ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - জীবনাদর্শ | NCTB BOOK

জন্ম ও পরিচয়

হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন মহানবি (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনি বিখ্যাত কুরাইশ বংশের আবদুল উয্যা নামক পরিবারে ৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের ইতিহাসে যে কয়জন সম্মানিত নারী রয়েছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

হযরত খাদিজা (রা.) আরবের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় তৎকালীন শাম দেশ তথা বর্তমান সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর ব্যবসা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময় লোক নিয়োগ করতেন। তিনি মহানবি (সা.)-এর সততা, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার কথা শুনে তাঁকে তাঁর ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্য অনুরোধ করেন। মহানবি (সা.) তাঁর ব্যবসার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।

 

মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথে বিবাহ

হযরত খাদিজা (রা.) যুবক মুহাম্মাদ (সা.)-এর সততা, বিশ্বস্ততা, উন্নত চরিত্র ও বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের সম্মতিক্রমে ২০টি উট মাহরের বিনিময়ে এ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পর হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর সকল সম্পদের দায়দায়িত্ব রাসুল (সা.)-এর উপর ছেড়ে দেন এবং তাঁকে ইচ্ছামতো সম্পদ খরচ করার অনুমতি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঐ সম্পদ অসহায় ও গরীব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেন।

 

চারিত্রিক গুণাবলি

তিনি একজন আদর্শ নারী, আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ ব্যবসায়ী ও আদর্শ মা ছিলেন। হযরত খাদিজা (রা.) জাহিলি যুগে জন্মগ্রহন করেও সৎ চরিত্রের অধিকারি ছিলেন। কখনো কোনো অন্যায় ও অসৎ কাজ করেননি। মহানবি (সা.) -এর প্রতি তাঁর প্রবল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল। তিনি নারীদের কল্যাণমূলক কাজে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিধবা নারীদেরকে আশ্রয় দিতেন ও অবহেলিত নারীদেরকে নিজ বাড়িতে শিক্ষা দিতেন। তিনি অবসর সময়ে সেলাই করতেন।

তিনি ছিলেন একজন দানশীল ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি শিশু, অসহায় ও এতিমদের ভালোবাসতেন। ইসলামের কল্যাণে তাঁর সকল সম্পদ দান করার কারণে আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। হযরত খাদিজা (রা.)-এর স্বামীভক্তি ছিল অতুলনীয়। তিনি রাসুল (সা.)-এর সকল কাজে শক্তি ও সাহস যোগাতেন। বিপদে-আপদে কাছে থাকতেন, তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন।

 

হযরত খাদিজা (রা.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব

হযরত খাদিজা (রা.) নারীকুলের গৌরব। তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। ইসলাম প্রচারে তাঁর অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি জীবিতকালেই বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। খাদিজা (রা.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.) জান্নাতে নারীদের সর্দার। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সম্মানে বলেন, 'আল্লাহ খাদিজার চেয়ে কোনো মহৎ নারী আমাকে দেননি। তিনি এমন সময় আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন, যখন সবাই আমাকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করেছিল। আমার বিপদের সময় সবাই যখন আমাকে পরিত্যাগ করেছে, তখন তিনি আমাকে সমর্থন ও অর্থ সাহায্য করেছেন।' (মুসনাদে আহমদ) মহানবি (সা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, "বিশ্বের সকল নারীর উপর যে চারজন নারীর সম্মান রয়েছে তন্মধ্যে হযরত খাদিজা (রা.) অন্যতম।'

হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সকল বিপদের বিশ্বস্ত সাথী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জাহেলী যুগের কোন প্রকার অন্যায় ও পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আজও বিশ্বের নারীদের জন্য অনুপম আদর্শ।

দলগত কাজ: বিবি খাদিজা (রা.) -এর চরিত্রের উত্তম গুণাবলির আলোকে একটি পোস্টার তৈরি করো।

Content added By