SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: ধাতু অধাতু | NCTB BOOK

কতোগুলো ধাতুকে একত্রে গলানোর পর গলিত মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করলে যে ধাতু মিশ্রণ পাওয়া যায় তাকে সংকর ধাতু বলা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব 5000 থেকে খ্রিষ্টপূর্ব 3000 পর্যন্ত সময়কালকে তাম্রযুগ বলা হয়। কারণ এই সময়ে তামা দিয়ে মানুষ গয়না, অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করত। কিন্তু তামা নরম ধাতু বিধায় এই ধাতু দিয়ে যে অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো তা বেশি দিন কার্যকর থাকত না। সেজন্য সেই প্রাচীনকালেই মানুষ গলিত কপারের সাথে গলিত টিন মিশিয়ে মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে ব্রোঞ্জ তৈরি করেছিল। ব্রোঞ্জ মূলত একটি সংকর ধাতু। কোনো গরম গলিত ধাতুর মধ্যে অন্য কোনো গরম গলিত ধাতু বা অধাতু মিশিয়ে সেই মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করলে যে কঠিন পদার্থ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সংকর ধাতু। প্রাচীনকালের মানুষদের সংকর ধাতু ব্রোঞ্জ আবিস্কার ছিল একটি যুগান্তকারী ঘটনা। খ্রিষ্টপূর্ব 3000 থেকে 1000 পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় ব্রোঞ্জ যুগ। এই সময় ব্রোঞ্জ দ্বারা বিভিন্ন অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি তৈরি করা হতো। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করতে ধাতুর চেয়ে সংকর ধাতু বেশি উপযোগী। লোহা এবং কার্বন মিশিয়ে স্টিল নামক সংকর ধাতু তৈরি করা হয়। ছুরি, কাঁচি, রেলের চাকা, রেললাইন, জাহাজ, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি স্টিল দ্বারা তৈরি করা হয়। আবার গরম গলিত লোহার মধ্যে গলিত কার্বন, নিকেল ও ক্রোমিয়াম মিশিয়ে যে সংকর ধাতু তৈরি হয় তাকে স্টেইনলেস স্টিল বলে। হাসপাতালে ডাক্তাররা যে ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করে তা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি। গলিত কপার এবং গলিত জিংক একত্রে মিশিয়ে পিতল নামক সংকর ধাতু তৈরি হয়। বৈদ্যুতিক সুইচ, পাতিল ইত্যাদি তৈরিতে পিতল ব্যবহৃত হয়। কপার ও টিন মিশিয়ে সংকর কাঁসা বা ব্রোঞ্জ তৈরি হয়। থালাবাসন, গ্লাস ইত্যাদি তৈরিতে ব্রোঞ্জ ব্যবহৃত হয়। অ্যালুমিনিয়াম, কপার,ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লোহার মিশ্রণে ডুরালমিন নামক সংকর ধাতু তৈরি করা হয়। এটি উড়োজাহাজের বডি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

তোমরা এতক্ষণ জানলে বিভিন্ন ধাতু একত্রে মিশিয়ে সংকর ধাতু তৈরি করা হয়৷ এই সংকর ধাতু তৈরিতে সকল ধাতুকে সমান পরিমাণে মেশানো হয় না। সংকর ধাতুর মধ্যে একটি থাকে প্রধান ধাতু এবং অন্য এক বা একাধিক পদার্থ থাকে অপ্রধান ধাতু বা অধাতু। যেমন—পিতলের মধ্যে প্রধান ধাতু কপার থাকে 65% এবং জিংক 35% থাকে। প্রধান ধাতুর নাম অনুসারে সংকর ধাতুর নামকরণ করা হয়। যেমন: স্টিলের মধ্যে লোহা প্রধান ধাতু এবং কার্বন অপ্রধান অধাতু। স্টিলে লোহা থাকে 99% এবং কার্বন থাকে 1% এজন্য স্টিলকে লোহার সংকর ধাতু বলা হয়। অনুরূপভাবে, কাঁসার মধ্যে প্রধান ধাতু কপার থাকে 90%, টিন থাকে 10% । এজন্য কাঁসা কপারের সংকর ধাতু। আবার, পিতলে প্রধান ধাতু কপার থাকে 65% এবং অপ্রধান ধাতু জিংক থাকে 35%। এজন্য পিতলও কপারের সংকর ধাতু। কপারের দুইটি সংকর ধাতু আছে, যথা: পিতল (ব্রাস) ও কাঁসা (ব্রোঞ্জ)।

Content added By