নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - মূলধনি আয়-ব্যয় প্রাক্কলন | NCTB BOOK

তিন বন্ধু রহিম, করিম ও শংকর আলাদা আলাদা ব্যবসা করেন। কিছু দিন ধরে রহিম তার মুদির দোকানের জন্য একটি ফ্রিজ কেনার চিন্তা-ভাবনা করছেন। ছয় মাস পূর্বে করিম একটি সেলাই মেশিন দিয়ে তার দর্জি ব্যবসা শুরু করে। অতিরিক্ত চাহিদার কথা চিন্তা করে বর্তমানে তিনি আরেকটি সেলাই মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন। অন্যদিকে শংকর একটি আধুনিক সেলুন ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র (হুইল চেয়ার) ও চুল কাটার মেশিন কেনার চিন্তা করছেন। এখানে মুদির দোকানের ফ্রিজ, দর্জি ব্যবসার সেলাই মেশিন এবং সেলুনের হুইল চেয়ার এবং চুল কাটার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত একেকটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। এসব দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে বা আদৌ লাভজনক হবে কি না, সে জন্য ফিন্যান্সের একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রয়োজন। মূলধন বাজেটিং এরূপ একটি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের বা প্রকল্পের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়। আয়-ব্যয় প্রাক্কলন শেষে এসব সিদ্ধান্তের বা প্রকল্পের নিট নগদ প্রবাহ বা নিট মুনাফা নির্ধারণ করা হয়। এখানে আয় বলতে বিক্রয় থেকে অর্জিত অর্থ এবং ব্যয় বলতে কাচামাল খরচ, বিক্রয় খরচ এবং অবচয়সহ অন্যান্য খরচকে বুঝায়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে মোট মুনাফা এবং মোট মুনাফা থেকে কর বাদ দিলে নিট মুনাফা পাওয়া যায়। আবার নিট মুনাফার সাথে অবচয় যোগ করলে নগদ আন্তঃপ্রবাহ পাওয়া যায়। এই আন্তঃপ্রবাহের সাথে প্রারম্ভিক বিনিয়োগ বা নগদ বহিঃপ্রবাহের সাথে তুলনা করে। যদি আন্তঃপ্রবাহ বহিঃপ্রবাহ থেকে বেশি হয় তাহলে বিনিয়োগটি লাভজনক প্রতীয়মান হয় এবং গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। এ প্রক্রিয়াকে মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়া বলা হয়।

অতএব বলা যায়, মূলধন বাজেটিং হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি যেমন: জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় থেকে শুরু করে এসব সম্পত্তির প্রতিস্থাপন, ব্যবসার সম্প্রসারণ যেমন: নতুন মেশিন স্থাপন, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিকায়ন এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আয়-ব্যয় প্রাক্কলন করে সম্ভাব্য লাভজনকতা বিশ্লেষণ করে তদনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

Promotion