বিশ্বগ্রামের ধারণা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত | NCTB BOOK
2k
Summary

‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’ আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা হিসেবে গণ্য হয়, যেখানে সবাই একে অপরকে চেনে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আন্তরিকতা রয়েছে। গ্রামীণ জীবনাচার শহুরে জীবনের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যা সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে, বিশ্ববাসী এখন সহজে সংযুক্ত হতে পারছে, ফলে বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহানের ধারণা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি ও তথ্যের দ্রুত বিস্তার বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছে, যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ যোগাযোগ ও সহযোগিতা করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির বিশ্বায়ন জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে এবং ব্যবসা, শিক্ষা, ও চিকিৎসায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে।

তবে, তথ্য উন্মুক্ত করার ফলে মিথ্যা তথ্য ও সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে, যা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। কিছু বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করায় ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদানগুলো পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।

ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।

বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan ) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করা যেতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে তথ্য প্রবাহের অবাধ ও সহজলভ্য উৎস্য তৈরি হয়েছে। এতে করে সার্বিক জীবনযাত্রার মান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষন, চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।

অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলো (Principal components regarding concept of Global village) নিচে আলোচনা করা হলো:

 

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...