নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - বয়ন তন্তু | NCTB BOOK

সাধারণত বস্ত্র তৈরি হয় সুতা থেকে। তাই সুতাকে বস্ত্রের ক্ষুদ্রতম মৌলিক একক বলে মনে করা হতো। কিন্তু এ ধরনের সুতা আবার কতগুলো আঁশ বা তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত। তন্তু বলতে যে কোনো প্রকার আঁশ বোঝালেও বস্ত্রশিল্পে তন্তু বলতে বয়ন তন্তুকেই বোঝানো হয়ে থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায়, বস্ত্র তৈরির কাজে যে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় তাকেই বয়ন তন্তু বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, বস্ত্রের মৌলিক ক্ষুদ্রতম এককই বয়ন তন্তু । ল্যাটিন শব্দ টেক্সো (Texo) থেকে টেক্সটাইল (Textile) শব্দের উৎপত্তি। টেক্সো কথাটির অর্থ হচ্ছে বুনন করা। এ জন্য বস্ত্রের তন্তুকে বয়ন তন্তু বা টেক্সটাইল ফাইবার বলা হয়।

সাধারণত যেসব গুণ থাকলে কোনো আঁশ বা তন্তুকে বয়ন তন্তু হিসেবে গণ্য করা যায় সেসব বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে কিছু আছে মুখ্য বা প্রধান এবং কিছু রয়েছে গৌণ বা মাধ্যমিক গুণাবলি। প্রধান বা মুখ্য গুণাবলিগুলো হলো দৈর্ঘ্য প্রস্থের অনুপাত, তন্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি, নমনীয়তা, সমরূপতা, আসঞ্জনপ্রবণ ইত্যাদি। অন্যদিকে গৌণ বা মাধ্যমিক গুণাবলিগুলোর মধ্যে রয়েছে রেসিলিয়েন্সি, উজ্জ্বলতা, স্থিতিস্থাপকতা, বিশোষণ, তাপ পরিবাহিতা, সংকোচন ইত্যাদি। নিচে বয়ন তন্তুর গুণাবলি উল্লেখ করা হলো-

মূখ্য গুণাবলি

১। দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত (Length to width ratio)–বয়ন তন্তুর ব্যাসের চেয়ে দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে বড় হতে হবে। অধিকাংশ প্রাকৃতিক তন্তুতেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সাধারণত তন্তুর ব্যাস যত সূক্ষ্ম হবে, তন্তু তত নমনীয় ও মসৃণ হবে

২। তন্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি (Tenacity) - বয়ন তন্তুর পর্যাপ্ত শক্তি থাকতে হবে। ন্যূনতম শক্তি না থাকলে তন্তুকে সুতা বা বস্ত্রে পরিণত করা সম্ভব হবে না। প্রকৃতপক্ষে তন্তু কতোটুকু টান সহ্য করতে পারে তা দিয়েই তন্তুর শক্তি প্রকাশ করা হয়।

৩। নমনীয়তা (Flexibility) - বয়ন তন্তুর তৃতীয় মুখ্য গুণাবলি হচ্ছে নমনীয়তা। যেহেতু সুতা ও ব ভাঁজ করতে হয়, তাই বস্ত্রে ব্যবহৃত তন্তুকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে। নমনীয়তার জন্যই বয়নতন্তু দিয়ে সুতা পাকানো যায় ৷

৪। আসঞ্জনপ্রবণ (Cohesiveness) - এ বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট ছোট আঁশগুলো একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। যার ফলে তন্তু থেকে উৎপাদিত সুতা বস্ত্র শিল্পে ব্যবহৃত হয় ।

গৌণ গুণাবলি –

১। রেসিলিয়েন্সি (Resiliency) - তন্তুকে ভাঁজ করা, মোচড়ানো বা কুঁচকানোর পর আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতাকে রেসিলিয়েন্সি বলে। বস্ত্রের কুঞ্চন প্রতিরোধের জন্য তন্তুর এ গুণটি থাকা উচিত। যেসব বস্ত্রের স্থিতিস্থাপকতা ভালো তাদের রেসিলিয়েন্সিও ভালো হয় ৷

২। উজ্জ্বলতা (Luster) - একটি তন্তুর নিজস্ব চাকচিক্য, মসৃণ ও দীপ্তিময় ভাবই তার ঔজ্জ্বল্য। উজ্জ্বলতা বয়ন তন্তুর একটি প্রয়োজনীয় গুণ। রেশম তন্তুর স্বাভাবিক চাকচিক্যের কারণেই একে তন্তুর রানী হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকাল বিভিন্ন ধরনের তন্তুতে সমাপ্তিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকচিক্য সৃষ্টি করা যায়।

৩। বিশোষণ (Absorbency) - যেসব তন্তুর আর্দ্রতা শোষণ ক্ষমতা ভালো, তাতে সহজেই রং ও ফিনিশ প্রয়োগ করা যায়। এরূপ তন্তুর বস্ত্র সহজে ধোয়া যায় এবং পরিধানের জন্য সুবিধাজনক হয়। যেসব বস্ত্রের বিশোষণ ক্ষমতা কম, তাদের তাড়াতাড়ি ধুয়ে শুকিয়ে নেয়া যায় ৷

৪। স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity) - বয়ন তন্তুকে স্থিতিস্থাপক হতে হয় অর্থাৎ তন্তু টানলে প্রসারিত হবে এবং টান সরিয়ে নিলে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

৫। সমরূপতা (Uniformity) - সুতা তৈরিতে একই দৈর্ঘ্য-প্রস্থের নমনীয়, পাক বা মোচড় দেওয়ার - ক্ষমতাসম্পন্ন তন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম তন্তুর মতো সমরূপ প্রাকৃতিক তন্তু পাওয়া সহজ নয়। তবে এই বৈশিষ্ট্যের ফলে তৈরি সুতার মান ভালো হয় এবং সুতা সমান ও মসৃণ হয় ৷

৬। তাপ পরিবাহিতা (Heat conductivity) - তাপ পরিবাহক হিসেবে ফ্ল্যাক্স তন্তুর স্থান সবার উপরে। তুলাও ভালো তাপ পরিবাহক হওয়ায় গরমকালে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়। প্রোটিন তন্তু তাপ কুপরিবাহী। তাই সিল্ক ও উল শীতকালের পোশাকের জন্য উপযোগী।

কাজ - বয়ন তন্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণাবলি উল্লেখ করে দুটি চার্ট তৈরি কর।

Content added By