নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - ব্যাংকিং ব্যবসা ও তার ধরন | NCTB BOOK

ব্যাংকিং একটি ঝুঁকিবহুল ব্যবসা। ঝুঁকি মোকাবেলার শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা না গড়লে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন। অন্যের অর্থ নিয়ে ব্যবসা করার কারণে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বেশকিছু মৌলিক নীতি মেনে চলতে হয় যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

১) নিরাপত্তার নীতি : ব্যাংক ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রাহকের অর্থ ও ঋণ হিসাবে প্রদত্ত অর্থের নিরাপত্তা বিধান। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাংককে ঋণপ্রদানের সময় ঋণগ্রহীতার আর্থিক সচ্ছলতা ও সততা বিচার করা এবং পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণ করা উচিত।

২) মুনাফার নীতি : সুষ্ঠু মুনাফা অর্জন করা ব্যাংকের আরেকটি অপরিহার্য নীতি। আমানতকারীগণকে প্রদত্ত সুদ ও ঋণগ্রহীতার নিকট হতে প্রাপ্ত সুদের পার্থক্যই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান অংশ ।

৩) তারল্যনীতি : আমানতকারী যখন টাকা তুলতে চায়, তখন তাদের নগদ টাকা দিতে হবে। আবার এটা বিবেচনায় রেখে যদি আমানতের সব টাকা ব্যাংক তরল অবস্থায় রেখে দেয়, তবে ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ হবে না এবং ব্যাংকটির কোনো মুনাফাও হবে না। সুতরাং সার্থক ব্যাংক ব্যবসা মানে হলো সঠিক তারল্যনীতি যেখানে অতিরিক্ত তারল্যও থাকবে না আবার তারল্য সংকটও হবে না। তারল্যনীতি ব্যাংক ব্যবসায় অন্যতম মূলনীতি।

৪) প্রাচুর্য বা সচ্ছলতার নীতি : ব্যাংকিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন । আর্থিক সচ্ছলতার অভাবে ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে। তাই আর্থিক সচ্ছলতা বা প্রাচুর্য ব্যাংকের একটি অন্যতম নীতি ।

৫) দক্ষতার নীতি : ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় বোর্ড, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতায় ব্যাংকের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সাফল্য অর্জনের জন্য তাই দক্ষতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন ।

৬) সেবার নীতি : ব্যাংকের গ্রাহকদের বহুবিধ সেবা প্রদান করা ব্যাংকের একটি অন্যতম দায়িত্ব। গ্রাহকদের পর্যাপ্ত বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নতি সম্ভব।

৭) প্রচারনীতি : উপযুক্ত, বোধগম্য ও আকর্ষণীয় প্রচারের মাধ্যমে ব্যাংকের প্রসার সম্ভব। ব্যাংক তার কর্মদক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও সেবামূলক কার্যাদি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তুলে ধরে আস্থা ও মুনাফা অর্জন করতে পারে।

৮) গোপনীয়তার নীতি : ব্যাংকের মক্কেলের আস্থা অর্জনের একটি উপায় তাদের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করা। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা ব্যাংকের একটি অন্যতম নীতি।

৯) সুনামের নীতি : উন্নত ব্যবস্থাপনা, দক্ষ পরিচালনা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং সেবামূলক কাজের মাধ্যমে বাজারে সুনাম সৃষ্টি করা ব্যাংকের অন্যতম মূলনীতি।

১০) বিনিয়োগ নীতি : বিনিয়োগের শর্তসমূহে (বিনিয়োগের আকার, মেয়াদ, সুদের হার ইত্যাদি) যে নীতি অনুসরণ করা হয়, তাই বিনিয়োগের নীতি। সুষ্ঠু বিনিয়োগ নীতির উপর ব্যাংকের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে।

১১) উন্নয়নের নীতি : মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্যে-সহযোগিতা করাও ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।

১২) উদ্দেশ্যের নীতি : ঋণ প্রদানের পূর্বে ব্যাংক প্রস্তাবিত প্রকল্পের উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বিবেচনা করে। এ ব্যাপারে অনুৎপাদনশীল এবং অনিশ্চিত ক্ষেত্রে ঋণ প্রত্যাখ্যান করা ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য নীতি।

১৩) মিতব্যয়িতার নীতি : 'স্বল্পব্যয়ে অধিক মুনাফা' ব্যাংকের অন্যতম নীতি। ব্যয় সংকোচন নীতির মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব।

১৪) সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি : দক্ষ ব্যাংক ব্যবসার পূর্বশর্ত হলো ব্যাংকের উপর গ্রাহকদের আস্থা। এই আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংক বিভিন্ন প্রকার সততা ও বিশ্বস্ততার নীতি অবলম্বন করে থাকে। এই আস্থার বলেই গ্রাহক তাদের অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ (লকার সেবা) ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।

১৫) সাবধানতার নীতি : অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সাবধানতার নীতি মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।

১৬) বিশেষায়নের নীতি : বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণ দান, নোট ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাংক বিশেষায়নের নীতি অনুসরণ করে থাকে। ফলে কার্যের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।

Content added || updated By