SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - উইভিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

ভূমিকা (Introduction)-

আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে টেক্সটাইল পণ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পোশাকশিল্প, পাটজাত পণ্য, কাপড় ও কাঁচা পাট ইত্যাদি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রধান খাত। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, মানুষের এই তিনটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে বস্ত্রের স্থান দ্বিতীয়। বস্ত্র ছাড়া সভ্য মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। কাজেই মানবজীবনে বস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই বস্ত্র তৈরির জন্য বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে ফাইবার হতে পরিধান উপযোগী কাপড় ও পোশাক তৈরি করা হয়। টেক্সটাইল শিক্ষায় বস্ত্র তৈরির ধাপসমূহকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং, ওয়েট প্রসেসিং এবং গার্মেন্টস প্রোডাকশন।

ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারে টেক্সটাইল ফাইবার থেকে সুতা প্রস্তুত, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারে সুতা থেকে কাপড় প্রস্তুত, ওয়েট প্রসেসিং-এ গ্রে কাপড়কে ব্যবহার উপযোগী ফিনিসড কাপড়ে পরিণত এবং গার্মেন্টস প্রোডাকশনে ফিনিসড কাপড় থেকে পোশাক প্রস্তুতকরণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উইভিং ট্রেড নলেজ বিষয়ে ফাইবার হতে সুতা প্রস্তুতসহ ব্যবহার উপযোগী ফিনিসড কাপড় প্রস্তুতের ধারণা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই বই অধ্যয়ন করে টেক্সটাইল শিক্ষা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবে সে উদ্দেশ্যেই এই পাঠ্য সূচি তৈরি করা হয়েছে। কাপড় তৈরি করার কাঁচামাল হিসেবে সুতার প্রয়োজন এবং সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে টেক্সটাইল গুণাগুণসম্পন্ন আঁশ বা ফাইবারের প্রয়োজন। কাজেই শিক্ষার্থীর সুতা বা কাপড় তৈরির পূর্বে টেক্সটাইল ফাইবার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

সাধারণত আঁশ বা ফাইবারের প্রস্থ এর চেয়ে দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। পৃথিবীতে অনেক ধরনের আঁশ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু টেক্সটাইল সুতা বা বস্ত্র তৈরির গুণাগুণ রয়েছে এ রকম ফাইবার মাত্র কিছু সংখ্যক ফাইবারের মধ্যে রয়েছে। আঁশের মধ্যে সর্বপ্রথম যে সমস্ত গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তার মধ্যে প্রধান গুণাগুণ হলো আঁশের দৈর্ঘ্য ও শক্তি। দৈর্ঘ্য ও শক্তি ছাড়া কোনো টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তবে ম্যানমেড ফাইবারের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ সুতা তৈরি করার সময় প্রয়োজনীয় দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কেটে নিলেই হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় প্রকার ফাইবারই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রচুর পরিমাণ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কটন ফাইবারের তৈরি সুতা, কাপড় ও পোশাক-এর একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তবে আমাদের দেশে কটন ফাইবার অর্থাৎ তুলা প্রচুর পরিমাণে জন্মে না। তাছাড়া যা জন্মে তাও কোয়ালিটির দিক থেকে উন্নতমানের নয়। আঁশের দৈর্ঘ্য কম, শক্তিও তেমন ভালো নয়। কাজেই ভালো তুলার জন্য আমাদের বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। পাশাপাশি অধিকমূল্যের কাঁচামাল ক্রয় করার জন্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

এক সময়ের বাংলাদেশের গোল্ডেন ফাইবার নামে পরিচিত পাটও বাংলাদেশ থেকে আস্তে আস্তে হ্রাস পেতে শুরু করছে। পাটের আঁশ মোটা হলেও এ আঁশ দ্বারা যে কাপড় তৈরি হয় তার ব্যবহার বহুবিধ এবং মূল্যও অনেক কম। এছাড়া জুট ফাইবার দ্বারা তোয়ালে, সুতা, বস্তা, ব্যাগ, হেসিয়ান ও স্যাকিং কাপড় ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। এই প্রাকৃতিক আঁশ পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এবং পরিবেশের শত্রু পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষ জুট ফাইবারের তৈরি সামগ্রী ব্যবহারের দিকে কিছুটা দৃষ্টি দিয়েছে। ফলে পাটজাত পণ্য পাটশিল্প বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান সরকার পাটশিল্প রক্ষার জন্য ২০১০ সালে 'পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০' প্রবর্তন করেছে। যার ফলে পাটশিল্প রক্ষা পাবে, পাশাপাশি পাটের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং যেহেতু পাট পরিবেশবান্ধব, কাজেই পরিবেশের সাথে ক্ষতিকারক কৃত্রিম আঁশ পরিহার করে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের কারণে পাটশিল্পও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ পাট রপ্তানিতে প্রথম ও উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে।

টেক্সটাইল ফাইবার (Textile Fibre)-

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে টেক্সটাইল শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজেই টেক্সটাইল সম্বন্ধে প্রত্যেকের কিছু না কিছু জানা দরকার। তাতে ব্যবহারকারীগণ অর্থাৎ আমরা কিছুটা লাভবান হব।

কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ফাইবার ব্যবহার করা হয়। আমরা প্রাকৃতিকভাবে অনেক আঁশ দেখতে পাই। কিন্তু সমস্ত আঁশই টেক্সটাইল ফাইবার নয়। টেক্সটাইল ফাইবার হতে হলে ফাইবার বা আঁশে কিছু গুণাবলি থাকা প্রয়োজন ।

যেসব ফাইবারে ন্যূনতম দৈর্ঘ্য, শক্তি, সূক্ষ্মতা, নমনীয়তা, সমতা ও আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা আছে, সর্বোপরি সুতা পাকানোর গুণাবলি বিদ্যমান তাকেই টেক্সটাইল ফাইবার বলে।

আধুনিককালে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে টেক্সটাইল ফাইবারের ও টেক্সটাইল সামগ্রীর প্রভূত উন্নতি এবং ব্যবহারকারীদের কাছে টেক্সটাইল সামগ্রী সহজলভ্য হচ্ছে।

টেক্সটাইল ফাইবারের শ্রেণি বিভাগ (Classification of Textile Fibre)-

মানুষের চাহিদার সাথে টেক্সটাইল ফাইবারের উৎপাদনও পরিবর্তন হচ্ছে। সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে যে সমস্ত টেক্সটাইল ফাইবার পাওয়া যায় তার চাহিদা বেশি আবার ইহা অনেকটা স্বাস্থ্যসম্মত, কিন্তু মূল্যের দিক থেকে কৃত্রিম আঁশ অনেক কম ও সহজলভ্য। শনাক্তকরণ ও বোঝার সুবিধার্থে টেক্সটাইল ফাইবারের শ্রেণিবিভাগ দুইভাবে ছক আকারে দেখানো হলো :

Content added By