SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - জীববিজ্ঞান - জীবনীশক্তি | NCTB BOOK

সালোকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। নিচের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবে। বিশ্বজুড়ে এ বিক্রিয়ার ব্যাপকতা লক্ষ করে কোনো কোনো বিজ্ঞানী এ প্রক্রিয়াকে জৈব রাসায়নিক কারখানা নামে অভিহিত করেছেন।

সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যা-ই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণিকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণীর খাদ্য প্ৰস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে O2 ও CO2-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বায়ুতে অক্সিজেন গ্যাসের পরিমাণ 20.95 ভাগ এবং CO2 গ্যাসের পরিমাণ 0.033 ভাগ।

পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের জন্য বায়ুতে এ দুটি গ্যাসের পরিমাণ স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকতে হয়। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমণ্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসনক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে। কেবল শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমণ্ডলে O2 গ্যাসের স্বল্পতা এবং CO2 গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে CO2 গ্রহণ করে এবং O2 ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমণ্ডলে O2 ও CO2 গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করার ফলে বায়ুমণ্ডলে এ দুটি গ্যাসের অনুপাত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, কাজেই আমাদেরকে অবশ্যই অধিক হারে গাছ লাগাতে হবে।

মানবসভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে মানবসভ্যতা ধ্বংস হবে, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ। সুতরাং সালোকসংশ্লেষণ জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।

শুধু তা-ই নয়, আজ থেকে প্রায় 5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী সৃষ্টি হয়, তখন এখানে কোনো গ্যাসীয় অক্সিজেন ছিল না। আদি উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে এই পৃথিবীকে আমাদের জন্য বাসযোগ্য করে দিয়েছিল।

একক কাজ

কাজ: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর অপরিহার্যতার পরীক্ষা।

পরীক্ষার উপকরণ: টবে লাগানো সবুজ পাতাবিশিষ্ট একটি গাছ, কালো কাগজ, 95% ইথাইল অ্যালকোহল, 1% আয়োডিন দ্রবণ, ক্লিপ, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বিকার, বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প, ট্রপার, ফোরসেপ, পানি ।

পদ্ধতি: টবে লাগানো গাছটিকে 48 ঘন্টার জন্য অন্ধকার কোনো স্থানে রেখে দিতে হবে যেন পাতাগুলো শ্বেতসারবিহীন হয়ে পড়ে। অন্ধকারে রাখা গাছটির একটি পাতার একাংশের উভয় দিক কালো কাগজ দিয়ে আবৃত করে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিতে হবে যেন ঐ অংশে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারে। এরপর গাছসহ টবটিকে সূর্যালোকে রেখে দিতে হবে। কয়েক (67) ঘণ্টা পর গাছ থেকে পাতাটিকে ছিঁড়ে এনে কালো কাগজ খুলে ফেলে পানিতে কয়েক মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পাতাটিকে ক্লোরোফিলমুক্ত করার জন্য 95% ইথাইল অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে, যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার সিদ্ধ বর্ণহীন পাতাটিকে অ্যালকোহল থেকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়োডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সমর সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে।

পর্যবক্ষেণ: আরোডিন দ্রবণ থেকে উঠিয়ে আনলে দেখা যাবে, পাতাটির কালো কাগজ দিয়ে আবৃত অংশ ছাড়া বাকি সবটুকু অংশই নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করেছে। সিদ্ধান্ত: শ্বেতসার এবং আরোডিন দ্রবণের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শ্বেতসার নীল বা পাছ বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করবে। কালো কাগজ দিয়ে আবৃত অংশে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না, ফলে পাতার ঐ অংশে সালোকসংশ্লেষণ হয় না বলে শ্বেতসারও প্রস্তুত হয় না। শ্বেতসার প্রস্তুত হয় না বলে পাতার আবৃত অংশ আয়োডিন দ্রবণে বিক্রিয়া করে নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো বর্ণ ধারণ করে না। কিন্তু পাতাটির অনাবৃত অংশে সূর্যালোক পড়েছিল বলে ঐসব সখানে শ্বেতসার উৎপন্ন হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় সালোকসংশ্লেষণ তথা শ্বেতসার প্রস্তুতের জন্য আলো অপরিহার্য।

সতর্কতা:

(a) পরীক্ষার পূর্বে টবের পাছটি যেন বেশ কিছু সময়ের জন্য অন্ধকারে রাখা হয় ।

(b) কালো কাগজ এমন হতে হবে যেন তার মধ্য দিয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না পারে।

(c) পরীক্ষা চলাকালীন কমপক্ষে 6-7 ঘন্টা পূর্বে টবটিকে সূর্যালোকে রাখতে হবে।

(d) অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দেওয়াই ভালো।

 

একক কাজ

কাজ: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলের অপরিহার্যতার পরীক্ষা।

পরীক্ষার উপকরণ: ম্যানিট বা পাতাবাহার উদ্ভিদের নানা বর্ণের পাতা, অ্যালকোহল, আয়োডিন শ্রবণ, পানি, পেট্রিডিস, টেস্ট টিউব, বুনসেন বার্নার, ড্রপার, বিকার।

পদ্ধতি: দুপুরের দিকে উদ্ভিদের একটি বাহারি পাতা এনে এর সবুজ অংশটুকু চিহ্নিত করে পাতাটিকে কয়েক মিনিট পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। এরপর পানি থেকে পাতাটিকে তুলে নিয়ে অ্যালকোহলে সিদ্ধ করতে হবে যতক্ষণ না পাতাটি বিবর্ণ হয়। এবার পাতাটিকে তুলে পানিতে ধুয়ে নিয়ে আয়োডিন দ্রবণে ডুবাতে হবে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অ্যালকোহলে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি তাপ না দিয়ে টেস্ট টিউবে অ্যালকোহল এবং পাতা নিয়ে টেস্ট টিউবকে বিকারের পানিতে রেখে তাপ দিতে হবে।

পর্যবেক্ষণ: আয়োডিন দ্রবণে ডুবানোর পর দেখা যাবে পাতার কেবল সবুজ অংশই নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো হয়েছে। সিদ্ধান্ত: ক্লোরোফিল থাকায় কেবল সবুজ অংশই সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করা প্রস্তুত করেছে। ক্লোরোফিল না থাকায় অসবুজ (কমলা বা হলুদ) অংশে শর্করা প্রস্তুত হয়নি। সবুজ অংশে শর্করা ছিল বলেই আরোডিন দ্রবণে ঐ অংশ নীল বা গাঢ় বেগুনি বা কালো হয়েছে।

সতর্কতা: অ্যালকোহলে পাতাটিকে সিদ্ধ করার সময় সরাসরি ভাগ না দেওয়াই ভালো

 

Content added By
Content updated By