SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বিভিন্ন সবজিতে প্রাপ্ত পুষ্টিসমূহের নাম

দেহের পুষ্টিসাধন, ক্ষয়পূরণ, শক্তি যোগান এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শাক সবজি থেকে পাওয়া যায়। খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের পর পাচনতন্ত্রে হজম হয়ে এর যে অংশ শরীরের জীবকোষে শোষিত হয় ও শরীরের পুষ্টি সাধনে অবদান রাখে সেগুলো পুষ্টির মৌলিক উপাদান । বিজ্ঞানীগণ পুষ্টি উপাদানগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা

ক) আমিষ/প্রোটিনজাতীয় খাদ্য 

খ) শ্বেতসার/শর্করা/কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য 

গ) স্নেহ/চর্বি/তেলজাতীয় খাদ্য। 

ঘ) খাদ্যপ্রাণ/ভিটামিন জাতীয় খাদ্য 

ঙ) খণিজ পদার্থ লবণ/ মিনারেল জাতীয় খাদ্য 

চ) ফাংশনাল/কার্যকর জাতীয় খাদ্য (আঁশজাতীয়) 

ছ) পানিজাতীয় খাদ্য।

ক) আমিষজাতীয় খাদ্য-মটরশুটি, বরবটি, শিম, বিভিন্ন রকমের শাক, কচু, গোলআলু, ফুলকপি, ব্রোকলী, কালোকছু, করলা ইত্যাদি। 

খ) শ্বেতসারজাতীয় খাদ্য- পেঁপে, শালগম, কাঁঠাল, আলু, কলা, কাসাভা, মটরশুটি, কাঁকরোল, ফুলকপি, বেগুন, করলা, কচুজাতীয় সবজি ইত্যাদি। 

গ) স্নেহজাতীয় খাদ্য-কচু ও কচু জাতীয় সবজি, মটরশুটি, সয়াবিন, গোল আলু, কাঁকরোল, করলা, বেগুন, ফুলকপি ইত্যাদি । 

ঘ) খাদ্যপ্রাণজাতীয় খাদ্য-সকল সবুজ ও রঙিন শাক সবজি, আলু, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, পেঁপে, লালশাক, কচুশাক, পটল, শালগম, মূলাশাক, ডাঁটাশাক, উচ্ছে, পালংশাক, ক্যাপসিকাম, মরিচ, কাচা মটরশুটি, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি ইত্যাদি । 

ঙ) খনিজ পদার্থজাতীয় খাদ্য-বীট, শিম, কচুশাক, ডাঁটা, পুঁইশাক, ধনেশাক, ঢেঁড়শ, কলমীশাক, ফুলকপি, রাইশাক, লালশাক, লেটুস, কালো কচুশাক ইত্যাদি। 

চ) কার্যকর সবজিজাতীয় খাদ্য-ঢেঁড়শ, ডাঁটা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দল ইত্যাদি (আঁশজাতীয় খাদ্য)। 

ছ) পানিজাতীয় খাদ্য-শশা, পেঁপে, কুমড়াজাতীয়সহ সকল শাক সবজিতে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি আছে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের পুষ্টি উপাদান (খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে)

মানুষের পুষ্টিতে সবজির ভূমিকা

মানুষের পুষ্টিতে এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দৈনন্দিন পুষ্টি উপাদান সরবরাহে সবজির গুরুত্ব অপরিসীম। দেহের স্বাভাবিক কাজ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে মানুষের সব ধরনের খাদ্যোপাদানের প্রয়োজন। যথা- শর্করা, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান, পানি ও কার্যকর খাদ্য উপাদান। এগুলোকে পুষ্টির মৌলিক উপাদান বলা হয়। দেহের সঠিক বৃদ্ধি, উন্নয়ন, প্রজনন তথা দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রত্যেকটি জৈব বা অজৈব উপাদান প্রয়োজনীয় পরিমাণে নিয়মিতভাবে সরবরাহ করতে হয়। এ জন্য উপাদান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের সবজি গ্রহণ করতে হবে। একজন ব্যক্তির দৈনিক কোন উপাদান কতটুকু প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার দেহের ওজন, লিঙ্গ, পেশা ও জলবায়ুর ওপর। একজন বয়স্ক ব্যক্তির (মহিলা এবং পুরুষ) জন্য দৈনিক বিভিন্ন উপাদান কতটুকু প্রয়োজন তা নিচে । উল্লেখ করা হলো।

স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা

স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ভূমিকা এবং তাদের চাহিদা মেটাতে শাকসবজির অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ক. শর্করা ও রেহ উপাদান : এ জাতীয় খাদ্যসমূহ শরীরের তাপমাত্রা রক্ষা করে এবং দৈনন্দিন শারীরিক ও মানসিক কাজ কর্ম সমাধা করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা সরবরাহ করে । প্রয়োজনে আমিষও শক্তি সরবরাহ করতে পারে।

প্রতি গ্রাম শর্করা ৪.১০ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম স্নেহ ৯.৪৫ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। প্রতি গ্রাম আমিষ ৫.৬৫ ক্যালোরি শক্তি সরবরাহ করে। ক্যালোরির অভাবে দেহের ওজন কমে আসে ও কাজকর্ম করার ক্ষমতা লোপ পায়। তাছাড়া এর অভাবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা কমে যায়, যার ফলে তাদের স্বাভাবিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে না। বিভিন্ন উৎস হতে পাওয়া ক্যালোরির স্থানগত কোন পার্থক্য নেই। তবে মোট চাহিদার অন্তত দশভাগ ক্যালরি স্নেহ হতে আসা উচিত, অন্যথায় রেহের মধ্যে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন এ, ডি, ই, কে) এর শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ক্যালোরির প্রধান উৎস উদ্ভিজ ও প্রাণিজ খাদ্য। তবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) মতে, শরীরের চাহিদার কমপক্ষে শতকরা ৫% ক্যালোরি শাকসবজি ও ফলমূল থেকে আসা উচিত, যা ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ও শারীরিক চাহিদা পূরণ করে থাকে ।

নিচে শর্করা ও চর্বি সরবরাহকারী সবজির তালিকা দেয়া হলো।

খ. প্রোটিনঃ আমাদের দেহের জলীয় অংশটুকু বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তার অর্ধেকটাই প্রোটিন। দেহের প্রত্যেকটি কোষের মৌলিক কাঠামো প্রোটিন দ্বারা গঠিত। তাই দেহের সর্বত্রই প্রোটিন বিদ্যমান। যদিও মাংসপেশী এবং রক্তে প্রোটিন সর্বাধিক। দেহের মধ্যে প্রািেটনের প্রধান কাজ হলো টিস্যু তৈরির মৌলিক উপকরণ ও কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া এবং প্রয়োজনবোধে ক্যালোরি সরবরাহ করা। তাই বর্ধনশীল বালক-বালিকা এবং গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন সর্বাধিক। বয়স্ক লোকের দেহে প্রোটিন প্রধানত টিস্যু গঠন, শরীরকে সুরক্ষা ও ক্ষয়প্রাপ্ত টিস্যু পুনর্গঠন করে। প্রোটিনের অভাবে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যদি শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য যেমন- শর্করা, ভিটামিন 'সি' প্রভৃতির অভাব ঘটে, তবে প্রোটিন শক্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রাণিজ খাদ্য হলো প্রোটিনের প্রধান উৎস। যথা- মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।

শাক সবজিতে অন্যান্য খাদ্য অপেক্ষা প্রোটিনের পরিমাণ খুবই কম। প্রোটিন হলো এমাইনো এসিডের পলিমার; যেখানে ২০টিরও বেশি এমাইনো এসিড রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি মানুষের জন্য অত্যাবশকীয় (শিশুর জন্য ১০টি তবে আরজিনিন, হিষ্টিডিন বেশি প্রয়োজন হয়)। শস্য কণায় যে প্রোটিন পাওয়া যায় তাতে বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড় না পাওয়া গেলেও শাকসবজিতে উক্ত এমাইনো এসিডসমূহ পাওয়া যায়। যেমন- ট্রিপটোফেন, মিথিওনিন, হিষ্টিডিন, ভ্যালিন, লিউসিন, ফিনাইল, এলানিন ইত্যাদি। সুতরাং নিয়মিত সবজি ভক্ষণ করলে এমাইনো এসিডের অভাব অল্প হলেও দূর করা সম্ভব। নিচে প্রোটিন সরবরাহকারী সবজির নাম দেয়া হলো ।

মটর : ৭.৪ গ্রাম/১০০ গ্রামপালংশাকঃ ৩.৩ গ্রাম/১০০ গ্রাম এবং
শিমঃ ৩.৯ গ্রাম/১০০ গ্রামকরলাঃ ১২.৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম
কালো কচুশাকঃ ৬.৮ গ্রাম/১০০ গ্রাম 

গ. ভিটামিনঃ ভিটামিন বলতে এমন কতগুলো যৌগিক পদার্থকে বঝায় যেগুলো ব্যতীত দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি সম্ভব নয়। পরিমাণের দিক দিয়ে যদিও ভিটামিনের চাহিদা ততো বেশি নয়, তবুও দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভিটামিনের সামান্য অভাবে দেহে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয় । ভিটামিন এ-এর প্রধান উৎস হলো শাকসবজি ও ফলমূল। মানব দেহের চাহিদার প্রায় ৯০-৯৫% ভিটামিন সি, ৬০-৮০% ভিটামিন এ, ২০-৩০% ভিটামিন বি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কে ও ই শাক সবজি ও ফলমূল হতে আসে।

ভিটামিন-এঃ উদ্ভিজ্জ ও প্রানিজ উভয় রকমের অনেক খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ আছে। প্রাণিজ খাদ্য দুধ, ডিম, মাখন কলিজা, মাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিজ্জ খাদ্যঃ সবুজ শাকসবজি, আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। ভিটামিন 'এ' এর প্রধান উৎস। উদ্ভিজ খাদ্যের মধ্যে ভিটামিন 'এ' কতগুলো হলুদ বর্ণের রঞ্জক বিদ্যমান থাকে । এদেরকে ভিটামিন ‘এ' এর প্রিকারসর বা ক্যারোটিন বলা হয়। ক্যারোটিন কলিজায় সহজেই সিক্ত হয়ে ভিটামিন 'এ' তে পরিণত হয় । শরীর বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে দাঁত উঠার সময় এবং দাঁতের পুষ্টির জন্য ও দৃষ্টি অক্ষুন্ন রাখার জন্য ভিটামিন ‘এ’ একান্ত প্রয়োজন । এর অভাবে রাতকানা রোগ হয় এবং ‘এ’ এর অভাব বেশি দিন ধরে চললে চোখ সম্পূর্ণরূপে অন্ধ হতে পারে। এছাড়া শরীরে ভিটামিন 'এ' এর অভাব দেখা দিলে সহজেই মানুষ ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। সবুজ শাকসবজি মানব দেহের চাহিদার ৩০% ভিটামিন এ সরবরাহ করে। বিভিন্ন শাকসবজি থেকে যে পরিমাণ ভিটামিন 'এ' পাওয়া যায় তা নিম্নরূপঃ

লালশাকঃ ১১.৯৪ গ্রাম/ ১০০ গ্রামডাঁটাশাকঃ ১০.১০ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম
কচুশাকঃ ১২.০০ গ্রাম/ ১০০ গ্রামপুইশাকঃ ১২.৭৫ গ্রাম/ ১০০ গ্রাম;

ভিটামিন বি, ও দেহের মধ্যে শ্বেতসারের বিপাক ক্রিয়ায় থায়ামিণের প্রয়োজন। স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনের ব্যাপারেও এটি জড়িত। এর অভাবে ক্ষুধা কমে যায়, মানসিক অবসাদ বিষণ্ন হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, শরীরের তাপ ও ওজন কমে যায়,স্মরণশক্তি কমে আসে, হজম শক্তি লোপ পায় এবং দুর্বলতা দেখা দেয় । এর অভাব বেশিদিন ধরে চললে বেরিবেরি রোগের সৃষ্টি হয়- যা মানুষকে পঙ্গু করে ফেলে। ভিটামিন বি, -এর উৎস হলো- ঢেঁকিছাটা সিদ্ধ চাল, ডিম, মাছ, কলিজা ইত্যাদি।

শাকসবজিতে ভিটামিন বি-এর পরিমাণ সবুজ কচুশাক : ০.২২ গ্রাম/১০০ গ্রাম । 

পটলঃ ০.৩০ গ্রাম/১০০ গ্রাম ডাটাশাক : ০,২৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম । 

ঝিঙা ৪ ০.১১ গ্রাম/১০০ গ্রাম শালগম। : ০.৩১ গ্রাম/১০০ গ্রাম।

ভিটামিন বি, ও সুস্বাস্থ্য ও দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য রিবোফ্লোভিনের দরকার হয়। এর অভাবে- চর্ম রোগ হয়, চোখের জ্যোতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ঠোট ও নাকফোলা দেখা দেয় ইত্যাদি । ভিটামিন বি, পাওয়া যায়- ডিম, কলিজা, দুগ্ধজাতীয় খাবার, শাকসবজি, কালো কচুশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে বি, পাওয়া যায় ৷

ভিটামিন বি, ৪ হজম শক্তি ও চামড়ার মসৃণতা বৃদ্ধিতে এই ভিটামিনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এর অভাবে পগা রোগ দেখা দেয় । যার ফলে শরীরের অঙ্গসমূহ লাল হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে চর্মরোগ দেখা দেয়। জিহ্বাতেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা, চীনাবাদাম, মাশরুম এবং শাকজাতীয় খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়াসিন ওয়া যায় ।

ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) : প্রোটিন মেটাবলিজমের জন্য ভিটামিন বি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। এর অভাবে ত্বক, লিভার, রক্ত নালিকা স্নায়ুতন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয় ৷

ভিটামিন বি১২ঃ এর অভাবে ডিএনএ- এর গঠন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ হয়। ইহা সব পাতাজাতীয় সবজি এবং সবুজ শাক সবজিতে পাওয়া যায়।

ভিটামিন সি (এসকরবিক এসিড)ঃ এ ভিটামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন পেশীর কোষসমূহকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত রাখতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম ও লোহার বিপাকে সহায়তা করে। ভিটামিন ‘সি’- এর অভাবে স্কার্ভি রোগ দেখা দেয়। এ রোগের আক্রমণে দাঁত ক্ষয় হয়, দাঁতের মাড়ি হতে রক্ত পড়ে এবং হাত পা ফুলে যায়। ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে ‘সি' ভিটামিনের অবদান প্রমাণিত হয়েছে। দেহের চাহিদার ২৪% ভিটামিন সি সবুজ শাকসবজি, ১৫% গোল আলু, ৩৫% টমেটো ও লেবুজাতীয় ফল হতে আসে । ফলের মধ্যে আমলকি, পেয়ারা, লেবু এবং সবজির মধ্যে বিবিন্ন জাতের শাক, বাঁধাকপি, টমেটো ভিটামিন “সি” এর ভালো উৎস। গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর থেকে ফল ও সবজিতে ভিটামিন 'সি' এর পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে । ধৌত ও রান্নার সময় ভিটামিন 'সি' নষ্ট হয় বিধায় টাটকা অবস্থায় ফল ও সম্ভব হলে সবজি অসিদ্ধ অবস্থায় খাওয়া বাঞ্ছনীয় । নিচে বিভিন্ন সবজিতে ভিটামিন 'সি' এর পরিমাণ উল্লেখ করা হলো ।

মূলাশাক : ১৪৮ গ্রাম/১০০ গ্রাম

পালংশাকঃ ৯৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম

ডাটাশাকঃ ৭৮ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম

কাঁচা মরিচঃ ১২৫ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম

উচ্ছেঃ ৯০ গ্রাম/ গ্রাম/১০০ গ্রাম।

ভিটামিন ইঃ এ ভিটামিন টোকোফেরল নামেও পরিচিত। বন্ধ্যাত্ব নিবারণে এ ভিটামিন সহায়তা করে। বাধাকপি, পালং শাক, রসুন, কাঁচা মটরশুটিতে ভিটামিন ই বিদ্যমান ।

ভিটামিন ‘কে’ঃ রক্তে অবস্থিত প্রোথ্রোম্বিন নামক পদার্থ রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ভিটামিন ‘কে’ এই পদার্থটি তৈরি করে। তাই ভিটামিন কে এর অভাব হলে ক্ষতস্থান হতে রক্ত ক্ষরণ সহজে বন্ধ হয় না। প্রসবের সময় যাতে অধিক রক্তপাত না ঘটে সে জন্য গর্ভবতী মাকে ভিটামিন 'কে' বেশি দেওয়া হয়। বাঁধাকপি, গাজর ও ফুলকপিতে ১০ গ্রাম এ ২-৪ গ্রাম ভিটামিন ‘কে’ পাওয়া যায় ৷

ঘ. খনিজ পদার্থ- শরীরের সুষ্ঠু গড়নের জন্য খনিজ পদার্থ অপরিহার্য। বিভিন্ন ধরনের প্রধান খনিজ পদার্থগুলো হচ্ছে Ca, Fe, K, Mn, Na, Cl, Cu, Zn ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোন কোন উপাদান শরীরের হাড়, রক্ত বা হরমোন তৈরির কাজে নিয়োজিত। অন্যগুলো দেহের তরল পদার্থে লবণরূপে দ্রবীভূত হয়ে থাকে এবং পেশী ও কোষের বাহ্যিক ও রাসায়নিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। শরীরের মোট ওজনের শতকরা ৪.৩ থেকে ৪.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ থাকে।

ক্যালসিয়ামঃ দেহে Ca এর অভাব হলে হাড় ও দাঁতের গঠন দুর্বল হয় এবং সহজে ভেঙে যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের শাক, তিলের বীজ, নারিকেল, ইলিশ মাছ, ধনিয়া, জিরা, দুধ Ca এর ভাল উৎস। শাকসবজির মধ্যে ঢেঁড়শে ১১৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম, কালো কচু শাকে ৪৬০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, সবুজ কচু শাকে ২২৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম, লাল শাকে ৩৭৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম, ডাঁটাতে ২৬০ গ্রাম/১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

লোহাঃ লোহা হিমোগ্লবিন এর একটি উপাদান। হিমোগ্লবিন ফুসফুসে হতে দেহের সর্বত্র O, দেয়া এবং দেহের বিভিন্ন অংশ হতে CO, বহন করে নিয়ে আসার কাজ করে। হিমোগ্লবিন সবসময় স্থায়ী থাকে না । অনবরত উৎপন্ন হয় ও ধ্বংস হয়, ফলে এটি উৎপন্ন হওয়ার জন্য দেহে নিয়মিত লোহা সরবরাহ করতে হয়। লোহার অভাবে রক্ত শূন্যতা সৃষ্টি হয়। বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য লোহার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কালো কচুশাকে ৩৮.৭ গ্রাম/১০০ গ্রাম, সবুজ কচুশাকে ১০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, লেটুসে ২৪ গ্রাম/১০০ গ্রাম, পুঁইশাকে ১০ গ্রাম/১০০ গ্রাম, ডাঁটাশাকে ২৫.৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম লাহো পাওয়া যায় ।

 

Content added By

এক কথায় উত্তর 

১. মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমুহকে বিজ্ঞানীগণ কয়টি ভাগে ভাগ করেছে ? 

২. এক গ্রাম শর্করা কত কিলো ক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে ? 

৩. কোন পুষ্টির অভাবে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় ? 

৪. দৃষ্টি অক্ষুন্ন রাখার জন্য কোন ভিটামিন একান্ত প্রয়োজন ? 

৫. শরীরে প্রোটিন মেটাবলিজমের জন্য কোন ভিটামিন একান্ত প্ৰয়াজন? 

৬. দেহের চাহিদার কত % ভিটামিন স্থি সবুজ শাক সবজি হতে আসে?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর নাম লেখ। 

২. একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক খাদ্য তালিকায় কী থাকা উচিত ? 

৩. শরীরে প্রোটিনের কাজ কী তা বর্ণনা কর । 

রচনামূলক প্রশ্ন 

১. স্বাস্থ্যরক্ষায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন ও ভিটামিনের ভূমিকা সম্পর্কে বর্ণনা কর ।

Content added || updated By