তিনি বয়োবৃদ্ধ হলেও কষ্ট করে সারাবেলা রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তাতেই সংসার চালান । এমনকি এক চোরাকারবারি তাকে প্রচুর টাকার বিনিময়ে অবৈধ মালামাল বহনের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে।
আবদুল্লাপুর গ্রামের শিহাবউদ্দিন প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক। বছর শেষে সম্পদের হিসাব করে নির্ধারিত হারে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করলেন। তিনি মনে করেন, এ কাজটি হলো ‘ইসলামের সেতুবন্ধন'। অন্যদিকে জনি সাহেব জোহরের নামায আদায়ের পর মসজিদে বসে ইমাম সাহেবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা শুনছিলেন । তিনি বললেন, মানুষ লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ-ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মন্দ কাজে প্রভাবিত হয়। এমন একটি ইবাদত আছে যার মাধ্যমে এ মন্দ কাজগুলো থেকে দূরে থাকা যায় । আমাদের নিয়মিত সে ইবাদত পালন করা উচিত ।
জামি সাহেব একজন অফিস প্রধান। ছোটবেলা থেকেই তিনি নীতি-নৈতিকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। গ্রাম থেকে আসা বশির মিয়া ঐ অফিসে তার ছেলেকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য জামি সাহেবকে একটি উপহার প্রদানের প্রস্তাব করেন। জামি সাহেব তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি এক অদৃশ্য সত্তায় ভয় করি। আর যোগ্যতা থাকলে আপনার ছেলের চাকরি এমনিতেই হয়ে যাবে। অন্যদিকে দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষে সামি নামের এক ছাত্রের ব্যাগ থেকে কিছু টাকা হারানো যায়। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার পর ঘটনাটি উপলব্ধি করে অন্যান্য ছাত্রদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন 'ক' নামক একজন ছাত্র শ্রেণিকক্ষে যা ঘটেছে তা বিকৃত না করে হুবহু শিক্ষককে বললেন।
আদনান সাহেব দীর্ঘ দশ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে এসে তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের ন্যায় চলাফেরা শুরু করেন। লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর এভাবে কাটিয়েছি। বাকি জীবনও এভাবেই কাটাতে চাই ।
অন্যদিকে আঃ রহমানের প্রতিবেশী একবৃদ্ধ প্রায়ই তার চলাফেরার পথে ময়লা- আবর্জনা ফেলে রাখে। এতে আঃ রহমানের চলাফেরায় কষ্ট হয়। একদা তিনি পথে ময়লা-আবর্জনা দেখতে না পেয়ে কাজ শেষে বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, বৃদ্ধ চরম অসুস্থ। তিনি সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন।
জনাব রফিক সরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি প্রতিদিন অফিসের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকের কাজ যেন যথাসময়ে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে চরাইল গ্রামে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের লোক বসবাস করেন। তারা নববর্ষে একটি পিকনিকের আয়োজন করে। সেখানে সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্য আলাদা আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এ বিষয়ে সবাই আন্তরিক ছিল বলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি ।
মুরাদ সাহেব একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিদেশ গমন করেন। সেখানে তিনি বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যথা পরিস্রবণ, দ্রবণ, ভস্মীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে নিজ দেশে সফলতার স্বাক্ষর বহন করেন। অন্যদিকে আলমপুর গ্রামে জনাব আমির আলী ফিকাহশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করেন। তার ছাত্ররা তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, তার মতো জ্ঞানী, খোদাভীরু ও ইসলামের সমস্যা সমাধানের চাহিদা পূরণে পারদর্শী কাউকে দেখিনি। এই শিক্ষকের জীবনে একজন আদর্শ মুসলিম মনীষীর দৃষ্টান্ত রয়েছে।