নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মানব বসতি | NCTB BOOK

গ্রামীণ বসতি : যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকে সাধারণভাবে গ্রামীণ বসতি বলে। ভূপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ হতে পারে। এর কারণ হলো গ্রামে প্রচুর জমি থাকে। স্বভাবতই, গ্রামবাসীরা খোলামেলা জায়গায় বাড়ি তৈরি করতে পারেন। ঘরবাড়ির কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য, নির্মাণ উপকরণ, বাড়ির নকশা ইত্যাদির বিচারে গ্রামীণ বসতি সহজেই চিনে নেওয়া যায় (চিত্র ৮.১)। শহরের ইট-সিমেন্টের নির্মাণ স্থাপনা থেকে গ্রামের মাটির, কাঠের ও পাথরের বাড়িকে সহজেই আলাদা করা যায়। কৃষিপ্রধান গ্রামে গোলাবাড়ি, গোয়ালবাড়ি ও ঘরের ভিতরে উঠান এসবই এক অতি পরিচিত দৃশ্য। গ্রামে উঠানের চারপাশ ঘিরে শোবার ঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর তৈরি করা হয়। উঠানে গৃহস্থরা ধান সেদ্ধ করা, শুকানো এবং ধান ভাঙা ছাড়াও নানান কাজ করে থাকে। গ্রামে শোবার ঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর যেমন আলাদাভাবে গড়ে ওঠে যা শহরে হয় না। বসতবাড়িতে অবস্থান আরামদায়ক হওয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সহজ প্রবেশ আলাদাভাবে বসতি গড়ে ওঠার প্রধান কারণ। গ্রামীণ বসতিতে পথঘাটের প্রাধান্য থাকে খুব কম । উৎপাদক चकम। কৃষিকাজের বিভিন্ন অবস্থায় অর্থাৎ বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, ফসল কাটা ও গোলাজাত করা ইত্যাদি ব্যাপারে পরস্পরের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় বলে গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা সহজ ও সরল আন্তরিকতা দেখা যায়। গ্রামীণ বসতি প্রাথমিক উপাদ কৃষি ছাড়াও অন্যান্য প্রাথমিক উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। জীবিকার প্রধান উৎস অনুসারে মস গ্রাম, মৃৎশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কুমারপাড়া, লোহাজাত দ্রব্য তৈরিতে সম্পৃক্ত কামার ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের অনেক গ্রাম রয়েছে।

নগর বসতি : যে বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী শিল্পজাতকরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসন, শিক্ষা-সংক্রান্ত কার্য প্রভৃতি ২য় ও ৩য় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে তাকে নগর বসতি বলে। নগর বসতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি বসতিতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ থাকে এবং যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তা ও যানবাহন থাকে।
বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, শহরে অনেক রাস্তাঘাট ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী অট্টালিকা (Skyscrapper) রয়েছে (চিত্র ৮.২)। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, দোকানপাট, পার্ক ইত্যাদি থাকে। বড় বড় শহরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চলে।
 

কাজ : গ্রামীণ ও নগর বসতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর (একক বা দলে কাজ দেওয়া)।

Content added By