নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গঠন | NCTB BOOK

ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ নাম শিলা। ভূতত্ত্ববিদগণের মতে দুই বা ততোধিক খনিজ দ্রব্যের সংমিশ্রণে এসব শিলার সৃষ্টি হয়। ভূত্বক গঠনকারী সকল কঠিন ও কোমল পদার্থই শিলা। উদাহরণস্বরূপ নুড়ি, কাঁকর, গ্রানাইট, কাদা, বালি প্রভৃতি। গঠনপ্রণালি অনুসারে শিলাকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় :

(১) আগ্নেয় শিলা, (২) পাললিক শিলা ও (৩) রূপান্তরিত শিলা।

১।  আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks) : জন্মের প্রথমে পৃথিবী একটি উত্তপ্ত গ্যাসপিন্ড ছিল। এই গ্যাসপিণ্ড ক্রমান্বরে তাপ বিকিরণ করে তরল হয়। পরে আরও ভাগ বিকিরণ করে এর উপরিভাগ শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করে। এভাবে গলিত অবস্থা থেকে ঘনীভূত বা কঠিন হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে আগ্নেয় লিলা বলে। আগ্নের শিলা পৃথিবীর প্রথম পর্যায়ে সৃষ্টি হয় ভাই এই শিলাকে প্রাথমিক শিলাও বলে। এ শিলায় কোনো স্তর নেই। তাই আগ্নেয় শিলার অপর নাম অন্তরীভূত শিলা। এই শিলায় জীবাশ্ম নেই। এই শিলার বৈশিষ্ট্য হলো—

(ক) স্ফটিকাকার, (খ) অন্তরীভূত, (গ) কঠিন ও কম ভঙ্গুর, (ঘ) জীবাশ্ম দেখা যায় না এবং (ঙ) অপেক্ষাকৃত ভারী।

আগ্নেয়গিরি বা ভূমিকম্পের ফলে অনেক সময় অভ্রকের দুর্বল ভবনে ফাটলের সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীর অভ্যন্তর থেকে উত্তপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয়ে ভাগ্নের নিগার সৃষ্টি করে। এভাবে ব্যাসন্ট ও গ্রানাইট শিলার সৃষ্টি হয়। ভাগ্নেয় শিলাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) বহিঃজ আগ্নেয় শিলা ও (খ) অন্তজ আগ্নেয় শিলা।

(ক) বহিঃজ আগ্নের শিगा (Extrusive Igneous Rocks) : ভূগর্ভের উত্তপ্ত তরল পদার্থ ম্যাগমা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা অন্য কোনো কারণে বেরিয়ে এসে শীতল হয়ে জমাট বেঁধে বহিঃজ আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয়, এদের দানা খুব সূক্ষ্ম এবং রং গাঢ়। এই শিলার উদাহরণ হলো ব্যাসট, রায়োলাইট, অ্যান্ডিসাইট ইত্যাদি।

(খ) অন্তজ আগ্নেয় শিলা (Intrusive Igneous Rocks) : ভন্ড ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে না এসে ভূগর্ভে জমাট বাধলে তৈরি হয় অঙ্গ আগ্নেয় শিলা। এর দানাগুলো স্থূল ও হালকা রঙের হয়। থানাইট, গ্যাব্রো, ডলোরাইট, ল্যাকোলিথ, ব্যাথোলিখ, ডাইক ও সিল এ শিলার অন্যতম উদাহরণ ।

২। পাললিক শিলা (Sedimentary Rocks) : পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠিত হয়েছে তাকে পাগনিক শিলা বলে। বৃষ্টি, বায়ু, ভূষার, ভাপ, সমুদ্রের ঢেউ প্রভৃতি শক্তির প্রভাবে আগ্নের শিলা ক্ষমাপ্রাপ্ত ও বিচূর্ণীভূত হয়ে রূপান্তরিত হয় এবং কাঁকর, কাদা, বালি ও ধূলার পরিণত হয়। ক্ষয়িত শিশাকণা জলস্রোত, বায়ু এবং হিমবাহ যাত্রা পরিবাহিত হয়ে গলল বা তলানিগে কোনো নিম্নভূমি, হ্রদ এবং সাগরগর্তে সঞ্চিত হতে থাকে।

পরবর্তীতে ঐসব পদার্থ ভূগর্ভের উত্তাপে ও উপরের শিলান্তরের চাপে জমাট বেঁধে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। পাললিক শিলা ভূপৃষ্ঠের মোট আয়তনের শতকরা ৫ ভাগ দখল করে আছে। তবে মহাদেশীয় ভূতকের আবরণের ৭৫ ভাগই পাললিক শিলা। পলল বা তলানি থেকে গঠিত হয় বলে এরূপ শিলাকে পাললিক শিলা বলে (চিত্র ৪.৩) । স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্মীভূত শিলাও বলে। পাললিক শিলা যৌগিক, জৈবিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হতে পারে। বেলেপাথর, কয়লা, নেল, চুনাপাথর, কালাপাথর ও কেওলিন পাললিক गान উদাহরণ। জীবদেহ থেকে উৎপন্ন হয় বলে কল্পনা ও খনিজ তেলকে জৈব শিলাও বলে। অনেক পাললিক শিলার মধ্যে নানাপ্রকার উদ্ভিদ ও জীবঙ্গর দেহাবশেষ বা জীবাশ্ম দেখা যায় ।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য : পাললিক শিলা স্তরীভূত, নরম ও হালকা এবং সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায়। এই শিলায় ছিদ্র দেখা যায় ।

৩। রুপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rocks) : আগ্নের ও পাললিক শিলা যখন প্রচন্ড চাপ, উত্তাপ এবং রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে রূপ পরিবর্তন করে নতুন রূপ ধারণ করে তখন তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে ভূলান্দোলন, অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্প, রাসায়নিক ক্রিয়া কিংবা ভূগর্ভস্থ তাপ আগ্নেয় ও পাললিক শিলাকে রূপান্তরিত করে। চুনাপাথর রূপান্তরিত হয়ে মার্বেল, বেলেপাথর রূপান্তরিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাদা ও শেল রূপান্তরিত হয়ে প্লেট, গ্রানাইট রূপান্তরিত হয়ে নিস এবং কয়লা রূপান্তরিত হয়ে গ্রাফাইটে পরিণত হয় ।

রুপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য : এই শিলা ফটিকযুক্ত, খুব কঠিন হয়। এতে জীবাশ্ম দেখা যায় না। কোনো কোনো রূপান্তরিত শিলার ঢেউ খেলানো তর দেখা যায়।

Content updated By