সুখ (কায়কোবাদ)

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা - সাহিত্যপাঠ | NCTB BOOK
6k
Summary

সারসংক্ষেপ:

কবিতাটিতে বলা হয়েছে, প্রকৃত সুখ পাওয়া সম্ভব নয় যদি না নিজেদের 'আমিত্ব' পরিত্যাগ করা হয়। সুখ কেবল নিজের জন্য নয়, বরং অন্যদের উপকারে আসলে সেখানেই সুখের সন্ধান। সুখের আশা বৃথা, কারণ এ পৃথিবী মরুভূমির মতো, যেখানে সত্যিকার সুখের স্থান নেই। ধন অথবা স্বার্থের মধ্যে সুখ খুঁজে লাভ হবে না; বরং পরের দুঃখ দূর করে, তাদের সেবায় আপ্রাণ চেষ্টা করলে, তখনই সত্যিকারের সুখ আসবে।


“সুখ সুখ” বলে তুমি, কেন কর হা-হুতাশ,
 সুখ ত পাবে না কোথা, বৃথা সে সুখের আশ!
 পথিক মরুভূ মাঝে খুঁজিয়া বেড়ায় জল,
জল ত মিলে না সেথা, মরীচিকা করে ছল! 
তেমতি এ বিশ্ব মাঝে, সুখ ত পাবে না তুমি, 
মরীচিকা প্রায় সুখ, - এ বিশ্ব যে মরুভূমি!
 ধন রত্ন সুখৈশ্বর্য কিছুতেই সুখ নাই,
 সুখ পর-উপকারে, তারি মাঝে খোঁজ ভাই! 
‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া স্বার্থ ত্যাগ কর যদি,
 পরের হিতের জন্য ভাব যদি নিরবধি! 
নিজ সুখ ভুলে গিয়ে ভাবিলে পরের কথা, 
মুছালে পরের অশ্রু— ঘুচালে পরের ব্যথা ! 
আপনাকে বিলাইয়া দীনদুঃখীদের মাঝে, 
বিদূরিলে পর দুঃখ সকালে বিকালে সাঁঝে!
 তবেই পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে তুমি, 
যা রুপিবে— তাই পাবে, সংসার যে কর্মভূমি!

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

বাহ্য-সুখের অধিকারী হয়ে
আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে
ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভবের মাঝে
মরুভূমিতে পানীয় জলের মাঝে
জ্ঞান অর্জন
হানাহানি
পরার্থপরতা
ক্ষুদ্র স্বার্থ

লেখক-পরিচিতি

720


১৮৫৭ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা-পূর্বপাড়া গ্রামে কবি কায়কোবাদের জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম মুহম্মদ কাজেম আল কুরায়শী। ‘কায়কোবাদ' কবির সাহিত্যিক নাম । প্রথমে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হলেও পিতার অকালমৃত্যুতে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে মাদরাসায় ভর্তি হয়ে এন্ট্রান্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং আগলা গ্রামেরই পোস্টমাস্টার পদে চাকরি গ্রহণ করেন ।
বাংলা কাব্যধারায় কায়কোবাদ গীতিকবি হিসেবেই খ্যাত। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি ‘বিরহবিলাপ' কাব্য রচনা করেন। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতনের কাহিনি নিয়ে তাঁর রচিত ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্যের জন্য তিনি সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য হলো : ‘কুসুমকানন’, ‘শিবমন্দির’, ‘আমিয় ধারা’, ‘মহরম শরীফ ও ‘শ্মশান-ভস্ম’। কবি কায়কোবাদ ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ কর্তৃক 'কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন' উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৫১ সালের ২১এ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
 

Content added || updated By

শব্দার্থ ও টীকা

704

মরুভূ - মরুভূমি ।
জল তো মিলে না... করে ছল - জল, উদ্ভিদ ও জীবশূন্য বালুকাময় বিস্তীর্ণ স্থান হচ্ছে মরুভূমি। সেই মরুভূমির মাঝে পানীয় জল খুঁজে পাওয়া ভার । কখনো কখনো উত্তপ্ত বিস্তীর্ণ বালুরাশিকে সমুদ্র বলে ভ্রম হয়। এই ভ্রান্তিই হলো মরীচিকা, ছলনা বা মোহ। অর্থাৎ ধন-রত্ন অর্থ-সম্পদ প্রকৃত সুখের নিয়ামক নয়। সুখ খুঁজতে গিয়ে এসব উপকরণের পেছনে ছোটা মরীচিকার পেছনে ছোটার মতোই ৷
এ বিশ্ব যে মরুভূমি - অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদের অধিকারী মানুষ প্রকৃত সুখী নয় । প্রকৃত সুখ হলো আত্ম-সুখ। ধন-সম্পদ বাহ্য-সুখ। বাহ্য-সুখের অধিকারী মানুষের হৃদয়ে মরুভূমি ।
‘আমিত্ব’কে বলি দিয়া - অহমিকা বিসর্জন দিয়ে । 
বিদূরিলে পর দুঃখ বিকালে সাঁঝে - সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সারা জীবন সবার দুঃখ ঘোচালে ।
তবে পাইবে সুখ আত্মার ভিতরে - সবার দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণা দূর করতে পারলে বা করার প্রচেষ্টায় যে আত্মিক প্রশান্তি লাভ করা যায় কবি সেকথাই এখানে বলেছেন।
যা রুপিবে – তাই পাবে - যা বপন করবে তার ফল পাবে, অর্থাৎ ভালো কাজের জন্য ভালো ফল পাওয়া যায়।
 

Content added By

পাঠ-পরিচিতি

746

কায়কোবাদ রচনাবলির অন্তর্গত ‘অমিয়-ধারা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে “সুখ” কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ১৯২৩ সালে ‘অমিয়-ধারা’ প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।
মরুভূমিতে পানীয় জল খোঁজার মতোই মানুষ সুখের অন্বেষণে মশগুল। ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব ইত্যাকার সম্পদের অধিকারী হয়ে মানুষ সুখী হতে চায়। কিন্তু কবি বলেছেন, বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়েও প্রকৃত সুখী হওয়া যায় না । প্রকৃত সুখী হতে হলে সবাইকে তার ভেতরকার ‘আমিত্ব’কে বিসর্জন দিয়ে নিরহঙ্কারী হতে হবে। বিসর্জন দিতে হবে আপন স্বার্থপর সুখান্বেষা। নিজের সকল কর্ম নিয়োজিত করতে হবে পরহিতে। দীনদুঃখীর ব্যথা দূর করার মধ্যেই খুঁজতে হবে আত্মসুখ। অপরের উপকারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। অপরের দুঃখ-দুর্দশা বিদূরিত করতে পারার মধ্যেই প্রকৃত অর্থে মানুষের আত্মিক সুখ ও শান্তি নিহিত বলে কবি মনে করেন

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...