জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভূমির উপর। একটি দেশের ভূমি সীমিত হওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। বেশি খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভূমি অধিক ব্যবহার হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভূমির ব্যবহার নিম্নোক্তভাবে দেখানো যায়।

ভূমির অধিক ব্যবহার, খণ্ডিতকরণ প্রভৃতির কারণে দিন দিন উৎপাদনযোগ্য ভূমি কমে যাচ্ছে। বসতি বিস্তারের ফলে উন্মুক্তস্থান, জলাশয় প্রভৃতি কমে যাচ্ছে। মাটিতে যে সকল অণুজীব ও ক্ষুদ্রজীব বাস করে তা বাধাগ্রস্ত হয়। দূষিত মাটিতে উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। ফলে ভূমি মরুকরণ হতে থাকে। তাই যে কোনো দেশের ভূমি ব্যবহার সঠিকভাবে করার জন্য জনসংখ্যার ভারসাম্য থাকা দরকার।    

                                 ভূমিঃ

    অধিক ফসল চাষ → উর্বরতা হ্রাস → মাটির জৈব উপাদান কমে
   অধিক ফলনের জন্য অধিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার → মাটি দূষিত হয়ে পড়ে
   বন, পাহাড় কেটে আবাদি ভূমিকরণ → ভূমি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ও মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়
   কৃষিভূমি খণ্ডিত হয়ে → বসত বাড়ি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয়
  ভূমি বিভাজন → নতুন অবকাঠামো স্থাপন এবং বাণিজ্যকেন্দ্ৰ স্থাপন
  যোগাযোগের জন্য ভূমি ব্যবহার বৃদ্ধি, স্কুল, কলেজ ও প্রশাসনকেন্দ্ৰ স্থাপনের জন্য ভূমি ব্যবহার বৃদ্ধি

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি পানির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ পানি, কিন্তু সকল পানির শতকরা ৯৭ ভাগ লবণাক্ত বা লোনা। তাহলে আমাদের খাবার উপযুক্ত পানি মাত্র শতকরা ৩ ভাগ। পানির ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

                                 পানি

  কৃষিক্ষেত্রে ও সেচ কার্যে ব্যবহার, এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
  পানি বা খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার, ভূনিম্নস্থ পানি অধিক ব্যবহারের ফলে মাটির নিচের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে এবং লোনা পানি তলদেশে
প্রবেশ করছে যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার, এতে তেল ও বর্জ্য সংযুক্ত হচ্ছে।
   শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার,এতে রং, গ্রিজ ও রাসায়নিক দ্রব্য সংযুক্ত হচ্ছে।

জনসংখ্যা অধিক বৃদ্ধি পেলে উপরিউক্ত কাজগুলো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়, যা পানির উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ, প্ল্যাংকটন, কচুরিপানা, শেওলা প্রভৃতি জন্মাতে পারছে না। পর্যায়ক্রমে ছোট মাছ ও বড় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে জলজ সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল নির্মাণ, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ভূমি হ্রাস প্রভৃতির কারণে বন,
পাহাড় প্রভৃতি কাটা হচ্ছে, ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

কাজ : তোমার চারপাশের প্রাকৃতিক সম্পদ (পানি, ভূমি ও বনজ) কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার চার্ট তৈরি কর।

সম্পদ ও জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য, যে কোনো দেশের সুষ্ঠু উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা ও সম্পদ জাতীয় উন্নয়নের দুই উপাদান। সম্পদের অবস্থান, পরিমাণ ও গুণগত পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মানুষের অবদান রাখার সুযোগ খুবই সীমিত। তাই জনসংখ্যার যথাযথ সমন্বয় সাধন করার জন্য জনসংখ্যা নীতি (Population policy) গ্রহণ করা হয়। সমস্যা ও সমন্বয় ব্যবস্থার ভিন্নতার জন্য জনসংখ্যা নীতি বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। উপযুক্ত নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা ও সম্পদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে যে কোনো দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায় ।

Content added By