অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - ঔপনিবেশিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য | NCTB BOOK

সুলতানি আমলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও। পরবর্তীকালে মোগল যুগে এর গুরুত্ব কমে যায়। কিন্তু তখনো মসলিন শাড়ির উৎপাদন ও ব্যবসাকেন্দ্র হিসাবে এর খ্যাতি ছিল। উনিশ শতকে ধনী ব্যবসায়ীদের অনেকে বসবাসের জন্য সোনারগাঁওয়ের পানাম এলাকাটি বেছে নেন। এরা পানামের মূল সড়কের দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে অনেক ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন। পানাম নগরে এখনও এ রকম ৫২টি ইমারত টিকে আছে। চওড়া পথের দুই পাশে ইমারতগুলো সুন্দরভাবে সাজানো। পথের উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে ২১টি ইমারত। এর মধ্যে কয়েকটি বর্তমানে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত । এলাকার নিরাপত্তার জন্য পানামের অধিবাসীরা ইমারতগুলোর চারপাশ ঘিরে পরিখা খনন করেছিল। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই ভবনগুলোতে ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়। তবে এদের নির্মাণকলায় মোগল স্থাপত্যেরও প্রভাব আছে। অনেক অট্টালিকা সাজানো হয়েছিল রঙিন মোজাইকে।

পানামের আশেপাশে আরও কয়েকটি চমৎকার ইমারত এখনও টিকে আছে। এগুলো তৈরি করেছিলেন স্থানীয় জমিদার ও ব্যবসায়ীরা । এগুলোর মধ্যে সরদারবাড়ি, আনন্দমোহন পোদ্দারের বাড়ি ও হাসিময় সেনের বাড়ি উল্লেখযোগ্য।

সরদারবাড়ি বা বড় সরদারবাড়িতে এখন স্থাপিত হয়েছে লোকশিল্প জাদুঘর। এ বাড়ির নির্মাণকাল ১৯০১ সাল। এটি তৈরি হয়েছে দুইটি বড় প্রাসাদকে নিয়ে। একটি করিডোর বা লম্বা বারান্দা দিয়ে প্রাসাদ দুইটি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দোতলা এই বাড়িতে রয়েছে ৭০টি কক্ষ। রঙিন মোজাইকের নানা কারুকাজে শোভিত হয়েছে সরদারবাড়ি।

সোনারগাঁওয়ের বাইরেও বাংলাদেশের নানা জায়গায় জমিদারদের তৈরি কিছু অনুপম সুন্দর প্রাসাদ ও স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। যার মধ্যে ময়মনসিংহের শশীলজ একটি। মুক্তাগাছার জমিদাররা এটি তৈরি করেছিলেন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বালিয়াটির জমিদারবাড়িও সেরকম আরেকটি চমৎকার স্থাপত্যকর্মের নিদর্শন। রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়িও বেশ বিখ্যাত। নাটোরের দিঘাপতিয়ার জমিদারের প্রাসাদও তার চমৎকার স্থাপত্যকর্মের জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি এখন উত্তরা গণভবন নামে পরিচিত। তাজহাট ও নাটোরের দুইটি প্রাসাদই বর্তমানে স্থাপত্যকীর্তির নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কাজ : ঢাকার বাইরের কয়েকটি স্থাপত্যকীর্তি উল্লেখ করো।

Content added By