উপল ও নিধি ভাইবোন। নিধি বড়, উপল ছোট। তাদের দুজনের বয়সের পার্থক্য পাঁচ। বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় তারা খেলছিল। তাদের মা উঠানে বসে তরকারি কাটছিলেন । তিনি ঘরে ঢুকতেই উপল ও নিধি ছুটে গেল টকটকে লাল জামরুল কুড়াতে। মা দেখে তাদের শাসন করছিলেন। মা রান্নাঘরে যেতেই তারা বাইরে বেরিয়ে গেল। মা রান্না করে, কাপড় কেচে গোসল করতে গেলেন দ্বিপ্রহর হলেও নিধি ও উপল ফিরে আসেনি।
অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়ে "বিজয় একাত্তর' হলে থাকে। অর্ণব দেখতে পেল মোবাইল ফোনে সহপাঠীরা হিন্দি, রক, ব্যান্ড-এর গান শুনতে পছন্দ করে। লোকসংগীতের প্রতি এই অনাগ্রহ দেখে অর্ণব মোবাইলে আব্বাস উদ্দিন, লালন, হাসন, পাগলা কানাই-এর গান শোনে। অর্ণবের উদ্যোগের ফলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধীরে ধীরে লোকসংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
জাহিদ ও শহিদ একটি অধিদপ্তরে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে। জাহিদ মনে করে জনসাধারণের সেবা করাই তার ব্রত। এ কারণেই সে লোভলালসাহীন ও দায়িত্বশীল। অন্যদিকে শহিদ তার পদকে ব্যবহার করে ক্রমাগত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে বাড়ি-গাড়ি, অঢেল সম্পদ। দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে আইনের হাতে তাকে সোপর্দ করে।
আজাদ ও কালাম প্রতিবেশী। দেশে তারা যে চাকরি করে তাতে তাদের চলে যায়, তবে সচ্ছলতা আসে না। বাড়তি আয়ের আশায় তারা দুজনেই মালয়েশিয়া যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের নিকটতম প্রতিবেশী অটোবাইক চালক দুলালের মেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা দুলালের পক্ষে কঠিন হয়। আজাদ এ কথা জেনে কোনো সাহায্য করবে না। বলে দুলালকে জানায়। কালাম বিষয়টি জানার পর বিদেশে যাওয়ার জন্য জমানো টাকা থেকে দুলালের মেয়ের চিকিৎসার টাকা দিয়ে দিলেন।
১১ অক্টোবর, সোমবার, ১৯৭১। হঠাৎ করে ভারী অস্ত্র ও গোলা-বারুদ নিয়ে গাজীপুরা গ্রামে প্রবেশ করে একদল মিলিটারি। গ্রামে ঢুকে তারা প্রথমে বাজার ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। নির্বিচারে গুলি চালায় সাধারণ মানুষের ওপর। গুলি খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় অনেক মানুষ। অনেকে গুরুতর আহত হয়। আতঙ্কে জীবন বাঁচাবার জন্য কেউ কেউ পালাবার চেষ্টা করে। অনেককে তারা ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে। সে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, যা এখনও সেই গ্রামের মানুষকে তাড়া করে বেড়ায়।