বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬–১৯৩৮) এক অনন্য নাম। তিনি ছিলেন বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার। তার উপন্যাস ও গল্পে ফুটে উঠেছে সমাজের নিপীড়িত মানুষ, নারীর অবস্থান, প্রেম, দুঃখ-যন্ত্রণা, সামাজিক কুসংস্কার ও মানবতার গভীর বোধ। তার লেখা সহজবোধ্য, আবেগপ্রবণ ও বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হওয়ায় সাধারণ পাঠকের কাছে তিনি আজও সমান জনপ্রিয়।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ সালে হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একটি অস্থির চাকরিজীবী, আর মা ভুবনমোহিনী দেবী ছিলেন সংসারপ্রধান। আর্থিক অনটনের কারণে তিনি শৈশবে দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই শরৎচন্দ্র ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী ও মানবিক বোধে সমৃদ্ধ।
তিনি হুগলির বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরে হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক অসুবিধার কারণে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। জীবিকার তাগিদে তাকে বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছিল।
শরৎচন্দ্র প্রথমদিকে লেখালেখি করলেও জীবিকার কারণে সেগুলো প্রকাশ পায়নি। তিনি দীর্ঘদিন বার্মায় (বর্তমান মিয়ানমার) বসবাস করেন এবং সেখানেই সাহিত্যচর্চায় মনোযোগ দেন। তার লেখা যখন প্রকাশিত হতে শুরু করে, তখনই দ্রুত জনপ্রিয়তা পান।
দত্তা
পল্লীসমাজ
পরিণীতা
বড়দিদি
শ্রীকান্ত
গৃহদাহ
পথের দাবী (রাজনৈতিক উপন্যাস, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল)
চরিত্রহীন
শেষ প্রশ্ন
মহেশ
বড় ভাই
রামের সুমতি
বিলাসী
১. সহজ ভাষা: তার রচনাশৈলী সহজবোধ্য ও সাবলীল।
২. সামাজিক বাস্তবতা: সমাজের অসাম্য, দারিদ্র্য, নারীর শোষণ, কুসংস্কার তার লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে।
৩. নারীর স্থান: তিনি নারীর দুঃখ, প্রেম, সংগ্রাম ও মর্যাদার জন্য কলম ধরেছেন।
৪. মানবিক আবেগ: প্রেম, দুঃখ, সহমর্মিতা তার রচনার প্রাণ।
৫. আন্দোলন ও রাজনীতি: “পথের দাবী” উপন্যাসে বিপ্লবীদের জীবনচিত্র ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে।
শরৎচন্দ্র ছিলেন “জনমানসের লেখক”। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষিত পাঠক—সবাই তার লেখা বুঝতে পারতেন এবং উপভোগ করতেন। গ্রামীণ সমাজ, মধ্যবিত্তের দুঃখ-আকাঙ্ক্ষা, নারীর দুঃখকথা তিনি এমনভাবে তুলে ধরেছিলেন যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যদিও তিনি জীবদ্দশায় বড় কোনো উপাধি বা সম্মান পাননি, তবে তার সাহিত্যকীর্তি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত। মৃত্যুর পর থেকে তার উপন্যাস ও গল্প নাটক, সিনেমা ও ধারাবাহিকে রূপান্তরিত হয়েছে এবং মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে কলকাতার গোরাবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এমন এক কথাশিল্পী, যিনি কেবল সাহিত্যিক নন, ছিলেন সমাজ সংস্কারকও। তিনি সমাজের নিপীড়িত মানুষদের কণ্ঠস্বর হয়েছিলেন এবং নারীর মর্যাদা ও প্রেমকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। তার সাহিত্য আজও পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে আছে এবং চিরকাল থাকবে।
আপনি আমাকে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন, যেমনঃ
Are you sure to start over?