নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - বাংলাদেশের সম্পদ ও শিল্প | NCTB BOOK

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাভজনক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮ অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জিডিপিতে সার্বিক কৃষিখাতের অবদান ১৪.১০ শতাংশ। এ দেশের শ্রমশক্তির মোট ৪০.৬০ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। কৃষিখাতে প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে হিমায়িত খাদ্য, কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা প্রভৃতি।

বাংলাদেশের কৃষিজ ফসল ২ ধরনেরঃ ১।  খাদ্য-শস্য (ধান, গম, ডাল, তেলবাজ, আলু, ভুট্টা, সবজি ও ফলমূল ২। অর্থকরী ফসল (পাট, চা, ইক্ষু, তুলা, তামাক ও ফুল)
                                              
খাদ্য-শস্য (Food Crops )

ধান (Rice)
বাংলাদেশের খাদ্য-শস্যের মধ্যে ধানই প্রধান। এ দেশে আউশ, আমন, বোরো প্রভৃতি ধরনের ধান চাষ হয়। বাংলাদেশের সকল জেলায় ধান উৎপাদিত হয়। রংপুর, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, দিনাজপুর, ঢাকা, নোয়াখালী প্রভৃতি অঞ্চলে ধান চাষ বেশি হয় (চিত্র ১১.১)। তবে রংপুরে আমন ধান ও সিলেটে বোরো ধান ভালো হয় ।

ধান চাষের উপযোগী অবস্থাঃ
ধান চাষের জন্য ১৬° থেকে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা | প্রয়োজন এবং ১০০ থেকে ২০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় ধানের ফলন ভালো হয় । নদী অববাহিকায় পলিমাটি ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এজন্য বাংলাদেশের সর্বত্রই ধান জন্মে।

গম (Wheat)

বর্তমানে খাদ্য-শস্যের প্রয়োজনীয়তায় বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই গম চাষ হয়। তবে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো গম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে গম চাষ ভালো হয় (চিত্র ১১.১)।

গম চাষের উপযোগী অবস্থাঃ
সাধারণত গম চাষের জন্য ১৬° থেকে ২২° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৫০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। এ কারণে বাংলাদেশে বৃষ্টিহীন শীত মৌসুমে পানিসেচের মাধ্যমে গম চাষ ভালো হয় । বাংলাদেশের উর্বর দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য বিশেষ সহায়ক । অন্যান্য খাদ্য শস্যের মধ্যে তেলবীজ (তিল, সরিষা, বাদাম, ভিসি) এবং ডাল (মসুর, ফুল, মটর, মাসকলাই, খেসারি) এবং ভুট্টা, যব, আলু, সবজি ও ফলমূল প্রধান। বাংলাদেশে শীতকালে এসব খাদ্য-শস্য কম খরচে চাৰ করা যায়। পানিসেচের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। ফলে কৃষকের কৃষিপণ্য বিক্রয়ে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে।
 

অর্থকরী ফসল (Cash or Commercial Crops)ঃ  যে সকল ফসল সরাসরি বিক্রির জন্য চাষ করা হয় তাকে অর্থকরী ফসল বলে।

পাট (Jute)

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে সাধারণত দুই প্রকার পাট চাষ হয়, দেশি এবং তোষা পাট। রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, যশোর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা প্রভৃতি জেলায় পাট চাষ ভালো হয় ।

পাট চাষের উপযোগী অবস্থাঃপার্ট উষ্ণ অঞ্চলের ফসল। পাট চাষের জন্য অধিক তাপমাত্রা (২০° থেকে ৩৫° সেলসিয়াস) এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের (১৫০ থেকে ২৫০ সেন্টিমিটার) প্রয়োজন হয়। নদীর অববাহিকায় পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ সহায়ক।

ইক্ষু (Sugarcane)

চিনি ও গুড় উৎপাদনের জন্য ইক্ষু বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ফসল। ইক্ষু চাষের জন্য সমতলভূমি প্রয়োজন। রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর ও ময়মনসিংহ ইক্ষু চাষের প্রধান অঞ্চল (চিত্র ১১.২)।

ইক্ষু চাষের উপযোগী অবস্থা: ইক্ষু উৎপাদনের জন্য ১৯° থেকে ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং কমপক্ষে ১৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ।
বেলে দোআঁশ ও কর্দমময় দোআঁশ মাটিতে ইক্ষু চাষ ভালো হয়।
 

চা (Tea)

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। দেশে উৎপাদিত চা-এর প্রায় বেশিরভাগ বিদেশে রপ্তানি হয়। পানি নিষ্কাশনবিশিষ্ট ঢালু জমিতে চা ভালো হয়। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেটে সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে চা চাষ হচ্ছে (চিত্র ১১.২)।

চা চাষের উপযোগী অবস্থা: চা চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। ১৬° থেকে ১৭° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্ৰয়োজন ।
উর্বর লৌহ ও জৈব পদার্থ মিশ্রিত দোআঁশ মাটিতে চা চাষ ভালো হয় ।

কৃষি ফসলের প্রাকৃতিক নিয়ামক ছাড়াও মূলধন, শ্রমিক, পরিবহন, বাজার প্রভৃতি নিয়ামক-এর সম্প্রসারণ ও উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলে। সরকারি সহযোগিতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে কৃষির সম্প্রসারণ সম্ভব।

শস্য বহুমুখীকরণ (Crop diversification)

বাংলাদেশে শীতকাল প্রধানত রবিশস্য চাষের জন্য উপযোগী। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় একই ধরনের শস্য চাষ করা হয়। এর ফলে যেমন- কৃষক শস্যের মূল্য কম পায়। জমিতে একই শস্য চাষ মাটির পুষ্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাশাপাশি বহু ধরনের শস্য চাষ উচ্চ মূল্য প্রাপ্তিতে কৃষককে উপকৃত করে। বিভিন্ন শস্য গাছের অংশ নানা ধরনের জৈব মাটিতে যোগ করে মাটির পুষ্টির ঘাটতি রোধ হয়। ফলে অত্যধিক সার ব্যবহার করতে হয় না । এভাবে কৃষক বহুমুখী শস্য চাষ করে নিজে এবং পরিবেশকে উপকৃত করতে পারে।

Content added By