মানুষের স্নায়ুবিক সমন্বয়

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র | NCTB BOOK
1.5k
Summary

স্নায়বিক সমন্বয় (Nervous Coordination): উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা জীবের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। স্নায়ুতন্ত্র হল দেহের প্রধান সমন্বয়ক অঙ্গতন্ত্র, যা নিউরনের মাধ্যমে কাজ করে।

নিউরনের গঠন ও প্রকার:

  • নিউরন: পাঁচ প্রকার -
    • মেরুহীন (Apolar)
    • একমেরুযুক্ত (Unipolar)
    • ছদ্ম-মেরুযুক্ত (Pseudo-unipolar)
    • দ্বিমেরুযুক্ত (Bipolar)
    • বহুমেরুযুক্ত (Multipolar)
  • নিউরন ফেরার কাজের প্রকৃতি:
    • সংবেদী (Sensory)
    • চেষ্টীয় (Motor)
    • মিশ্র বা সমন্বয়ক (Adjustor)

নিউরোগ্লিয়া (Neuroglea): নিউরন সুরক্ষিত থাকে। প্রকার - অ্যাস্ট্রোসাইটস, অলিগোডেনড্রোসাইটস, মাইক্রোগ্লিয়া, এপেনডাইমা।

নিউরোট্রান্সমিটার: স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহনকারী রাসায়নিক পদার্থ, যেমন অ্যাসিটাইল কোলিন, ডোপামিন, GABA ইত্যাদি।

সিন্যাপস: নিউরনের মধ্যে সংযোগস্থল, যেখানে উদ্দীপনা এক নিউরনের অ্যাক্সন থেকে অন্য নিউরনের ডেনড্রাইটে প্রবাহিত হয়। সিন্যাপসে প্রিসিন্যাপটিক ও পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনের অংশ থাকে।

সিন্যাপসের কাজ:

  • নিউরন থেকে নিউরনে তথ্য স্থানান্তর করা।
  • স্নায়ু উদ্দীপনাকে একদিকে প্রেরণ করা।
  • বিভিন্ন নিউরনের প্রতি সমন্বিত সাড়া দেওয়া।
  • অতি নিম্ন উদ্দীপনাকে বাদ দেওয়া।
  • সংবেদনশীল কার্যকর অংশ রক্ষা করা।

স্নায়বিক সমন্বয় (Nervous Coordination):

উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা প্রতিটি জীবের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। বিবর্তনের গতিপথে এককোষী জীব যখন এক সময় বহুকোষী জীবে পরিণত হয়েছে তখন দেহের সবখানে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে ছড়িয়ে থাকা অগণিত কোষের বৈচিত্র্যময় স্বতন্ত্রে পৌঁছায়। ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করা এবং পরিবেশের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করার উদ্দেশে আবির্ভূত হয়েছে দ্রুত যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুতন্ত্র । স্নায়ুতন্ত্র এমন এক বিশেষ অঙ্গতন্ত্র যা দেহের অন্যসব অঙ্গতন্ত্রের কাজে অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে ।মানুষের স্নায়বিক সমন্বয়ের প্রধান সমন্বয়কারী স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যকরী একক হচ্ছে নিউরন নিউরনের দুটো প্রধান অংশ হচ্ছে কোষদেহ (cell body) এবং প্রলম্বিত অংশ বা নিউরাইট (ncurite)। নিউরাইটকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়েছে- বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ছোট ছোট প্রলম্বিত অংশ বা ডেনড্রাইট (dendrite) এবং শাখা-প্রশাখা বিহীন দীর্ঘ প্রলম্বিত অংশ বা অ্যাক্সন (axone)।

১. নিউরন (Neurone):

নিউরন পাঁচ ধরনের-
ক.মেরুহীন (Apolar) – ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সন নেই । খ.একমেরুযুক্ত-(Unipolar) - একটিমাত্র অ্যাক্সন ।
গ.ছদ্ম-মেরুযুক্ত (Pseudo-unipolar) - ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সন একটি দন্ড থেকে উৎপন্ন ।
ঘ.দ্বিমেরুযুক্ত (Bipolar) - একটি অ্যাক্সন ও একটি ডেনড্রাইট । 
ঙ. বহুমেরুযুক্ত (Multipolar) - একাধিক ডেনড্রাইট ও একটি অ্যাক্সন।


কাজের প্রকৃতি অনুসারে নিউরন তিন প্রকার-

ক.সংবেদী ( Sensory) : দেহের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রাহক থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা সংবেদী নিউরনের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছায়।
খ.চেষ্টীয় (Motor) : এসব নিউরন স্নায়ু উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে বিভিন্ন অঙ্গে নিয়ে আসে ।
গ.মিশ্র বা সমন্বয়ক (Adjustor) : এসব নিউরন সংবেদী ও চেষ্টীয় নিউরনের মধ্যে সংযোগ সাধন করে।

২. নিউরোগ্লিয়া (Neuroglea):

নিউরন যে যোজক টিস্যুর ভিতরে সুরক্ষিত থাকে তাকে নিউরোগ্লিয়া বলে। চার প্রকার নিউরোগ্লিয়া হলো- (i) অ্যাস্ট্রোসাইটস,
(i) অলিগোডেনড্রোসাইটস, 
(ii) মাইক্রোগ্লিয়া এবং 
(iv) এপেনডাইমা ।

৩. নিউরোট্রান্সমিটারঃ যে রাসায়নিক পদার্থ সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে এক নিউরন হতে অন্য নিউরনে বা পেশিতে বা গ্রন্থিতে স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহন করে তাকে নিউরোট্রান্সমিটার বলে। এরা প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের ভেসিকলে জমা থাকে ও প্রয়োজন অনুসারে সিন্যাপটিক ক্লেফটে মুক্ত হয় । অ্যাসিটাইল কোলিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নিউরোট্রান্সমিটার। এদের প্রকারভেদ নিম্নরূপ ।

ক.কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার : ডোপামিন, GABA, গ্লাইসিন, গ্লুটাইমেট প্রভৃতি 
খ.প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটার : অ্যাসিটাইল কোলিন, অ্যাড্রেনালিন, নর এড্রেনালিন, হিস্টামিন প্রভৃতি।

৪.সিন্যাপস (Synapse):
স্নায়ুতন্ত্র অসংখ্য নিউরনে গঠিত হলেও নিউরনগুলোর মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ প্রোটোপ্লাজমীয় সংযোগ থাকে না। সাধারণত একটি নিউরনের অ্যাক্সন-প্রান্ত অন্য নিউরনের ডেনড্রাইট-প্রান্তের খুব কাছে অবস্থান করে কিন্তু কেউ কাউকে স্পর্শ করে না। এভাবে, দুটি স্নায়ুর মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁকযুক্ত সংযোগস্থল যেখানে একটি নিউরনের অ্যাক্সনের প্রান্ত শেষ হয় এবং অন্য একটি নিউরন শুরু হয়, তাকে সিন্যাপস বলে । স্নায়ু উদ্দীপনা সিন্যাপস এর মাধ্যমে কেবল একদিকে (এক নিউরনের অ্যাক্সন থেকে অপর নিউরনের ডেনড্রাইট বা কোষদেহে) পরিবাহিত হয়।

সিন্যাপস এর গঠন : দুটি নিউরনের অংশ মিলিত হয়ে সিন্যাপস গঠন করে। যে নিউরনের অ্যাক্সন সিন্যাাপস গঠনে অংশ নেয় তাকে প্রিসিন্যাপটিক নিউরন বলে। সিন্যাপস গঠনকারী অন্য নিউরনকে
পোস্টসিন্যাপটিক নিউরন বলা হয়। প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের প্রিসিন্যাপটিক ঝিল্লি এবং পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনেরসিন্যাপস গঠনকারী অন্য নিউরনকে ← পোস্টসিন্যাপটিক নিউরন বলা হয়। সিন্যাপস এর গঠন এবং পোস্টসিন্যাপটিক নিউরনের পোস্টসিন্যাপটিক ঝিল্লি সম্মিলিতভাবে সিন্যাপস গঠন করে। এ দুটি ঝিল্লির মাঝে প্রায় 20nm (ন্যানোমিটার) ফাঁক থাকে । এই ফাঁককে সিন্যাপটিক ক্লেফট ((synaptic cleft)) বলে। প্রিসিন্যাপটিক ঝিল্লি প্রকৃতপক্ষে প্রিসিন্যাপটিক নিউরনের অ্যাক্সনের স্ফীত প্রান্তের অংশ । অ্যাক্সনের স্ফীত প্রান্তকে সিন্যাপটিক নব (synaptic nob) বলে । এই নবের ভেতরে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া, মাইক্রোফিলামেন্ট এবং নিউরোট্রান্সমিটারযুক্ত ভেসিকল থাকে । পোস্টসিন্যাপটিক ঝিল্লি, নিউরনের কোষদেহ বা ডেনড্রাইট বা অ্যাক্সনের অংশ ।


সিন্যাপস-এর কাজ : 
*নিউরন থেকে নিউরনে তথ্য স্থানান্তর করে (প্রধান কাজ)
*স্নায়ু-উদ্দীপনাকে কেবল একদিকে প্রেরণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সাহায্য করে।
*বিভিন্ন নিউরনের প্রতি সমন্বিত সাড়া দেয়।
* অতি নিচু মাত্রার উদ্দীপনাকে বাছাই করে বাদ দিয়ে দেয়।
* প্রচন্ড স্নায়ু-উদ্দীপনায় নিউরোট্রান্সমিটার পদার্থের ক্ষরণ কমিয়ে অতি-উদ্দীপনা প্রবাহে বাধা দেয়, ফলে কার্যকর (effector) অংশ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

অপটিক
ফেসিয়াল
ভেসটিবিউলো ককলিয়ার স্নায়ু
অ্যাবডুসেন্স
সুষুম্না স্নায়ু
করোটিক স্নায়ু
ঐচ্ছিক স্নায়ু
কেন্দ্রিয় স্নায়ু
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...