জনাব শামীম ও তার তিন বন্ধু মিলে কুড়িগ্রামে একটি ব্যবসায় স্থাপন করেন। এলাকার বেশির ভাগ লোকই দারিদ্র্যপীড়িত। এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কোনো বিশেষ সামাজিক, নৈতিক ও পরিবেশগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা । চার বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সাফল্য লাভ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছে। ব্যবসায়ের অর্জিত মুনাফা থেকে সদস্যদের বিনিয়োগকৃত মূলধন ফেরত দেওয়া এবং অবশিষ্ট মুনাফা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করা হয় । ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের মিসেস তাসলিমা একজন উচ্চশিক্ষিত মহিলা হয়েও চাকরির পেছনে না ঘুরে তার বৃদ্ধ পিতার দীর্ঘদিনের সফল খ্যাতিসম্পন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল শাড়ি বিতান’ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পূর্বে উক্ত প্রতিষ্ঠানে পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ভোক্তার রুচিমাফিক আধুনিক মানের পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য তিনি কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিকীকরণের জন্য কর্মীদের পরামর্শ দেন।
রায়হান, মাহমুদ ও রাসেল পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ৫ বছর ধরে একটি পেট্রোল পাম্পের ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছেন । রাসেল তাদের সাথে ব্যবসায়ে যুক্ত হলেও তিনি কোনো মূলধন বিনিয়োগ করেন নি এবং পরিচালনায়ও অংশগ্রহণ করেন না। শুধু তার সুনাম ব্যবহার করেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন করা হয়। হঠাৎ করে বিশ্ববাজারে পেট্রোলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়ে এবং অনেক পাওনাদার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় ব্যবসায়ের সমস্ত সম্পদ হিসাব করে দেখা যায়, শুধু মি. রাসেল প্রতিষ্ঠানের এ দায় পরিশোধ করতে সক্ষম ।
মিসেস লুনা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১,০০,০০০ টাকা নিয়ে পাঁচজন কর্মীসহ তার নিজের এলাকায় একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় শুরু করেন। মানসম্মত সেবা প্রদান করায় তার ব্যবসায় ব্যাপক সাফল্য আসে। ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে তিনি ব্যবসায়টিকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেন। যার কারণে বন্ধু মুহিত থেকে ৫০,০০০ টাকা ধার নেন। কিন্তু মিসেস লুনা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার ব্যবসায়টি বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এমতাবস্থায় বন্ধু মুহিত তার প্রদত্ত অর্থের জন্য লুনাকে বারবার বলা সত্ত্বেও লুনা দায় পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে। মুহিত পাওনা আদায়ের জন্য আদালতেও মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সাহেবরামপুর গ্রামের হোসেন মিয়া ১২০ জন সদস্য নিয়ে ‘স্বাধীনতা' নামে একটি সমবায় সংগঠন গড়ে তোলেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য সদস্যদের নিজেদের আর্থিক কল্যাণ সাধন । তারা মূলত ক্ষুদ্র উৎপাদকদের কাছে থেকে পণ্য সংগ্রহ করে তা নিজেদের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করেন। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামের অন্য লোকদের কাছেও স্বল্প লাভে পণ্য বিক্রয় করে। ২০১৪ সালে ‘স্বাধীনতা’ সমবায় ১২,০০,০০০ টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়, যা সমবায় বিধি অনুযায়ী সদস্যদের মধ্যে বণ্টনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
জনাব সেলিম জেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি পোলট্রি ও মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া রেডিও, টেলিভিশন ও এর প্রচারণা, তথ্য সরবরাহ, বিনিয়োগ সুযোগ, প্রকল্প প্রণয়নের সরকারি সহায়তা এসব জেনে তিনি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে খামারটির ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ কারণে জনাব সেলিম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার শরণাপন্ন হয়ে 'পদ্মা বাণিজ্যিক ব্যাংক'-এর কাছে ঋণের জন্য আবেদন করলেন।
জনাব তুষার ও তার ৬ বন্ধু মিলে আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে নিবন্ধনের পরই 'জয়া' নামে একটি পোশাক শিল্পের ব্যবসায় শুরু করেন। বাজারে পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যবসায়টি দেশীয় বাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তার পণ্যের প্রসার ঘটান। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন। প্রয়োজন দেখা দেয় প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণ ও প্রচুর অর্থের। যার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ দেশীয় বাজারে শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এজন্য প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
নলসিটির সৌরব মিয়া একজন মোটর মেকানিক ছিলেন । দীর্ঘ বছর এ কাজ করতে গিয়ে তিনি গাড়ির যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অনেক দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে গাড়ির ব্রেকসু তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। এসব যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনতে গিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। তিনি প্রাথমিক অবস্থায় ব্যাপক অর্থসংকট ও বাধার সম্মুখীন হলেও এক সময় তার জীবনে সাফল্য বয়ে আসে। তার উদ্ভাবিত নতুন ও স্বতন্ত্র এ মেশিনের জন্য সরকার থেকে পুরস্কার লাভ করেন 'এবং 'শাপলা' ব্রেক ট্রেডিং' নামের অনুমোদন নিয়ে সিলমোহরকরণ করেন। তার এ সাফল্য দেখে নবাবপুরের সিরাজ মিয়া শাপলা ব্রেক ট্রেডিং-এর ফর্মুলা ব্যবহার করে বাজারে পণ্য ছাড়ে, যা সৌরব মিয়ার ব্যবসায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তিনি আদালতের আশ্রয় নেন।
মি. রিয়াজ বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ‘সূচনা অয়েল কোম্পানি' নামে একটি কারখানা স্থাপন করেন। তিনি ব্যবসায়ের পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। তার কারখানার বর্জ্য তিনি সরাসরি নদীতে না ফেলে বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে এর ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি নদীর তীরে অবস্থিত কর্ণফুলী ব্রিকস নামে আর একটি ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পুরো এলাকাকে দূষিত করছে। এলাকাবাসী বিষয়টি জেলা বণিক সমিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভবান হয়নি। ফলে এলাকার শিশু-বৃদ্ধসহ সকলেই স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে