বাদল ও বদরুল সহপাঠী। একদিন টেলিভিশনে তিমি মাছের ইয়া বড় গ্রাস দেখে বাদল ভাবতে থাকে, এতসব সৃষ্টজীবের রিজিক কোত্থেকে আসে? অতঃপর তার মনে হলো নিশ্চয়ই কোনো এক অসীম ক্ষমতাবান সত্তা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে এর ব্যবস্থা করেন। বাদলের ধারণা শুনে বদরুল বলল, কোনো একক সত্তার পক্ষে এত বেশি কাজ সম্ভব নয়। এতে ফেরেশতাদের সাহায্য আছে। তাদের শিক্ষক বিষয়টি শুনে বললেন, বদরুল! তুমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে লিপ্ত হয়েছ।
জনাব আনোয়ার আইসিটি (ICT) ক্লাসে ছাত্রদেরকে ই-মেইল সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ছাত্ররা বলল যে, এটির মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত বার্তা প্রেরণ করা যায়। প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষক বললেন, আল্লাহ তায়ালাও কিন্তু যুগে যুগে একজন বিখ্যাত ফেরেশতার মাধ্যমে এক প্রকার ঐশী বার্তা পাঠিয়েছেন। আল্লাহর মনোনীত মহামানবগণ তা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রচার করেছেন। ক্লাসের ছাত্র ফয়সাল বলল, স্যার! আমাদের নিকট এমন একটি সংবিধান আছে যাতে পূর্ববর্তী সকল ঐশী বার্তা, শিক্ষা ও মূলনীতি একত্র করা হয়েছে। এতে মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে ।
মাত্র সাত বছর বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করায় হাসিবকে তার প্রতিষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড. আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে একজন মুসলিম মনীষীর কথা উল্লেখ করলেন, যিনি হাসিবের মতো বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করে পরবর্তীতে তাফসির ও ইতিহাসশাস্ত্রে দুটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন । অভিভাবক হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে হাসিবের পিতা জনাব জাকির বলেন, আমার ছেলের চেয়েও কম বয়সে পবিত্র কুরআন হিফজ করেছেন এমন একজন মনীষীর নাম আমি জানি, যিনি পরবর্তীতে হাদিসশাস্ত্রে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । তিনি স্বাধীনচেতা ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।
সালাউদ্দিন সাহেবের শ্বশুর জনাব আবুল হোসেন বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ হওয়ায় একটি বিশেষ মাসের ধারাবাহিক দিনব্যাপী ইবাদতটি পালন করতে পারেননি। এদিকে অসুস্থ শ্বশুরকে দেখতে এসে জামাতা সালাউদ্দিন সাহেব জানালেন যে, কয়েকদিন পর নির্ধারিত মাসে তিনি একটি ইবাদত পালন করতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। সেখানে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে অবস্থান করে আনুষ্ঠানিক কার্যাদি সম্পন্ন করতে হবে ।
জনাব 'ক' নিয়মিত নামায পড়েন। এ বছর তিনি হজও পালন করে এসেছেন। একদিন তার দরিদ্র প্রতিবেশী খায়ের মিয়া মেয়ের বিয়েতে কিছু সহযোগিতা করার অনুরোধ করলে জনাব 'ক' তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন। এমনকি তিনি তার অসুস্থ বোনকে দেখতে হাসপাতালেও যাননি। তার ছেলে রিশু সারাক্ষণ ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকে। লেখাপড়ার প্রতি তার কোনো মনোযোগ নেই। বখাটে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরেই তার সময় অতিবাহিত হয়। তার মা আফসোস করে বলল, “ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারিনি বলেই তার আজ এই অধঃপতন।”
সামী ও সাদী রাজধানীর একই কলেজে অধ্যয়ন করে। সামী কম্পিউটার চালাতে পারে। সাদী তাকে জিজ্ঞাসা করে কীভাবে তুমি কম্পিউটার শিখলে? সামী তখন বলে, কম্পিউটার চালাতে হলে যেমন কম্পিউটার শিখতে হয়, তেমনি দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্যও বিশেষ শিক্ষা দরকার। অপরদিকে তাদের আরেক বন্ধু শুধুমাত্র হৃদয়ের বিশ্বাস নিয়েই নিজেকে ‘ইমানদার' বলে গর্ব করে। তখন সাদী তাকে বুঝিয়ে দেয়, শুধু অন্তরের বিশ্বাস যথেষ্ট নয়, আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ বিনা দ্বিধায় পালন করার মাধ্যমেই কেবল মুক্তি সম্ভব।
রবিউল্লাহ সাহেব একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তাকে একটি উন্নত দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণে চমৎকার ফলাফল করায় তাকে ঐ দেশে অনেক সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি সেটি গ্রহণ না করে নিজ দেশে শিক্ষকতার জন্য ফিরে আসেন।
অপরদিকে তার সহকর্মী জনাব 'এ' নিয়মিত ক্লাস নেন না। কোনো দায়িত্ব দিলে ঠিকমতো পালন করেন না। রবিউল্লাহ সাহেব একদিন জনাব 'এ' কে বললেন, “আমাদের প্রত্যেককেই দায়িত্বের ব্যাপার জিজ্ঞাসা করা হবে।”
পর পর দু'বার কন্যাসন্তান হওয়ায় জামিলার স্বামী গণি মিয়া খুবই মনঃক্ষুণ্ণ হয়। সে জামিলার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। জামিলার ভাই জসিম একজন সৎসাহসী যুবক। সে সমাজের মানুষকে কল্যাণমূলক কাজের পরামর্শ দেয়। সে তার ভগ্নিপতিকে জামিলার সাথে দুর্ব্যবহার বন্ধের জন্য বলে। জামিলা বলে, “আমার ভাইয়ের মতো সবাই যদি এ দায়িত্ব পালন করত, তবে সমাজের মানুষ ধ্বংস হতে বাঁচতে পারত।”
নাদিম কয়েকদিন যাবৎ আল-কুরআনের একটি সূরা অধ্যয়ন করছে। সূরাটিতে আয়াতগুলো বড় বড়। এতে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের কথা এবং ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্বোধন রয়েছে। নাদিমের মামা শফিক সাহেব তাকে বললেন, “তুমি যদি এ গ্রন্থটি ভালোভাবে বুঝে এর শিক্ষা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে চাও, তাহলে যার ওপর এটি নাজিল হয়েছে তাঁর বাণীও অধ্যয়ন করতে হবে।”
কোনো এক দেশে কাবা শরিফের ইমাম সাহেব সফরে এলে অসংখ্য মানুষ তাকে দেখতে যায় । সেখানে 'ক' নামে এক চোরও ছিল। ইমাম সাহেবের চেহারা দেখেই সে নিজে নিজে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর বিধান পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আলাউল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই-তিন দিন মসজিদে যেতে পারেননি। যার ফলে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তার প্রতিবেশী লালু মিয়া বলেন, জীবনে সুখ-দুঃখ থাকবেই। এতে হতাশ হলে চলবে না। একই সাথে তিনি একটি আয়াত পড়ে শোনালেন, যার অর্থ— “যখনই আপনি অবসর পান, একান্তে ইবাদত করুন।”
সমির মিয়া ফসলি জমির আইলে কয়েকটি চারাগাছ রোপণ করেছিলেন। কয়েকদিন পর মন্টু মিয়ার একটি গরু ছুটে গিয়ে তার দুটি চারা গাছ ও কিছু ফসল খেয়ে ফেলে। মন্টু মিয়া ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলে সমির মিয়া বলেন, “এতে আমার কিছু ক্ষতি হলেও আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাব।” সমির মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগম এক শীতের রাতে একটি বিড়াল ছানার কান্নার আওয়াজ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, ছানাটি অসুস্থ। তিনি ছানাটিকে ঘরে নিয়ে এসে গরম কাপড় দিয়ে জড়ালেন এবং দুধ খেতে দিলেন। দৃশ্যটি দেখে তার ছেলে রাজু বলল, “মা! আপনি আল্লাহর প্রিয় একটি কাজ করেছেন।”