নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - রসায়ন - খনিজ সম্পদ: জীবাশ্ম | NCTB BOOK

যে সকল হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে কার্বন-কার্বন একক বন্ধন বিদ্যমান থাকে তাকে অ্যালকেন বলে। অ্যালকেনের সাধারণ সংকেত CnH2n+2 (n = 1, 2, 3, 4, . ) শ্রেণির প্রথম সদস্যের নাম মিথেন। প্রথম সদস্য বলে সাধারণ সংকেতে n = 1 আর ভাই এর সংকেত CH | দ্বিতীয় সদস্য (n 2) এর নাম ইখেন। ইখেনের সংকেত CH অ্যালকেনের বন্ধন ভাঙা অনেক কঠিন। তাই অ্যালকেন রাসায়নিকভাবে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এজন্য এদেরকে প্যারাফিন বলে, প্যারাফিন অর্থ আসত্তিহীন। 


অ্যালকেনের নামকরণ
IUPAC পদ্ধতিতে অ্যালকেনের নামকরণের নিয়ম এরকম:
 

(i) সরল শিকলবিশিষ্ট অ্যালকেনে এক কার্বনবিশিষ্ট অ্যালকেন (CH.) কে মিথেন, দুই কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন (CH3-CH3) কে ইচ্ছেন, তিন কার্বনবিশিষ্ট অ্যালকেন (CH, CH2-CH3) কে প্রোপেন এবং চার কার্বনবিশিষ্ট অ্যালকেন (CH CH2-CH2-CH3) কে বিউটেন নাম দেওয়া হয়েছে।
 

(ii) অ্যালকেনের ক্ষেত্রে কার্বন সংখ্যার গ্রিক সংখ্যাসূচক শব্দের শেষে এন (ane) যোগ করে নামকরণ করা হয়৷
 

অ্যালকাইল মূলক (Alkyl Group)
অ্যালকেন থেকে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু অপসারণ করলে যে একযোজী মূলকের সৃষ্টি হয় তাকে অ্যালকাইল মূলক বলে। যেহেতু অ্যালকেনের সাধারণ সংকেত Calan 20 তাই অ্যালকাইল মূলক R ব্যবহার করে লিখতে চাইলে আমরা Cal2012 এর পরিবর্তে R-H লিখতে পারি যেখানে অ্যালকাইল মূলক R - CH2n01 | যে অ্যালকেন থেকে হাইড্রোজেন পরমাণুকে অপসারণ করে অ্যালকাইল মূলক তৈরি হয় সেই অ্যালকেন এর নামের শেষ অংশের এন (ane) বাদ দিয়ে আইল (yl) যোগ করে অ্যালকাইল মূলকের নামকরণ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিথেন (CH.) থেকে মিথাইল (CH-), ইভেন (C2H) থেকে ইথাইল (CH,-CH2-), প্রোপেন থেকে প্রোপাইল (CH3-CH2-CH2-), বিউটেন থেকে বিউটাইল (CH3-CH2-CH2-CH2-), পেন্টেন থেকে পেন্টাইল (CH3-CH2-CH2-CH2- CH2-) ইত্যাদি।

অ্যালকেনের প্রস্তুতি
কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে: নিকেল প্রভাবকের উপস্থিতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাথে হাইড্রোজেনকে 250°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে মিথেন এবং পানি উৎপন্ন হয়। 

অ্যালকিন ও অ্যালকাইন থেকে: নিকেল প্রভাবক এর উপস্থিতিতে পৃথকভাবে ইথিন এবং ইথাইনের সাথে হাইড্রোজেনকে 180° C-200°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে ইথেন উৎপন্ন হয়৷

ডিকার্বক্সিলেশন বিক্রিয়া থেকে : ক্যালসিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে সোডিয়াম ইথানয়েটকে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সাথে উত্তপ্ত করলে মিথেন এবং সোডিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়াকে ডিকার্বক্সিলেশন বিক্রিয়া বলে।

 

অ্যালকেনের ধর্ম

ভৌত ধর্ম: 

সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেনের গলনাঙ্ক স্ফুটনাঙ্ক এবং ভৌত অবস্থা অ্যালকেনের কার্বন সংখ্যার উপর নির্ভর করে। কার্বন সংখ্যার পরিবর্তন হলে ভৌত অবস্থার পরিবর্তন হয়। 1 থেকে 4 কার্বন সংখ্যার সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের স্ফুটনাঙ্ক কক্ষ তাপমাত্রার নিচে তাই এগুলো গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। 5 থেকে 15 কার্বন সংখ্যার সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের স্ফুটনাঙ্ক কক্ষ তাপমাত্রার উপরে বলে এগুলো তরল অবস্থায় থাকে। 5 কার্বনবিশিষ্ট সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন পেন্টেনের স্ফুটনাঙ্ক 36.1°C। সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের কার্বন সংখ্যা 16 থেকে বেশি হলে এগুলো কঠিন প্রকৃতির হয়।
 

রাসায়নিক ধর্ম
আগেই বলা হয়েছে অ্যালকেনসমূহ রাসায়নিকভাবে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তাই সাধারণ অবস্থায় এসিড, ক্ষারক, জারক বা বিজারকের সাথে বিক্রিয়া করে না। তারপরও এরা কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া
অতিবেগুনি (UV) আলোর উপস্থিতিতে মিথেনের সাথে ক্লোরিন মিশ্রিত করলে টেট্রাক্লোরো মিথেন উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়া চার ধাপে সম্পন্ন হয় ।

অক্সিজেনের সাথে দহন বিক্রিয়া: 

মিথেন বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই-অক্সাইড জলীয় বাষ্প এবং তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। এই তাপশক্তি রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।

Content added By