কৃষি উপকরণগুলোকে মোটা দাগে আমরা কয়েকভাগে ভাগ করতে পারি । আমরা দেখব যে সমবায়ের মাধ্যমে এই সকল উপকরণ যেমন উপযুক্ত পরিমাণে সংগ্রহ করা যায় তেমনি এ সকল উপকরণের সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় ।

কৃষি জমি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এই উভয় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায় যে, সর্বনিম্ন এক হেক্টর জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না । কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে ক্ষুদ্রতর কৃষি জমির মালিক । এমন কী যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে তাঁরাও তাঁদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে দামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন । যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন ঐ যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না । নিজের কাজ শেষে হয় যন্ত্রটি বসিয়ে রাখতে বা ভাড়ায় দিতে হয় । সমবায়ের মাধ্যমে অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায় । সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল কৃষি উপকরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় । সমবায়ীগণ সম্মত হলে কিছু জমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়, যা থেকে প্রয়োজনের সময় সেচের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায় । অর্থাৎ তুলনামূলক নিচু জমিও সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যায় । দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সমবায়ের আওতায় জমির পরিমাণ চার পাঁচশত হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি জমি ব্যবহার পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন হবে ।

পানি : কৃষিকাজের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । পানি ছাড়া কোনো ধরনের কৃষিকাজই চালানো সম্ভব নয় । কয়েক দশক আগে আমাদের দেশে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো । অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব নয় । সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারে সঞ্চিত পানি। জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানি ব্যবহার সর্বোত্তম । জলাধার করা, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচ নালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে, স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায় । ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলক অনেক কম । তা ছাড়া সেচ ছাড়াও এই জলাধারের পানি অন্যান্য আনুসঙ্গিক কাজে লাগে যা লাভজনক ।

কৃষি যন্ত্রপাতি : কৃষির আধুনিকায়নের জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন । পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর থেকে শুরু করে বহু ধরনের যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন, পশুপাখি, মৎস্য পালন তথা সার্বিক কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়। এ সকল যন্ত্রপাতি ক্রয়, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ যত সহজে সমবায়ের মাধ্যমে করা সম্ভব তা ব্যক্তি মালিকানায় সম্ভব নয় । সমবায় পদ্ধতিতে যে কোনো কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে ব্যবহার করলে আমাদের কৃষির উৎপাদনশীলতা যে কোনো উন্নত দেশের মানকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে ।

কৃষির জন্য সার, ঔষধ, বীজ, খাদ্য ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন ও ব্যবহার
বীজ, সার, পালিত পশুপাখি মাছের খাদ্য এমনকি রোগবালাই নিবারক ঔষধেরও একটা বড় অংশ সমবায়ের ভিত্তিতে উৎপাদন করা যায় । সরকারের কৃষি সেবা সংস্থাগুলোও বীজ,সার,ঔষধ সরবরাহ করে । সমবায় তার বাৎসরিক প্রয়োজন আগে থেকেই নির্ধারণ করতে পারে এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে সেই তথ্য আগেভাগেই সরবরাহ করতে পারে। এতে জাতীয় কৃষি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সরবরাহযোগ্য উপকরণের মোট চাহিদা সম্পর্কে জেনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে ।

কৃষি ঋণ : কৃষিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কৃষি ঋণ যথাসময়ে নিরাপদে প্রাপ্তি কৃষির জন্য খুবই সহায়ক । রেজিষ্ট্রিকৃত কৃষি সমবায় হলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। প্রথমত ঋণ গ্রহীতার নিবন্ধনকৃত পরিচয় রয়েছে, দ্বিতীয়ত ঋণের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের একটা নিশ্চয়তা রয়েছে এবং তৃতীয়ত যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা সমবায় দিতে সক্ষম ।

কাজ : শিক্ষার্থীরা সমবায়ের মাধ্যমে সংগ্রহযোগ্য কৃষি উপকরণের তালিকা তৈরি করবে ।


 

Content added By