ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা - প্রমিত ভাষায় কথা বলি | NCTB BOOK

বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষের ভাষা এক রকমের নয়। অঞ্চলভেদে অনেক শব্দের উচ্চারণ আলাদা হয়, কখনো কখনো একই অর্থে ভিন্ন ভিন্ন শব্দও ব্যবহার করা হয়। ভাষাগত এই তফাতকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা। আঞ্চলিক ভাষার কারণে এক অঞ্চলের মানুষের কথা আর এক অঞ্চলের মানুষের বুঝতে সমস্যা হয়। অন্যদিকে প্রমিত ভাষায় কথা বললে সব অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে। প্রমিত ভাষাকে মনে করা হয় ভাষার মান রূপ বা আদর্শ রূপ।

প্রমিত ভাষার দুটি রূপ আছে: কথ্য প্রমিত ও লেখ্য প্রমিত। কথ্য প্রমিত ব্যবহার হয় আনুষ্ঠানিক কথা বলার সময়ে, অন্যদিকে লেখ্য প্রমিত ব্যবহার হয় লিখিত যোগাযোগের কাজে।

প্রমিত ভাষার প্রয়োগ

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অফিস-আদালতে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, সংবাদ পাঠ, হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার, যে কোনো ধরনের ঘোষণা, খেলার মাঠের ধারাবিবরণী, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, কোনো বিষয়ে বক্তৃতা বা আলোচনা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রমিত ভাষায় কথা বলা হয়ে থাকে।

উপরের যে কোনো একটি আনুষ্ঠানিক পরিস্থিতি এককভাবে বা দলে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো। উপস্থাপন করা হয়ে গেলে কোন কোন শব্দ প্রমিত হয়নি, সে ব্যাপারে সহপাঠীদের মতামত নাও এবং নিচের ছক পূরণ করো।

যে শব্দটি প্রমিত হয়নিশব্দটির প্রমিত রূপ
পাঠকাটিপাটকাঠি
গইয়াপেয়ারা
  
  
  
  
  
  
  
  
  

 

শব্দ খুঁজি

অনেক শব্দ তোমার চারপাশের মানুষ ভিন্নভাবে উচ্চারণ করে, কিংবা প্রমিত শব্দের বদলে আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। তোমার উচ্চারণেও হয়তো এ রকম ব্যাপার ঘটে। প্রথম কলামে এ ধরনের শব্দ এবং দ্বিতীয় কলামে এর প্রমিত রূপ লেখো। শব্দটির উচ্চারণে পরিবর্তন ঘটেছে, না কি শব্দের রূপটিই পরিবর্তিত হয়েছে, তা তৃতীয় কলামে নির্দেশ করো।

আঞ্চলিক উচ্চারণ/শব্দপ্ৰমিত শব্দউচ্চারণগত/শব্দগত পরিবর্তন
খাইছিখেয়েছিউচ্চারণগত পরিবর্তন
চঙ্গমইশব্দগত পরিবর্তন
   
   
   
   
   
   
   

 

ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি

আমাদের গলার ভিতরে শ্বাসনালির উপরের অংশে যে পর্দা থাকে, তাকে ধ্বনিদ্বার বা স্বরতন্ত্রী বলে। ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে আসার সময়ে এই ধ্বনিদ্বার কাঁপে। কিছু ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ধ্বনিদ্বার কম কাঁপে, সেগুলোকে বলে অঘোষ ধ্বনি। যেমন: ক খ চ ছ ট ঠ ত থ প ফ। আবার কিছু ধ্বনি উচ্চারণের সময় ধ্বনিদ্বার বেশি কাঁপে, সেগুলোকে বলে ঘোষ ধ্বনি। যেমন: গ ঘ ঙ জ ঝ ঞ ড ঢ ণ দ ধ ন ব ভ ম। ধ্বনিদ্বারের বাইরে থেকে গলায় আলতোভাবে দুটি আঙুল রেখে ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করলে ঘোষ ধ্বনি ও অঘোষ ধ্বনির পার্থক্য বুঝতে পারবে।

উচ্চারণ অনুশীলন করার জন্য নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো। ধ্বনির উচ্চারণ যথাযথ রেখে এগুলো জোরে জোরে পড়ো

উচ্চারণ ঠিক রেখে ছড়া পড়ি

এখানে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা একটি কবিতা দেওয়া হলো। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯২২ সালে মারা যান। তাঁকে বলা হয় ‘ছন্দের জাদুকর’। ‘বেণু ও বীণা’, ‘ফুলের ফসল’, ‘কুহু ও কেকা’ ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই। নিচের কবিতাটি কবির ‘কুহু ও কেকা' নামের বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো; এরপর সরবে পাঠ করো।

ছিন্ন-মুকুল

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সবচেয়ে যে ছোটো পিঁড়িখানি 

সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে, 

ছোটো থালায় হয়নাকো ভাত বাড়া, 

জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে; 

বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোটো 

খাবার বেলায় কেউ ডাকে না তাকে, 

সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল 

তারি খাওয়া ঘুচেছে সব আগে।

সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি,- 

খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে, 

সেই গেছে, হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে 

দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে, 

ছেড়ে গেছে, পুতুল, পুঁতির মালা, 

ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি, 

ভয়-তরাসে ছিল যে সবচেয়ে 

সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি! 

 

সবচেয়ে যে ছোটো কাপড়গুলি 

সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে, 

যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোটো 

আজকে সেটি শূন্য পড়ে কাঁদে; 

সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল 

সেই গিয়েছে সবার আগে সরে, 

ছোট্ট যে-জন ছিল রে সবচেয়ে 

সেই দিয়েছে সকল শূন্য করে।

 

শব্দের অর্থ

গেলাস: গ্লাস। 

ঘেঁষাঘেঁষির ঘর: একসাথে কয়েক ভাইবোন বড়ো হয় যে বাড়িতে। 

ঘোচা: শেষ হওয়া। 

তরাস: ত্রাস, ভয়। 

পিঁড়ি: বসার ছোটো আসন। 

পুঁতির মালা: পুঁতি দিয়ে তৈরি করা মালা। 

পেতে রাখা: বসার জন্য মেঝেতে রাখা। 

ভাতবাড়া: খাওয়ার জন্য ভাত থালায় রাখা। 

শয্যা: শোয়ার বিছানা ।

 

উচ্চারণ ঠিক করি

উচ্চারণের সময়ে অঞ্চলভেদে ঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হতে পারে, কিংবা অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হতে পারে। আবার, অল্পপ্রাণ ধ্বনি বদলে মহাপ্রাণ ধ্বনি হয়ে যেতে পারে, কিংবা মহাপ্রাণ ধ্বনি বদলে অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়ে যেতে পারে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা শিখেছ, বাতাস কম-বেশির কারণে ধ্বনি অল্পপ্রাণ বা মহাপ্রাণ হয়। যেমন: ক গ চ জ ট ড ত দ প ব ধ্বনি অল্পপ্রাণ এবং খ ঘ ছ ঝ ঠ ঢ থ ধ ফ ভ ধ্বনি মহাপ্রাণ।

নিচের ছকে ‘ছিন্ন মুকুল' কবিতা থেকে কিছু শব্দ দেওয়া হয়েছে। যেসব ধ্বনির উচ্চারণে ঘোষ-অঘোষ কিংবা অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণের পার্থক্য ঘটতে পারে, সেগুলো লাল হরফে দেখানো হলো। তোমার উচ্চারণ ঠিক হলে ডান কলামে টিকচিহ্ন (V) দাও।

শব্দঅঞ্চলভেদে বর্ণটির উচ্চারণ যা হতে পারেবর্ণটির প্রমিত উচ্চারণ যা হবেএখানে কোন ধরনের পরিবর্তন হয়েছেউচ্চারণ ঠিক হলে টিকচিহ্ন দাও
চেয়েঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনি হয়েছে 
পিঁড়িঅল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনি হয়েছে 
ছোটো  
পেতে  
ভা  
বাড়ি  
ঘুচেছে  
পুঁতি  
আঁধা  
  
চাবি  
ছা  
Content added By

আরও দেখুন...