নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবেশের ভারসাম্য | NCTB BOOK

একটি দেশের জন্য উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষ ও দেশ চায় উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে। এজন্য দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু উন্নয়ন সাধন করতে হয়। পরিবেশের সমন্বয় করে এ সকল উন্নয়ন করা উচিত। আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এমনভাবে পরিচালনা করব যেন তা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে।

                                          উন্নয়ন
 কৃষিক্ষেত্রে  শিল্পক্ষেত্রে  যোগাযোগের ক্ষেত্রে  
বাসস্থানের ক্ষেত্রে

তোমার বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তা যদি কাঁচা বা ভাঙা থাকে দেখবে কিছুদিন পর তা নতুন করে  তৈরি বা মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। আবার তোমার চারপাশে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখতে পাবে যে, টিন বা কাঠের বাড়িগুলো পরিবর্তিত হয়ে ইটের দালান হচ্ছে। এই যে চাহিদার সঙ্গে কোনো কিছুর উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণ, এটাই উন্নয়ন ।
এরূপ সেতু, বাঁধ, শিল্পকারখানা, সড়কপথ, রেলপথ এমনভাবে তৈরি করা যা পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের স্বাভাবিকতা বাঁধাগ্রস্ত না করে। বাংলাদেশ উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু। ফলে পূর্ব-পশ্চিমগামী স্থল যোগাযোগে অধিক সেতু নির্মাণ জরুরি। শিল্প বর্জ্য বিভিন্ন নদীকে দূষিত করে ফেলেছে। নদী ভরাট করে শিল্প গড়ে উঠছে। জলাধার ভরাট করে বসতি তৈরি করে শিল্পকারখানা সৃষ্টি হচ্ছে, যা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এমনভাবে করা উচিত যা পরিবেশ ও সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একটি পুকুরের চারপাশের গাছপালা ধ্বংস করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করলে, পুকুরের প্রথমে ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং পরে মৎস্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে পুকুরটি মজা পুকুরে পরিণত হবে ও দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ আহরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অবশেষে পুকুরটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশের কয়েকটি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড (Some development activities of Bangladesh )

পূর্বের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য তার চাহিদা অনুযায়ী কোনো কিছুর উপযোগিতা বৃদ্ধিকরণ হচ্ছে উন্নয়ন। আমাদের আলোকশক্তি ব্যবহারের দিকে তাকালে সহজে তা বুঝতে পারব। আমরা তেল সরাসরি ব্যবহার করে প্রদীপ জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করতাম। এখন তেল, গ্যাস বা কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা দ্বারা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়। এর আলোকশক্তি অনেক বেশি। এই পরিবর্তন হচ্ছে উন্নয়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হলো :

কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in agriculture sector)

অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৃষিখাতের উন্নয়নের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য কৃষির অগ্রগতি প্রয়োজন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই জমিতে বছরের সকল সময়ই চাষ হচ্ছে। কৃষির উন্নয়নের জন্য আমরা যা করছি তা নিম্নরূপ : 

                          কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি
 সার প্রয়োগ  একই জমি অধিকবার ব্যবহার  কীটনাশক ব্যবহার  ভূমিতে পানিসেচের ব্যবহার

শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in industrial sector)
সামাজিক অগ্রগতির জন্য দ্রুত শিল্প উন্নয়ন অপরিহার্য। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পখাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্তভাবে শিল্পখাতে উন্নয়ন করা হয়।

শিল্প উন্নয়ন: উৎপাদন শিল্প, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য জ্বালানি শিল্প, কৃষিজ ও বনজ শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, পর্যটন ও সেবা শিল্প, নির্মাণ শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প ।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in transport and communication sector)

কৃষি এবং শিল্পের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে যোগাযোগ। তাই যোগাযোগের উন্নয়নের উপর দেশের উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে। যুগোপযোগী, সুসংগঠিত এবং আধুনিক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আজ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, টিভি, রেডিও ও প্রযুক্তির বিকাশ দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। এছাড়া মহাসড়ক, সেতু,, ফেরিঘাট নির্মাণ ও ফ্লাইওভার ব্রিজ নির্মাণ প্রভৃতির মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।

বাসস্থানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন (Development in housing sector)

বাসস্থানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন পেশের অন্যান্য উন্নয়নের উপর কিছুটা নির্ভর করে। এটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন। বাসস্থানের উন্নয়নের জন্য খাওয়ার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ও বর্জ্যের জন্য উন্নত ড্রেনেজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের সমন্বিত রূপ হচ্ছে বাসস্থানের উন্নয়ন ।

Content added By