নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - মুদ্রা, ব্যাংক ও ব্যাংকিং | NCTB BOOK

পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে মানুষ তার অতিরিক্ত আহরিত এবং উৎপাদিত পণ্য অন্যের সাথে বিনিময়ের মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন নির্বাহ করত, দ্রব্যের বিনিময়ে দ্রব্যের এই বিনিময় প্রথা বহুদিন প্রচলিত ছিল, বর্তমান ব্যবস্থায় বিনিময় প্রথা (Barter System) স্বল্প পরিসরে প্রচলিত আছে। মুদ্রা আবিষ্কারের পর পর ব্যবসা বাণিজ্য, লেনদেন এবং মুদ্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা থেকে ব্যাংক ব্যবস্থার সৃষ্টি বলে জানা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে প্রথম ব্যাংক ব্যবস্থা ইতিহাসে স্থান করে নেয়। পরবর্তীকালে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, রোমান সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা ব্যাংকিং ব্যবসাকে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনে খ্রিষ্টপূর্ব চারশ সাল পর্যন্ত অবদান রাখে। ভারত অঞ্চলে প্রথম আধুনিক ব্যাংক হিসাবে দি হিন্দুস্তান ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭০০ সালে। পরে ১৯৩৫ সালে ভারতের সকল ব্যাংকের প্রধান হিসেবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তান আমলে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রসারে এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানদের নেতৃত্ব দান করে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের উৎপত্তির সাথে সাথে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রতিষ্ঠিত (যা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ হতে কার্যকর) হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে ১২টি ব্যাংকের ১০৯০টি শাখা কর্মরত ছিল। কিন্তু ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশন এবং ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের মালিক ছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের মালিকগণ অবাঙালি হওয়ায় এবং তাদের প্রধান অফিস পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসা মুক্তিযুদ্ধের পর পর প্রচণ্ড সংকটে নিপতিত হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা প্রচলন, ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং ব্যবসার অভিভাবকের রূপালী ব্যাংক, দায়িত্ব পালন শুরু করেন এবং সব ব্যাংকের জাতীয়করণ করেন, যার কারণে নিম্নলিখিত ৬টি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জন্ম লাভ করে। এগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। পরে এদের মধ্যে শুধু সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক ছাড়া সবগুলোই ক্রমশ বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। সত্তরের দশকেই অনুধাবন করা যায় যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারছে না। আশির দশকে শুরু হয় বিরাস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া। আশির দশকের পরেই নব্বই দশক পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে আরও কিছু নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪টি সরকারি, ৪টি বিশেষায়িত এবং ৩০টির অধিক বেসরকারি ব্যাংক কার্যকর আছে।