SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,

যেথায় গভীর-নিশুত রাতে

        জীর্ণ বেড়ার ঘরে

নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই ॥

যেথায় লোকে সোনা-রূপায়

     পাহাড় জমায় না,

বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায়

     আয়ু কমায় না;

যেথায় লোকে তুচ্ছ নিয়ে

       তুষ্ট থাকে ভাই ॥

সারা দিনের পরিশ্রমেও

  পায় না যারা খুঁজে

একটি দিনের আহার্য সঞ্চয়,

তবু যাদের মনের কোণে

    নেই দুরাশা গ্লানি,

নেই দীনতা, নেই কোনো সংশয় ৷

যেথায় মানুষ মানুষেরে

বাসতে পারে ভালো

প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে

জ্বালতে পারে আলো,

সেই জগতের কান্না-হাসির

     অন্তরালে ভাই

আমি হারিয়ে যেতে চাই ॥
 

Content added || updated By

 খুলনা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে ১৯১৯ সালের ১৯শে মার্চ সিকান্দার আবু জাফর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমী পেশায় ছিলেন কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী । সিকান্দার আবু জাফর ১৯৩৬ সালে তালা বি. দে. ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন সাংবাদিক। দেশ বিভাগের পরে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন। এ সময় তিনি রেডিও পাকিস্তানে চাকরি থেকে শুরু করে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল প্রভৃতি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ছয় দফা আন্দোলন'কে বেগবান করে তোলার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক কর্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখা ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে' গানটি স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর গণসঙ্গীত ও কবিতা মেহনতি মানুষের মুক্তির প্রেরণায় সমৃদ্ধ। সিকান্দার আবু জাফরের উল্লেখযোগ্য কাব্য: প্রসন্ন শহর, বৈরী বৃষ্টিতে, তিমিরান্তিক, বৃশ্চিক লগ্ন, মালব কৌশিক ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন। ৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে সিকান্দার আবু জাফর মৃত্যুবরণ করেন ।
 

Content added By

 আমি সেই জগতে...ঘুমিয়ে থাকে ভাই কে কীভাবে সুখী হবে তা নির্ধারিত নয়। - মানুষ গতানুগতিক যেভাবে সুখী হয় কবি সেভাবে সুখী হওয়ার কথা এখানে বলেননি। সুখের চিন্তায় মানুষের রাতে ঘুম হয় না। কিন্তু সুখী মানুষের ঘুমের সমস্যা হয় না। সারাদিন কাজের পর বিছানায় গেলেই শান্তির ঘুম তাকে তৃপ্তি দেয়। কবিও তেমনি সে রকম এক জীবন-যাপনের মাঝে যেতে চান যেখানে ভাঙা বেড়ার ঘরেও মানুষ নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে থাকে; ঘুমিয়ে যেতে পারে।

বিত্ত-সুখের ... কমায় না – সমাজের - বেশির ভাগ মানুষ টাকা-পয়সা ও সম্পদের লোভে দিনাতিপাত করে; এতে সুখ হারাম হয়ে যায়; জীবন হয় যন্ত্রণাময় । এতে তাদের জীবন দীর্ঘ না হয়ে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে তারা আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনা মানুষকে সুখ তো দেয়ই না বরং তাদের আয়ু আরও কমে যায়।

যেথায় মানুষ ... জ্বালতে পারে আলো – জীবনের সার্থকতা কোথায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের উপকার ও মঙ্গলের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। মানবপ্রেম বা মানুষকে ভালোবাসতে পারার মাঝে জীবনের মহত্ত্ব নিহিত থাকে। প্রতিবেশীর দুঃখে এগিয়ে আসা, তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করার মাঝেও এক ধরনের তৃপ্তি আছে। কবি তাই বলেছেন যে, যেখানে মানুষকে ভালোবাসা যায়, প্রতিবেশীর দুঃখ-কষ্ট দূর করে আলো জ্বালানো যায়— সেখানেই তিনি থাকতে চান ।
 

Content added || updated By

 সিকান্দার আবু জাফরের মালব কৌশিক কাব্য থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। জাগতিক এই পৃথিবী ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের বাড়ছে ব্যবধান। কারও মনেই যেন শান্তি নেই। বিত্ত-বৈভব অর্জন করা আর সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু কমে যাচ্ছে। কিন্তু কবি এসব অতিক্রম করে যেতে চাইছেন সেইসব মানুষের কাছে যারা প্রকৃত অর্থেই মানুষ । মনুষ্যত্বের আলো যারা জ্বালিয়ে রেখেছেন। দরিদ্র হলেও এই মানুষ বিত্তের পেছনে ছোটে না ৷ সোনা-রুপার পাহাড় গড়ে তোলে না। জীর্ণ ঘরে বসবাস করেও তারা সুখী। তুচ্ছ, ছোটো ছোটো আনন্দ অবগাহনেই কাটে তাদের দিন। সারাদিন তারা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে, তাতে হয়তো একটি দিনের আহার্যও জোটে না । তবু কোনো দুরাশা বা গ্লানি তাদের গ্রাস করে না। কোনো দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। বরং দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও তারা মানুষকে ভালোবাসতে পারে। প্রতিবেশীকে সাহায্য করে। কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্য পেতে চাইছেন, হারিয়ে যেতে চাইছেন তাদের মাঝে । তিনি মনে করেন, এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মানুষ। কবিতাটিতে গণমানুষের প্রতি একাত্মতা, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের সুগভীর সংবেদনা প্রতিফলিত হয়েছে।
 

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.