অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আকাইদ | NCTB BOOK

পরিচয়
খতম শব্দের অর্থ শেষ, সমাপ্ত। আর নবুয়ত অর্থ পয়গম্বারি, নবিগণের দায়িত্ব ইত্যাদি। সুতরাং খতমে নবুয়ত অর্থ নবিগণের দায়িত্বের পরিসমাপ্তি বা নবুয়তের সমাপ্তি । মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বহু নবি-রাসুল প্রেরণ করেন। এ ক্রমধারা শুরু হয় হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে, আর হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর আগমনের মাধ্যমে শেষ হয়। নবুয়ত তথা নবি-রাসুল আগমনের এ ক্রমধারাটির সমাপ্তিকেই খতমে নবুয়ত বলা হয়।

যাঁর মাধ্যমে এ ক্রমধারা শেষ হয় তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন বা নবিগণের শেষজন । আর তিনি হলেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)।

তাৎপর্য
আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি । তিনি হলেন খাতামুন নাবিয়্যিন। তাঁর পর আজ পর্যন্ত কোনো নবি আসেন নি আর কিয়ামত পর্যন্ত আসবেনও না । তাঁর মাধ্যমে নবি-রাসুলের আগমনের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খতমে নবুয়তের উপর বিশ্বাস করা অপরিহার্য । এতে বিশ্বাস না করলে মানুষ ইমানদার হতে পারে না।

খতমে নবুয়তের প্রমাণ
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বশেষ নবি। তাঁর মাধ্যমে নবুয়তের ক্রমধারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কুরআন-হাদিসের বহু স্থানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে । নিম্নে আমরা খতমে নবুয়ত এর কিছু প্রমাণ স্পষ্টভাবে জানব।

আল কুরআনের দলিল 

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি মহানবি (স.)-কে খাতামুন নাবিয়্যিন বলেছেন । মহান আল্লাহ বলেন-

অর্থ : “মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি তো আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবি ।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৪০)

 

হাদিস শরিফের দলিল

বহু হাদিসে খতমে নবুয়তের প্রমাণ রয়েছে । নিম্নে আমরা এ সম্পর্কে কতিপয় হাদিস জানব-

১. মহানবি (স.) বলেন-

  অর্থ: “আমিই শেষ নবি । আমার পর আর কোনো নবি আসবেন না ।” (সহিহ্ মুসলিম)

২. রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- “রিসালাত ও নবুয়তের ধারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার পর আর কোনো নবি ও রাসুল আসবেন না ।” (জামি তিরমিযি)

৩. নবি করিম (স.) বলেন- “বনি ইসরাইলে নবিগণই নেতৃত্ব দিতেন । যখনই কোনো নবি ইন্তিকাল করতেন তখনই পরবর্তী নবি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন । কিন্তু আমার পর আর কোনো নবি আসবেন না ।” (সহিহ্ বুখারি)

৪. একটি হাদিসে মহানবি (স.) উপমার মাধ্যমে খতমে নবুয়ত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণের দৃষ্টান্ত হলো এরূপ যে, এক লোক একটি দালান নির্মাণ করল । খুব সুন্দর ও লোভনীয় করে তা সজ্জিত করল । কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান ফাঁকা ছিল। লোকজন দালানটির চারদিকে ঘুরে এর সৌন্দর্য দেখছিল আর বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল- “এ কোণে একটি ইট রাখা হয় নি কেন? বস্তুত আমিই সে ইট এবং আমি শেষ নবি ।” (সহিহ্ বুখারি)

পুরো দালানে একটি ইট লাগানো বাকি ছিল । ইট লাগাতেই সে দালান পরিপূর্ণ হয়ে গেল । নবুয়তও তেমনি একটি দালানের সদৃশ। সেই দালানের সর্বশেষ ইট মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) । তাঁর মাধ্যমেই দালানের সর্বশেষ ইট লাগানো হয়। পরিপূর্ণ হয়ে গেল নির্মাণকাজ । ফলে নতুন করে দালানের আর কোথাও ইট লাগানোর প্রয়োজন পড়বে না । অর্থাৎ নবি আসারও দরকার পড়বে না।

 

যৌক্তিক প্রমাণ

যুক্তির মাধ্যমেও আমরা খতমে নবুয়তের প্রমাণ লাভ করতে পারি । যেমন- যুক্তির আলোকে দেখা যায় এক নবির পর অন্য নবি সাধারণত তিনটি কারণে আসতেন । যথা-

ক. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে ;

খ. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা অসম্পূর্ণ হয়ে পড়লে কিংবা তাতে নতুন কিছু সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন হলে ;

গ. পূর্ববর্তী নবির শিক্ষা কোনো বিশেষ স্থান বা কালের জন্য নির্দিষ্ট হলে ।

উপরিউক্ত কারণগুলোর কোনোটিই বর্তমানকালে প্রযোজ্য নয় । কেননা-

১. হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ আজ পর্যন্ত বিদ্যমান। এটি বিন্দুমাত্র বিলুপ্ত বা বিকৃত হয় নি। সুতরাং নতুন কোনো নবি আসার প্রয়োজন নেই ।

২. রাসুল (স.)-এর শিক্ষা এবং দীন ইসলাম পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ । এতে কোনো অসম্পূর্ণতা নেই । এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনেরও প্রয়োজন নেই । আল্লাহ তায়ালাই বলেছেন-

অর্থ : “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৩)

৩. নবি করিম (স.) কোনো বিশেষ স্থান বা কালের জন্য আসেন নি । বরং তিনি সর্বকালের সকলের নবি । কিয়ামত পর্যন্ত সকল স্থানের মানুষের নবি । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ: “আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি ।” (সূরা সাবা, আয়াত ২৮) 

অর্থ : “বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসুল ।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ১৫৮)

নবি আগমনের তিনটি কারণের একটিও বর্তমানে প্রযোজ্য নয় । সুতরাং নতুন কোনো নবি আগমনেরও প্রয়োজন নেই। আমাদের নবিই শেষ নবি। তিনিই খাতামুন নাবিয়্যিন।

কাজ : শিক্ষার্থীরা খতমে নবুয়ত পাঠটি নীরবে পড়বে। শ্রেণির সকলে মিলে তিনজন বক্তা নির্বাচন করবে। এবার তিনজনের একজন খতমে নবুয়তের উপর কুরআনের দলিল, আরেকজন হাদিস শরিফের দলিল এবং অন্যজন যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখবে। তাদের বক্তব্য শ্রেণির সকলে মনোযোগ দিয়ে শুনবে। শিক্ষক মহোদয় সভাপতি ও সমন্বয়ক হিসেবে এ কাজে সহযোগিতা করবেন । সকলে অনুষ্ঠান শেষে বক্তাদের ধন্যবাদ জানাবে।
Content added || updated By

Promotion