নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবেশের ভারসাম্য | NCTB BOOK

বনজ সম্পদ কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সবচেয়ে বড় উপাদান। আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ। তারপরও আমরা এই বনজ ঝোপঝাড়, কাঠ প্রভৃতি আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ, শিল্প ও জ্বালানির ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। ফলাফল হিসেবে বনজ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বন উজাড় হচ্ছে, মাটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে মৃত্তিকা ক্ষয়ে যাচ্ছে দ্রুত সাথে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।

পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার পরিণতি (The result of environmental imbalance)

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সম্পদের অধিক ব্যবহারের ফলে আমাদের যে তিন ধরনের বায়ুসংস্থান বিদ্যমান (are, मজ ও লজ) প্রত্যেকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। জজ বাসংস্থান নষ্ট হওয়ার ফলে অনেক জলজ প্রাণী ও মাছ বিলুপ্ত। বনজ সম্পদের অনেক বৃক্ষ বিলুপ্ত ও কিছু বৃক্ষ বিলুপ্তির মুখে। অনেক বনজ প্রাণী ধ্বংস হয়েছে। বনজঙ্গল বেশি কেটে ফেলার ফলে শৃগাল, খরগোশ, বনবিড়াল প্রভৃতির বাসস্থান নষ্ট হয়েছে, যা খাদ্য শৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়েছে। এর প্রভাব স্থলজ প্রাণীর বাসস্থানের উপর তথা মানব সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা দেখতে পাই অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে উত্তপ্ততা এবং শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে অতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে আমাদের দেশের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সাতক্ষীরা, বরিশাল ও নোয়াখালী জেলার অনেক অংশ সমুদ্রের জলমগ্ন হয়ে পড়বে। এছাড়া ভূনিম্নস্থ পানিতে লোনা পানি প্রবেশ করছে। ফলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মানোর পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে (চিত্র ১৩.২)। পাহাড় ও ভূমিধস বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন সংক্রমণ রোগ, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও পেটের পীড়া। এভাবে চলতে থাকলে পুরো পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। দেখা দেবে নানা বিপর্যয়। তাই সহনশীল টেকসই পরিবেশ আমাদের কাম্য। আমরাই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উপায় (The techniques of keeping the balance of environment)

আমরা পরিবেশ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করি। এই প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার যথাযথ হলে পরিবেশ টিকে থাকবে। তাই সম্পদের সংরক্ষণ তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তৎপর হতে হবে।



পরিবেশ সংরক্ষণঃ অবস্থার পরিবর্তন না করা (নদীর গতিপথ পরিবর্তন), পাহাড়ের মাটি কাটা বন্ধকরণ, ক্ষতিপূরণ (নদীর তলদেশ ভরাট হলে তা খনন করা ), নদীর পাড় দখল মুক্তকরণ, সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার (বায়ু, পানি ও মাটি দূষণ না করা) ।  পরিবেশ দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাকে কে রক্ষা করবে? এর দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের উচিত পরিবেশের উপাদানের প্রতি যত্নশীল হওয়া, সতর্কতার সঙ্গে সম্পদ ব্যবহার করা। তাহলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাবে ।

বনজ সম্পদ জাতীয় অর্থনীতিতে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বনাঞ্চলে অবৈধ প্রবেশ ও জ্বালানির উদ্দেশে ব্যাপক গাছপালা নিধন ইত্যাদি কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মাটি দূষণ, বায়ু দূষণ প্রভৃতি রোধ করলে তবে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্ভব।

বন উন্নয়ন ও সংরক্ষণঃ দেশে ব্যাপক বনায়ন ও বন সংরক্ষণ, বন সম্পদের ঘাটতি পূরণ, কাঠভিত্তিক শিল্পকারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ। বন সংরক্ষণে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ

১। নিঃশেষিত পাহাড় এবং খাস জমিতে বনের বিস্তার ঘটানো।
:২। গ্রামীণ এলাকায় পতিত ও প্রান্তিক জমিতে বৃক্ষরোপণ ।

৩। সড়কপথ, রেলপথ ও সকল প্রকার বাঁধের পাশে বনায়ন।
৪। বনায়ন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি।
৫। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন ।

জ্বালানি ব্যবস্থাকে অধিকতর দক্ষ করে তুলতে হবে। সৌর, বায়ু, পানি, বায়োগ্যাস, সমুদ্র, পশু এবং মানব শক্তিকে ব্যবহার করে নতুন ও পুনব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ নিম্নরূপ :

১। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার রোধ
২। শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযুক্ত পরিশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা
৩। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ
৪। সামাজিক বনায়ন গড়ে তোলা
৫। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ
৬। নদী বাঁচাও কর্মসূচি
৭। ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ

 জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবস যেমন- বিশ্ব পরিবেশ দিবস, বিশ্ব মরুময়তা দিবস, আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস ইত্যাদি পালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত অবক্ষয় রোধের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত নীতি, সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন, পরিবেশসম্মত টেকসই পদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে সরকার ও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব।

Content added By