SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - জীবন ও জীবিকা - Life and Livelihood - NCTB BOOK

হাত বাড়ালেই পেতে পারো আর্থিক সুবিধা 

লাগাও যদি কাজে তবে, অভাব থাকবে না। 

দশটি টাকার হিসাব খুলেও পেতে পারো ঋণ 

সেই ঋণেতে বদলে যাবে তোমার খারাপ দিন। 

ধনী, গরীব, প্রান্তিকজন সবাইকে জানাও ভাই

 'আর্থিক অন্তর্ভুক্তি' ছাড়া মোদের অন্য গতি নাই

আমাদের দেশে ধনী গরিব সবার জন্যই ব্যাংকের দ্বার সবসময় উন্মুক্ত। যে কেউ হাত বাড়ালেই ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। তাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেসব সুবিধা ও সেবা দিয়ে থাকে, সেগুলো সম্পর্কে সবার সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে পরিচিত হলে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা গ্রহণ ও ব্যবহার করার সক্ষমতা অর্জন করা সহজ হবে।

আমরা মাকে মাকে 'আর্থিক অন্তর্ভুক্তি' শব্দটি শুনে থাকি। শব্দটি আমাদের অনেকের কাছেই নতুন। আমরা এখানে আমরা একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কথোপকথন ও আলোচনা থেকে শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হব।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে জেনে নিই

শিক্ষক: আমরা আমাদের জীবনের প্রয়োজনে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কার্যক্রম করে থাকি। তোমরা কি এসব কাজ সম্পর্কে জানো?
আমান: জি স্যার। সপ্তম শ্রেণিতে আমরা এ সম্পর্কে জেনেছি স্যার।
শিক্ষক: একটা উদাহরণ দিতে পারবে?
আমান: যেমন- বিভিন্ন ধরনের জিনিস কেনা বেচা করা, বিক্রির জন্য কোন জিনিস উৎপাদন করা, বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করা ইত্যাদি।
শিক্ষক: ভালো বলেছ, এছাড়া আর কী কী আর্থিক কাজ রয়েছে? কে বলতে পারবে?
ইন্দ্রানী: স্যার, বাজার থেকে জিনিস কিনে আনা, স্কুলের টিফিন থেকে টাকা সঞ্চয় করাও আর্থিক কাজ।
শিক্ষক: চমৎকার বলেছো। পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের কাজ হলো আয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজ। আবার বিভিন্ন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মেটানো হলো ব্যয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজ। এছাড়াও অন্য কোনো আর্থিক কাজ কি আছে?
আমান: স্যার, তাহলে আমরা যে সঞ্চয় করি তা কি আর্থিক কাজ নয়?
শিক্ষক: অবশ্যই। আমরা আয় থেকে যে টাকা জমাই, তা হলো আমাদের সঞ্চয়মূলক আর্থিক কাজ। আবার সঞ্চিত অর্থ বা নিজের কাছে থাকা অর্থকে যখন অর্থ উপার্জনের জন্য কাজে লাগাই, তা হলো বিনিয়োগমূলক আর্থিক কাজ। সুতরাং বুঝতেই পারছো, আমরা প্রতিনিয়ত যেসব আর্থিক কাজ করে থাকি তা মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত। এখন বলতো, ভাগগুলো কী কী?
ইন্দ্রানী: জ্বী স্যার। আয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজ, ব্যয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজ, সঞ্চয়মূলক আর্থিক কাজ এবং বিনিয়োগমূলক আর্থিক কাজ।
শিক্ষক: অনেক ধন্যবাদ রীনা। আয়, ব্যয়, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্ট হওয়া বা প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা কিংবা সুবিধা নেওয়াই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নামে পরিচিত। তোমরা কি জানো, এসব আর্থিক কাজ সম্পাদনে কোন প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে সহায়তা করে?

মনির: জ্বি স্যার। এগুলোর নাম ব্যাংক।

শিক্ষক: তুমি ঠিক বলেছ, তবে মনে রেখো ব্যাংকই কেবলমাত্র আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়। ব্যাংক ছাড়াও আরো আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন: নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফআই), বীমা কোম্পানি, সমবায় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এখন বলোতো এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা কি ধরনের আর্থিক সেবা পেয়ে থাকি?
আমান: আমরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখি। ব্যাংক থেকে ঋণও পাই।
শিক্ষক: ঠিক। আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মূলত যেসব সেবা প্রদান করে তা হলো-

  • আমানত হিসেবে সঞ্চয় গ্রহণ, বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান এবং সঞ্চিত নগদ সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান;
  •  ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক চাহিদা পূরণ;
  •  বীমা পলিসির মাধ্যমে আর্থিক ঝুঁকি হাস;
  •  মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিরাপদ ও দ্রুত আর্থিক লেনদেনের সুযোগ প্রদান।

সুতরাং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বলতে বুঝায়- প্রয়োজনীয় ও সাশ্রয়ী আর্থিক দ্রব্য ও সেবায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশাধিকার থাকা, যাতে তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন, যেমন: লেনদেন, মূল্য পরিশোধ, সঞ্চয়, ঋণ ও বীমা জাতীয় কার্যক্রম স্বাচ্ছন্দে করতে পারে (সূত্র: বিশ্ব ব্যাংক)। সে বিবেচনায় যেসব সেবায় সর্বশ্রেণির মানুষের
এধরনের প্রবেশাধিকার প্রদান করা হয়, সেগুলোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা বলা যেতে পারে।

একক কাজ

তোমার জানা বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কাজগুলো ছক ৫.১-এ উল্লেখ করো।

ছক ৫.২: বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কাজ

আর্থিক কাজ

আয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজব্যয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজ
সঞ্চয় সংক্রান্ত আর্থিক কাজবিনিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক কাজ

 

বিভিন্ন আর্থিক সেবার পরিচয়

আমানত সেবা

আমরা যা আয় করি বা বিভিন্ন সময়ে যে অর্থ পাই, তার সবটাই খরচ করি না। সাধারণত আয় থেকে সব ধরনের খরচ/ব্যয় নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থকে আমরা সঞ্চয় বুঝি। আবার অনেক সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকেও আমাদের কাছে অর্থ আসতে পারে; যা আমাদের কাছে গচ্ছিত অবস্থায় থাকে। টাকা সঞ্চিত ও গচ্ছিত রাখার নিরাপদ জায়গা হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সাধারণত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদি হিসাব খুলে টাকা রাখা নিরাপদ ও লাভজনক।

চলতি আমানত (কারেন্ট ডিপোজিট) হিসাব মূলত প্রতিষ্ঠানের নামে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে লেনদেনের উদ্দেশ্যে খোলা হয়। এ ধরনের হিসাবে প্রতিদিন একাধিকবার টাকা জমা/উত্তোলন (লেনদেন) করা যায় এবং আমানতের ওপর খুব সামান্য পরিমাণ মুনাফা দেওয়া হয়। সাধারণ জনগণের জন্য এ ধরনের হিসাব লাভজনক হয় না।

সফরী আমানত (সেভিংস ডিপোজিট) হিসাব ব্যক্তি নামে খোলা হয় যেখানে প্রতিদিনের বাড়তি টাকা কোনো চার্জ/ফি ছাড়াই প্রতিদিন জমা করা যায় এবং সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যকবার উত্তোলনও করা যায়। এই আমানতের স্থিতির ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে ৪% থেকে ৫% মুনাফা প্রদান করে থাকে। অবশ্য ব্যাংকভেদে এবং দেশের আর্থিক নীতি অনুসারে মুনাফার হার ওঠা-নামা করে। সঞ্চয়ী হিসাব পরিচালনার জন্য কোনো কোনো ব্যাংক আমানতকারীকে চেক বইয়ের পাশাপাশি এটিএম/ডেবিট কার্ডও সরবরাহ করে থাকে, যা ব্যবহার করে গ্রাহকরা সহজেই দেশের যেকোনো প্রান্তে স্থাপিত এটিএম বুথ থেকে যেকোনো সময়ে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। প্রাত্যহিক প্রয়োজনে যেমন: টাকা জমা করা, টাকা তোলা, টাকা পাঠানো ও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা সুবিধাগুলো সরাসরি জমা করার ক্ষেত্রে এ ধরনের আমানত হিসাব অভ্যন্ত উপযোগী।

মেয়াদি আমানত (টার্স ডিপোজিট) হিসাব সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত টাকা জমা রাখার জন্য ঘোলা হয়। যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য টাকা জমা রাখা হয়, সেহেতু এই আমানত থেকে সক্ষয়ী আমানতের তুলনায় বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়। তবে এ হিসাব চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাবের মতো ব্যবহার করা না গেলেও মেয়াদপূর্তির আগে জরুরি প্রয়োজনে এ হিসাব থেকেও টাকা তোলা যায়, সে ক্ষেত্রে মুনাফা কিছুটা কম পাওয়া যায়। মেয়াদি আমানত বন্ধক রেখে এর বিপরীতে ঋণও গ্রহণ করা যায়। নিকট ভবিষ্যতে সঞ্চিত টাকার খুব দরকার না থাকলে এই হিসাবে টাকা রাখা তুলনামূলক লাভজনক।

বিশেষ ডিপোজিট ফিম একধরনের ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ী হিসাব। এ হিসাবের মাধ্যমে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর একসঙ্গে অনেক টাকা পাওয়া যায়। যেমন ধরা যাক, একজন মানুষ যদি এ ধরনের সঞ্চয় হিসাবে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে জমান তাহলে তিনি ৫ বছর পর আনুমানিক ৭৬০০০ টাকা পাবেন (সূত্র: সোনালী ব্যাংক, ২০১৮)। আবার একজন শিক্ষার্থী যদি শিক্ষা ডিপোজিট স্কিমে আওতায় প্রতি মাসে মাত্র ৫০০ টাকা করে জমাতে থাকেন, তাহলে ১০ বছর পর সে আনুমানিক ৯২০০০ টাকা পাবে। এ ধরনের স্কিনের আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা নির্দিষ্ট সময়ান্তে দ্বিগুণ বা তিন গুণ হবারও সুযোগ আছে।

বিনিয়োগ সেবা

লাভের আশায় সঞ্চয় বা গচ্ছিত টাকা ব্যাংকে না রেখে কোথাও ব্যবহার/লগ্নি করাকে সাধারণ অর্থে বিনিয়োগ বলা হয়। যেমন: ব্যবসায় খাটানো, জমি কেনা, সঞ্চয়পত্র/বন্ডে বিনিয়োগ করা, পূর্ণ ক্রয়, শেয়ার ক্রয় ইত্যাদি। এসব বিনিয়োগ খাতগুলো আলাদা এবং প্রতিটি খাতের আয় ও ঝুঁকির পরিমাণও আলাদা। যেমন: ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মুনাফা ও ঝুঁকি উভয়ই অধিক। আবার জমি বা স্বর্ণ ক্রয় করার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলে অনেক ক্ষেত্রে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। তবে এ দুটি ক্ষেত্রেই কেনার সময় অনেক বেশি যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন হয়। কারণ, কোনো কারণে ভেজাল জমি বা সোনা কিনলে বিনিয়োগের সবটাই নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।

চিত্র ৫.১: বিনিয়োগ সেবার ব্যবহার করে জমি ক্রয় ও হাউজিং প্রকল্প

বিনিয়োগের আরেকটি ক্ষেত্র হলো শেয়ার বাজার বা স্টক মার্কেট। এই বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করা হয়। কোনো কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা মানে সেই কোম্পানির অংশীদার হয়ে যাওয়া অর্থাৎ সেই কোম্পানির মালিকানার অংশ হয়ে যাওয়া। যখন কোনো কোম্পানি ব্যবসা বড় করতে চায় বা নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়, তখন বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে জনসাধারণের কাছে স্টক বা শেয়ার বিক্রি করে। শেয়ার কেনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আশা করেন এই শেয়ারের মূল্য সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে, যা বিক্রি করে তারা লাভবান হবেন অথবা কোম্পানির ব্যবসার মাধ্যমে যে লাভ হবে তার লভ্যাংশ পাবেন। একটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বিভিন্ন কারণে বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে। এটা নির্ভর করে কোম্পানিটি আর্থিকভাবে কতটা ভালো করছে, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন এবং শেয়ার বাজারের সার্বিক অবস্থার ওপর। কোম্পানির আয় বা নতুন পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য যেমন কোম্পানির শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে, তেমনি কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য মূল্য হ্রাস ঘটাতে পারে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি সঠিকভাবে কোম্পানি নির্বাচন করে শেয়ার ক্রয় করলে অনেক লাভ হওয়াও সম্ভাবনা থাকে। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্য কখনো বাড়ে, আবার কখনো কমে। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। আবার একটি কোম্পানি বা একটি সেক্টরে বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন কোম্পানি বা সেক্টরে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমে।

চিত্র ৫.২: বিনিয়োগ সেবা ব্যবহার করা যায় শেয়ার বাজারে

বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হলো সরকারি সঞ্চয়পত্র/বন্ডে বিনিয়োগ করা। আমাদের দেশের এ ধরনের বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে যেমন:

৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার আকর্ষণীয় কিন্তু এখানে মেয়াদপূর্তির আগে এই সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ধরনের টাকা উত্তোলন করা যায় না এবং সর্বনিম্ন ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।

৫ বছর মেয়াদি পারিবারিক সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে প্রতিমাসেই নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা মুনাফা পাওয়া যায়। তবে কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও ৬৫ বছরের বেশি পুরুষ এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই সঞ্চয়পত্রে সর্বনিম্ন বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ১০ হাজার টাকা। সেসব পরিবার তাদের সঞ্চিত অর্থের আয়ের ওপর নির্ভরশীল এবং কোনোভাবেই তাদের শেষ সম্বল সঞ্চয়টুকু নষ্ট করতে চান না, তাদের জন্য এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সর্বোত্তম।

৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: এটি এক ধরনের বিনিয়োগমূলক সঞ্চয়পত্র। প্রতি তিন মাসে এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ওঠানো যায়। যদি কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের নির্দিষ্ট সময়ান্তে সঞ্চিত অর্থের আয় প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের জন্য এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উত্তম। এই সঞ্চয়পত্র যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ক্রয় করতে পারেন।

এসব সঞ্চয়পত্র ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও বন্ধ রয়েছে। যেমন: পেনশনার সঞ্চয়পত্র, প্রাইজ বন্ড, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যায় এবং যেকোনো ধরনের সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে বিনিয়োগে কোনোরূপ আর্থিক ঝুঁকি নেই।

আমরা আমাদের আর্থিক সুযোগ ও সম্ভাবনাকে অনেক সময়েই প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কাজে লাগাতে পারিনা। আবার অনেক সময় আমাদের জীবনের নানা ধরনের প্রয়োজন মেটাতে স্বল্প সময়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়, কিন্তু অর্থের অভাবে তা পূরণ করতে পারি না। আমাদের এসব সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমাদেরকে এ ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান হতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক ও ভোক্তা ঋণ পেয়ে থাকি। যেমন:

চলমান ঋণ: সাধারণ ব্যবসায়ীদের (দোকানদার, কারখানা মালিক ইত্যাদি) এই ধরনের চলমান/খন সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধার আওতায় একজন ঋণ গ্রহীতা বছরের যেকোনো সময়ে তার ঋণ সীমা পর্যন্ত ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ করতে পারেন। এই ঋণ এক বছরের জন্য দেওয়া হয়; এক বছর শেষ হলে ঋণটিকে নবায়ন করতে হয়। এ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিদিনের ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

চিত্র ৫.৩: ঋণসেবা কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা (ভ্যান ক্রয়, সুপারশপ খোলা)

আমদানী-রপ্তানি ব্যবসার জন্য ঋণ: যে সকল ব্যবসায়ী আমদানী-রপ্তানি ব্যবসার সাথে জড়িত, তারা স্বল্প সময়ের জন্য এক ধরণের ঋণ সুবিধা পায়। এ ধরণের ঋণ নির্দিষ্ট সময়ান্তে পরিশোধ করতে হয়।

মেয়াদী ঋণ: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় তাকে নেয়াদী ঋণ বলে। সাধারণত কৃষি খামার স্থাপন, নতুন কল-কারাখানা স্থাপন, বাড়ি নির্মান, ব্যবসায়িক অবকাঠামো নির্মান ইত্যাদি কাজের জন্য এই ঋণ পাওয়া যায়। এই ঋণের টাকা একসাথে পাওয়া যায় এবং প্রতিমাসে কিস্তি আকারে তা পরিশোধ করতে হয়। এই ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গ্রাহক ঋণের অর্থ পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার করে আয়মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমর্থ হয় এবং আয়ের টাকা থেকেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন।

উপরের ঋণগুলো ছাড়াও দেশের কৃষক, মজুর, নারী, অসহায় মানুষ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, বেকার জনগোষ্ঠী বিদেশগামী শ্রমিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একাধিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে যা এসএমই ও বিশেষায়িত ঋণ এবং বিভিন্ন ধরনের ভোক্তা ঋণ হিসেবে পরিচিত। এসকল ঋণের মধ্যে কৃষি ঋণ দেশের সকল অঞ্চলের কৃষক/বর্গা চাষি গ্রহণ করতে পারেন। কৃষি কাজের প্রয়োজনে বীজ, সার, যন্ত্রপাতি ক্রয় করে কৃষিভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। কৃষি ও পল্লী ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ঋণের জন্য নির্ধারিত মুনাফা ব্যতীত অন্য নামে কোনো প্রকার চার্জ, প্রসেসিং ফি বা মনিটরিং ফি নেওয়া হয় না।

কৃষির পাশাপাশি কটেজ, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও CMSME ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। CMSME হলো Cottage (কুটির), Micro (ক্ষুদ্র), Small (ছোট) ও Medium (মাঝারি) খাতের গৃহীত উদ্যোগের বিপরীতে প্রদত্ত ঋণ। এধরনের ঋণ সাধারণত মেয়াদী ঋণ হিসবে দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় প্রান্তিক বা ভূমিহীন কৃষক, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুদ্ধার বা অব্যাহত রাখার জন্য ১০ টাকা ব্যাংক হিসাবধারীদের জন্য স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণের সুবিধা রয়েছে। কেবলমাত্র ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে এই ঋণ সুবিধার আওতায় ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। এই ঋণ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিম্নআয়ের যেকোনো মানুষ তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।

চিত্র ৫.৪: শিক্ষা ঋণ ও অভিবাসন ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগী

দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম করে তোলার জন্য বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। ঋণ গ্রহীতার শিক্ষা সনদের বিপরীতে এই ঋণ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও যে সকল শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে চান, কিন্তু অর্থাভাবে যেতে পারছেন না তাদের জন্য রয়েছে অভিবাসন ঋণ এর ব্যবস্থা।

আর্থিক কার্যক্রমের উন্নয়ন উদ্দেশ্য ছাড়াও আমাদের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের জন্যও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ পাওয়া যায়, যা ভোক্তা ঋণ নামে পরিচিত। যেমন: কম্পিউটার ক্রয়ের জন্য ঋণ, গাড়ি ক্রয় ঋণ, শিক্ষা ঋণ, গৃহনির্মান ঋণ, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি।

দলগত কাজ

আলোচনার মাধ্যমে ছকে উল্লিখিত আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরামর্শ দাও।

ছক ৫.২. আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং পরামর্শ প্রদান

ক্রমিক

আর্থিক পরিস্থিতি

তাদের জন্য কী ধরনের ঋণ সুবিধা প্রযোজ্য হবে

এনামের বড় ভাই অর্থের অভাবে লেখাপড়া শেষ করতে পারছেন না 
লুসি মানখিন নকশী কাঁথার কাজ জানেন এবং তিনি একটি নকশী কাঁথার কারখানা দিতে আগ্রহী। 
ময়নার মায়ের বাসার জন্য একটি ফ্রিজ কেনা খুবই দরকার, কিন্তু তার কাছে প্রয়োজনীয় টাকা নেই 
করিম সাহেব একটি জুস ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চান কিন্তু এই জন্য তার আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। 
শ্রীকান্ত বাবুর একটি বড় মুদির দোকান আছে কিন্তু টাকার অভাবে তিনি প্রয়োজনীয় নতুন মালামাল উঠাতে পারছেন না 

 

বীমা সেবা

মানবজীবন জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তায় ভরপুর। মানবজীবনের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিরাজমান। পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত ঝুঁকি বিদ্যমান। মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাকে হ্রাস করার জন্যই বীমা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।

চিত্র ৫.৫: যেকোনো দুর্ঘটনায় সুবিধা দেয় বীমা

বীমা ব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, তা হলো- মনে করো কোনো একটি বাজারে ২০০টি দোকান রয়েছে। প্রতি বছরই একটি বা দুটি দোকানে আগুন লেগে মালামাল সব পুড়ে যায়। যাদের দোকান পুড়ে যায়, তাদের পক্ষে আর ব্যবসায় টিকে থাকা সম্ভব হয় না, নিঃস্ব হয়ে যান। প্রতিটি দোকানে গড়ে ১০০০০০ টাকার মাল থাকে। কোন দোকানে আগুন লাগবে তা কেউ আগে থেকে বলতে পারেন না। সকল দোকানের মালিকই প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তায় থাকেন। এখন প্রতিটি দোকান মালিকই যদি তাদের ঝুঁকি। ভাগ করে নেন অর্থাৎ প্রত্যেকেই যদি প্রতি মাসে মাত্র ১০০ টাকা করে ঝুঁকি বাবদ অর্থ জমা রাখেন, তাহলে বছরে প্রত্যেকের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ হবে মাত্র ১২০০ টাকা। আর সবার জমাকৃত অর্থের পরিমান হবে ২,৪০,০০০ টাকা। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বছরে একটি বা দুটি দোকান পুড়ে গেলে তার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। ফলে কোনো দোকানিকে আর ভয় বা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হবে না। মাত্র ১২০০ টাকার বিনিময়ে সকল দোকানই ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারে। বীমা ব্যবস্থা ঠিক এভাবেই কাজ করে।

জীবন বীমার মাধ্যমে মানুষ তার ওপর নির্ভরশীল পারিবারিক সদস্যের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। প্রতি মাসে ১০০০ টাকা জমাদানের হিসাবে ১০ বছর মেয়াদে ৩০০০০০ টাকার জীবন বীমা পলিসি ক্রয়কারী ব্যক্তি যদি পলিসির মেয়াদকালে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে বীমা কোম্পানি তার পরিবারকে পলিসির পুরো টাকা প্রদান করে। ফলে তাঁর মৃত্যুর কারণে তার পরিবার আর্থিক সমস্যায় পড়ে না। একই ভাবে আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা যেমন অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদির বিপরীতেও দুর্যচনা বীমা করা যায়। এ ধরনের বীমা করা থাকলে দুর্ঘটনায় আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি হয় তা বীমা কোম্পানি থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া যায়। 

উল্লিখিত বীমাগুলোর পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য বীমা ও শিক্ষা বীমা। যদি কোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্য বীমা করেন, তাহলে তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তখন বীমা কোম্পানি তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে। আবার যদি কোনো অভিভাবক তার সন্তানের জন্য শিক্ষা বীমা করে রাখেন তাহলে নির্দিষ্ট সময় পর তার সন্তানের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার জন্য বীমা কোম্পানি নির্দিষ্ট হারে শিক্ষা খরচ প্রদান করবে ফলে তার অর্থের অভাবে তার সন্তানের শিক্ষাজীবন ব্যহত হবে না। এসব বীমার বাইরেও বাংলাদেশ সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ধরনের বীমা চালু করেছে।

বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা: 'বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা'র পলিসি গ্রহণে এককালীন প্রিমিয়াম ১০০ টাকা দিয়ে দুই লাখ টাকার কভারেজ সুবিধা পাওয়া যাবে। বীমার মেয়াদ এক বছর হলেও পরবর্তী সময়ে নবায়ন করা যাবে। ১৬ থেকে ৭৫ বছর বয়সী নাগরিক এ পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে পোশাক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৪ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত।

চিত্র ৫.৬: বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমার পোস্টার

বলবন্ধু শিক্ষা বীমা: বার্ষিক ৮৫ টাকা দিয়ে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য এ পলিসি গ্রহণ করা যাবে। মা-বাবা বা একজন আইনি অভিভাবক বীমাবৃত হবেন। অভিভাবকের বয়স ২৫ থেকে ৬৪ বছর হতে হবে। পলিসির মেয়াদ শিশুর বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ ক্ষেত্রে শিশুর ১৮তম জন্মদিনে পলিসির মেয়াদ শেষ হবে। তিন বছর বয়সী শিশুর জন্য বীমা করলে মেয়াদ হবে ১৫ বছর। ১৭ বছর বয়সী শিশুর জন্য করলে হবে এক বছর। পলিসি নেয়াদের মধ্যে অভিভাবক বা বাবা-মা দুর্যটিনায় পঙ্গু হলে পলিসির বাকি মেয়াদে বীমার আওতায় মাসে ৫০০ টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হবে। 

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়্যাল সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিং সেবা

দেশের সকল শ্রেণির মানুষের আর্থিক লেনদেন সহজ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ও অনলাইন ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয়। রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরের বিপরীতে অর্থ লেনদেনের জন্য যে হিসাব খোলা হয়, সেটিই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস অ্যাকাউন্ট) হিসাব। এ ধরনের হিসাবে গ্রাহকের টাকা ইলেকট্রনিক উপায়ে জমা থাকে। এই সেবার মাধ্যমে নিজের এমএফএস হিসাব ও নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন, অর্থ প্রেরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, পণ্য-সেবার মূল্য পরিশোধ ইত্যাদি করা যায়। এমএফএস হিসাব খোলার জন্য বাংলাদেশের যেকোনো মোবাইল অপারেটরের একটি সক্রিয় ও রেজিস্টার্ড সিম, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও গ্রাহকের সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরকার। তবে ইলেকট্রনিক উপায়ে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেও এ হিসাব খোলা যায়। সে ক্ষেত্রে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল সেট ব্যবহার করে গ্রাহকের ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি তুলে আপলোড করে তাৎক্ষণিকভাবে এ হিসাব খোলা যায়।

অনলাইন ব্যাংকিং সেবার আওতায় এখন ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় যেমন: অর্থ উত্তোলন, এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে অর্থ প্রেরণ, হিসাবের স্থিতি যাচাই, বিল পরিশোধ, পাওনা পরিশোধ, প্রাপ্ত অর্থ গ্রহণ ইত্যাদি। অনলাইন ব্যাংকিং সেবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকিং সময়সীমা নেই। ফলে একজন মানুষ তার সুবিধামতো সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন।

চিত্র ৫.৭: অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান

আমরা বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা সম্পর্কে জানলাম। কিন্তু আমরা কোথা মেকে এসব সেবা পাব? বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান আমাদের এ ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক যারা জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে, এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা যেমন অর্থ প্রেরণ, বিল গ্রহণ, বিল আদায়, বৈদেশিক বাণিজ্য ইত্যাদি প্রদান করে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঋণ প্রদান করে, বিশেষায়িত ব্যাংক যারা দেশের কোনো একটি বিশেষ খাতকে কিংবা বিশেষ কোন জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য ঋণ ও বিনিয়োগ সেবা প্রদান করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা দান করে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের চাহিদা পূরণ করে সমবায় প্রতিষ্ঠান নিজ সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে সদস্যদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান ও নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে। বীমা প্রতিষ্ঠান মানুষের জীবন ও ব্যবসার ঝুঁকি নিরসনে নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিপরীতে ঝুঁকি গ্রহণ করে, যা আমাদের ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।

একসময় আমাদের দেশের সকল মানুষ আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদত্ত সেবাগুলোর সেবা খুব সহজে গ্রহণ করতে পারত না। এসব আর্থিক সেবায় দেশের গণমানুষের প্রবেশাধিকার অবাধ ছিল না। তাই বাংলাদেশ সরকার দেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক (যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার অধিক) মানুষের কাছে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আর্থিক সেবায় সবার প্রবেশাধিকার অবাধ ও সহজ করেছে। আর্থিক সেবা প্রাপ্তিতে গণমানুষের এই প্রবেশাধিকারকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বলা হয়। দেশের প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখা/উপশাখায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ টাকার হিসাব বা নো-ফ্রিল হিসাব খোলার মাধ্যমে আমাদের দেশের গণমানুষের জন্য আর্থিক সেবার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। নো-ফ্রিল হিসাবধারীরা তাদের হিসাব ব্যবহার করে নিজের সামান্য সঞ্চয় ব্যাংকে রাখতে পারেন। এর পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন জায়গায় টাকা প্রেরণ, বিভিন্ন ভাতা গ্রহণ ও উত্তোলন করার মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধা লাভ করে থাকেন।

চিত্র ৫.৮: ব্যাংকে দশ টাকার হিসাব খোলা

একক কাজ

তোমার এলাকায় কোন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ছকে তার তালিকা তৈরি করো।

ছক ৫.৩: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য সহযোগিতা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান

ক্রমিক

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য সহযোগিতা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ধরন

আমার এলাকার আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান

ব্যাংক 
নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান 
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান (এমএফআই) 
বীমা/ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান 
  

 আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের সেবা প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও প্রাপ্য সুবিধা

আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সেবা গ্রহণ করার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যারা এসব শর্ত পূরণ করতে পারেন, তাদের আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুসারে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এসব শর্ত পূরণ করার ক্ষমতাকে বলা হয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা গ্রহণের যোগ্যতা। এখন আমরা ছকে উল্লিখিত প্রশ্নোত্তর থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা গ্রহণের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানব।

দলগত কাজ

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক নানা ধরনের সেবার সাথে আমাদের পরিচয় হলো। এবারে আমরা কয়েকটি দৃশ্যপট। পড়ে তাদের জন্য কোন ধরনের সেবা বা সুযোগ প্রযোজ্য তা দলগত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব।

 

 

দৃশ্যপট ১

আবু মিয়া একটি বেসরকারি অফিসে দারোয়ানের চাকরি করেন। স্ত্রী ও একটি মেয়ে নিয়ে ছোট সংসার তার। মেয়ের বয়স তিন বছর। অফিসের পাশেই একটি রুম ভাড়া নিয়ে তারা বাস করেন। বেতনের টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে যায়। খুব হিসাব করে মাসে ৫০০ বা ১০০০ টাকা সংসারের খরচ থেকে বাঁচাতেও পারেন। আর কিছুদিন পরে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। মেয়েকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন।

  • কোন কোন ধরনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ আবু মিয়া গ্রহণ করতে পারে 

দৃশ্যপট ২

অনুপ চন্দ্রের বাবা একজন কৃষক। তার চার একর জমি আছে। অর্থের অভাবে তিনি পর্যাপ্ত কৃষিশ্রমিক নিয়োগ এবং জমিতে আধুনিক উপায়ে চাষ করতে পারেন না। ফলে চার একর জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল ফলাতে পারতেন, যা দিয়ে পরিবারে সমৃদ্ধি আনা সম্ভব, তা তিনি করতে পারেন না।

  • অনুপ চন্দ্রেরর বাবার জন্য কী কী ধরনের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে?

দৃশ্যপট ৩

বেলালের বড় ভাই ঢাকায় থাকেন। সেখানে তিনি একটি কারখানায় চাকরি করেন। তার আয়েই বেলালদের সংসার চলে। কিন্তু প্রায়ই তার পাঠানো টাকা বেলালের পরিবার যথাসময়ে পায় না। ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বেলাল বেশ কিছুদিন হলো বিএ পাশ করেছে। বিএ পাশের পর সে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণও নিয়েছে, কিন্তু এখনো কিছু করতে পারছে না।

  •  আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেলাল কীভাবে উপকৃত হতে পারে?
  • আর্থিক অর্ধভুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেলালের পরিবারের অর্থ প্রাপ্তির সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়?

দৃশ্যপট ৪

প্রদীপ গ্রেগরী কাপড়ের ব্যবসায়ী। ঢাকার ইসলামপুরে কাপড়ের মার্কেটে তার পাইকারি দোকান আছে। তিনি লক্ষ করেছেন, মাঝে মাঝেই আগুন লেগে তার মতো ব্যবসায়ীরা সব হারিয়ে যায়। তিনি এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে চান। বিষয়টি বতর্মানে তাকে অনেক বেশি ভাবাচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের সুবিধা গ্রহণে ঠিক কী কী করতে হবে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

  • প্রদীপ গ্রেগরী সাহেবের জন্য কী কী ধরনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সুবিধা যথার্থ হবে?

দৃশ্যপট ৫

রাবেয়া বেগম একজন বিধবা। তার একটি আট বছরের একটি ছেলে আছে। রাবেয়া বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার সময় পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ ও একটি বাড়ি রেখে গেছেন। বাড়িটিতে তিনি থাকেন। তিনি চাচ্ছেন তার কাছে সঞ্চিত অর্থ এমন কিছুতে বিনিয়োগ করতে, যেখান থেকে ভালো লাভ পাবেন এবং তার টাকাগুলো নিরাপদ থাকবে। তাকে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কথা বলেছেন; কিন্তু তিনি তা করতে সাহস পাচ্ছেন না।

  • রাবেয়া বেগমের জন্য কোন ধরনের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সুবিধা যথার্থ হবে?

একক কাজ

বর্তমানে তোমার পরিবার কী কী আর্থিক সেবা গ্রহণ করে, তার তালিকা করো এবং সেখান থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়, তা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচের ছক ব্যবহার করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো।

ছক ৫.৮: আমার পরিবার যেসব আর্থিক সেবা গ্রহণ করে

নং

আর্থিক সেবার নাম

আর্থিক সেবার বর্ণনা

প্রাপ্ত সুবিধা

    
    
    
অভিভাবকের স্বাক্ষরশিক্ষকের মন্তব্য

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সবার জন্য বৃদ্ধি পাচ্ছে আর্থিক সেবা ও পরিসেবার সুযোগ। প্রযুক্তির কল্যাণে উন্মুক্ত হচ্ছে আর্থিক কার্যক্রমের সহজ ও নতুন নতুন উপায়। আজকাল মোবাইল ফোনেই করা যাচ্ছে ব্যাংকের লেনদেন। এতে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে। গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে আর্থিক কার্যক্রমে। তবে আমরা যেকোনো আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সময় অবশ্যই কোন সেবাটি নিজেদের জন্য সুবিধাজনক তা যাচাই বাছাই করে নির্বাচন করব। নির্বাচিত সেবাটি গ্রহণের পর তার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করব। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ঋণের মাধ্যমে আমরা যে অর্থ গ্রহণ করছি, তা কোনো ব্যাংকের সম্পত্তি নয়; দেশের জনগণেরই গচ্ছিত অর্থ। তাই নিজের প্রয়োজনে আমরা যে সুবিধাটুকু নিচ্ছি অন্যের সঞ্চিত অর্থ থেকে, তা অবশ্যই যথাসময়ে পরিশোধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সবসময় মনে রাখব, প্রাপ্ত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করার মাঝেই কৃতিত্ব।

 

স্বমূল্যায়ন

ক) তোমার পরিবার কী কী আর্থিক সেবা গ্রহণ করতে পারে, তা সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করো। এই আর্থিক সেবা গ্রহণ করার একটি পরিকল্পনা তৈরি করো।

 

আর্থিক সেবা গ্রহণের ভবিষ্যত পরিকল্পনা

আর্থিক সেবার নাম

আর্থিক সেবা গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা

 

 

প্রাপ্ত সুবিধা (সম্ভাব্য)

 

 

খ) তোমার পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য কোনো ধরনের ঋণ প্রয়োজন আছে কি? যদি থাকে সে ক্ষেত্রে তুমি তোমার পরিবারকে কোন ধরনের ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দিবে এবং ঋণের উক্ত ধরনটি তুমি বেছে নেওয়ার পিছনে কারণ কী?

 

______________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________________

 

 

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.