SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - দলগত খেলা | NCTB BOOK

ব্যাডমিন্টন খেলার উৎপত্তি নিয়ে বহুমত থাকলেও অধিকাংশ মানুষের ধারণা এ খেলার জন্ম হয়েছে ভারতের পুনেতে। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পুনেয় অবস্থিত ইংরেজ সৈন্যরা স্থানীয় লোকজনদেরকে শাটলকক ও ছোট ব্যাট দিয়ে খেলতে দেখে কৌতূহলবোধ করেন। তারা ছুটিতে ইংল্যান্ডে যেয়ে খেলাটি প্রচলন করেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ঐ খেলা শিখে ভারতে কর্মরত ইংরেজ সৈন্যরা ছুটিতে বাড়ি গিয়ে ব্যাডমিন্টন নামক জায়গায় একত্র হয়ে খেলাটি শুরু করেন। সে থেকে জায়গার নাম অনুসারে ব্যাডমিন্টন খেলার নামকরণ হয়। পরবর্তীকালে দেশে দেশে এ খেলার প্রচলনের ফলে সকল বয়সের ও শ্রেণির নারী-পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলায় জড়িয়ে পড়ে।

ক. খেলার কোর্ট : কোর্টের মেঝে কাঠের হওয়া বাঞ্ছনীয়, তবে তা কোনোভাবেই পিচ্ছিল হতে পারবে না। শাটল সাদা রঙের তাই কোর্টের মেঝে গাঢ় রঙের হবে কিন্তু চকচকে হতে পারবে না। মেঝের রং সাদা ব্যতীত হালকা রঙের হলে কোর্টের দাগ হবে কালো রঙের, অন্যথায় এর রং হবে সাদা। ব্যাডমিন্টন খেলা সিঙ্গলস ও ডাবলসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। সিঙ্গেলস কোর্ট— দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ ১৭ ফুট। ডাবলস কোর্ট- দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট, প্রস্থ২০ ফুট। কোর্টের দু'টি পার্শ্বরেখায় দুই মধ্যবিন্দু বরাবর ব্যাডমিন্টন নেট টাঙ্গানোর জন্য দু'টি খুঁটি বসবে। এই বিন্দু থেকে উভয় দিকে প্রান্তরেখার সমান্তরালে (৬৫) দূরে লাইন টানতে হবে। একে শর্ট সার্ভিস লাইন বলে। আবার উভয় প্রান্তরেখা থেকে কোর্টের অভ্যন্তরে ২৬ দূরে প্রান্তরেখার সমান্তরালে দু'টি লাইন টানতে হবে। একে দ্বৈত খেলার জন্য লং সার্ভিস লাইন বলে। শর্ট সার্ভিস লাইন দ্বারা বিভক্ত দু'দিকের দু'টি কোর্টের মাঝ বরাবর পার্শ্বরেখার সমান্তরালে দু'টি লাইন টেনে রাইট সার্ভিস কোর্ট ও লেফট সার্ভিস কোর্ট নামে দ'টি কোর্ট তৈরি করতে হবে। কোর্টের সকল মার্কিং বা দাগ ৪ সেন্টিমিটার চওড়া হবে।

খ. খেলার সরঞ্জাম

১. পোস্ট বা খুঁটি : খুঁটির উচ্চতা মেঝে থেকে ৫-১ হবে।

২. নেট : নেটের দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট এবং প্রস্থ২ ফুট ৬ ইঞ্চি হবে। মেঝে থেকে নেটের দু'পোস্টের দিকে উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি এবং মাঝখানে মেঝে থেকে ৫ ফুট। নেটের উপরের প্রান্ত ৩ ইঞ্চি চওড়া একটি সাদা ফিতা দিয়ে দু'দিকে মুড়ে দিতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে শক্ত দড়ি বা তার চলে গিয়ে দু'দিকের খুঁটির মাথায় যুক্ত হবে।

৩. র‍্যাকেট: ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেটের হাতলের দৈর্ঘ্য ২৬ ইঞ্চি। র‍্যাকেটের মাথায় নেট থাকে। নেটগুলো টানটান অবস্থায় থাকবে।

৪. শাটল কক : হাঁসের পালক দ্বারা শাটল কক তৈরি হয়। সকল পালক সুতা দ্বারা গাঁথা থাকে। পিছনের রেখার উপর থেকে একজন খেলোয়াড় যখন খুব জোরে উপরের দিকে র্যাকেট দিয়ে শাটল ককে আঘাত করে এবং সেই শাটল কক যদি বিপক্ষ কোর্টের লং সার্ভিস লাইনের কাছাকাছি গিয়ে পড়ে তখনই এই শাটল কক মানসম্পন্ন বলে ধরা হয় ।

ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়মাবলি

১. টস : যে খেলোয়াড় বা দল টসে জয়লাভ করবে সে খেলোয়াড় বা সে দল সার্ভিস অথবা কোর্ট নেবে।

২. পয়েন্ট : একক ও দ্বৈত খেলায় ২১ পয়েন্টে গেম সম্পন্ন হবে। তবে ২ পয়েন্টের ব্যবধান থাকতে হবে। যেমন— ১৯–২১, ২০-২২ পয়েন্ট এইভাবে। কিন্তু ৩০ পয়েন্টের উপরে যেতে পারবে না। যে আগে ৩০ পয়েন্ট পাবে সে বিজয়ী হবে। তৃতীয় সেটে ১১ পয়েন্ট হলে প্রান্ত বদল করতে হয়।

৩. সার্ভিস : মহিলা ও পুরুষ এককের খেলায় যে দোষ করবে সে সার্ভিস হারাবে। পুরুষ ও মহিলা ডাবলসের খেলায় যে দল প্রথম সার্ভিস করবে সে দল প্রথমবার সেকেন্ড হ্যান্ড সার্ভিস পাবে না। দোষ করলে বিপক্ষ দল সার্ভিস পাবে। সার্ভিস কোনাকুনি কোর্টে করতে হয়।

৪. সার্ভিস ফল্ট : নিম্নলিখিত কারণে সার্ভিস ফল্ট হয়

ক. শাটলটি কোনাকুনি কোর্টে না পড়লে।

খ. সার্ভিসের সময় কোর্ট থেকে যে কোনো পা শূন্যে উঠে গেলে।

গ. শাটলটি শর্ট সার্ভিস এরিয়ায় বা লং সার্ভিস এরিয়ায় পড়লে।

ঘ. শাটল কোর্টের বাইরে পড়লে।

ঙ. শাটলটি হাত থেকে ছাড়ার পর সার্ভিস না করলে।

চ. শাটলটি কোমরের উপরে তুলে সার্ভিস করলে।

ছ. শাটলটি যদি নেটে আটকে যায়।

জ. সার্ভিস করার সময় কোর্টের দাগ স্পর্শ করলে। ঝ. সার্ভিসকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিলে ।

৫. লেট : খেলা চলাকালীন খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো দৈব দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক খেলা বন্ধ হলে আম্পায়ার লেট ঘোষণা করবেন। যেমন— রিসিভার প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই সার্ভিস করলে কিংবা উভয় খেলোয়াড় একসঙ্গে আইন ভঙ্গ করলে।

৬. ব্যাডমিন্টনে ৫টি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়-

ক. পুরুষ একক, খ. পুরুষ দ্বৈত, গ. মহিলা একক, ঘ. মহিলা দ্বৈত, ঙ. মিশ্র দ্বৈত।

৭. খেলা পরিচালনার জন্য একজন রেফারি, একজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দুই বা চারজন লাইন জাজ থাকবে।

ব্যাডমিন্টন খেলার কলাকৌশল : ব্যাডমিন্টন খেলার কলাকৌশলকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। ১. গ্রিপ, ২. ফুটওয়ার্ক, ৩. সার্ভিস, ৪. স্ট্রোক ও স্ম্যাশিং

১. গ্রিপ বা র‍্যাকেট ধরা : র‍্যাকেট ব্যবহারের প্রথম আবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে র‍্যাকেট ধরা। র‍্যাকেট ধরার ক্ষেত্রে কব্জির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফোরহ্যান্ড ও ব্যাকহ্যান্ড শর্ট নেওয়ার সময় গ্রিপের তারতম্য হয়ে থাকে। এজন্য গ্রিপকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।

ক. ফোরহ্যান্ড গ্রিপ ।

খ. ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপ

ক. ফোরহ্যান্ড গ্রিপ : একজন ডানহাতি খেলোয়াড় তার ডানদিক দিয়ে যে শটগুলো খেলে তা সবই ফোরহ্যান্ড গ্রিপের অন্তর্ভুক্ত। ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে র‍্যাকেটের গোড়া এমনভাবে ধরতে হবে যেন ইংরেজি 'V' অক্ষরের মতো দেখায় ।

খ. ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপ : ডানহাতি খেলোয়াড় তার শরীরের বামপাশে যে শটগুলো খেলে তা ব্যাকহ্যান্ড গ্রিপের অবস্থান থেকে হাতটি বাম দিকে এমনভাবে ঘুরাতে হবে যেন হাতের বুড়ো আঙ্গুল র‍্যাকেটের পিছনে আড়াআড়ি ও কোনাকুনি অবস্থানে থাকে। র‍্যাকেটের হাতলের শেষ অংশটুকু হাতের তালুর মধ্যে থাকবে।

২. ফুটওয়ার্ক বা পায়ের কাজ : দ্রুত স্ট্রোক নেওয়ার জন্য চমৎকার ফুটওয়ার্ক প্রয়োজন। স্ট্রোকের প্রয়োজনে সামনে, পিছনে, পাশে পা ফেলে, লাফ দিয়ে কিংবা দৌড়ে গিয়ে খেলতে গেলে ফুটওয়ার্ক ভালো হতে হয়। সার্ভিস করা বা সার্ভিস রিসিভ করার সময় একজন ডানহাতি খেলোয়াড়কে বাম পা আগে, ডান পা সামান্য পিছনে এবং হাঁটু সামান্য ভেঙ্গে দাঁড়াতে হয়। শরীরের ওজন পায়ের পাতার উপর থাকে। দু'পা ১৪ থেকে ১৮” দূরত্বে থাকবে। একে স্ট্যান্স বলে। এছাড়া এক পা পিভটিং করে এবং অন্য পা স্থির রেখেও ফুটওয়ার্ক করা হয়।

৩. সার্ভিস : একজন ভালো খেলোয়াড়কে তিন ধরনের সার্ভিসের কৌশল জানতে হয় ৷

ক. হাইডিপ সার্ভিস, খ. লো-সার্ভিস, গ. ড্রাইভ সার্ভিস

ক. হাইডিপ সার্ভিস : যখন খুব উঁচু দিয়ে শাটল খাড়াভাবে বিপক্ষ কোর্টের লং সার্ভিস লাইনের কাছে ফেলা হয় তাকে হাইডিপ সার্ভিস বলা হয়। এর উচ্চতা অনেক সময় ২০ বা তারও বেশি হয়ে থাকে। একক খেলায় ফোরহ্যান্ড গ্রিপ ব্যবহার করে এই সার্ভিস করা হয়।

খ. লো-সার্ভিস : শাটল যখন খুব নিচু দিয়ে বিপক্ষের সার্ভিস এলাকার শট সার্ভিস লাইন দ্বারা যুক্ত কোনায় ফেলা হয় তখন একে লো-সার্ভিস বলা হয়। র‍্যাকেটটি তখন ফোরহ্যান্ড গ্রিপে ধরা থাকে। গ. ড্রাইভ সার্ভিস : নিচু দিয়ে সজোরে শাটলটি পিছনে বা সার্ভিস গ্রহণকারীর ডানদিক বরাবর সার্ভিস করলে অনেক সময় ভালো ফল দেয়। সজোরে এই সার্ভিসটি করা হয় বলে একে ড্রাইভ সার্ভিস বলে।

৪. স্ট্রোক ও স্ম্যাশিং : স্ট্রোক বা আঘাত করার কৌশলকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো—

ক. ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক : ডানহাতি খেলোয়াড়ের বাম পা বা কাঁধ নেটের দিকে থাকবে এবং শরীরের ডান পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। র‍্যাকেট পিছনে নেওয়ার সময় ডান পায়ের উপর দেহের ভর থাকবে। শাটলে আঘাত করার সাথে সাথে শরীরের ওজন ডান পা থেকে বাম পায়ের উপর চলে আসবে।

খ. ব্যাকহ্যান্ড শট : ডানহাতি খেলোয়াড়ের শরীরের বাম পাশ দিয়ে শাটলে আঘাত করতে হবে। এজন্য ডান কাঁধ ও ডান পা নেটের দিকে থাকবে।

গ. ওভারহ্যান্ড শট : প্রথমত বাম পা সামনে রেখে ডান পায়ের উপর শরীরের ওজন রাখতে হবে। শট নেওয়ার সময় শাটলের দিকে চোখ রেখে শরীর পিছনের দিকে একটু ঝুঁকে যাবে এবং মাথার উপর নিয়ে পিছন দিক দিয়ে র‍্যাকেট তুলে এনে শাটলে আঘাত করতে হবে।

ঘ. ড্রপ শট : এ শটের কৌশল হচ্ছে শাটল নেটের সামান্য উপর দিয়ে নেট পার হয়ে বিপক্ষ কোর্টে গিয়ে পড়বে।

ঙ. আন্ডারহ্যান্ড ড্রপ শট : সার্ভিস করার সময় র‍্যাকেট সুইং করে শাটলে লাগার সাথে সাথে র‍্যাকেটের গতি রোধ করতে হবে।


চ. স্ম্যাশিং : মাথার উপর শট নেওয়ার কৌশলে র‍্যাকেট ধরা হাতটি পিছন থেকে সুইং করে উপরে উঠবে এবং যে মুহূর্তে র্যাকেট শাটল স্পর্শ করতে যাচ্ছে তখনই হাতের কব্জি নিচের দিক করে সজোরে শাটলে আঘাত করতে হবে। এর ফলে শাটলটি দ্রুত নিচের দিকে নেমে যাবে এবং বিপক্ষের কোর্টে গিয়ে আছড়ে পড়বে। খেলোয়াড় লাফিয়ে উঠেও স্ম্যাশিং করতে পারে।

কাজ-১ : ব্যাডমিন্টন কোর্টটি অঙ্কন করে দেখাও ৷
কাজ-২ : ব্যবহারিক ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের গ্রিপের কৌশলগুলো প্রদর্শন কর।
কাজ-৩ : সার্ভিসের ফন্টগুলো এক দল বলবে ও অপর দল ভুল হলে শুধরে দিবে।
 


 

Content added || updated By