নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিসাববিজ্ঞান - পারিবারিক ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগের হিসাব | NCTB BOOK

পারিবারিক যে সমস্ত লেনদেন সংঘটিত হয় সেগুলো, বিভিন্ন হিসাব বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। বিচ্ছিন্নভাবে লিপিবদ্ধকৃত লেনদেন থেকে পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং আয়-ব্যয়ের কোনো চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং আয়-ব্যয়ের চিত্র পাওয়ার জন্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা অপরিহার্য। আর্থিক বিবরণীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের আয় ব্যয়ের চিত্র এবং আর্থিক অবস্থার বিবরণী তৈরির মাধ্যমে পরিবারের সম্পদ ও দায়ের একটি প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। পারিবারিক আর্থিক বিবরণীর ধাপসমূহ হলো-

  1. প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব (Receipts and Payments Accounts)
  2. আয়-ব্যয় বিবরণী ( Statement of Income and Expenditure)
  3. আর্থিক অবস্থার বিবরণী (Statement of Financial Position)

১। প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব : পারিবারিক দৈনন্দিন নগদ লেনদেনের সংরক্ষিত হিসাব থেকে বছর শেষে শ্রেণিবদ্ধভাবে এবং সংক্ষিপ্ত আকারে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয়, তাকে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব বলা হয় ৷ প্ৰাপ্তি ও প্রদান হিসাব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নগদান বইয়ের অনুরূপ; কিন্তু এটি নগদান বই নয়। এটি পারিবারিক হিসাব-নিকাশের প্রথম ধাপ। সকল প্রকার নগদ লেনদেনের সমন্বয়ের এ হিসাব প্রস্তুত করা হয়।
সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তি ডেবিট পাশে এবং সকল প্রকার নগদ প্রদান ক্রেডিট পাশে হিসাবভুক্ত করা হয়। চলতি সালে নগদ প্রাপ্ত যেকোনো সালের মূলধন ও মুনাফাজাতীয় আয়সমূহ প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাবের ডেবিট দিকে এবং যেকোনো সালের মূলধন ও মুনাফাজাতীয় ব্যয়সমূহ ক্রেডিট দিকে লিখে প্রাপ্তি ও প্রদান হিসাব তৈরি করা হয় ।

২। আয়-ব্যয় বিবরণী : হিসাবকাল শেষে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পর পরিবারের আয় ও ব্যয়ের উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি নির্ণয়ের জন্য শুধু চলতি সালের মুনাফা জাতীয় আয় এবং মুনাফাজাতীয় ব্যয়ের সাহায্যে যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয়, তাকেই আয়-ব্যয় বিবরণী বলা হয়। আয়-ব্যয় বিবরণীতে যদি ব্যয়ের চেয়ে আয়ের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে উদ্ধৃত্তকে বলা হয় ব্যয়াতিরিক্ত আয় বা আয় উদ্বৃত্ত আর যদি আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে তকে বলা হয় আয়াতিরিক্ত ব্যয় বা ঘাটতি। ব্যয়াতিরিক্ত আয় দ্বারা পারিবারিক তহবিল বৃদ্ধি হয় এবং ঘাটতি দ্বারা পারিবারিক তহবিল হ্রাস পায় ।

৩। আর্থিক অবস্থার বিবরণী : সংক্ষেপে আর্থিক অবস্থার বিবরণী বলতে বুঝায় সম্পদ এবং দায়ের বিবরণী। অর্থাৎ কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনের প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার সম্পদ এবং দায়ের সাহায্যে যে বিবরণী তৈরি করা হয়, তাকেই আর্থিক অবস্থার বিবরণী বলে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো পরিবারেরও কিছু সম্পদ ও দায় থাকে। সম্পদসমূহ, যথা- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, বিনিয়োগ, নগদ টাকা ইত্যাদি। দায়সমূহ, যথা— ঋণ, বকেয়া খরচ, পাওনাদার ইত্যাদি। যেহেতু পরিবার কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, যেহেতু এর কোনো প্রারম্ভিক মূলধন থাকে না। তবে পরিবারের তহবিল নির্ণয় করা হয়। পারিবারিক তহবিল আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে দায় হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। আয়-ব্যয় বিবরণীর ব্যয়াতিরিক্ত আয় পারিবারিক তহবিলে যোগ হয় এবং ঘাটতি হলে পারিবারিক তহবিল থেকে বাদ দিয়ে দেখানো হয় ৷

 

Content added By