রিয়ার বয়স সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পড়েছে। ওর সমবয়সী অনেকেই বিয়ে- থা করে রীতিমতো সংসারী। কিন্তু রিয়ার জন্ম থেকেই হাত দুটো অসাড় হওয়ায় অন্যদের মতো তার সংসার করা হয়নি। রিয়ার বিধবা মা সেলিনা বেগম এতে বিচলিত নন। ছোট ছেলে পনেরো বছরের রাতুলের চেয়ে কোনো অংশে রিয়ার আদর-যত্ন তিনি কম করেন না। পাড়ার দু'একজন অবশ্য রিয়ার বিকাশের পথে জিন-ভূতের আছরকে দায়ী করে। কিন্তু ওসবকে পাত্তা দেন না সেলিনা বেগম।
ষাটোর্ধ্ব শমসের গাজি বাড়ি ফেরার পথে দেখেন দুজন যুবক মোবাইল ফোনে মরমি শিল্পী আব্দুল আলীমের গাওয়া 'পরের জায়গা পরের জমি, ঘর বানাইয়া আমি রই'... গানটি মনোযোগ দিয়ে শুনছে। তিনি তাদের কাছে গিয়ে বললেন, “এখনকার ছেলেরা তো এ গানগুলো শোনে না, অথচ তোমরা....।' শমসের গাজির কথা শুনে যুবকরা বলে ওঠে, 'এ গানগুলোই তো বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণ। এগুলোকে কীভাবে ভুলি?' যুবকদের কথা মধুর মতো লাগে তাঁর কানে ।
কার জামাটা ময়লা হয়েছে, কে চা খাবে, কখন খালআম্মাকে ওষুধ খাওয়াতে হবে— প্রায় সব কাজ একা সামলায় দশ বছরের ফুলি। বাড়ির সকলের প্রতি তার সমান দায়িত্ব। বাইরের কোনো মানুষ দেখে বুঝতেই পারবে না যে সে এ বাড়ির কাজের মেয়ে। বাড়ির সবাই তাকে অনেক আদর-যত্নে রেখেছে। ফুলির সামান্য সর্দি- জ্বরে সবাই অস্থির হয়ে ওঠে।ফুলি নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করে।
শহরের এক বড়লোক ব্যবসায়ী 'খামারবাড়ি' করার জন্য গ্রামে কিছু জান কিনলেন । সেখানে তিনি গোমস্তা লাগিয়ে কলের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করান, গরু-ছাগল পালন করান, মাছ চাষ করান— আরো কত কি। এক সময় তিনি বললেন, “আমি পুরো গ্রাম কিনে নিয়েছি, তোমাদেরকে বাড়ি-ঘর ছাড়তে হবে। একদিন তিনি শহর থেকে গুন্ডা এনে ঘর-বাড়ি দখল করতে এলেন। কিন্তু গ্রামবাসী একজোট হয়ে জীবন বাজি রেখে তা প্রতিহত করে। গুন্ডারা পাদিয়ে গেলেও গ্রামের অনেকে এতে আহত হয়। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ— জীবন দিয়ে হলেও বাপ-দাদার ভিটা অন্য কাউকে দখল করতে দেবে না।