নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - জনসংখ্যা | NCTB BOOK

জনসংখ্যা ঘনত্ব (Population density) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা এবং মোট ভূমির পরিমাণ বা
লায়তনের যে অনুপাত (Ratio) তা জনবসতির ঘনত্ব। পৃথিবীর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনবসতির
ঘনত্ব জানতে হলে মোট জনসংখ্যা ও দেশের আয়তন জানতে হবে।

জনসংখ্যা ঘনত্ব= মোট জনসংখ্যা / মোট ভূমির আয়তন

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন এবং এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার

. জনসংখ্যা ঘনত্ব =১৪,৯৭,৭২,৩৬৪/১,৪৭,৫৭০
                           = ১,০১৫ জন (প্রতি বর্গকিলোমিটার)
উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আয়তন বড় হলে তার জনসংখ্যা ঘনত্ব কমে আসে আবার ঘনত্ব বেশি হলে তা ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করে (চিত্র ৭.৩)।

মানুষ- ভূমি অনুপাত (Man land ratio) : যে সকল তুমি মানুষের কাজে লাগে এবং সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, তাকে কার্যকর ভূমি বলে। মানুষ ভূমি অনুপাত বলতে এই কার্যকর ভূমির অনুপাতকে ধরা হয়।

মানুষ-ভূমি অনুপাত =মোট জনসংখ্যা /মোট কার্যকর ভূমির আয়তন

প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের ভূমির উপর জনসংখ্যার চাপ কী রকম তা জানতে হলে সেই দেশের জনসংখ্যা ঘনত্বের পরিবর্তে মানুষ-ভূমি অনুপাত কত তা জানা প্রয়োজন ।
কাম্য জনসংখ্যা (Optimum population) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকলেই তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। ঐ দেশের উৎপন্ন সম্পদের দ্বারা জনগণের ভোগ-সুখের বন্দোবস্ত যতক্ষণ বজায় রাখা যায়, ততক্ষণই সেই দেশের কাম্য জনসংখ্যা বিদ্যমান। মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির আদর্শ অনুপাতের ভারসাম্য যখন নষ্ট হয় তখনই কোথাও অতি-জনাকীর্ণতা আবার কোথাও জনসংখ্যা স্বল্পতা দেখা দেয়।

অতি-জনাকীর্ণতা (Over population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ অল্প থাকলে তাকে অতি- জনাকীর্ণতা বলে। এর ফলে মোট উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ, তথা মাথাপিছু উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ অল্প হয়। যা মাথাপিছু উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ হ্রাস করে।

জনস্বল্পতা (Under population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ বেশি থাকলেও জনসংখ্যার
স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার না করা গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই অবস্থাকে
জনস্বল্পতা বলে। যেমন— অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা কম।

জনসংখ্যা বণ্টন (Population distribution) : জনসংখ্যা ঘনত্ব বা আকারগত তারতম্য থেকে তোমরা এটা সহজেই বুঝতে পারছ যে ভূপৃষ্ঠে জনসংখ্যা সমভাবে বিস্তৃত নয়। স্থানভেদে জনসংখ্যার অবস্থানগত বিস্তৃতি বা বিন্যাস হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন। কোথাও মানুষের বিপুল ঘন সমাবেশ। আবার কোথাও জনমানবহীন। ভূপৃষ্ঠের ৫০-৬০ শতাংশের মতো এলাকায় মাত্র শতকরা প্রায় ৫ ভাগ লোকের বসতি। স্থলভাগের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস।


জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক

তোমার নিজের দেশের কোনো অঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি, কোথাও একদম কম। এ বিষয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে যা জনসংখ্যা ঘনত্ব কম বা বেশি হতে সাহায্য করে। এই বিষয়গুলোকে আমরা জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক বলছি। প্রথমত একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) প্রাকৃতিক প্রভাবক ও (২) অপ্রাকৃতিক প্রভাবক।

১। প্রাকৃতিক প্রভাবক (Physical factors)
ভূপ্রকৃতি : মানুষ স্বভাবতই সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষি ও শিল্প গড়ে তোলা যায় সেখানে বসবাস করতে চায়। তাই পৃথিবীর সমভূমি অঞ্চলে ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আবার পাহাড়ি জঙ্গলময় অঞ্চলে জীবন ধারণ অনেক কষ্ট ফলে ঐ সকল অঞ্চলে জনবসতি কম। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব খুবই কম।
জলবায়ু : জলবায়ুর প্রভাব জনবসতির বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর চেয়ে সমভাবাপন্ন জলবায়ুতে মানুষ বসবাস করতে পছন্দ করে।
মৃত্তিকা : মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য মানব বসতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। উর্বর মৃত্তিকা কৃষিকাজের উপযুক্ত
হওয়ায় এ সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। পানি : যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া যায় সেখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি হয়। এজন্য নদীর উপকূলবর্তী
অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।
খনিজ : খনিজ প্রাপ্তির উপরও জনসংখ্যা ঘনত্ব নির্ভর করে।

২। অপ্রাকৃতিক প্রভাবক (Non- physical factors)

সামাজিক : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের জন্য যেখানে বেশি সুযোগ রয়েছে সে সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মতো দেশসমূহে প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও সামাজিক সুবিধাবলি পাওয়ার জন্য অভিবাসনের মাধ্যমে জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক : শিক্ষা, সংস্কৃতি আজকের যুগে মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও
বিকাশের সুযোগ যেসব অঞ্চলে বেশি, সেসব অঞ্চলে জনবসতিও বেশি হয়।

অর্থনৈতিক : শিল্পাঞ্চলে, যেখানে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যেসব অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায় সেখানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। যেমন— জাপানের ওসাকা, ভারতের মুম্বাই প্রভৃতি স্থানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।

Content added By