মিতু বাবা-মাকে হারিয়ে ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সে কথা বলতে না পারলেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে। ফুফার অফিসে যাওয়ার সময় খাবার দেয়া, ফুফাতো ভাই-বোনের স্কুলে যাওয়ার সময় সাহায্য করা, ফুফুকে ঔষধ খাওয়ানোসহ কোনো কিছুই তার কাজ থেকে বাদ যায় না এসব করে নিজেকে ক্লান্ত মনে হয়, এখান থেকে সে চলে যেতে চায়। কিন্তু কোথাও যেতে পারে না বৃদ্ধ ফুফুর মারায়।
শাওন সাহেব বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষে বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছেন। তিনি ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য শ্রমিকের বেতন ও বোনাসের কিছু অংশ কমিয়ে দেন। তিনি এখন প্রচুর অর্থ ও বিত্তের মালিক। তার বন্ধু হাফিজ সাহেব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় চাকরি করেন। তিনি শ্রম ও অর্থ দিয়ে তাঁর গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক বিষয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মাঝে মাঝে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ স্থানে নিয়ে যান।
পারুল তার মায়ের কাছে বায়না ধরেছে- এবার ঘটা করে যেন ওর জন্মদিনটা পালন না করা হয়। বরং সেই টাকা দিয়ে বইমেলা থেকে ওকে বেশ কিছু বই কিনে দেয়া হোক । কারণ সে পাঠ্যবইয়ের বাইরের বইগুলোর মধ্যেই তার নতুন জগৎ ও জীবন খুঁজে পায়। এ কথা শুনে ওর ভাই পলাশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। সে বলে আরে বোকা পাঠ্যবই মুখস্থ কর কাজে দেবে। পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবি আর জন্মদিনেও আমার মতো অনেক ধরনের গিফট পাবি।
প্রমিতা ভালো গান করে সকল পর্যায়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তাকে নিয়ে তার পরিবারের অনেক গর্ব। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে সে। গান পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় প্রমিতার। একসময় যারা তার বন্ধু ছিল তারা একে একে কেটে পড়ে। আজ তার পাশে কেউ নেই। সেও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সবার থেকে চোখের আড়াল হয়ে একাকিত্বকে সঙ্গী করে দিন কাটে তার।
সুমন ও মামুন ঢাকায় বসবাস করে। বহু বছর পর সুমন বাড়ি ফিরলে গ্রামের লোকজন উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকে। সুমন স্কুল বন্ধু ফরিদকে জড়িয়ে ধরে। খোঁজ-খবর নেয়। তার ক্লান্ত চোখের চাহনি দেখে মর্মাহত হয়, বাড়ির আমগাছে টিয়া-শালিক দেখে রোমাঞ্চিত হয়। অথচ মামুনের বাড়ি ফেরার সময়ই হয়ে ওঠে না কল্পনায় সে জন্মস্থানের প্রতি টান অনুভব করলেও শহুরে চাকচিক্যকে জীবনের অনুষঙ্গ করে নিয়েছে।
রায়পুর গ্রামের জমির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় সকলে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একত্রে বসে জমির উর্বরতা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে অনেক আলোচনা করেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে গ্রামের অভিজ্ঞ কৃষক রহিম মিয়া রাসায়নিক সার এর ব্যবহার কমিয়ে জৈব ও সবুজ সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি ফিরে আসে এবং কৃষকেরা পাভবান হয়। কিন্তু অনেকেই ঈর্ষান্বিত হয়ে রহিম মিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করে।
আসমানিদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি ত নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটু খানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানিরা থাকে বছর ধরে।
পেটটি পুরে পায় না খেতে, বুকের ক'খান হাড়,
সাক্ষী দিচ্ছে অনাহারে ক'দিন গেছে তার।