নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার | NCTB BOOK

বড় অংকের মোট মূলধনকে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত করে শেয়ার হিসাবে বিক্রয় করা হয়। সরকারের অনুমতি নিয়ে ন্যূনতম মূলধন সংগ্রহের পর সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিবরণপত্র ছাপিয়ে কোম্পানিটি সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে জনগণের নিকট শেয়ার ক্রয়ের আবেদন চাওয়া হয়। অনেক আবেদন পড়লে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বণ্টন করা হয়। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কিনে বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারে। এরাই প্রকৃত পক্ষে কোম্পানির মালিক। প্রতিষ্ঠানের লাভ হলে এদের মধ্যেই মুনাফা লভ্যাংশ হিসাবে বণ্টিত হয়। শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরতযোগ্যনয়। তবে তারল্যের প্রয়োজন পড়লে শেয়ারহোল্ডাররা সেকেন্ডারি মার্কেটে (যেমন: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) এই শেয়ার বিক্রয় করতে পারে এবং সেখানে মূল্য বৃদ্ধি পেলে তাদের লাভ হয়। সাধারণত লাভজনক কোম্পানির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিতভাবে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। তবে লভ্যাংশ প্রদানের কোনো নির্দিষ্ট হার পূর্ব নির্ধারিত থাকে না। কোম্পানির জন্য লভ্যাংশ প্রদান করা বাধ্যতামূলকও নয়। মুনাফা না হলে সাধারণত লভ্যাংশ প্রদান করা হয় না। মুনাফা হলেও সম্পূর্ণ অংকের মুনাফা লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করা হয় না। কোম্পানি ইচ্ছে করলে যেকোনো হারে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে, আবার লভ্যাংশ নাও প্রদান করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করতে না পারলে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়, যা কোম্পানির জন্য ভালো নয়।

বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার ক্রয় একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। শেয়ার ইস্যুকারী কোম্পানি সবসময় শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশ দিতে বাধ্য থাকে না। কোনো বছর কোম্পানি পর্যাপ্ত মুনাফা করতে না পারলে শেয়ার মালিকদের কোনো লভ্যাংশ দেওয়া হয় না। আবার কোম্পানির অবসায়নকালে সম্পত্তি বিক্রি হতে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সকল পাওনাদার এবং অগ্রাধিকার শেয়ার মালিকদের দাবি মেটানোর পর সাধারণ শেয়ার মালিকদের দাবি মেটানো হয়। ফলে সব দাবি মেটানোর পর কোনো অবশিষ্ট অর্থ না থাকলে সাধারণ শেয়ার মালিকরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিবর্তে কিছুই না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয় । তবে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ বিধায় এরকম শেয়ার থেকে আয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করলে সাধারণ শেয়ার একজন বিনিয়োগকারীর জন্য একটি ভালো বিনিয়োগ উৎস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিনিয়োগের হাতিয়ার হিসেবে সাধারণ শেয়ারের কিছু স্বকীয়তা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো:

ক) সাধারণ শেয়ার বিনিয়োগকারীকে কোম্পানির মালিকানা দেয়। ফলে কোম্পানির মালিক হিসেবে এর অর্জিত লাভ এবং সম্পত্তির উপর আইনগত অধিকার থাকে।

খ) সাধারণ শেয়ার এর মালিকদের কোম্পানি নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়। শেয়ার মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

গ) সাধারণ শেয়ার সহজে হস্তান্তরযোগ্য। বিনিয়োগকারী ইচ্ছে করলে যেকোনো সময় তার ধারণকৃত শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে।

বিনিয়োগের হাতিয়ার হিসেবে সাধারণ শেয়ারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।

সুবিধা

ক) অধিক আয় : বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করলে সাধারণ শেয়ার একজন বিনিয়োগকারীর জন্য ভালো আয়ের উৎস হতে পারে। বিনিয়োগের অন্যান্য হাতিয়ার যেমন: অগ্রাধিকার শেয়ার, বন্ড ও ডিবেঞ্চার থেকে বিনিয়োগকারীর প্রাপ্ত আয় নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু সাধারণ শেয়ার থেকে আয় নির্দিষ্ট থাকে না। ফলে কোম্পানি অধিক আয় করলে বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত আয়ও বৃদ্ধি পায় ।

খ) সীমাবদ্ধ দায় : সাধারণ শেয়ার মালিকরা যৌথভাবে কোম্পানির ঝুঁকি বহন করে। কোনো অবস্থাতেই একজন বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি তার বিনিয়োগকৃত অর্থের অধিক হয় না। উদাহরণস্বরূপ, মনে কর একজন বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানির ১০ টাকা মূল্যের ১০০টি শেয়ার ক্রয় করেন, ফলে তার দায় সর্বোচ্চ ১০×১০০ = ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

গ) তারল্য : সাধারণ শেয়ার বিনিয়োগকারীর কাছে তরল সম্পদ হিসেবে সমাদৃত। বিনিয়োগকারী যেকোনো সময় ইচ্ছে করলে তার ধারণকৃত শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারে। তবে সব কোম্পানির শেয়ারের তারল্যতা সমান হয় না। সাধারণত বড় এবং ভালো কোম্পানির শেয়ারের তারল্য অন্য কোম্পানিগুলোর চেয়ে বেশি হয়।

অসুবিধা

ক) ঝুঁকি : সাধারণ শেয়ারে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। শেয়ারবাজারে অনেক ফটকা বিনিয়োগকারী থাকে, ফলে বুঝে-শুনে বিনিয়োগ না করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

খ) মুনাফা ও সম্পত্তি বণ্টনে অধিকার : কোম্পানি মুনাফা বণ্টনে সবার দায় তথা অগ্রাধিকার শেয়ার, বন্ড ও ঋণপত্র মালিকদের প্রাপ্য আয় পরিশোধের পর অবশিষ্ট মুনাফার উপর সাধারণ শেয়ার মালিকদের অধিকার থাকে। অনুরূপভাবে কোম্পানির অবসায়নকালে সম্পত্তি বিক্রির প্রাপ্ত অর্থ থেকে কোম্পানির সব দায় পরিশোধ করার পর অবশিষ্ট অর্থ শেয়ার মালিকরা ভাগাভাগি করে নেয়। অর্থাৎ, উভয় ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার শেয়ার, বন্ড ও ঋণপত্র মালিকদের দাবি সাধারণ শেয়ার মালিকদের দাবি থেকে অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

Content updated By

Promotion