অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - চারু ও কারুকলা - NCTB BOOK

যে- কোনো মাধ্যমেই ছবি আঁকা সম্ভব। শুধুমাত্র পেনসিল বা কলম দিয়েও যেমন ছবি আঁকা যায়, তেমনি বিভিন্ন রং, কল্পনা এমনকি রঙিন কাগজ কেটে আঠা দিয়ে লাগিয়েও ছবি আঁকা যায়। ইতঃপূর্বে আমরা পেনসিল, কালিকলম, প্যাস্টেল, পোস্টার রং, অ্যাক্রেলিক রং ও অসরং সম্পর্কে জেনেছি। এ অধ্যায়ে - তেলরং, এনামেল রং, প্লাস্টিক রং ও অন্যান্য মাধ্যমগুলো সম্পর্কে জানব ।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের তলরঙ্গে আঁকা ফসল মারই 

 

এই অধ্যায় পড়া শেষ করলে আমরা_ 

 

তেলরং ও তার প্রয়োগ পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারব। 

অক্সাইড রং ও এর ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।

 এনামেল রং ও এর ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।

পাঠ : ১
ছবি আঁকার বিভিন্ন মাধ্যম

ছবি আঁকার বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে পূর্ববর্তী শ্রেণিগুলোতে আমরা অনেক কিছু জেনেছি। মাধ্যমগুলোর সাথে আছে বিভিন্ন উপকরণ। যেমন- কাগজ, পেনসিল, কালি-কলম, তুলি, বোর্ড, ক্লিপ, ইজেল, ক্যানভাস ও বিভিন্ন প্রকার রং ।
কাগজ ছবি আঁকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। বিভিন্ন রকম কাগজ পাওয়া যায়। আর মাধ্যম ভেদে কাগজের প্রকারও আলাদা হয়। অর্থাৎ একেক মাধ্যমের জন্য একেক প্রকার কাগজ উপযোগী। পাতলা, মোটা, খসখসে, মসৃণ, সাদা, ধূসর, বাদামি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার কাগজে ছবি আঁকা হয়। জলরং, পোস্টার রং, কালি-তুলি, কালি-কলম, প্যাস্টেল বা অ্যাক্রেলিক রঙেও কাগজে ছবি আঁকা যায় ।
কাগজে শুধুমাত্র পেনসিল ব্যবহার করে আলো-ছায়া ফুটিয়ে তুলে সাদাকালো ছবি এবং রঙিন পেনসিল ব্যবহার করে রঙিন ছবিও আঁকা সম্ভব ।

ছবি আঁকার পেনসিল ও তুলি

পেনসিল 2B, 3B, 4B, 5B এবং 6B সহ বিভিন্ন গ্রেড বা মানের হয়ে থাকে। এ-সমস্ত পেনসিল ব্যবহার করে কাগজে ছবি আঁকা যায়। এ ছাড়াও H গ্রুপের HB, H1, H2, H3 এরকম শক্ত শিসের পেনসিল পাওয়া যায়, সেগুলো ছবি আঁকার পেনসিল নয় ।
কালি-কলম দিয়ে মসৃণ কাগজে ছবি আঁকা যায়। আবার কালি-তুলি দিয়েও বিভিন্ন প্রকার কাগজে ছবি আঁকা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানসহ বিখ্যাত শিল্পীদের অনেকেই কালি-কলম ও কালি-তুলিতে ছবি এঁকেছেন।
জলরং ও তেলরঙের জন্য একই রকম তুলি ব্যবহার করা হয়না। কালি ও জলরঙে ছবি আঁকার জন্য সাধারণ নরম পশমের তুলি ব্যবহার করা হয়। তেলরং, অক্সাইড রং বা বেশি আঠালো রঙের জন্য অপেক্ষাকৃত শক্ত পশমের তুলি প্রয়োজন। তুলির বিভিন্ন মাপ হয়। সবচেয়ে সরু তুলির নম্বর ০০ (ডবল জিরো) তারপর ০, ১, ২ এভাবে মোটা হতে হতে ২০/২৫ নম্বর পর্যন্ত মানের তুলি পাওয়া যায়। পেনসিল, কাঠকয়লা বা কালিতে সাধারণত সাদাকালো ছবি আঁকা যায় । তবে রঙিন ছবির জন্য রং-ই প্রধান মাধ্যম বা উপকরণ।
রং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন- প্যাস্টেল রং, জলরং, অ্যাক্রেলিক রং, পোস্টার রং, প্লাস্টিক রং, এনামেল রং, তেলরং, রঙিন অক্সাইড ইত্যাদি। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা বিভিন্ন রং সম্পর্কে জেনেছি। এ- অধ্যায়ে আমরা তেলরং, এনামেল রং, প্লাস্টিক রং ও রঙিন অক্সাইড সম্পর্কে সংক্ষেপে জানব ।

তেলরং

নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি তেল মাধ্যমের রং, অর্থাৎ এ - রঙের সাথে তেলের সম্পর্ক আছে। তেলরঙের সাথে তিশির তেল মিশিয়ে ছবি আঁকতে হয় এবং তরল করার জন্য তারপিন মেশাতে হয়। পৃথিবীর বড় বড় শিল্পীরা তেলরং মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন এবং সেসব কালজয়ী ছবির মাধ্যমে তাঁরা শিল্পী হিসেবে অমর হয়ে আছেন । বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের শিল্পীদের অন্যতম প্রিয় মাধ্যম হচ্ছে তেলরং। তেলরং -এর ছবির বৈশিষ্ট্য এই যে, তা শত শত বছর ধরে টিকে থাকে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে রঙের উজ্জ্বলতা হারায় না। বাস্তবভিত্তিক ছবি

আঁকার ক্ষেত্রে এ রং তুলনাহীন। তবে সব ধরনের ছবির জন্যই তেলরং উপযোগী মাধ্যম। সাধারণত টিউব আকারে ছোটবড় বিভিন্ন সাইজে তেলরং পাওয়া যায়। তেলরং -এর জন্য শক্ত পশমের বিভিন্ন মাপের তুলি পাওয়া যায়। তেলরঙে ছবি আঁকার জন্য রং ছাড়াও তারপিন, তিশিতেল এবং রং গোলানের জন্য একটুকরো হার্ডবোর্ড, প্লাইবোর্ড বা কালার প্লেট প্রয়োজন। সাধারণত ক্যানভাসে (কাঠের ফ্রেমে আটকানো শক্ত কাপড়) তেলরঙের ছবি আঁকা হয়। তবে হার্ডবোর্ড, প্লাইবোর্ড বা কাঠের ওপরও তেলরঙে আঁকা সম্ভব। এমনকি শক্ত মোটা কাগজেও তেলরং ব্যবহার করা যায়। তবে এখন তেলরঙের জন্য আলাদা কাগজ তৈরি হয় ।

ব্যবহারবিধি

তেলরং যদি ক্যানভাসে ব্যবহার করা হয়, তবে প্রথমেই ক্যানভাসকে আঁকার উপযোগী করে নিতে হয়। সাদা ক্যানভাস কাপড় প্রয়োজনমতো মাপে কাঠের ফ্রেমে চারদিকে তারকাটা দিয়ে টানটান করে আটকে নিতে হয়। তারপর সাদা জিংক অক্সাইড ও আইকা গাম মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ক্যানভাসে ভালোভাবে লেপন করতে হয় যাতে কাপড়ের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রং শুকালে ক্যানভাস টানটান মসৃণ এবং ছবি আঁকার উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন এতে ছবি আঁকা হয়। তেলরঙে ছবি আঁকার জন্য যে-কোনো রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে গাঢ় রং থেকে ক্রমশ হালকা বা লাইট রঙে যেতে হয় অর্থাৎ বিষয়কে ফুটিয়ে তোলার জন্য তার গভীর ছায়া বা গাঢ় বর্ণটি প্রথমে প্রয়োগ করতে হয়। তারপর সেখান থেকে হালকা রং প্রয়োগ করে লাইট বের করতে হয়। তেল শুকাতে সময় লাগে বলে একটি রঙের উপর অন্য রং প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। রং শুকালে পুনরায় কাজ করা যায়। এ - কারণে তেলরঙে ছবি আঁকতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। রঙের সাথে পরিমাণমতো তিশিতেল এবং তরল করার জন্য তারপিন তেল মেশাতে হয় 

এনামেল রং

এনামেল রংও তেল মাধ্যমের রং। এনামেল রঙের-এর সাথে তারপিন মিশিয়ে তরল করা যায়। এ-রং সাধারণত টিন, লোহা, হার্ডবোর্ড, প্লাস্টারের দেয়াল ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া বাঁশ, কাঠেও ব্যবহার করা যায়। তবে এনামেল রং দিয়ে হার্ডবোর্ড, কাপড়, টিন, কাঠ ইত্যাদির উপরও ছবি আঁকা যায় । রিকশার পিছনে আমরা যে-ছবি দেখি, যেগুলো রিকশা পেইন্টিং হিসেবে পরিচিত তা এনামেল রঙে আঁকা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত সাইনবোর্ড ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমের কাজে এই রং ব্যবহার করা হয়। এই রং ছোটবড় বিভিন্ন আকৃতিতে কৌটায় সংরক্ষিত অবস্থায় বাজারে পাওয়া যায় ।

রঙিন অক্সাইড ও প্লাস্টিক রং

রঙিন অক্সাইড ও প্লাস্টিক রং মূলত আঠা ও রং-এর সাথে পানি মিশিয়ে তৈরি হয়। প্লাস্টিক রং বিভিন্ন শেডে কৌটায় পাওয়া যায়। সাধারণত পাকা ভবনের দেয়ালে এই রং ব্যবহার করা হয়। তবে এ- রং দিয়ে কাপড়ে বা শক্ত বোর্ডে ছবি আঁকা সম্ভব। অন্যদিকে বিভিন্ন রঙিন অক্সাইড পাউডার হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। তার সাথে পরিমাণমতো আইকা গাম ও পানি মিশিয়ে ছবি আঁকা যায় ।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আমরা বিভিন্ন রং ও এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জানলাম। বাস্তবক্ষেত্রে এর প্রয়োগের মাধ্যমেই এসমস্ত রং সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণরূপে ধারণা লাভ করতে পারব ৷

 

Content added By
Please, contribute to add content into সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন.
Content