নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মানচিত্র পঠন ও ব্যবহার | NCTB BOOK

বর্তমানে মানচিত্র তৈরী, পঠন এবং ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে জিপিএস এবং জিআইএস। জিপিএস-এর ইংরেজি হলো Global Positioning System (GPS)। কোনো একটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান জানতে চাইলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে জিপিএস-এর মাধ্যমে জানা।

জিপিএস দ্বারা যেসব কাজ করা যায় তা হলোঃ

জিপিএস দ্বারা কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, উচ্চতা ও দূরত্ব জানা যায়। এছাড়া ঐ স্থানের উত্তর দিক, তারিখ ও সময় জানা যায়।

জিপিএস-এর কার্যনীতি (Working Principle of GPS):  জিপিএস তার রিসিভার দিয়ে ভূ-উপগ্রহ থেকে তথ্য সপ্তাহ করে । এই তথ্য সপ্তাহের জন্য জিপিএস-এর মোটামুটি মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশের প্রয়োজন হয়। তখন জিপিএস যন্ত্রটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। কোনো কোনো সময় উঁচু খাড়া পাহাড়,উঁচু ইমারত থাকলে তখন জিপিএস দ্বারা সেই স্থানের অবস্থান নির্ণয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং এতে সময় বেশি লাগে। জিপিএস-এর সুবিধা প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কারের মধ্যে ভূগোলবিদদের জন্য জিপিএ একটি অত্যন্ত মূল্যবান যন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ যন্ত্রের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে আমরা কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ থেকে শুরু করে সব বিষয়ে জানতে পারছি। বিশেষ করে আমাদের দেশে ভূমির জরিপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয়। এখন আমরা জিপিএস-এর মাধ্যমে ঝামেলা ছাড়াই জমির সীমানা চিহ্নিত করতে পারব।

এতে করে সময় অনেক কম অপচয় হবে। যে কোনো দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা এই জিপিএস-এর মাধ্যমে কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ জানতে পেরে তার সঠিক অবস্থান জেনে সেখানে সাহায্য পাঠাতে পারব। জিপিএস-এর অসুবিধা: জিপিএস-এর সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তা হলো- এর মূল্য বেশি তাই সহজলভ্য নয়, বেশিরভাগ জনগণ এর সঙ্গে পরিচিত নয়, বেশিরভাগ লোক এটি চালাতে পারে না। এছাড়া রয়েছে সনাতনী পদ্ধতি না ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা।

জিআইএস (Geographical Information System)

ভৌগোলিক তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থাকে সংক্ষেপে জিআইএস বলে। এটি কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সম্ভরক্ষণ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা যার মধ্য দিয়ে ভৌগোলিক তথ্যগুলোর সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানিক ও পারিসরিক সমস্যা চিহ্নিতকরণ, মানচিত্রায়ণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে থাকে। এই জিআইএস-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি। ১৯৬৪ সালে কানাডায় সর্বপ্রথম এই কৌশলের ব্যবহার আরম্ভ হয়। ১৯৮০ সালের দিক থেকে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে।

বর্তমানে ভূমি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, পানি গবেষণা, আঞ্চলিক গবেষণা, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা, জনসংখ্যা বিশ্লেষণ, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশ্লেষণ প্রভৃতি বহুবিধ কাজে জিআইএস ব্যবহার হচ্ছে।

জিআইএস-এর মাধ্যমে একটি মানচিত্রের মধ্যে অনেক ধরনের উপাত্ত উপস্থাপন ঘটিয়ে সেই উপাত্তগুলোকে মানচিত্রের মধ্যে বিশ্লেষণ করে মানচিত্রটির উপযোগিতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন- একটা মানচিত্রের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা, টপোগ্রাফি, ভূমি ব্যবহার, যোগাযোগ, মৃত্তিকা ও রাস্তা এই সবগুলো জিনিস দেখিয়ে আমরা তার মধ্য দিয়ে সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের পুরো চিত্র সম্বন্ধে জানতে পারি।

Content updated By