SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Academy

ভেষজ উদ্ভিদ কোনটি? 

Created: 8 months ago | Updated: 8 months ago

 ষষ্ঠ অধ্যায় বনায়ন

কৃষি বনায়ন একটি অতি প্রাচীন ও সনাতন পদ্ধতি। সাম্প্রতিক কালে বনায়নের এ পদ্ধতি কৃষি প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কৃষি বনায়ন হলো কৃষিজ ও বনজ বৃক্ষের সম্মিলিত চাষাবাদ পদ্ধতি, যাতে একজন কৃষক ভূমির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদন ও মুনাফা অর্জন করতে পারেন। এ বনায়ন পদ্ধতি পরিবেশবান্ধবও বটে। সারাদেশে পরিকল্পিত উপায়ে বনজ সম্পদ বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি। এ জন্য কৃষি ও সামাজিক বনায়ন সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। এ বনায়নের গুরুত্ত্বও আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। সরাসরি এসব বনায়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে দেশের বনজ সম্পদ বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবেশ বাস উপযোগী রাখতে হবে। এ অধ্যায়ে তোমরা নার্সারিতে চারা তৈরির কৌশল ও এর অবদান সম্পর্কে জানবে ও দক্ষতা অর্জন করবে। এছাড়া কৃষি ও সামাজিক বনায়নের গুরুত্ব, সমস্যা এবং সমাধানের উপায় নির্ধারণ করতে পারবে। সামাজিক ও কৃষি বনায়নের নকশা তৈরি করতে পারবে। সড়ক ও বাঁধের ধারে বৃক্ষরোপণ করতে পারবে।

- কৃষি ফসল

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

• নার্সারি তৈরির কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারব।

• পলিব্যাগে চারা তৈরি করতে পারব।

• কৃষি বনায়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব ।

কৃষি বনায়নের সমস্যাসমূহ সমাধানের উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব।

 

 

 

• সামাজিক ও কৃষি বনায়নের নকশা বর্ণনা করতে পারব। সামাজিক ও কৃষি বনায়নের নকশা প্রস্তুত করতে পারব ।

• মিত্রবৃক্ষ রোপণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব ।

• সড়ক ও বাঁধের ধারে বৃক্ষরোপণ পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারব।

পাঠ ১ নার্সারি

নার্সারি হলো চারা উৎপাদন কেন্দ্র যেখানে চারা উৎপাদন করে রোপণের পূর্ব পর্যন্ত পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। নার্সারি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জনের দরকার। এ জন্য সুবিধামতো সময়ে শিক্ষকের সাথে নার্সারি পরিদর্শন করবে। শ্রেণিতে নার্সারির ভিডিও চিত্র দেখবে। সম্ভব না হলে চার্টে নার্সারির চিত্র পর্যবেক্ষণ করবে। নার্সারি সম্পর্কে শিক্ষক যেসব প্রশ্ন করেন তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।

নার্সারিতে ভাষার পরিচ

পলিব্যাগে চা

আমাদের দেশে অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বনজ সম্পদ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। এর ফলে আমাদের পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বনায়ন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ করা দরকার। আর যেকোনো বনায়নে প্রয়োজন সবল চারা। এ আমাদের নার্সারির উপর নির্ভর করতে হয় ।

নার্সারির প্রকারতেন

১। স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে নার্সারি দুই ধরনের হয়, যথা-

১১০

কৃষিশিক্ষা

(ক) স্থায়ী নার্সারি (খ) অস্থায়ী নার্সারি

(ক) স্থায়ী নার্সারি এ ধরনের নার্সারিতে বছরের পর বছর চারা উৎপাদন করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকে। আমাদের দেশে সরকারি, বেসরকারি উভয় ব্যবস্থায় স্থায়ী নার্সারি রয়েছে। এখান থেকে উন্নত মানের চারা সরবরাহ করা হয়।

(খ) অস্থায়ী নার্সারি : সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন রাস্তা নির্মাণের পর রাস্তার দুইপাশে গাছ লাগায় এ জন্য অস্থায়ী নার্সারি স্থাপন করে। যেখানে এ রকম বাগান তৈরি করা হয় বা ব্যাপক হারে বনায়ন করা হয়, সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে নার্সারি স্থাপন করা হয়। এতে চারা পরিবহনে খরচ কম হয়। সতেজ চারা সহজে পাওয়া যায়।

২। মাধ্যমের উপর নির্ভর করে নার্সারিকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়-

(ক) পলিব্যাগ নার্সারি : এ ক্ষেত্রে চারা পলিব্যাগে উৎপাদন ও পরিচর্যা করা হয়। পলিব্যাগ সহজে নিরাপদ জায়গায় নেওয়া যায় । ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে চারা রক্ষা করা যায়

(খ) বেড নার্সারি : এ ক্ষেত্রে সরাসরি মাটিতে বেড করে চারা উৎপাদন করা হয়। অনেক সময় বেডে

উৎপাদিত চারা উত্তোলন করে পলিব্যাগে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া রয়েছে- গার্হস্থ্য নার্সারি,

প্রজাতিভিত্তিক নার্সারি ও ব্যবহারভিত্তিক নার্সারি।

কাজ-১: নার্সারি সম্পর্কীয় নিচের ম্যাপ দুইটি পোস্টার পেপারে দলগতভাবে সম্পন্ন কর।

রেইনটি

কাঠ উৎপাদনকারী

প্রজাতি

ব্যবহার

গাছের নার্সারি

ভিত্তিক

নার্সারি

ভিত্তিক

নার্সারি

কৃষিক্ষেত্রে নার্সারির প্রয়োজনীয়তা

রোপণের জন্য সব সময় নার্সারিতে সুস্থ, সবল ও সব বয়সের চারা পাওয়া যায়।

নার্সারিতে সহজে চারার যত্ন নেওয়া যায়। গর্জন, শাল, তেলসুর প্রভৃতি গাছের বীজ গাছ থেকে ঝরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোপণ করতে

হয়। এসব উদ্ভিদের চারা তৈরির জন্য নার্সারিই উত্তম স্থান।

বনায়ন

১১১

কাঁঠাল, চম্পা প্রভৃতি গাছের বীজ ফল থেকে বের করার পরই রোপণ না করলে অঙ্কুরোদগমের হার কমে যায়। এসব গাছের চারা তৈরির জন্য নার্সারির প্রয়োজন।

অল্প শ্রমে ও কম খরচে চারা তৈরির জন্য নার্সারি উপযুক্ত স্থান।

চারা বিতরণ ও বিপণন করতে সুবিধা হয়।

কাজ-২ : দলীয় আলোচনার মাধ্যমে নার্সারির গুরুত্ব তালিকা আকারে লিখ ।

পাঠ ২ : নার্সারি তৈরির কৌশল

নার্সারি তৈরি করতে হলে প্রথমেই যা দরকার তা হলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা নির্দিষ্ট কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে করতে হয়। স্থায়ী নার্সারি স্থাপনকালে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে :

১. স্থান নির্বাচন

২. নার্সারি জায়গার পরিমাণ নির্ণয়

৩. বেড়া নিৰ্মাণ

৪. ভূমি উন্নয়ন

৫. অফিস ও বাসস্থান

৬. বিদ্যুতায়ন

নার্সারির স্থান নির্বাচন

৭. রাস্তা ও পথ

৮. সেচ ব্যবস্থা

৯. নর্দমা ও পার্শ্বনালা

১০. নার্সারি ব্লক

১১. নার্সারি বেড

১২. পরিদর্শন পথ

নির্বাচিত জমি উর্বর ও দোআঁশ মাটিসম্পন্ন হতে হবে। অপেক্ষাকৃত উঁচু, সমতল ও আলো বাতাস সম্পূর্ণ হতে হবে। পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকবে। মালামাল ও চারা পরিবহনে উন্নত ব্যবস্থা থাকবে।

এক বর্গমিটার (১০.৭৫ বর্গফুট) নার্সারীর বীজতলায় বেডে নিম্নলিখিত সংখ্যক চারার সংস্থান হবে-

১০ সে.মি.

পলিব্যাগের সাইজ

প্রতি পলিব্যাগে চারার সংখ্যা

১৫সে.মি. x ১০ সে.মি.

১৫ সে.মি.

১৮ সে.মি. x ১২ সে.মি.

৬৫টি

৪৫টি

২৫ সে.মি. x ১৫ সে.মি.

২৬টি

 

 

 

 

বনায়ন

১১৫

পাঠ ৪ : কৃষি বনায়নের গুরুত্ব

কৃষি বনায়ন হলো এক ধরনের ভূমি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সুপরিকল্পিতভাবে বনায়ন করা হয়। এ ধরনের বনায়নে একই জমিতে বৃক্ষ, ফসল, পশুখাদ্য ও মৎস্যখাদ্য উৎপাদন করা হয়। এ বনায়নে কোনো উপাদান অন্য উপাদানকে ব্যাহত করে না। সব উপাদান সমন্বিতভাবে পরিবেশ সমৃদ্ধ করে। অর্থনৈতিকভাবে এ বনায়ন লাভজনক হয়। এ বনায়নের ফলে ভূমির বহুমুখী ব্যবহার করা যায় ।

কাজ

১। শিক্ষক কর্তৃক প্রদর্শিত চিত্র পর্যবেক্ষণ করে এটিকে কেন কৃষি বনায়ন বলা হয় তা দলে উপস্থাপন কর। ২। দলীয়ভাবে আলোচনা করে কৃষি বনায়ন কেন গুরুত্বপূর্ণ তা পোস্টার পেপারে লিখে দেখাও।

-ফলের চাষ

চিত্র সমন্বিত মৎস্য, বৃক্ষ ও ফসল চাষের নমুনা

জনসংখ্যা সমস্যা আমাদের জাতীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। আমাদের তুমি সীমিত। বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এ ভূমি সক্ষম নয়। সুতরাং বৃক্ষায়ন শুধু বনভূমিতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। কৃষি বনায়নকে আধুনিক প্রযুক্তি হিসাবে গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। তাই সাধারণ কৃষি খামার, রাস্তা ও বাঁধের ধার, বাড়ির আঙিনা, প্রতিষ্ঠানের চারপাশ সর্বত্র কৃষি বনায়ন জরুরি। এ জন্য সারাদেশে নিবিড় ও ব্যাপক কৃষি বনায়ন বিপ্লব ঘটানো প্রয়োজন ।

বনায়ন

১১৩

পাঠ ৩ : পলিব্যাগে চারা তৈরি করা

হাতে কলমে পলিব্যাগে বীজ বপন ও চারা তৈরির জন্য শ্রেণি সংগঠন ও নির্দেশাবলি

১. সুবিধামতো দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেক দলের দলনেতা নির্বাচন কর ।

২. প্রত্যেক দলের দলনেতা পলিব্যাগে চারা তৈরিসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ বুঝে নাও ৩. প্রত্যেক দল কাজের ধাপ অনুসরণ করে পলিব্যাগ তৈরি কর।

৪. এবার পলিব্যাগে বীজ বপন করে পর্যবেক্ষণ কর

৫. পলিব্যাগে চারা তৈরিসংক্রান্ত দলীয় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ শিক্ষকের কাছে জেনে নাও ।

৬. পাঠের এ অংশ মাঠে সম্পন্ন কর।

বিষয় : পলিব্যাগে বীজ বপন ও চারা তৈরি।

উপকরণ : বীজ, দোআঁশ মাটি, গোবর, কম্পোস্ট, ১৫ সে.মি. x ১০ সে.মি. আকারের পলিব্যাগ, পানি দেওয়ার ঝাঁঝর।

কাজের ধাপ :

১. মাটি ভেঙে গুঁড়া করে নাও ।

২৪ ভাগের ৩ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবর বা কম্পোস্ট সার ভালো করে মেশাও।

৩. পলিব্যাগের তলাসহ দুই সারিতে ৮টি ছিদ্র কর। ৪. পলিব্যাগে ভালো করে মাটি ভর্তি কর ।

৫. ছায়াযুক্ত সমতল জায়গায় সারিবদ্ধভাবে পলিব্যাগগুলো সাজাও।

৬. মাটিভর্তি পলিব্যাগের উপরে আঙুল দিয়ে দুইটি গর্ত করো। প্রতিটি গর্তে একটি করে বীজ দাও। ৭. গুঁড়ামাটি দিয়ে বীজ ভালো করে ঢেকে দাও। কাবার দিয়ে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে দাও ।

৮. বীজ বপনের তারিখ খাতায় লিখে রাখ ।

৯. প্রতিদিন সকাল-বিকাল ঝাঁঝর দিয়ে পরিমিত পরিমাণ পানি দাও ।

১০. অঙ্কুরোদগম শুরুর তারিখ খাতায় লিখে রাখ ।

১১. চারার উচ্চতা ১৫ সে.মি. হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ কর। ১২. পরীক্ষার সব তথ্য খাতায় লিখে রাখ। প্রতিবেদন তৈরি করে দলীয়ভাবে শিক্ষকের নিকট জমা দাও

১১৬

কৃষিশিক্ষা

কৃষি বনায়ন আমাদের জীবনের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ সম্পর্কে তোমাদের তৈরি তালিকার সাথে নিচের বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখ ও আলোচনা কর—

কৃষি বনায়নের গুরুত্ব

খাদ্য চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।

গৃহনির্মাণ ও আসবাবসামগ্রী তৈরিতে সাহায্য করে

জ্বালানি সমস্যা মেটায়।

8. একই জমিতে বিভিন্ন রকম ফসল ও বৃক্ষ রোপণ করা যায়।

অর্থ আয়ের ব্যবস্থা হয়, কর্মসংস্থান বাড়ে, ফলে দারিদ্র্য বিমোচন হয়

৬. স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করা যায়।

.

মাটিক্ষয় রোধ হয় ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশ জীবের বসবাস উপযোগী হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়

পশু পাখির খাদ্য ও আবাসস্থল সৃষ্টি হয়।

35. বৃষ্টিপাত বেশি হয় ।

মরুকরণ, বন্যা ও ভূমিধ্বস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মোট কথা, কৃষি বনায়ন গ্রামীণ উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

পাঠ ৫ : কৃষি বনায়নের সমস্যা ও সমাধান

কৃষি বনায়ন হলো একটি ভূমি ব্যবহার পদ্ধতি, এর ফলে

• একই জমিতে বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল উদ্ভিদের সাথে পশু পাখির সমন্বিত চাষ হয় । • লতা জাতীয় ফসলকে একত্র করে মিশ্র চাষ করা হয়।

• কৃষি অথবা বনভিত্তিক একক ভূমি ব্যবহারের চেয়ে অধিকতর উৎপাদন ও উপকারিতা পাওয়া যায়

 

ব্যারনের সমস্যা

কৃষি বনায়ন সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী একটি লাভজনক প্রযুক্তি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু কৃষি বনায়নে যথেষ্ট সমস্যাও রয়েছে। এবার তোমরা কৃষি বনায়নের সমস্যা ও তা সমাধানের উপায় সম্পর্কে তোমাদের নিজেদের মতামতের সাথে নিচের বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখো-

• কৃষি বনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ কমছে।

• রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।

• পোকামাকড় ও ক্ষতিকর জীবজল্লুর আক্রমণে উৎপাদন কমছে।

• ভালো বীজ ও সারের অভাব।

কৃষিবন রক্ষনাবেক্ষণের সমস্যা।

• শুকনো মৌসুমে পানি সেচের অভাব।

• উৎপাদিত দ্রব্য সংরক্ষণের অভাব।

• যাতায়াতে সুব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করা যায় না। ফলে উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। অল্প মূল্যে কৃষককে পণ্য বিক্রয় করতে হয়।

কৃষি যন সম্পর্কে কৃষকের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার অভাব।

কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা না থাকা।

এলাকাভিত্তিক কৃষিপণ্য সংরক্ষণের অভাব।

 

(১১৮

কৃষিশিক্ষা

কৃষি বনায়নের সমস্যাসমূহের সমাধান

কৃষি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য যেসব জায়গায় সামাজিক বনায়ন করা হয় সেসব জায়গা কৃষি বনায়নের আওতায় আনা দরকার। শস্য পর্যায় অনুসরণ করে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে যাতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। আলোর ফাঁদ, ফাঁদ যন্ত্র, নিম ও বিষ কাটালির নির্যাস ব্যবহার করে ক্ষতিকর জীব-জন্তু ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুষিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষি বনায়ন সম্পর্কে কৃষককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে ভালো বীজ ও সার সরকারিভাবে সরবরাহ করতে হবে। কৃষিবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনগণের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে যাতে কৃষক সহজে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে সঠিক মূল্য পেতে পারে। এলাকাভিত্তিক কৃষি শিল্পকারখানা তৈরি করতে হবে যাতে করে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয় তাছাড়া কৃষিপণ্য তাৎক্ষণিকভাবে সংরক্ষণের জন্য যথেষ্টসংখ্যক হিমাগারের ব্যবস্থাও সরকারি এবং বেসরকারিভাবে করা প্রয়োজন

কাজ: কৃষি বনায়নের চিত্র ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর। নিজের মতো করে কৃষি বনায়ন সম্পর্কে বল। বাস্তবে তোমরা কৃষি বনায়ন দেখেছ কি? দেখে থাকলে এ বনায়নের বৈশিষ্ট্য বলো। কৃষি বনায়ন কেন লাভজনক? আমাদের দেশে কৃষি বনায়নের বাধা বা সমস্যাসমূহ কী কী তার তালিকা তৈরি কর। দলগত আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যা দূর করার উপায়গুলো বের কর

পাঠ ৬ : সামাজিক বনায়নের নকশা বর্ণনা

সামাজিক বন

উদ্ভিদ বান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য মানুষ পরিকল্পনা করে নিজস্ব চেষ্টায় এ বন তৈরি করে। বসতবাড়ি, প্রতিষ্ঠান, বাঁধ ও সড়ক, উপকূলীয় অঞ্চল, পাহাড়ি পতিত জমিতে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হয়।

সড়ক ও বাঁধে সামাজিক বনায়ন

বাংলাদেশে সচরাচর সড়ক ও বাঁধে গাছ রোপণের জন্য একসারি ও দ্বি-সারি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় । সড়ক বা বাঁধের ঢাল অনুযায়ী সারির সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে।

 

১১৯

একসারি পদ্ধতি

রাস্তা সরু হলে এ পদ্ধতিতে অনুসরণ করে গাছ লাগানো হয়। গাছ লাগানোর সময় একই ধরনের দূরত্ব অনুসরণ করা হয়।

ছি-সারি পদ্ধতি

রাস্তা বা বাঁধের ধার চওড়া হলে এ পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়। গাছ লাগানোর সময় সঠিক নকশা

অনুসরণ করা আবশ্যক।

সড়কের ধারে বৃক্ষরোপণ

বৃক্ষরোপণ কৌশল এখানে গাছ লাগানোর স্থান অপর্যাপ্ত। তাই সরু লাইন করে গাছ লাগানো হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে বনায়নের সময় সাধারণত ২ মিটার x ২ মিটার দূরে দূরে গাছ লাগানো হয়

গাছ নির্বাচনে বিবেচ্য কৌশলসমূহ

যেসব গাছের পাতা ছোট ও চিকন সেরকম গাছ লাগাতে হবে। রাস্তার ধারে বহুস্তরী বনায়ন করা ভালো, অর্থাৎ গাছের নিচে বিরুৎ বা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের সংমিশ্রণ দিয়ে বনায়ন করা দরকার। অন্যথায় মাঝারি বা ছোট আকৃতির গাছ নির্বাচন করতে হবে

গাছ লাগানোর কৌশল

১. যানবাহন ও জনগণের চলাচলের জন্য পাশে যে স্থান থাকে তাতে এক সারি গাছ লাগানো যেতে পারে। স্থানভেদে জমির প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে একাধিক সারি গাছ লাগানো যেতে পারে। যদি দুইসারি লাগানো হয় তবে ১.৫-২.৫ মিটার দূরে দূরে গাছ লাগানো যেতে পারে।

২. বাঁধের ধারে ঢালু অংশে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগানো হয়। তবে এখানে প্রথম সারির একটি গাছ থেকে অন্য গাছের যে দূরত্ব তা ঠিক রেখে দুইটি গাছের মধ্যবর্তী স্থান থেকে দ্বিতীয় লাইন শুরু করা বাঞ্ছনীয়।

৩. সড়কের নিচের অংশে এক সারিতে গাছ লাগানো হয়। মাটির যে অংশ নিচে তাতে মান্দার,

জারুল, হিজল প্রভৃতি গাছ লাগানো হয়

৪. প্রথম লাইন যেখান থেকে শুরু হবে, দ্বিতীয় লাইন তার বরাবর না হয়ে মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু হবে ফলে দুই মিটার দূরে দূরে গাছ লাগানো হলেও প্রকৃতপক্ষে একটি চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব হবে ২ মিটার x ১ মিটার। এর ফলে মাটিক্ষয় রোধ করার ক্ষমতা বাড়বে। এতে বাঁধ নষ্ট হয় না।

কৃষিশিক্ষা

গাছ নির্বাচন

১. বাঁধের দুই পাশে দ্বিবীজপত্রী উঁচু ও বেশি শাখা-প্রশাখা সম্পন্ন গাছ লাগানো উচিত নয়। কারণ

বেশি উঁচু গাছ হলে মাটির ক্ষয় বেশি হয়। ২. বেশি এলাকাজুড়ে মূল বা শিকড় থাকে এমন গাছ নির্বাচন করা উত্তম। যেমন- নারকেল, সুপারি প্রভৃতি এক-বীজপত্রী গাছ। এদের শিকড় বেশি এলাকা জুড়ে থাকে বলে মাটির ক্ষয়

রোধ হয়।

৩. বাঁধের পাশে গাছ লাগানোর সময় যেসব গাছের পাতা গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার হয়, সেসব গাছ নির্বাচন করা দরকার । কারণ বন্যার সময় এসব বাঁধ গৃহপালিত পশুর আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

পাঠ ৭ : সড়ক ও বাঁধের ধারে বৃক্ষরোপণ পদ্ধতি বর্ণনা

সারিবদ্ধ বনায়ন

সড়ক ও বাঁধের ধারে কোথাও এক সারিতে, কোথাও দুই বা তিন সারিতে বনায়ন করা হয়ে থাকে । বৃক্ষরোপণের এ পদ্ধতিকে বলা হয় সারিবদ্ধ বনায়ন। সারিবদ্ধ বনায়ন বা স্ট্রিপ বনায়ন সামাজিক বনায়নের একটি উল্লেখযোগ্য উৎপাদন কৌশল। সারিবদ্ধ বনায়নে সাধারণত শিশু, আকাশমনি, অর্জুন, মেহগনি, জারুল, শিরীষ, রেইনট্রি, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, নিম প্রভৃতি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। বন বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও বিশ্বস্বাস্থ্য কর্মসূচির সহায়তায় এবং নিজস্ব কর্মসূচির আলোকে সারাদেশে ব্যাপকভাবে সারিবদ্ধ বনায়ন সৃজন করেছে। ১৯৯০ সাল থেকে থানা বনায়ন ও নার্সারি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সারিবদ্ধ বনায়ন পদ্ধতিতে বাগান সৃজন কর্মসূচি চালু আছে। সারিবদ্ধ বনায়নের প্রচলিত তিনটি মডেল হলো- মডেল- ১. বড় সড়ক, রেল ও বাঁধ বনায়ন

মডেল - ২. সংযোগ সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা বনায়ন

মডেল- ৩. মহাসড়ক ও উঁচু রেলপথ বনায়ন

মডেল- ১-এর বর্ণনা

১। সড়ক/বাঁধের কিনারা থেকে ৩০ সে.মি. নিচে অড়হরের সারি থাকবে।

২। অড়হরের সারি থেকে ৩০ সে.মি. নিচে গাছের প্রথম সারি যাতে ২ মিটার ব্যবধানে বৃক্ষ রোপণ করা হবে।

১২৮

কৃষিশিক্ষা

মিশ্র উদ্ভিদ চাষের এলাকা নির্বাচন

মাঝারি নিচু ও নিচু এলাকা

যেসব গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে সেসব গাছ নিচু এলাকায় লাগানো যেতে পারে। যেমন- হিজল, রয়না, জারুল, করছ, মান্দার, কড়ই ইত্যাদি উদ্ভিদ নিচু এলাকায় রোপণ করা হয়। হাওর, বিল ও পার্শ্ববর্তী নিচু এলাকায় এসব উদ্ভিদ রোপণ করা হয়

মাঝারি উঁচু ও উঁচু এলাকা

এসব এলাকা সব রকম গাছ লাগানোর জন্য উপযোগী। আম, কাঁঠাল, তাল, খেজুর, মেহগনি, শাল, সেগুন, বেল, কদবেল, আমলকী, বহেরা, হরীতকী প্রভৃতি উদ্ভিদের মিশ্র বৃক্ষ চাষ এসব এলাকায় হয়ে থাকে । বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর প্রভৃতি এলাকায় এসব উদ্ভিদের চাষ হয়ে থাকে । এলাকাভিত্তিক শিমুল, কার্পাস, আনারস, কমলা, কলা প্রভৃতি ফসলি উদ্ভিদ ও মিশ্র বৃক্ষের ফাঁকে ফাঁকে চাষ করা হয়।

কাজ

নিচের কাজ দুইটি দলগতভাবে উপস্থাপন করঃ

১. তোমাদের এলাকায় কী কী মিশ্র বৃক্ষ চাষ করা যায় পোস্টার পেপারে তার একটি তালিকা তৈরি

কর। ২. তোমাদের এলাকায় মিশ্র বৃক্ষরোপণ না করে শুধু বনজ উদ্ভিদের চাষ করলে কী কী অসুবিধা হবে তা উল্লেখ কর।

মিশ্র বৃক্ষ চাষের প্রয়োজনীয়তা

১. এলাকাভিত্তিক বৃক্ষরোপণের প্রজাতি নির্বাচন করা যায়।

২. এলাকায় বসবাসকারী জনগণের সব রকম চাহিদা মেটানো যায়

৩. জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয় ।

৪. পশুপাখি ও কীটপতঙ্গের আবাস সৃষ্টি হয় এবং খাদ্যের চাহিদা মেটে।

৫. পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।

৬. গ্রামীণ জনসাধারণের কাজের ক্ষেত্র বাড়ে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে, ফলে দারিদ্র্য বিমোচন হয়।

৭. জ্বালানি, পুষ্টি, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজনে এ বন ভূমিকা রাখে ।

৮. পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকে, বৃষ্টিপাত হয়।

৯. ভূমিক্ষয় ও ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।

Content added || updated By

Related Question

View More