অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - পৃথিবী ও মহাকর্ষ | NCTB BOOK

অভিকর্ষ : আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি যে, এ মহাবিশ্বের প্রত্যেকটি বস্তুকণাই একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এ মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাই মহাকর্ষ। দুটি বস্তুর একটি যদি পৃথিবী হয় এবং পৃথিবী যদি বস্তুটিকে আকর্ষণ করে তবে তাকে মাধ্যাকর্ষণ বা অভিকর্ষ বলে। অর্থাৎ কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণই অভিকর্ষ। গাছের ফল মাটিতে পড়ে। ক্রিকেট বলকে উপরের দিকে ছুড়ে দিলেও বলটি মাটিতে এসে পড়ে। এখানে পৃথিবী যেমন ফল বা ক্রিকেট বলকে আকর্ষণ করে তেমনি এরাও পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। পৃথিবী অনেক বড় এবং এর আকর্ষণ বল অনেক বেশি হওয়ায় ফল ও ক্রিকেট বল মাটিতে পড়ে। পৃথিবী এবং অন্য যেকোনো বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ তাকে অভিকর্ষ বলে। সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে যে আকর্ষণ তা মহাকর্ষ, কিন্তু পৃথিবী এবং তোমার বিজ্ঞান বই–এর মধ্যে যে আকর্ষণ তা অভিকর্ষ।

 

অভিকর্ষজ ত্বরণ : আমরা জানি বল প্রয়োগ করলে কোনো বস্তুর বেগের পরিবর্তন হয়। প্রতি সেকেন্ডে যে বেগ বৃদ্ধি পায় তাকে ত্বরণ বলে। অভিকর্ষ বলের প্রভাবেও বস্তুর ত্বরণ হয়। এ ত্বরণকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ বলা হয়। যেহেতু বেগ বৃদ্ধির হারকে ত্বরণ বলে, সুতরাং অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে।

অভিকর্ষজ ত্বরণকে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেহেতু অভিকর্ষজ ত্বরণ এক প্রকার ত্বরণ, সুতরাং এর একক হবে ত্বরণের একক অর্থাৎ মিটার/সেকেন্ড

ধরা যাক, M = পৃথিবীর ভর, m = ভূপৃষ্ঠে বা এর নিকটে অবস্থিত কোনো বস্তুর ভর, d = বস্তু ও পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্যবর্তী দূরত্ব। তাহলে মহাকর্ষ সূত্রানুসারে অভিকর্ষ বল, F=GMnd2

আবার বলের পরিমাপ থেকে আমরা পাই, অভিকর্ষ বল = ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ

                                                                              অর্থাৎ F = mg

উপরিউক্ত দুই সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়,

 

এ সমীকরণের ডান পাশে বস্তুর ভর m অনুপস্থিত। সুতরাং অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না। যেহেতু G এবং পৃথিবীর ভর M ধ্রুবক, তাই g-এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বস্তুর দূরত্ব d-এর উপর নির্ভর করে। সুতরাং g-এর মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। এর অর্থ হলো g-এর মান বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম হয়।

 

অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন : পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের দূরত্ব অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R হলে ভ্রূপৃষ্ঠে g=GMR2

যেহেতু পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয়, মেরু অঞ্চলে একটুখানি চাপা, তাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R ধ্রুবক নয়। সুতরাং ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র g-এর মান সমান নয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ R সবচেয়ে কম বলে সেখানে g-এর মান সবচেয়ে বেশি। মেরু অঞ্চলে g-এর মান ৯.৮৩ মিটার/সেকেন্ড। মেরু থেকে বিষুব অঞ্চলের দিকে R এর মান বাড়তে থাকায় g-এর মান কমতে থাকে। বিষুব অঞ্চলে R এর মান সবচেয়ে বেশি বলে g-এর মান সবচেয়ে কম। ৯.৭৮ মিটার/সেকেন্ড২। হিসাবের সুবিধার জন্য ভূপৃষ্ঠে g-এর আদর্শ মান ধরা হয় ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড। এর অর্থ হচ্ছে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড বৃদ্ধি পায়।

কোনো বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূমিতে পৌঁছায়। একই উচ্চতা থেকে একই সময় এক টুকরা পাথর ও এক টুকরা কাগজ ছেড়ে দিলে এগুলো একই সময়ে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাবে কি? যেহেতু বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না, তাই পাথর ও কাগজের উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষজ ত্বরণ একই। সুতরাং তাদের একই সময়ে মাটিতে পৌঁছানো উচিত। কিন্তু বাস্তবে পাথরটি কাগজের আগেই মাটিতে পৌঁছায়। বাতাসের বাধার বিভিন্নতার কারণে এরূপ হয়। বাতাসের বাধা না থাকলে এগুলো অবশ্যই একই সময়ে মাটিতে পৌঁছাত।

Content added || updated By