নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - NCTB BOOK

কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকে মানব বসতি বলে। প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে উপযোগী করে চলার এটাই প্রথম অবস্থা। পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের প্রথম পদক্ষেপ হলো বসতি স্থাপন। মানুষ প্রাকৃতিক অনুকূল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানব বসতি গড়ে তোলে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভিন্নতার জন্য বিভিন্ন ধরনের বসতি গড়ে উঠেছে, যেমন- যে দেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের এস্কিমোরা বরফের ঘরে এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামীণ বসতিতে দোচালা ও চৌচালা ধরনের ঘরে বাস করতে দেখা যায়। আর বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বসতিতে আধুনিক নকশা ও নির্মাণসামগ্রী প্রয়োগ করে উচ্চ অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রামীণ ও শহর উভয় স্থানে বসতি বৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশ দূষণ ব্যাপকভাবে হচ্ছে।

Content added By
সংঘবদ্ধ বসতি
বিক্ষিপ্ত বসতি
সংঘবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত বসতি
সংঘবদ্ধ ও রৈখিক বসতি

১। ভূপ্রকৃতি : জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সমতলভূমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায়, কিন্তু পাহাড় এলাকার ভূমি অসমতল হওয়ায় কৃষিকাজ করা কষ্টকর। ফলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য কৃষিজমির নিকটে জনবসতি তৈরি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব সমতলভূমির তুলনায় কম ।

২। পানীয় জলের সহজলভ্যতা : জীবন ধারণের জন্য মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলো বিশুদ্ধ পানীয় জল। এজন্যই নির্দিষ্ট জলপ্রাপ্যতার স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তোলে। মরুময় এবং উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা অথবা প্রাকৃতিক কূপের চারদিকে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসতি স্থাপন করে। পানীয় জলের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা এই সমস্ত বসতিকে আর্দ্র অঞ্চলের বসতি বলে।

৩। মাটি : মাটির উর্বরা শক্তির উপর নির্ভর করে বসতি স্থাপন করা হয়। উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মাটি অনুর্বর হলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে।

৪। প্রতিরক্ষা : প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রুর
আক্রমণ বা বন্যজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত।

৫। পশুচারণ : পশুচারণ এলাকায় সাধারণত বিক্ষিপ্ত বসতি দেখা যায়। পশুচারণের জন্য বড় বড় এলাকার দরকার হয়। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে থাকে।

৬। যোগাযোগ : প্রাচীনকাল থেকে যাতায়াত ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বসতি গড়ে উঠছে। যেমন— নদী তীরবর্তী স্থানে নৌচলাচলের এবং সমতলভূমিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এরূপ স্থানগুলোতে পুঞ্জীভূত বসতি গড়ে উঠেছে। যোগাযোগের সুবিধার্থে মিশরের নীলনদের তীরে নীল সভ্যতা এবং সিন্ধু নদের তীরে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছে।

Content added By

গ্রামীণ বসতি : যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকে সাধারণভাবে গ্রামীণ বসতি বলে। ভূপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গোষ্ঠীবদ্ধ হতে পারে। এর কারণ হলো গ্রামে প্রচুর জমি থাকে। স্বভাবতই, গ্রামবাসীরা খোলামেলা জায়গায় বাড়ি তৈরি করতে পারেন। ঘরবাড়ির কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য, নির্মাণ উপকরণ, বাড়ির নকশা ইত্যাদির বিচারে গ্রামীণ বসতি সহজেই চিনে নেওয়া যায় (চিত্র ৮.১)। শহরের ইট-সিমেন্টের নির্মাণ স্থাপনা থেকে গ্রামের মাটির, কাঠের ও পাথরের বাড়িকে সহজেই আলাদা করা যায়। কৃষিপ্রধান গ্রামে গোলাবাড়ি, গোয়ালবাড়ি ও ঘরের ভিতরে উঠান এসবই এক অতি পরিচিত দৃশ্য। গ্রামে উঠানের চারপাশ ঘিরে শোবার ঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর তৈরি করা হয়। উঠানে গৃহস্থরা ধান সেদ্ধ করা, শুকানো এবং ধান ভাঙা ছাড়াও নানান কাজ করে থাকে। গ্রামে শোবার ঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর যেমন আলাদাভাবে গড়ে ওঠে যা শহরে হয় না। বসতবাড়িতে অবস্থান আরামদায়ক হওয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সহজ প্রবেশ আলাদাভাবে বসতি গড়ে ওঠার প্রধান কারণ। গ্রামীণ বসতিতে পথঘাটের প্রাধান্য থাকে খুব কম । উৎপাদক चकम। কৃষিকাজের বিভিন্ন অবস্থায় অর্থাৎ বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, ফসল কাটা ও গোলাজাত করা ইত্যাদি ব্যাপারে পরস্পরের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় বলে গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা সহজ ও সরল আন্তরিকতা দেখা যায়। গ্রামীণ বসতি প্রাথমিক উপাদ কৃষি ছাড়াও অন্যান্য প্রাথমিক উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। জীবিকার প্রধান উৎস অনুসারে মস গ্রাম, মৃৎশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কুমারপাড়া, লোহাজাত দ্রব্য তৈরিতে সম্পৃক্ত কামার ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের অনেক গ্রাম রয়েছে।

নগর বসতি : যে বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী শিল্পজাতকরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসন, শিক্ষা-সংক্রান্ত কার্য প্রভৃতি ২য় ও ৩য় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে তাকে নগর বসতি বলে। নগর বসতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিটি বসতিতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহ থাকে এবং যাতায়াতের জন্য পাকা রাস্তা ও যানবাহন থাকে।
বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, শহরে অনেক রাস্তাঘাট ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী অট্টালিকা (Skyscrapper) রয়েছে (চিত্র ৮.২)। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, সিনেমা হল, দোকানপাট, পার্ক ইত্যাদি থাকে। বড় বড় শহরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চলে।
 

কাজ : গ্রামীণ ও নগর বসতির মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর (একক বা দলে কাজ দেওয়া)।

Content added By

অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও বাসগৃহসমূহের পরস্পরের ব্যবধানের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় :

১। গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি (Nucleated settlement) : এই ধরনের বসতিতে কোনো
একস্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বসবাস করে (চিত্র ৮.৩)। এই ধরনের বসতি আয়তনে
ছোটগ্রাম হতে পারে, আবার পৌরও হতে পারে। এই ধরনের বসতির যে লক্ষণ চোখে পড়ে তা হলো এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব কম ও বাসগৃহের একত্রে সমাবেশ। সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্যই বাসগৃহগুলোর মধ্যে পরস্পরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যদি স্থানটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত হয়, তবে সেখানে আরও বসতি ও রাস্তা গড়ে উঠবে। এভাবে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থলে বর্ধিষ্ণু বসতিটি কালক্রমে শহর বা নগরে রূপান্তরিত হবে। সমাজবদ্ধ জীব মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে এবং নিরাপত্তার জন্য একত্রে বসবাস করতে চায়। এছাড়া ভূপ্রকৃতি, উর্বর মাটি ও জলের উৎসের উপর নির্ভর করে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে।

২। বিক্ষিপ্ত বসতি (Dispersed settlement) : এই ধরনের বসতিতে একটি পরিবার অন্যান্য পরিবার থেকে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় বসবাস করে (চিত্র ৮.৪)। যেমন বাংলাদেশের বিল অঞ্চলের বসতি।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি এবং অস্ট্রেলিয়ার মেষপালন কেন্দ্র এই ধরনের বসতির উদাহরণ। কখনো কখনো দুটি বা তিনটি পরিবার একত্রে বসবাস করে। তবে এক্ষেত্রেও এদের অতি ক্ষুদ্র বসতি অপর ক্ষুদ্র বসতি থেকে দূরে অবস্থান করে। হিমালয়ের বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চলে এমন কিছু বসতি আছে যেখানকার এক অঞ্চলের উপত্যকার অধিবাসীদের সঙ্গে অন্যদিকের উপত্যকাবাসীদের সারা জীবনে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এই ধরনের বসতিগুলো বিক্ষিপ্ত বসতির পর্যায়ে পড়ে। বিক্ষিপ্ত বসতির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো :

(ক) দুটি বাসগৃহ বা বসতির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান । (খ) অতি ক্ষুদ্র পরিবারভূক্ত বসতি। (গ) অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা।
বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতকগুলো প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করে। বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব, জলাভূমি ও বিল অঞ্চল, ক্ষয়িত ভূমিভাগ, বনভূমি এবং অনুর্বর মাটি।

৩। রৈখিক কাভি (Linear settlement) : এই ধরনের বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে (চিত্র ৮.৫)। প্রধানত প্রাকৃতিক এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণ এই ধরনের বসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে। নদীর প্রাকৃতিক বাঁধ, নদীর কিনারা, রাস্তার কিনারা প্রভৃতি স্থানে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় গড়ে ঠা পুঞ্জীভূত রৈখিক ধরনের বসতিগুলোর মধ্যে কিছুটা ফাঁকা থাকে। এই ফাঁকা স্থানটুকু ব্যবহৃত হয় খামার হিসেবে। বন্যামুক্ত সम উচ্চমि এই ধরনের বসতির জন্য সুবিধাজনক।

কাজ : গ্রামীণ বসতির ধরন নিচের ছকাকার ঘরে লেখ (দলভিত্তিক কাজ)। 

   গোষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ কলভি         বিক্ষিপ্ত কলভি      রৈখিক বসতি
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
Content added By

কাজের প্রকৃতি ও বসতির ধরন অনুসারে পৃথিবীর প্রায় সাতশ কোটি মানুষকে গ্রামীণ ও নগর এ দুটো শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। মানুষ যখন তার খাদ্যের জন্য সংগ্রহ এবং শিকারের উপর নির্ভর করত, তখন মানুষ ছিল যাযাবরের মতো। কিন্তু যখন খাদ্য সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ খানিকটা তার আয়ত্তে এলো, তখন সে স্থিতিশীল জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে আরম্ভ করল। গড়ে উঠল স্থায়ী বসতি বা গ্রাম। অনেকের মতে নারায়ণ বিকাশের ধারাক্রম হচ্ছে- সংগ্রহ ও স্পিকার, কৃষি এবং নগরায়ণ ।
অনেকের ধারণা নগরের উৎপত্তি লগ্নে অর্থনৈতিক কারণগুলোই প্রাধান্য পেরেছিল। নীল নদের অববাহিকায় মেমফিস, খেবস (৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব), সিন্ধু অববাহিকায় মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা (২৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) প্রভৃতি নগরের উৎপত্তি ঘটে। এগুলো নগর সভ্যতার সূতিকাগার। প্রাচীনকালে রোম ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নগরী। রোমের পতনের কারণে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত নগর প্রবৃদ্ধির গতি স্তিমিত ছিল। ইতিহাসে এ সময়টি 'অন্ধকার যুগ' নামে খ্যাত। অষ্টম শতাব্দী থেকে মুসলমানদের রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরম্ভ করে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত নতুন নতুন শহর ও নগর গড়ে উঠতে থাকে। মুসলমানদের শাসন ইউরোপে স্পেন পর্যন্ত প্রসার লাভ করে এবং টলিডো, কর্ডোভা ও সেভিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয় । ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয়গণ বাণিজ্য, বসতি, উপনিবেশ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে মোম্বাসা, দারুসসালাম, মালাক্কা, গোয়া, কলকাতা, সায়গন, জাকার্তা, বালটিমোর, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, কুইবেক, মন্ট্রিয়াল প্রভৃতি শহর ও নগর গড়ে ওঠে। শিল্প বিপ্লবের পর নগরায়ণে নতুন মাত্রা ও গতি পায়। কাঁচামাল হিসেবে কয়লা, লোহা, তামা ও অন্যান্য খনিজসামগ্রী উত্তোলনের কেন্দ্রগুলোতে গড়ে উঠল খনি শহর বা প্রাথমিক উৎপাদন কেন্দ্র। শিল্পকারখানাগুলোকে কেন্দ্ৰ করে গড়ে উঠল প্রস্তুতকারী শহর বা দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন কেন্দ্র। উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন দেশে বিক্রি ও রপ্তানি করার জন্য গড়ে উঠল বাজার ও বন্দর বা তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডভিত্তিক কেন্দ্রসমূহ (সেবাকেন্দ্র)। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নগরায়ণের ফলে নগরে বসবাস করবে। নগরায়ণ দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত : (১) গ্রামীণ এলাকা থেকে পৌর এলাকায় মানুষের আগমন এবং এর ফলে গ্রামীণ এলাকা অপেক্ষা পৌর এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পাওয়া; (২) নগরের সঙ্গে জড়িত সংস্কৃতির কতিপয় ধরনসহ গ্রামীণ এলাকায় পৌর প্রভাবের বিস্তার এবং এই প্রভাব প্রসার লাভ করার ফলে অতিমাত্রায় নগরায়িত সমাজে গ্রামীণ ও পৌর জনসংখ্যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য হ্রাস পায়।

কাজ : নগরায়ণ কী? দলে আলোচনা করে পয়েন্টভিত্তিক খাতায়/পোস্টার পেপারে লেখ ।

Content added By

ভূগোলবিদরা বিভিন্নভাবে শহর ও নগরের শ্রেণিবিভাগের চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন শহর ও নগরের মধ্যে আয়তন, , গঠন, জনসমষ্ঠির বৈশিষ্ট্য, কার্যকলাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এসব বিষয়ে পার্থক্য থাকলেও পৌর বসতির বা নগর বসতির শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের কার্যকলাপের উপর। তাই কার্যকলাপের প্রকৃতিভেদে নগর বসতিগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় :

(১) সামরিক কার্যকলাপভিত্তিক নগর : প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে প্রতিটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সামরিক ও নৌ ঘাঁটির দুর্গসমূহ গড়ে ওঠে। এই সকল স্থানকে আশ্রয় করে কালক্রমে নগর বিকাশ লাভ করে। স্কটল্যান্ডের এডিনবরা, ফ্রান্সের লা-হাভার, রাশিয়ার পিটার্সবার্গ, স্পেনের জিব্রাল্টার, ভারতের আগ্রা, গোয়ালিয়র প্রভৃতি সামরিক ঘাঁটির নগর ।

(২) প্রশাসনিক নগর : প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র হলো নগর। শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনে সাধারণত কোনো কেন্দ্রীয় শহরকে রাজধানীর রূপ দেওয়া হয় এবং সেখানে পৌর বসতির প্রসার ঘটে। বাংলাদেশের ঢাকা, ভারতের নয়াদিল্লি, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা প্রভৃতি প্রশাসনিক নগর।

(৩) শিল্পভিত্তিক নগর : নগরায়ণের ক্ষেত্রে শিল্পভিত্তিক কার্যকলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শিল্পকার্য নতুন শহরের জন্ম দিলেও সাধারণত স্থায়ী শহর বা নগরের প্রতি শিল্পের আকর্ষণ অধিক হয়ে থাকে। শিল্পে শক্তি হিসেবে কয়লার ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হওয়ার পর কয়লা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর অনেক দেশে কয়লা নগরী গড়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসল, ভারতের রানীগঞ্জ, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ও রাশিয়ার ডোনেৎস অঞ্চলের নগরীসমূহ এইরূপ খনি শহর ।

(৪) বাণিজ্যভিত্তিক নগর : ক্ষুদ্র বিনিময় কেন্দ্র সম্প্রসারিত হয়ে পৌর বসতিতে রূপান্তরিত হয়। সভ্যতার আদি পর্ব হতে বিভিন্ন সমাজের মধ্যে দ্রব্য বিনিময়ের প্রথা চালু হয় এবং এই বিনিময়কে কেন্দ্র করে একটি বাজার সৃষ্টি হয়। এই সকল স্থানীয় বাজার বিভিন্ন দিক থেকে আগত পথের মিলনস্থলে গড়ে ওঠে। শহর ও নগর বিকাশের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাদেশীয় স্থলপথকে অবলম্বন করে প্রাচীনকালে সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পো, মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া এবং মরক্কোর ফেজ শহর গড়ে ওঠে। একইভাবে বাংলাদেশের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকা ও কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম শহর গড়ে উঠেছে।

(৫) সাংস্কৃতিক কার্যকলাপভিত্তিক নগর : ধর্মীয় কারণে শহর বা নগরের পত্তন দেখা যায়। কোনো মহাপুরুষের জন্মস্থান বা সমাধি স্থানকে অবলম্বন করে একটি স্থায়ী পৌর বসতির বিকাশ ঘটতে পারে। মক্কা, মদিনা, জেরুজালেম, আজমীর, গয়া, বারানসী প্রভৃতি এরূপ ধর্মীয় কারণ ভিত্তিক শহর। বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি কোনো স্থানে স্থাপিত হলে সেখানে পৌর বসতির বিকাশ ঘটে। প্রাচীন ভারতের নালন্দা, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ, ইতালির পিসা নগরী প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নগর।
অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ যেমন— চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র শিল্প ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নগর গড়ে ওঠে। ফ্রান্সের প্যারিস চিত্রকলা, ভারতের মুম্বাই ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড চলচ্চিত্রের জন্য বিখ্যাত।

(৬) স্বাস্থ্য নিবাস ও বিনোদনের কেন্দ্র : কর্মক্লান্ত মানুষের ক্লান্তি দূর ও অবসর বিনোদনের জন্য সাধারণত শহর বা নগরের কোলাহলের বাইরে সমুদ্রসৈকত বা শৈল নিবাসে স্বাস্থ্য ও প্রমোদ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। যেমন— বাংলাদেশের কক্সবাজার, ভারতের পুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামী ও হনলুলু সমুদ্রসৈকত কেন্দ্ৰিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

কাজ : বাংলাদেশের ৫টি নগর উল্লেখ করে গড়ে ওঠার কারণ চিহ্নিত কর।

Content added By

নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ :

১। জনসংখ্যার আকার ও ঘনত্ব : সাধারণত শহর বৃহৎ জনসংখ্যাবিশিষ্ট এবং ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কোনো বসতিকে শহর হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য কমপক্ষে ৫,০০০ জনসংখ্যা এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৫০০ জনের বসবাস থাকতে হবে। শহরে জন্ম ও মৃত্যুর বৃদ্ধির হার গ্রামের তুলনায় কম। তবে অভিবাসনের কারণে শহরের জনসংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২। বসতবাড়ির ধরন : শহরে সাধারণত ইট, কাঠ, লোহা ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ির সংখ্যা অধিক। এর ফলে স্বল্প পরিসর স্থানে অধিক লোকের সংস্থান হয়। প্রশস্ত রাজপথ, পার্ক, কৃত্রিম লেক প্রভৃতি শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা থাকে।


৩। পরিবহন ব্যবস্থা : নগরে যাতায়াতের জন্য অধিকসংখ্যক রাস্তা গড়ে ওঠে। ফলে মানুষ সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারে।

৪। পরিবার : পরিবার হলো মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। শহর জীবনে সচরাচর একক পরিবার কাঠামো লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের পেশা ও শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে শহরের লোকেরা প্রায় অবসরহীন জীবনযাপন করে। ফলে তারা নিজ নিজ পরিমণ্ডলের লোকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না।

৫। চালচলন : শহর জীবনে গতিময়তা খুব প্রবল। বিভিন্ন প্রকার পেশা গ্রহণের সুযোগ থাকায় শহরের মানুষ অনেক সময় পেশা পরিবর্তন করে উন্নততর সুযোগ সুবিধা গ্রহণে ব্রতী হয়। এখানে আয় দ্বারা সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। অপরপক্ষে গ্রামের মানুষ স্বভাবত রক্ষণশীল। সনাতন সামাজিক রীতির প্রতি গ্রামের মানুষ শ্রদ্ধাশীল থাকে। গ্রামে মানুষের সামাজিক অবস্থা জন্মসূত্রে নির্ধারিত হয়।

৬। অর্থনীতি : শহরের মানুষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নগরে মানুষের পেশা বহু বৈচিত্র্যপূর্ণ। তারা প্রধানত শিল্পকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রশাসন ও সেবা প্রভৃতি অকৃষি পেশায় নিয়োজিত থাকে।

৭। সেবা সুবিধা : নগর জীবনে মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকার সেবা সুবিধা, যেমন— বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পয়ঃপ্রণালি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি অপরিহার্যভাবে গড়ে ওঠে।

৮। শিক্ষা ও চিকিৎসা : নগরে মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বপ্রকার সুবিধা ভোগ করে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশিক্ষণপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রভৃতি নগরে গড়ে ওঠে।

৯। বিনোদন ব্যবস্থা : নগরে কর্মক্লান্ত মানুষের চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা থাকে। সিনেমা, থিয়েটার,
খেলাধুলা প্রভৃতি বিনোদনমূলক কার্যকলাপ নগর জীবনের মানুষকে প্রভাবিত করে।

১০। অপরাধ বৃত্তি : নগরে অপরাধের ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হয়, যেমন— চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারণা ও মারামারি ইত্যাদি। এসব ঘটনা শহরের নাগরিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

১১। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন : নগরে নাগরিক সংগঠনগুলো খুব সক্রিয় থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড শহর থেকেই পরিচালিত হয়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলো নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও লোক ঐতিহ্যের মেলার আয়োজন করে থাকে। যা নগর জীবনকে আনন্দময় করে তোলে।


কাজ : তোমার দেখা নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট সুবিধা ও অসুবিধা লিপিবদ্ধ কর।

Content added By

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ণ পরিবেশের উপর নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে এবং এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশ শিল্পোন্নত নয়। তবে শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। নগরায়ণ বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে সব নগরের বৃদ্ধি সমানভাবে হচ্ছে না। বড় নগরের বৃদ্ধির গতি ব্যাপক । কেননা সেখানে শিল্পকারখানা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সরকারি প্রশাসন ও সার্ভিস সেক্টর প্রভৃতি ব্যাপকভাবে বিকশিত হয় ।

বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শহরে বসবাস করে। তুলনামূলকভাবে যদিও শহরবাসীর সংখ্যা বাংলাদেশে কম কিন্তু বর্তমান সময়ে এ হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি কমে যাওয়া, খাবার পানি ও উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশনের সংকট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা, পরিবহন ও যানজট সংকট, বাসস্থানের অভাব ও বস্তির সৃষ্টি, পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দ দূষণ, খোলা জায়গা ও বিনোদন ব্যবস্থার অভাব ।

বাংলাদেশে জনপ্রতি কৃষিজমির পরিমাণ মাত্র ০.০৫ একর। শহরগুলো সাধারণত ভালো উর্বরা শক্তি জমির উপর গড়ে ওঠে এবং ক্রমেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দশ লক্ষ অধিবাসী অধ্যুষিত এক একটি শহরে প্রতিদিন ১,৩৭,৩৬,২৬৩ গ্যালন পানি প্রয়োজন। একমাত্র ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে প্রতিদিন ২৮.৫ কোটি গ্যালন পানি প্রয়োজন। ওয়াসা কর্তৃক সরবরাহের ক্ষমতা ১৮ কোটি গ্যালন এবং এর মধ্যে অপচয় ও অপব্যবহার সাড়ে তিন কোটি গ্যালন। যার কারণে মোট ঘাটতি প্রায় ১৫ কোটি গ্যালনের উপর। শুষ্ক মৌসুমে শহরে পানি সংকট বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের জন্য একজন মানুষের গড়ে দৈনিক ৭ গ্যালন পানি প্রয়োজন, কিন্তু দেশের শহরবাসী গড়পড়তা এর অর্ধেকও পানি পায় না । ঢাকা ওয়াসা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি চাদনীঘাট থেকে আহরণ করে পরিশোধন ও বিতরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে মেঘনা ও যমুনা নদীর পানির ব্যবহার জরুরি। ঢাকা শহরে দিনে গড়পড়তা ৯০০ টন বর্জ্য শহরের নিচু খোলা জায়গায় ফেলা হয়। এসব বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ ও চোয়ানি ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানিকে দূষিত করে থাকে। অনেক বস্তি এলাকার লোকজন এসব পানি ব্যবহার করে থাকে, যার কারণে চর্ম রোগসহ কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর অবস্থা একই ।

ক্রমবর্ধমান যানবাহন প্রতিটি নগরে লক্ষণীয়। যানবাহনের ধোঁয়ার সঙ্গে অবাধে পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন, সীসা, অ্যাসবেস্টস্, পারদ, নিকেল, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত পদার্থ ভেসে বেড়ায়। যার কারণে হাঁপানি, সর্দি, কাশি ও অন্যান্য এলার্জিজনিত রোগের মাত্রা বেড়ে যায়।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাসস্থানের তীব্র সংকট সৃষ্টি করে। গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষের আগমনের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে বস্তি। যার কারণে সৃষ্টি হয় দূষিত পরিবেশ এবং ক্রমান্বয়ে ব্যাপক এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা, সহজলভ্য জ্বালানি, হাটবাজার ইত্যাদি নগরায়ণের আবশ্যকীয় উপাদান। ক্রমবর্ধমান নগরবাসীর জন্য তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে এসবের ব্যবস্থা করা দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনা ও দুর্বল অর্থনীতির কারণে পরিকল্পিত নগরায়ণ গড়ে তোলা আরও কঠিন। যার ফলে ঘটে থাকে ব্যাপক পরিবেশ অবক্ষয়।

কাজ : অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এর তালিকা তৈরি কর (দলভিত্তিক)।

Content added By