বীজগণিতে অনেক সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সূত্র ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক বীজগাণিতিক রাশি বিশ্লেষণ করে উৎপাদকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। তাই এ অধ্যায়ে বীজগাণিতিক সূত্রের সাহায্যে সমস্যা সমাধান এবং রাশিকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ বিষয়ক বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর উপযোগী করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অধিকন্তু না... াবিধ গাণিতিক সমস্যা বীজগাণিতিক সূত্রের সাহায্যে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করেও সমাধান করা যায়। পূর্বের শ্রেণিতে বীজগাণিতিক সূত্রাবলি ও এদের সাথে সম্পৃক্ত অনুসিদ্ধান্তগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে ঐগুলো পুনরুল্লেখ করা হলো এবং উদাহরণের মাধ্যমে এদের কতিপয় প্রয়োগ দেখানো হলো। এছাড়াও এ অধ্যায়ে বর্গ ও ঘনের সম্প্রসারণ, ভাগশেষ উপপাদ্য প্রয়োগ করে উৎপাদকে বিশ্লেষণ এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানে বীজগাণিতিক সূত্রের গঠন ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সংখ্যা নির্দেশক প্রতীক এবং প্রক্রিয়া চিহ্ন এর অর্থবোধক বিন্যাসকে বীজগাণিতিক রাশি বলা হয়। যেমন, 2a + 3b - 4c একটি বীজগাণিতিক রাশি। বীজগাণিতিক রাশিতে a, b, c, p, g, r, m, n, x, y, z, … ইত্যাদি বর্ণের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়। বীজগাণিতিক রাশি সংবলিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এই সমস্ত বর্ণকে ব্যবহার করা হয়। পাটিগণিতে শুধু ধনাত্মক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে বীজগণিতে শূন্যসহ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সকল সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। বীজগণিতকে পাটিগণিতের সর্বায়নকৃত (generalized) রূপ বলা হয়।
বীজগাণিতিক রাশিতে ব্যবহৃত সংখ্যাগুলো ধ্রুবক (constant), এদের মান নির্দিষ্ট। আর অক্ষর প্রতীকগুলো চলক (variables), এদের মান নির্দিষ্ট নয়, এরা বিভিন্ন মান ধারণ করতে পারে।
বীজগাণিতিক প্রতীক দ্বারা প্রকাশিত যেকোনো সাধারণ নিয়ম বা সিদ্ধান্তকে বীজগাণিতিক সূত্র বলা হয় । সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বীজগাণিতিক সূত্রাবলি ও এতদসংক্রান্ত অনুসিদ্ধান্তগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে ঐগুলো পুনরুল্লেখ করে কতিপয় প্রয়োগ দেখানো হলো।
সূত্র ১.
সূত্র ২.
মন্তব্য: সূত্র ১ ও সূত্র ২ হতে দেখা যায় যে, এর সাথে 2ab অথবা – 2ab যোগ করলে একটি পূর্ণবর্গ, অর্থাৎ অথবা পাওয়া যায়। সূত্র ১ এ b এর স্থলে –b বসালে সূত্র ২ পাওয়া যায় : অর্থাৎ ।
অনুসিদ্ধান্ত ১.
অনুসিদ্ধান্ত ২.
অনুসিদ্ধান্ত ৩.
প্রমাণ :
অনুসিদ্ধান্ত ৪.
প্রমাণ :
অনুসিদ্ধান্ত ৫.
প্রমাণ : সূত্র ১ ও সূত্র ২ হতে,
অনুসিদ্ধান্ত ৬.
প্রমাণ : সূত্র ১ ও সূত্র ২ হতে,
মন্তব্য : অনুসিদ্ধান্ত ৬ প্রয়োগ করে যেকোনো দুইটি রাশির গুণফলকে ঐ দুইটি রাশির সমষ্টির অর্ধেকের বর্গ হতে ঐ দুইটি রাশির অন্তরের অর্ধেকের বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ করা যায়।
সূত্র ৩.
অর্থাৎ, দুইটি রাশির বর্গের বিয়োগফল = রাশি দুইটির যোগফল × রাশি দুইটির বিয়োগফল
সূত্র ৪.
অর্থাৎ, (a ও b এর বীজগাণিতিক যোগফল) x + (a ও b এর গুণফল)
বর্গসূত্রের সম্প্রসারণ: a` + b + c রাশিটিতে তিনটি পদ আছে। একে (a + b) এবং c এ দুইটি পদের সমষ্টিরূপে বিবেচনা করা যায়। অতএব, সূত্র ১ প্রয়োগ করে রাশিটির বর্গ করে পাই,
সূত্র ৫.
অনুসিদ্ধান্ত ৭.
অনুসিদ্ধান্ত ৮.
দ্রষ্টব্য : সূত্র ৫ প্রয়োগ করে পাই,
ক)
খ)
গ)
উদাহরণ ১. (4x + 5y) এর বর্গ কত?
সমাধান :
উদাহরণ ২. (3a - 7b) এর বর্গ কত?
সমাধান :
উদাহরণ ৩. বর্গের সূত্র প্রয়োগ করে 996 এর বর্গ নির্ণয় কর।
সমাধান :
উদাহরণ ৪. a + b + c + d এর বর্গ কত?
সমাধান :
কাজ : সূত্রের সাহায্যে বর্গ নির্ণয় কর : ক) 3xy + 2ax খ) 4x - 3y গ) x - 5y + 2z |
উদাহরণ ৫. সরল কর :
সমাধান : , 5x + 7y + 3z = a এবং 7x - 7y - 3z = b
প্রদত্ত রাশি
উদাহরণ ৬. x - y = 2 এবং xy = 24 হলে, x + y এর মান কত?
সমাধান :
উদাহরণ ৭. যদি এবং হয়, তবে এর মান কত?
সমাধান :
[মান বসিয়ে]
বা,
এখন, এবং
যোগ করে পাই,
বা,
উদাহরণ ৮. প্রমাণ কর যে,
সমাধান :
[অনুসিদ্ধান্ত ৫ এবং অনুসিদ্ধান্ত ৬ ব্যবহার করে]
উদাহরণ ৯. a + b + c = 15 এবং হলে, এর মান কত?
সমাধান : প্রথম পদ্ধতি :
উদাহরণ ১০. a + b + c = 2 এবং ab + bc + ac = 1 হলে, এর মান কত?
সমাধান :
উদাহরণ ১১. (2x + 3y)(4x - 5y) কে দুইটি বর্গের বিয়োগফলরূপে প্রকাশ কর।
সমাধান : ধরি, 2x + 3y = a এবং 4x - 5y = b
প্রদত্ত রাশি
[a ও b এর মান বসিয়ে]
কাজ : ক) সরল কর : খ) x + y + z = 12 এবং হলে, এর মান নির্ণয় কর। |
সূত্র ৬.
প্রমাণ :
অনুসিদ্ধান্ত ৯.
সূত্র ৭.
প্রমাণ :
অনুসিদ্ধান্ত ১০.
সূত্র ৮.
প্রমাণ :
সূত্র ৯.
প্রমাণ :
উদাহরণ ১২. 2x + 6y এর ঘন নির্ণয় কর।
সমাধান :
উদাহরণ ১৩. 2x - y এর ঘন নির্ণয় কর।
সমাধান :
কাজ : সূত্রের সাহায্যে ঘন নির্ণয় কর : ক) 3x + 2y খ) 3x - 4y গ) 397 |
উদাহরণ ১৪. x = 37 হলে, এর মান কত?
সমাধান:
[মান বসিয়ে]
উদাহরণ ১৫. যদি 7x - y = 8 এবং xy = 5 হয়, তবে এর মান কত?
সমাধান:
[মান বসিয়ে]
উদাহরণ ১৬. যদি হয়, তবে প্রমাণ কর যে,
সমাধান : দেওয়া আছে,
উদাহরণ ১৭. x + y = 5, xy = 6 হলে এবং x > y হলে
ক) এর মান নির্ণয় কর।
খ) এর মান নির্ণয় কর।
গ) এর মান নির্ণয় কর।
সমাধান :
ক) আমরা জানি,
খ) দেওয়া আছে, এবং
(প্রদত্ত শর্ত মোতাবেক ঋণাত্মক মান গ্রহণযোগ্য নয়)
গ) x + y = 5 এবং x - y = 1
যোগ করে, 2x = 6
বিয়োগ করে, 2y = 4
কাজ : ক) x = -2 হলে, এর মান কত? খ) a + b = 5 হলে, ab = 6 হলে, এর মান নির্ণয় কর। গ) হলে, এর মান নির্ণয় কর। |
কোনো রাশি দুই বা ততোধিক রাশির গুণফলের সমান হলে, শেষোক্ত রাশিগুলোর প্রত্যেকটিকে প্রথমোক্ত রাশির উৎপাদক বা গুণনীয়ক বলা হয়। কোনো বীজগাণিতিক রাশির উৎপাদকগুলো নির্ণয় করার পর রাশিটিকে লব্ধ উৎপাদকগুলোর গুণফলরূপে প্রকাশ করাকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ বলা হয়। বীজগাণিতিক রাশিগুলো এক বা একাধিক পদবিশিষ্ট (বহুপদী) হতে পারে। সেজন্য উক্ত রাশির উৎপাদকগুলোও এক বা একাধিক পদবিশিষ্ট হতে পারে। এখানে উৎপাদক নির্ণয়ের কতিপয় কৌশল আলোচনা করা হবে।
সাধারণ উৎপাদক : কোনো বহুপদীর প্রত্যেক পদে কোনো সাধারণ উৎপাদক থাকলে তা বের করে নিতে হয়। যেমন :
উদাহরণ ১৮.
উদাহরণ ১৯.
পূর্ণবর্গ : একটি রাশিকে পূর্ণবর্গ আকারে প্রকাশ করেও উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায়।
উদাহরণ ২০. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
উদাহরণ ২১. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
দুইটি বর্গের অন্তর : একটি রাশিকে দুইটি বর্গের অন্তররূপে প্রকাশ করে এবং সূত্র প্রয়োগ করেও উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায়।
উদাহরণ ২২. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
উদাহরণ ২৩. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ) গ) |
সরল মধ্যপদ বিভক্তিকরণ : সূত্রটি ব্যবহার করে উৎপাদক নির্ণয় করা যায়। এ পদ্ধতিতে আকারের বহুপদীর উৎপাদক নির্ণয় করা সম্ভব হয় যদি দুইটি সংখ্যা a ও b নির্ণয় করা যায় যেন, a + b = p এবং ab = q হয়। এজন্য q এর দুইটি সচিহ্ন উৎপাদক নিতে হয় যাদের বীজগাণিতিক সমষ্টি p হয়। q>0 হলে, a ও b একই চিহ্নযুক্ত হবে এবং q<0 হলে, a ও b বিপরীত চিহ্নযুক্ত হবে। উল্লেখ্য p এবং q পূর্ণসংখ্যা না ও হতে পারে।
উদাহরণ ২৪. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
উদাহরণ ২৫. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
যৌগিক মধ্যপদ বিশ্লেষণ : আকারের বহুপদীর মধ্যপদ বিভক্তিকরণ পদ্ধতিতে হবে যদি হয়। অর্থাৎ, a = rs, b = rq + sp এবং c = pg হয়। সুতরাং, ac = rspq = (rq) (sp) এবং b = rq + sp l অতএব, আকারের বহুপদীর উৎপাদক নির্ণয় করতে হলে ac, অর্থাৎ, এর সহগ এবং x বর্জিত পদের গুণফলকে এমন দুইটি উৎপাদকে প্রকাশ করতে হবে, যাদের বীজগাণিতিক সমষ্টি x এর সহগ b এর সমান হয়।
উদাহরণ ২৬. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ) গ) |
ঘন আকার : একটি রাশিকে পূর্ণঘন আকারে প্রকাশ করেও উৎপাদক নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ ২৭. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান :
দুইটি ঘন এর যোগফল বা বিয়োগফলের সূত্র দিয়ে : এবং সূত্র দুইটি ব্যবহার করে উৎপাদক নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ ২৮. উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ)
সমাধান :
ক)
খ)
কিন্তু
এবং
বিকল্প নিয়ম :
কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ) গ) |
ভগ্নাংশসহগযুক্ত রাশির উৎপাদক : ভগ্নাংশসহগযুক্ত রাশির উৎপাদকগুলোকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। যেমন,
আবার,
দ্বিতীয় সমাধানে চলক-সংবলিত উৎপাদকগুলোর সহগগুলো পূর্ণসংখ্যা কিন্তু সমাধান দুইটি অভিন্ন।
উদাহরণ ২৯. কে উৎপাদকে বিশ্লেষ্ণ কর।
সমাধান :
কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ) গ) |
নিচের উদাহরণটিতে কে দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ও ভাগশেষ কত?
এখানে, ভাজক ভাজ্য ভাগফল এবং ভাগশেষ 4 ।
আমরা জানি, ভাজ্য = ভাজক x ভাগফল + ভাগশেষ
এখন যদি আমরা ভাজ্যকে f(x), ভাগফলকে h(2), ভাগশেষকে । ও ভাজককে (x – a) দ্বারা সূচিত করি, তাহলে উপরের সূত্র থেকে পাই,
f(x) = (x – a) . h(a) + r, এই সূত্রটি a এর সকল মানের জন্য সত্য।
উভয়পক্ষে x = a বসিয়ে পাই,
f(a) = (a - a) . h(a) + r = 0. h(a) + r = r
সুতরাং, r = f(a)
অতএব, f(x) কে (x – a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয় f(a)। এই সূত্র ভাগশেষ উপপাদ্য (Remainder theorem) নামে পরিচিত। অর্থাৎ, ধনাত্মক মাত্রার কোনো বহুপদী f(x) কে (x – a) আকারের বহুপদী দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে তা ভাগ না করে বের করার সূত্রই হলো ভাগশেষ উপপাদ্য। উপরের উদাহরণে a = 1 হলে
f(1) = 6 - 7 + 5 = 4 যা ভাগশেষের সমান। ভাজক বহুপদী (x – a) এর মাত্রা 1, ভাজক যদি ভাজ্যের উৎপাদক হয়, তাহলে ভাগশেষ হবে শূন্য। আর যদি উৎপাদক না হয়, তাহলে ভাগশেষ থাকবে এবং তা হবে অশূন্য কোনো সংখ্যা। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে ভাগফল ভাজকের থেকে কম মাত্রার একটি বহুপদী হবে।
অনুসিদ্ধান্ত ১১. (x – a), f(x) এর উৎপাদক হবে, যদি এবং কেবল যদি f(a) = 0 হয়।
প্রমাণ : ধরি, f(a) 0। অতএব, ভাগশেষ উপপাদ্য অনুযায়ী, f(x) কে (x – a) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ শূন্য হবে। অর্থাৎ, (x – a), f(x) এর একটি উৎপাদক হবে।
বিপরীতক্রমে, ধরি, (x – a), f(x) এর একটি উৎপাদক।
অতএব, f(x) = (x – a) . h(x), যেখানে h(x) বহুপদী।
উভয়পক্ষে x = a বসিয়ে পাই,
f(a) = (a – a) . h(a) = 0
f(a) = 0
সুতরাং, কোনো বহুপদী f(x), (x – a) দ্বারা বিভাজ্য হবে যদি এবং কেবল যদি f(a) = 0 হয়। এই সূত্র উৎপাদক উপপাদ্য (Factor theorem) নামে পরিচিত।
প্রতিজ্ঞা ১২. যদি f(x) এর মাত্রা ধনাত্মক হয় এবং a ≠ 0 হয়, তবে f(x) কে (a + b) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয়
প্রমাণ : ভাজক ax + b, (a ≠ 0) এর মাত্রা 1 ।
সুতরাং আমরা লিখতে পারি,
দেখা যাচ্ছে যে, f(x) কে দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয়, a. h(x) এবং ভাগশেষ হয় r ।
এখানে, ভাজক
সুতরাং ভাগশেষ উপপাদ্য অনুযায়ী,
অতএব, f(x) কে (ax + b) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হয়
অনুসিদ্ধান্ত ১৩. ax + b, a ≠ 0 হলে, রাশিটি কোনো বহুপদী f(x) এর উৎপাদক হবে, যদি এবং কেবল যদি হয়।
প্রমাণ : এর উৎপাদক হবে, যদি এবং কেবল যদি এর একটি উৎপাদক হয়। অর্থাৎ, যদি এবং কেবল যদি হয়। ভাগশেষ উপপাদ্যের সাহায্যে উৎপাদক নির্ণয়ের এই পদ্ধতিকে শূন্যায়ন পদ্ধতি (Vanishing method) বলে।
উদাহরণ ৩০. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান : এখানে, একটি বহুপদী। এর ধ্রুবপদ – 6 এর উৎপাদকগুলো হচ্ছে ±1, ±2, ±3, ±6 ।
এখন, x = 1, –1 বসিয়ে দেখি, f(x) এর মান শূন্য হয় না।
কিন্তু x = 2 বসিয়ে দেখি, f(x) এর মান শূন্য হয়।
অর্থাৎ, ।
সুতরাং, x – 2, f(x) বহুপদীটির একটি উৎপাদক ।
উদাহরণ ৩১. এবং এবং কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান : এখানে, æ কে চলক এবং y কে ধ্রুবক হিসেবে বিবেচনা করি।
প্রদত্ত রাশিকে x-এর বহুপদী বিবেচনা করে
ধরি,
তাহলে,
(x - y), f(x) এর একটি উৎপাদক।
এখন,
আবার ধরি,
উদাহরণ ৩২. কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান : ধরি,
তাহলে,
f(x) এর একটি উৎপাদক
অর্থাৎ, (2x + a) f(x) এর একটি উৎপাদক।
এখন,
উদাহরণ ৩৩. ।
ক) g(a) কে (a - 2) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত হবে তা নির্ণয় কর।
খ) f(a) কে উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর।
সমাধান : ক) দেওয়া আছে,
ভাগশেষ উপপাদ্য অনুসারে g(a) কে (a - 2) দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ হবে g(2) ।
নির্ণেয় ভাগশেষ 24
খ)
f(a) একটি বহুপদী, a = 1 বসালে বহুপদীটির মান শূন্য হয়।
ফলে (a – 1) বহুপদীটির একটি উৎপাদক।
কাজ : উৎপাদকে বিশ্লেষণ কর : ক) খ) গ) |
দৈনন্দিন কাজে বিভিন্ন সময়ে আমরা বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হই। এই সমস্যাগুলো ভাষাগতভাবে বর্ণিত হয়। এ অনুচ্ছেদে আমরা ভাষাগতভাবে বর্ণিত বাস্তব পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে বীজগাণিতিক সূত্র গঠন এবং তা প্রয়োগ করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এই আলোচনার ফলে শিক্ষার্থীরা একদিকে যেমন বাস্তব পরিবেশে গণিতের প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা পাবে, অন্যদিকে নিজেদের পারিপার্শ্বিক অবস্থায় গণিতের সম্পৃক্ততা বুঝতে পেরে গণিত শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হবে।
সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি :
১. প্রথমেই সতর্কতার সাথে সমস্যাটি পর্যবেক্ষণ করে এবং মনোযোগ সহকারে পড়ে কোনগুলো অজ্ঞাত এবং কী নির্ণয় করতে হবে তা চিহ্নিত করতে হবে।
২. অজ্ঞাত রাশিগুলোর একটিকে যেকোনো চলক (ধরি x) দ্বারা সূচিত করতে হবে। অতঃপর সমস্যাটি ভালোভাবে অনুধাবন করে সম্ভব হলে অন্যান্য অজ্ঞাত রাশিগুলোকেও একই চলক x এর মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
৩. সমস্যাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে বীজগাণিতিক রাশি দ্বারা প্রকাশ করতে হবে।
৪. প্রদত্ত শর্ত ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলোকে একত্রে একটি সমীকরণে প্রকাশ করতে হবে।
৫. সমীকরণটি সমাধান করে অজ্ঞাত রাশি x এর মান নির্ণয় করতে হবে।
বাস্তব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করা হয়। সূত্রগুলো এখানে আলোচনা করা হলো।
দেয় বা প্রাপ্য বিষয়ক
মনে করি, q = জনপ্রতি দেয় বা প্রাপ্য টাকার পরিমাণ
n = লোকের সংখ্যা
দেয় বা প্রাপ্য টাকার পরিমাণ, A = qn
সময় ও কাজ বিষয়ক
মনে করি, q = প্রত্যেকে একক সময়ে কাজের যে অংশ সম্পন্ন করে
n = কাজ সম্পাদনকারীর সংখ্যা
x = কাজের মোট সময়
W = n জনে x সময়ে কাজের যে অংশ সম্পন্ন করে
W = qnx
সময় ও দূরত্ব বিষয়ক
মনে করি, v = প্রতি ঘণ্টায় গতিবেগ
t = মোট সময়
d = মোট দূরত্ব
d = vt
নল ও চৌবাচ্চা বিষয়ক
মনে করি, = নলের মুখ খুলে দেওয়ার সময় চৌবাচ্চায় জমা পানির পরিমাণ
q = প্রতি একক সময়ে নল দিয়ে যে পানি প্রবেশ করে অথবা বের হয়
t = অতিক্রান্ত সময়
Q(t) = t সময়ে চৌবাচ্চায় পানির পরিমাণ
পানি প্রবেশ হওয়ার শর্তে '+' চিহ্ন এবং পানি বের হওয়ার শর্তে '-' চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।
শতকরা অংশ বিষয়ক
মনে করি, b = মোট রাশি
r = শতকরা হার =
p = শতকরা অংশ = b এর s%
p = br
লাভ-ক্ষতি বিষয়ক
মনে করি, C = ক্রয়মূল্য
r = লাভ বা ক্ষতির শতকরা হার
বিক্রয়মূল্য S = C (1 ± r)
লাভের ক্ষেত্রে, S = C(1 + r) এবং ক্ষতির ক্ষেত্রে, S = C(1 – r)
বিনিয়োগ-মুনাফা বিষয়ক
মনে করি, I = n একক সময় পরে মুনাফা
n = নির্দিষ্ট সংখ্যক একক সময়
P = মূলধনের পরিমাণ
r = একক সময়ে একক মূলধনের মুনাফা
A = n একক সময় পরে মুনাফাসহ মূলধন
সরল মুনাফার ক্ষেত্রে,
I = Pnr
A = P + I = P + Pnr = P(1+nr)
চক্রবৃদ্ধি মুনাফার ক্ষেত্রে,
উদাহরণ ৩৪. বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান করার জন্য কোনো এক সমিতির সদস্যরা 45,000 টাকার বাজেট করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন যে, প্রত্যেক সদস্যই সমান চাঁদা দিবেন। কিন্তু 5 জন সদস্য চাঁদা দিতে অসম্মতি জানালেন। এর ফলে প্রত্যেক সদস্যের মাথাপিছু 15 টাকা চাঁদা বৃদ্ধি পেল। ঐ সমিতিতে কতজন সদস্য ছিলেন?
সমাধান : মনে করি, সমিতির সদস্য সংখ্যা x এবং জনপ্রতি দেয় চাঁদার পরিমাণ q টাকা। তাহলে, মোট চাঁদা, A = qx = 45,000 টাকা।
প্রকৃতপক্ষে চাঁদা প্রদানকারী সদস্য সংখ্যা ছিল (x – 5) জন এবং জনপ্রতি চাঁদা (q + 15) টাকা। - তাহলে, মোট চাঁদা হলো (x – 5) (g + 15) প্রশ্নানুসারে,
উদাহরণ ৩৫. রফিক একটি কাজ 10 দিনে করতে পারে। শফিক ঐ কাজ 15 দিনে করতে পারে। তারা একত্রে কত দিনে কাজটি শেষ করতে পারবে?
সমাধান : মনে করি, তারা একত্রে d দিনে কাজটি শেষ করতে পারবে।
নাম | কাজ সম্পন্ন করার দিন | ১ দিনে কাজের সম্পন্ন অংশ | d দিনে কাজের সম্পন্ন অংশ |
---|---|---|---|
রফিক | 10 | ||
শফিক | 15 |
সুতরাং, তারা একত্রে 6 দিনে কাজটি শেষ করতে পারবে।
উদাহরণ ৩৬. একজন মাঝি স্রোতের প্রতিকূলে ঘণ্টায় x কি.মি. যেতে পারে। স্রোতের অনুকূলে ঐ পথ যেতে তার ঘণ্টা লাগে। স্রোতের বেগ ও নৌকার বেগ কত?
সমাধান : ধরি, স্রোতের বেগ ঘণ্টায় u কি.মি. এবং স্থির পানিতে নৌকার বেগ ঘণ্টায় u কি.মি.। তাহলে, স্রোতের অনুকূলে নৌকার কার্যকরী বেগ ঘণ্টায় ( u + u) কি.মি. এবং স্রোতের প্রতিকূলে নৌকার কার্যকরী বেগ ঘণ্টায় (u – u) কি.মি.।
উদাহরণ ৩৭. একটি নল 12 মিনিটে একটি খালি চৌবাচ্চা পূর্ণ করতে পারে। অপর একটি নল প্রতি মিনিটে 14 লিটার পানি বের করে দেয়। চৌবাচ্চাটি খালি থাকা অবস্থায় দুইটি নল একসাথে খুলে দেওয়া হলে চৌবাচ্চাটি 96 মিনিটে পূর্ণ হয়। চৌবাচ্চাটিতে কত লিটার পানি ধরে?
সমাধান : মনে করি, প্রথম নল দ্বারা প্রতি মিনিটে লিটার পানি প্রবেশ করে এবং চৌবাচ্চাটিতে মোট y লিটার পানি ধরে।
প্রশ্নানুসারে, প্রথম নল দ্বারা 12 মিনিটে খালি চৌবাচ্চাটি পূর্ণ হয়
y = 12x ………. (1)
আবার, দুইটি নল দ্বারা 96 মিনিটে খালি চৌবাচ্চা পূর্ণ হয়
y = 96x - 96 x 14 ………… (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই,
x এর মান সমীকরণ (2) এ বসিয়ে পাই,
বা,
বা, 7y = 96 × 14
বা,
সুতরাং, চৌবাচ্চাটিতে মোট 192 লিটার পানি ধরে।
কাজ : ক) বনভোজনে যাওয়ার জন্য একটি বাস 2400 টাকায় ভাড়া করা হলো এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, প্রত্যেক যাত্রী সমান ভাড়া দিবে। 10 জন যাত্রী অনুপস্থিত থাকায় মাথাপিছু ভাড়া ৪ টাকা বৃদ্ধি পেল। বাসে কতজন যাত্রী গিয়েছিল এবং প্রত্যেকে কত টাকা করে ভাড়া দিয়েছিল? খ) ক ও খ একত্রে একটি কাজ p দিনে করতে পারে। ক একা কাজটি q দিনে করতে পারে। খ একাকী কত দিনে ঐ কাজটি করতে পারবে? গ) এক ব্যক্তি স্রোতের প্রতিকূলে দাঁড় বেয়ে ঘণ্টায় 2 কি.মি. বেগে যেতে পারে। স্রোতের বেগ ঘণ্টায় ও কি.মি. হলে, স্রোতের অনুকূলে 32 কি.মি. যেতে তার কত সময় লাগবে? |
উদাহরণ ৩৮. একটি বইয়ের মূল্য 24 টাকা। এই মূল্য বই তৈরির ব্যয়ের ৪০%। বাকি মূল্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকেন। সরকার প্রতি বইয়ে কত টাকা ভর্তুকি দেন?
সমাধান : বাজার মূল্য = বই তৈরির ব্যয়ের ৪০%
আমরা জানি, p = br
এখানে, p = 24 টাকা এবং
বা,
টাকা
সুতরাং বই তৈরির ব্যয় 30 টাকা।
ভর্তুকি = (30 – 24) টাকা = - 6 টাকা
সুতরাং সরকার প্রতি বইয়ে 6 টাকা ভর্তুকি দেন।
উদাহরণ ৩৯. টাকায় n সংখ্যক কমলা বিক্রয় করায় r% ক্ষতি হয়। ৪% লাভ করতে হলে, টাকায় কয়টি কমলা বিক্রয় করতে হবে?
সমাধান : ক্রয়মূল্য 100 টাকা হলে, r% ক্ষতিতে বিক্রয়মূল্য (100 – r) টাকা।
তাহলে, যখন বিক্রয়মূল্য (100-r) টাকা, তখন ক্রয়মূল্য 100 টাকা।
যখন বিক্রয়মূল্য 1 টাকা, তখন ক্রয়মূল্য টাকা।
ক্রয়মূল্য টাকা হলে, s% লাভে বিক্রয়মূল্য টাকা
টাকা।
সুতরাং, টাকায় বিক্রয় করতে হবে n সংখ্যক কমলা
1 টাকায় বিক্রয় করতে হবে সংখ্যক কমলা
সুতরাং, টাকায় সংখ্যক কমলা বিক্রয় করতে হবে।
উদাহরণ ৪০. শতকরা বার্ষিক 7 টাকা হার সরল মুনাফায় 650 টাকার 6 বছরের মুনাফা কত?
সমাধান : আমরা জানি, I = Pnr
এখানে, P = 650 টাকা, n = 6 বছর, শতকরা মুনাফার হার s = 7 টাকা
সুতরাং, মুনাফা 273 টাকা।
উদাহরণ ৪১. বার্ষিক শতকরা 6 টাকা হার চক্রবৃদ্ধি মুনাফায় 15000 টাকার 3 বছরের সবৃদ্ধিমূল ও চক্রবৃদ্ধি মুনাফা নির্ণয় কর।
সমাধান : আমরা জানি, [যেখানে C চক্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবৃদ্ধিমূল]
দেওয়া আছে, P = 15000 টাকা, বছর
কাজ : ক) 50 টাকায় 10 টি লেবু বিক্রয় করায় 50% ক্ষতি হয়। 50 টাকায় 6টি লেবু বিক্রয় করলে শতকরা কত লাভ বা ক্ষতি হবে? খ) বার্ষিক শতকরা হার সরল মুনাফায় 750 টাকার 4 বছরের সবৃদ্ধিমূল কত টাকা হবে? গ) বার্ষিক 4 টাকা হার চক্রবৃদ্ধি মুনাফায় 2000 টাকার 3 বছরের সবৃদ্ধিমূল নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ৪২. টাকায় 10 টি আইসক্রিম এর কাঠি বিক্রয় করলে x% ক্ষতি হয়। টাকায় কয়টি বিক্রয় করলে z% লাভ হবে?
সমাধান : ক্রয়মূল্য 100 টাকা হলে x% ক্ষতিতে বিক্রয়মূল্য = (100 – x)
বিক্রয়মূল্য (100 – x) টাকা হলে ক্রয়মূল্য 100 টাকা
বিক্রয়মূল্য 1 টাকা হলে ক্রয়মূল্য টাকা
অর্থাৎ 10 টি আইসক্রিম কাঠির ক্রয়মূল্য টাকা
1 টি আইসক্রিম কাঠির ক্রয়মূল্য টাকা
আবার ক্রয়মূল্য 100 টাকা হলে z% লাভে বিক্রয়মূল্য (100 + z) টাকা
ক্রয়মূল্য 100 টাকা হলে বিক্রয়মূল্য (100 + z) টাকা
ক্রয়মূল্য 1 টাকা হলে বিক্রয়মূল্য টাকা
অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যা বা রাশিকে সূচকের সাহায্যে লিখে অতি সহজে প্রকাশ করা যায় । ফলে হিসাব গণনা ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান সহজতর হয়। তাছাড়া সূচকের মাধ্যমেই সংখ্যার বৈজ্ঞানিক বা আদর্শ রূপ প্রকাশ করা হয়। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সূচকের ধারণা ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
সূচক ... েকেই লগারিদমের সৃষ্টি। লগারিদমের সাহায্যে সংখ্যার বা রাশির গুণ, ভাগ ও সূচক সম্পর্কিত গণনার কাজ সহজ হয়েছে। ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটার এর ব্যবহার প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হিসাব ও গণনায় লগারিদমের ব্যবহার ছিল একমাত্র উপায় । এখনও এগুলোর বিকল্প হিসাবে লগারিদমের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
এ অধ্যায়ে সূচক ও লগারিদম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
আমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে সূচকের ধারণা পেয়েছি এবং সপ্তম শ্রেণিতে গুণের ও ভাগের সূচক নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। সূচক ও ভিত্তি সংবলিত রাশিকে সূচকীয় রাশি বলা হয়।
a যেকোনো বাস্তব সংখা এবং n যেকোনো ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে, n সংখ্যক a এর ক্রমিক গুণ হলো । অর্থাৎ, a × a × a × ... × a (n সংখ্যক বার a) = । এখানে, n হলো সূচক বা ঘাত এবং a হলো ভিত্তি। আবার, বিপরীতক্রমে = a × a × a × a (n সংখ্যক বার a)।
সূচক শুধু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাই নয়, ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা বা ধনাত্মক ভগ্নাংশ বা ঋণাত্মক ভগ্নাংশও হতে পারে। অর্থাৎ, ভিত্তি a ∈ R (বাস্তব সংখ্যার সেট) এবং সূচক n ∈ Q (মুলদ সংখ্যার সেট) এর জন্য সংজ্ঞায়িত। বিশেষ ক্ষেত্রে, n ∈ N (স্বাভাবিক সংখ্যার সেট) ধরা হয়। তাছাড়া অমূলদ সূচকও হতে পারে। তবে সেটা মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচি বহির্ভূত বলে এখানে আর আলোচনা করা হয় নি।
ধরি, a ∈ R (বাস্তব সংখ্যার সেট) এবং m, n ∈ N (স্বাভাবিক সংখ্যার সেট)।
সূত্র ১ (গুণ).
সূত্র ২ (ভাগ).
নিচের ছকের খালি ঘরগুলো পূরণ কর :
সূত্র ৩ (গুণফলের ঘাত).
সূত্র ৪ (ভাগফলের ঘাত).
সূত্র ৫ (ঘাতের ঘাত).
সূচকে সূত্রাবলির প্রয়োগ ক্ষেত্র সকল পূর্ণসংখ্যা সম্প্রসারণের লক্ষে এবং (যেখানে n স্বাভাবিক সংখ্যা) এর সংজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন।
সংজ্ঞা ১ (শূন্য সূচক).
সংজ্ঞা ২ (ঋণাত্মক সূচক).
এই সংজ্ঞা দুইটির ফলে সূচক বিধি m এবং n এর সকল পূর্ণসাংখ্যিক মানের জন্য বলবৎ থাকে এবং এরূপ সকল সূচকের জন্য খাটে।
লক্ষ কর,
উদাহরণ ১. মান নির্ণয় কর : ক) খ)
সমাধান :
উদাহরণ ২. সরল কর : ক) খ)
সমাধান :
উদাহরণ ৩. দেখাও যে,
সমাধান :
কাজ : খালি ঘর পূরণ কর : |
কাজ : সরল কর : |
লক্ষণীয় :
সূচকীয় রাশির মান বের করতে লগারিদম (Logarithms) ব্যবহার করা হয়। সাধারণ লগারিদমকে সংক্ষেপে লগ (Log) লেখা হয়। বড় বড় সংখ্যা বা রাশির গুণফল, ভাগফল ইত্যাদি লগারিদমের সাহায্যে সহজে নির্ণয় করা যায়।
আমরা জানি, এই গাণিতিক উক্তিটিকে লগের মাধ্যমে লেখা হয় হলে একইভাবে কে লগের মাধ্যমে লেখা যায়, ।
হলে, কে N এর a ভিত্তিক লগ বলা হয়।
দ্রষ্টব্য : ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যাই হোক না কেন, a > 0 হলে সর্বদা ধনাত্মক। তাই শুধু ধনাত্মক সংখ্যারই লগের মান আছে যা বাস্তব। শূন্য বা ঋণাত্মক সংখ্যার লগের বাস্তব মান নেই।
কাজ : নিচের সারণিগুলোতে সূচক হতে লগের মাধ্যমে প্রকাশ কর : |
ধরি, a > 0, a ≠ 1; b > 0, b ≠ 1 এবং M > 0, N > 0
সূত্র ৬ (শূন্য ও এক লগ). a > 0, a = 1 হলে ক) খ)
উদাহরণ ৭. ক) এর 5 ভিত্তিক লগ কত? খ) 400 এর লগ 4 হলে লগের ভিত্তি কত?
সমাধান :
সূচকের সাহায্যে আমরা অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যাকে সহজ আকারে প্রকাশ করতে পারি।
যেমন, আলোর গতি = 300000 কি.মি./সে. 300000000 মিটার/সে
= 3 × 100000000মি./সে. = 3 × 10º মি./সে.
আবার, একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ
= 0.0000000037 সে. মি.
সে.মি. সে.মি.
= সে.মি. সে.মি.
সুবিধার্থে অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যাকে ax 10” আকারে প্রকাশ করা হয়, যেখানে, 1 < a < 10 এবং n ∈ Z । কোনো সংখ্যার রূপকে বলা হয় সংখ্যাটির বৈজ্ঞানিক বা আদর্শ রূপ।
কাজ : নিচের সংখ্যাগুলোকে বৈজ্ঞানিক আকারে প্রকাশ কর : ক) 15000 ক) 0.000512 খ) 123.000512 |
লগারিদম পদ্ধতি দুই ধরনের :
ক) স্বাভাবিক লগারিদম (Natural Logarithm): স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার (John Napier: 1550-1617) ১৬১৪ সালে e কে ভিত্তি ধরে প্রথম লগারিদম সম্পর্কিত বই প্রকাশ করেন। e একটি অমূলদ সংখ্যা, e = 2.71828...। তাঁর এই লগারিদমকে নেপিরিয়ান লগারিদম বা e ভিত্তিক লগারিদম বা তত্ত্বীয় লগারিদমও বলা হয়। কে Inx আকারেও লেখা হয়।
খ) সাধারণ লগারিদম ( Common Logarithm): ইংল্যান্ডের গণিতবিদ হেনরি ব্রিগস (Henry Briggs: 1561-1630) ১৬২৪ সালে 10 কে ভিত্তি ধরে লগারিদমের টেবিল (লগ টেবিল বা লগ সারণি) তৈরি করেন। তাঁর এই লগারিদমকে ব্রিগস লগারিদম বা 10 ভিত্তিক লগারিদম বা ব্যবহারিক লগারিদমও বলা হয়। এই লগারিদমকে আকারে লেখা হয়।
দ্রষ্টব্য : লগারিদমের ভিত্তির উল্লেখ না থাকলে রাশির (বীজগণিতীয়) ক্ষেত্রে e কে এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে 10 কে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। লগ সারণিতে ভিত্তি 10 ধরতে হয়।
একটি সংখ্যা N কে বৈজ্ঞানিক আকারে প্রকাশ করে পাই,
যেখানে এবং n ∈ Z
উভয়পক্ষে 10 ভিত্তিতে লগ নিয়ে পাই,
ভিত্তি 10 উহ্য রেখে পাই, logN = n + loga
n কে বলা হয় logN এর পূর্ণক।
দ্রষ্টব্য : নিচের ছক থেকে লক্ষ করি: প্রদত্ত সংখ্যার পূর্ণ অংশে যতগুলো অঙ্ক থাকবে, সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে সেই অঙ্কসংখ্যার চেয়ে 1 কম এবং তা হবে ধনাত্মক। অর্থাৎ উল্লিখিত অঙ্ক সংখ্যা m হলে সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে m - 1
দ্রষ্টব্য: এবার নিচের ছক থেকে লক্ষ করি: প্রদত্ত সংখ্যার পূর্ণ অংশ না থাকলে দশমিক বিন্দু ও এর পরের প্রথম সার্থক অঙ্কের মাঝে যতগুলো ০ (শূন্য) থাকবে, সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে শূন্যের সংখ্যার চেয়ে 1 বেশি এবং তা হবে ঋণাত্মক। অর্থাৎ উল্লিখিত শূন্যের সংখ্যা k হলে সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে {–(k + 1)}।
পূর্ণক ঋনাত্মক হলে, পূর্ণকটির বামে ‘–' চিহ্ন না দিয়ে পূর্ণকটির উপরে '—' (বার চিহ্ন) দিয়ে লেখা হয়। যেমন, পূর্ণক –3 কে লেখা হবে দিয়ে। তা না হলে অংশকসহ লগের সম্পূর্ণ অংশটি ঋণাত্মক বুঝাবে।
দ্রষ্টব্য : পূর্ণক ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে, কিন্তু অংশক সর্বদা ধনাত্মক।
উদাহরণ ১১. নিচের সংখ্যাগুলোর লগের পূর্ণক নির্ণয় কর :
ক) 5570 খ) 45.70 গ) 0.4305 ঘ) 0.000435
সমাধান :
কোনো সংখ্যার সাধারণ লগের অংশক 1 অপেক্ষা ছোট একটি অঋণাত্মক সংখ্যা। এটি মূলত: অমূলদ সংখ্যা। তবে একটি নির্দিষ্ট দশমিক স্থান পর্যন্ত অংশকের মান বের করা হয়। কোনো সংখ্যার লগের অংশক লগ তালিকা থেকে বের করা যায়। আবার তা ক্যালকুলেটরের সাহায্যেও বের করা যায়। আমরা দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ক্যালকুলেটরের সাহায্যে সংখ্যার লগের অংশক বের করবো।
উদাহরণ ১২. log2717 এর পূর্ণক ও অংশক নির্ণয় কর :
সমাধান :
উদাহরণ ১৩. log43.517 এর পূর্ণক ও অংশক বের কর।
সমাধান :
উদাহরণ ১৪. 0.00836 এর লগের পূর্ণক ও অংশক কত?
সমাধান :
log0.00836 এর পূর্ণক –3 এবং অংশক .92221, অংশকটি সর্বদা অঋণাত্মক হওয়ায় এখানে পূর্ণকের ‘-’ চিহ্নটি সংখ্যাটির ওপরে দেখানো হয়।
উদাহরণ ১৫. নির্ণয় কর :
সমাধান :
কাজ : ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে নিম্নলিখিত সংখ্যাগুলোর 10 ও e ভিত্তিক লগ নির্ণয় কর : ক) 2550 খ) 52.143 গ) 0.4145 ঘ) 0.0742 |
আমরা পূর্বের শ্রেণিতে চলক ও সমীকরণ কী তা জেনেছি এবং এদের ব্যবহার শিখেছি। এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণের সমাধান করতে শিখেছি এবং বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সরল সমীকরণ গঠন করে তা সমাধান করা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেছি। এ অধ্যায়ে এক চলকবিশিষ্ট একঘাত ও দ্বিঘাত সমীকরণ এবং অভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এবং... বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সমাধানে এদের ব্যবহার দেখানো হয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
আমরা জানি, x + 3 = 5 একটি সমীকরণ। এটি সমাধান করতে হলে আমরা অজ্ঞাত রাশি x এর মান বের করি। এখানে অজ্ঞাত রাশি x একটি চলক। আবার, x + a = 5 সমীকরণটি সমাধান করতে হলে, আমরা x এর মান নির্ণয় করি, a এর মান নয়। এখানে æ কে চলক ও a. কে ধ্রুবক হিসাবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে x এর মান a এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। তবে a এর মান নির্ণয় করতে হলে, আমরা লিখবো a = 5 - x; অর্থাৎ a এর মান . এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এখানে a চলক ও ধ্রুবক হিসাবে বিবেচিত। তবে বিশেষ কোনো নির্দেশনা না থাকলে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী x কে চলক হিসাবে ধরা হয়। সাধারণত ইংরেজি বর্ণমালার ছোট হাতের শেষের দিকের অক্ষর x, y, z কে চলক হিসাবে এবং প্রথম দিকের অক্ষর a, b, c কে ধ্রুবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
যে সমীকরণে একটি মাত্র অজ্ঞাত রাশি থাকে, তাকে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ বা সরল সমীকরণ বলা হয়। যেমন : x + 3 = 5, ইত্যাদি।
যদি একটি সেট S {x : x ∈ R, 1 ≤ x ≤ 10} হয়, তবে x-এর মান 1 থেকে 10 পর্যন্ত যেকোনো = বাস্তব সংখ্যা হতে পারে। এখানে x একটি চলক। কাজেই আমরা বলতে পারি যে, যখন কোনো অক্ষর প্রতীক কোনো সেটের উপাদান বোঝায় তখন একে চলক বলে।
সমীকরণের ঘাত : কোনো সমীকরণের চলকের সর্বোচ্চ ঘাতকে সমীকরণটির ঘাত বলে। x + 1 = 5, 2x – 1 = x + 5, y + 7 = 2y - 3 সমীকরণগুলোর প্রত্যেকটির ঘাত 1; এগুলো এক চলকবিশিষ্ট একঘাত সমীকরণ।
আবার, সমীকরণগুলোর প্রত্যেকটির ঘাত 2; এগুলো এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণ। সমীকরণটি এক চলকবিশিষ্ট ত্রিঘাত সমীকরণ।
সমীকরণ : সমীকরণে সমান চিহ্নের দুইপক্ষে দুইটি বহুপদী থাকে, অথবা একপক্ষে (প্রধানত ডানপক্ষে ) শূন্য থাকতে পারে। দুই পক্ষের বহুপদীর চলকের সর্বোচ্চ ঘাত সমান নাও হতে পারে। সমীকরণ সমাধান করে চলকের সর্বোচ্চ ঘাতের সমান সংখ্যক মান পাওয়া যাবে। এই মান বা মানগুলোকে বলা হয় সমীকরণটির মূল। এই মূল বা মূলগুলো দ্বারা সমীকরণটি সিদ্ধ হবে। একাধিক মূলের ক্ষেত্রে এগুলো সমান বা অসমান হতে পারে। যেমন, সমীকরণটির মূল 2, 3 । আবার, সমীকরণে x এর মান 3 হলেও এর মূল 3, 3 ।
অভেদ : সমান চিহ্নের দুইপক্ষে সমান ঘাতবিশিষ্ট দুইটি বহুপদী থাকে। চলকের সর্বোচ্চ ঘাতের সংখ্যার চেয়েও অধিক সংখ্যক মানের জন্য অভেদটি সিদ্ধ হবে। সমান চিহ্নের উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো ভেদ নেই বলেই অভেদ। যেমন, একটি অভেদ, এটি x এর সকল মানের জন্য সিদ্ধ হবে। তাই এই সমীকরণটি একটি অভেদ। প্রত্যেক বীজগণিতীয় সূত্র একটি অভেদ। যেমন, ইত্যাদি অভেদ।
সকল সমীকরণ অভেদ নয়। অভেদে সমান (=) চিহ্নের পরিবর্তে = চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। তবে সকল অভেদই সমীকরণ বলে অভেদের ক্ষেত্রেও সাধারণত সমান চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
সমীকরণ ও অভেদের পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো :
সমীকরণ | অভেদ |
---|---|
১। সমান চিহ্নের দুই পক্ষে দুইটি বহুপদী থাকতে পারে অথবা এক পক্ষে শূন্য থাকতে পারে। ২। উভয় পক্ষের বহুপদীর মাত্রা অসমান হতে পারে। ৩। চলকের এক বা একাধিক মানের জন্য সমতাটি সত্য হয়। ৪। চলকের মানের সংখ্যা সর্বাধিক মাত্রার সমান হতে পারে। ৫। সকল সমীকরণ অভেদ নয়। | ১। দুই পক্ষে দুইটি বহুপদী থাকে। ২। উভয় পক্ষে বহুপদীর মাত্রা সমান থাকে। ৩। চলকের মূল সেটের সকল মানের জন্য সাধারণত সমতাটি সত্য হয়। ৪। চলকের অসংখ্য মানের জন্য সমতাটি সত্য। ৫। সকল বীজগণিতীয় অভেদই সমীকরণ।
|
কাজ : ক) নিচের সমীকরণগুলোর কোনটির ঘাত কত ও মূল কয়টি? (১) 3x + 1 (২) খ) তিনটি অভেদ লেখ। |
সমীকরণ সমাধানের ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম প্রয়োগ করতে হয়। এই নিয়মগুলো জানা থাকলে সমীকরণের সমাধান নির্ণয় সহজতর হয়। নিয়মগুলো হলো :
১. সমীকরণের উভয়পক্ষে একই সংখ্যা বা রাশি যোগ করলে পক্ষদ্বয় সমান থাকে।
২. সমীকরণের উভয়পক্ষ থেকে একই সংখ্যা বা রাশি বিয়োগ করলে পক্ষদ্বয় সমান থাকে।
৩ . সমীকরণের উভয়পক্ষকে একই সংখ্যা বা রাশি দ্বারা গুণ করলে পক্ষদ্বয় সমান থাকে।
৪. সমীকরণের উভয়পক্ষকে অশূন্য একই সংখ্যা বা রাশি দ্বারা ভাগ করলে পক্ষদ্বয় সমান থাকে।
উপরের ধর্মগুলোকে বীজগণিতীয় রাশির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় :
যদি x = a এবং c ≠ 0 হয় তাহলে,
(i) x + c = a + c
(ii) x - c = a - c
(iii) xc = ac
(iv)
এছাড়া যদি a, b ও c তিনটি রাশি হয় তবে, a = b + c হলে, a - b = c হবে এবং a + c = b হলে, a = b - c হবে।
এই নিয়মটি পক্ষান্তর বিধি হিসাবে পরিচিত এবং এই বিধি প্রয়োগ করে বিভিন্ন সমীকরণ সমাধান করা হয়।
কোনো সমীকরণের পদগুলো ভগ্নাংশ আকারে থাকলে, লবগুলোতে চলকের ঘাত 1 এবং হরগুলো ধ্রুবক হলে, সেগুলো একঘাত সমীকরণ।
এখন, আমরা এমন সমীকরণের সমাধান করবো যা দ্বিঘাত সমীকরণের আকারে থাকে। এ সকল সমীকরণ সরলীকরণের মাধ্যমে সমতুল সমীকরণে রূপান্তর করে ax = b আকারের একঘাত সমীকরণে পরিণত করা হয়। আবার, হরে চলক থাকলেও সরলীকরণ করে একঘাত সমীকরণে রূপান্তর করা হয় ।
দুই পক্ষের ভগ্নাংশ দুইটির মান সমান। আবার, দুই পক্ষের লব সমান, কিন্তু হর অসমান। এক্ষেত্রে লবের মান একমাত্র শূন্য হলেই দুই পক্ষ সমান হবে।
কাজ : হলে, দেখাও যে, |
বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হয়। এই সমস্যা সমাধানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গাণিতিক জ্ঞান, দক্ষতা ও যুক্তির প্রয়োজন হয়। বাস্তব ক্ষেত্রে গাণিতিক জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগে একদিকে যেমন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়, অন্যদিকে তেমনি প্রাত্যহিক জীবনে গণিতের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় বিধায়, শিক্ষার্থীরা গণিতের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এখানে প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যাকে সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করে তার সমাধান করা হবে।
বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে অজ্ঞাত সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য এর পরিবর্তে চলক ধরে নিয়ে সমস্যায় প্রদত্ত শর্তানুসারে সমীকরণ গঠন করা হয়। তারপর সমীকরণটি সমাধান করলেই চলকটির মান, অর্থাৎ অজ্ঞাত সংখ্যাটি পাওয়া যায়।
উদাহরণ ৫. দুই অঙ্কবিশিষ্ট কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্কটি দশক স্থানীয় অঙ্ক অপেক্ষা 2 বেশি। অঙ্কদ্বয় স্থান বিনিময় করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা প্রদত্ত সংখ্যার দ্বিগুণ অপেক্ষা 6 কম হবে। সংখ্যাটি নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, দশক স্থানীয় অঙ্কটি x অতএব, একক স্থানীয় অঙ্কটি হবে x + 2
সংখ্যাটি 10x + (x + 2) বা, 11x + 2
অঙ্কদ্বয় স্থান বিনিময় করলে পরিবর্তিত সংখ্যাটি হবে 10(x + 2) + x বা, 11x + 20
প্রশ্নমতে, 11x + 20 = 2(11x + 2) – 6
বা, 11x + 20 = 22x + 4 – 6
বা, 22x – 11x = 20 + 6 – 4 [পক্ষান্তর করে]
বা, 11x = 22
বা, x = 2
সংখ্যাটি 11x + 2 = 11 × 2 + 2 = 24
প্রদত্ত সংখ্যাটি 24
উদাহরণ ৬. একটি শ্রেণির প্রতিবেঞ্চে 4 জন করে ছাত্র বসালে 3 টি বেঞ্চ খালি থাকে। আবার, প্রতিবেঞ্চে 3 জন করে ছাত্র বসালে 6 জন ছাত্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঐ শ্রেণির ছাত্র সংখ্যা কত?
সমাধান : মনে করি, শ্রেণিটির ছাত্র সংখ্যা x
যেহেতু প্রতিবেঞ্চে 4 জন করে বসালে 3 টি বেঞ্চ খালি থাকে, সেহেতু ঐ শ্রেণির বেঞ্চের সংখ্যা
আবার, যেহেতু প্রতিবেঞ্চে 3 জন করে বসালে 6 জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সেহেতু ঐ শ্রেণির বেঞ্চের সংখ্যা
যেহেতু শ্রেণির বেঞ্চের সংখ্যা একই থাকবে,
উদাহরণ ৭. কবির সাহেব তাঁর 56000 টাকার কিছু টাকা বার্ষিক 12% মুনাফায় ও বাকি টাকা বার্ষিক 10% মুনাফায় বিনিয়োগ করলেন। এক বছর পর তিনি মোট 6400 টাকা মুনাফা পেলেন। তিনি 12% মুনাফায় কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন?
সমাধান : মনে করি, কবির সাহেব 12% মুনাফায় টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি 10% মুনাফায় বিনিয়োগ করেছেন (56000 – x ) টাকা।
এখন, x টাকার 1 বছরের মুনাফা টাকা বা, টাকা।
আবার, (56000 – x) টাকার 1 বছরের মুনাফা টাকা বা, টাকা।
প্রশ্নমতে,
বা, 12x + 560000 - 10x 640000
বা, 2x = 640000 - 560000
বা, 2x = 80000
বা, x = 40000
কবির সাহেব 12% মুনাফায় 40000 টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
কাজ : সমীকরণ গঠন করে সমাধান কর : ক) ভগ্নাংশটির লব ও হরের প্রত্যেকের সাথে কোন সংখ্যাটি যোগ করলে ভগ্নাংশটি হবে? খ) দুইটি ক্রমিক স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গের অন্তর 151 হলে, সংখ্যা দুইটি নির্ণয় কর। গ) 120 টি এক টাকার মুদ্রা ও দুই টাকার মুদ্রায় মোট 180 টাকা হলে, কোন প্রকারের মুদ্রার সংখ্যা কয়টি? |
[যেখানে, a, b, c ধ্রুবক এবং a ≠ 0] আকারের সমীকরণকে এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত সমীকরণ বলা হয়। দ্বিঘাত সমীকরণের বামপক্ষ একটি দ্বিমাত্রিক বহুপদী। সমীকরণের ডানপক্ষ শূন্য ধরা হয়।
12 বর্গ সে.মি. ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য সে.মি. ও প্রস্থ (x - 1 ) সে.মি.।
আয়তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল = x (x – 1) বর্গ সে.মি.
প্রশ্নমতে, x(x – 1 ) = 12 বা
সমীকরণটিতে একটি চলক x এবং এর সর্বোচ্চ ঘাত 21 এরূপ সমীকরণ হলো দ্বিঘাত সমীকরণ। যে সমীকরণে চলকের সর্বোচ্চ ঘাত 2, তাকে দ্বিঘাত সমীকরণ বলে।
আমরা অষ্টম শ্রেণিতে এবং আকারের এক চলকবিশিষ্ট দ্বিঘাত রাশির উৎপাদকে বিশ্লেষণ করেছি। এখানে আমরা এবং আকারের দ্বিঘাত সমীকরণের বামপক্ষকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করে চলকের মান নির্ণয়ের মাধ্যমে এরূপ সমীকরণ সমাধান করবো।
উৎপাদকে বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে বাস্তব সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম প্রয়োগ করা হয়। ধর্মটি নিম্নরূপ: যদি দুইটি রাশির গুণফল শূন্য হয়, তবে রাশিদ্বয়ের যেকোনোটি অথবা উভয় রাশি শূন্য হবে। অর্থাৎ, দুইটি রাশি a ও b এর গুণফল ab 0 হলে, a = 0 বা, b = 0, অথবা a = 0 এবং b = 0 হবে।
উদাহরণ ৮. সমাধান কর : (x + 2) (x – 3) = 0
সমাধান: (x + 2) (x – 3) = 0
x + 2 = 0 অথবা x - 3 = 0
x + 2 = 0 হলে, x = − 2
আবার, x – 3 = 0 হলে, x = 3
সমাধান x = −2 অথবা x = 3
উদাহরণ ৯. সমাধান সেট নির্ণয় কর :
সমাধান :
বা,
বা, অথবা
আবার, হলে,
সমাধান সেট
উদাহরণ ১০. সমাধান কর ও সমাধান সেট লেখ :
সমাধান :
বা, x(x – 4) = x – 4 [আড়গুণন করে]
বা, x(x – 4 ) – (x – 4 ) = 0 [পক্ষান্তর করে]
বা, (x – 4 ) (x – 1) = 0
x- - 4 = 0 অথবা x – 1 = 0
x – 4 = 0 হলে, x = 4
আবার, x - 1 = 0 হলে, x = 1
সমাধান সেট {1, 4}
কাজ : ক) সমীকরণটিকে সমীকরণের সাথে তুলনা করে a, b, c এর মান লেখ। খ) সমীকরণটির ঘাত কত? এর মূল কয়টি ও কী কী? |
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক সমস্যা এক চলকবিশিষ্ট একঘাত সমীকরণ ও দ্বিঘাত সমীকরণে রূপান্তর করে সহজে সমাধান করা যায়। এখানে, বাস্তবভিত্তিক সমস্যায় প্রদত্ত শর্ত থেকে দ্বিঘাত সমীকরণ গঠন করে সমাধান করার কৌশল দেখানো হলো।
উদাহরণ ১২. একটি প্রকৃত ভগ্নাংশের হর, লব অপেক্ষা 4 বেশি। ভগ্নাংশটি বর্গ করলে যে ভগ্নাংশ পাওয়া যাবে তার হর, লব অপেক্ষা 40 বেশি হবে। ভগ্নাংশটি নির্ণয় কর।
সমাধান : ধরি, ভগ্নাংশটির লব x এবং হর x + 4
সুতরাং ভগ্নাংশটি
ভগ্নাংশটির বর্গ
এখানে, লব এবং হর
প্রশ্নমতে,
বা, 8x + 16 = 40
বা, 8x = 40 - 16
বা, 8x = 24
বা, x = 3
x + 4 = 3 + 4 = 7
ভগ্নাংশটি
উদাহরণ ১৩. 50 মিটার দৈর্ঘ্য এবং 40 মিটার প্রস্থবিশিষ্ট একটি আয়তাকার বাগানের ভিতরের চারদিকে সমান চওড়া একটি রাস্তা আছে। রাস্তা বাদে বাগানের ক্ষেত্রফল 1200 বর্গমিটার হলে, রাস্তাটি কত মিটার চওড়া?
সমাধান : মনে করি, রাস্তাটি মিটার চওড়া।
রাস্তা বাদে বাগানটির দৈর্ঘ্য (50 – 2x) মিটার এবং প্রস্থ ( 40 – 2x) মিটার
রাস্তা বাদে বাগানটির ক্ষেত্রফল = ( 50 – 2x) × (40 – 2x) বর্গমিটার।
প্রশ্নমতে, (50 – 2x ) × ( 40 – 2x ) = 1200
বা,
বা,
বা, [4 দিয়ে ভাগ করে]
বা,
বা, x(x – 5) – 40 (x – 5) = 0
বা, (x – 5) (x – 40 ) = 0
x - 5 = 0 অথবা x – 40 = 0
x – 5 = 0 হলে, x = 5
x – 40 = 0 হলে, x = 40
কিন্তু রাস্তাটি বাগানটির প্রস্থ 40 মিটার থেকে কম চওড়া হবে।
x = 40; x = 5
রাস্তাটি 5 মিটার চওড়া।
উদাহরণ ১৪. শাহিক 240 টাকায় কতগুলো কলম কিনল। সে যদি ঐ টাকায় একটি কলম বেশি পেতো তবে প্রতিটি কলমের দাম গড়ে 1 টাকা কম পড়তো। সে কতগুলো কলম কিনল?
সমাধান : মনে করি, শাহিক 240 টাকায় মোট æ টি কলম কিনেছিল। এতে প্রতিটি কলমের দাম পড়ে টাকা।
সে যদি 240 টাকায় (x + 1) টি কলম পেতো তবে প্রতিটি কলমের দাম পড়তো টাকা।
প্রশ্নমতে,
কিন্তু কলমের সংখ্যা x ঋণাত্মক হতে পারে না।
x ≠ -16; x = 15
শাহিক 15 টি কলম কিনেছিল।
কাজ : সমীকরণ গঠন করে সমাধান কর: ক) একটি স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গের সাথে ঐ সংখ্যাটি যোগ করলে যোগফল ঠিক পরবর্তী স্বাভাবিক সংখ্যার নয়গুণের সমান হবে। সংখ্যাটি কত? খ) 10 সে.মি. ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি বৃত্তের কেন্দ্র হতে একটি জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য বৃত্তটির অর্ধ-জ্যা অপেক্ষা 2 সে.মি. কম। আনুমানিক চিত্র অঙ্কন করে জ্যাটির দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ১৫. একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একটি পরীক্ষায় x জন ছাত্রের গণিতে প্রাপ্ত মোট নম্বর 1950। একই পরীক্ষায় অন্য একজন নতুন ছাত্রের গণিতে প্রাপ্ত নম্বর 34 যোগ করায় প্রাপ্ত নম্বরের গড় 1 কমে গেল।
ক) পৃথকভাবে x জন ছাত্রের এবং নতুন ছাত্রসহ সকলের প্রাপ্ত নম্বরের গড় x এর মাধ্যমে লেখ।
খ) প্রদত্ত শর্তানুসারে সমীকরণ গঠন করে দেখাও যে,
গ) x এর মান বের করে উভয় ক্ষেত্রে নম্বরের গড় কত তা নির্ণয় কর।
সমাধান :
ক) জন ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বরের গড়
নতুন ছাত্রের নম্বরসহ (x + 1) জন ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বরের গড়
খ) প্রশ্নমতে,
গ)
বা,
বা, x(x + 65) – 30 (x + 65) = 0
বা, (x + 65) (x – 30) = 0
x + 65 = 0 অথবা 2x – 30 = 0
x + 65 = 0 হলে, x = −65
আবার, x - 30 = 0 হলে, x = 30
যেহেতু ছাত্রের সংখ্যা x ঋণাত্মক হতে পারে না,
সুতরাং, x ≠ −65
x = 30
প্রথম ক্ষেত্রে গড় এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে গড়
জ্যামিতি বা ‘Geometry' গণিত শাস্ত্রের একটি প্রাচীন শাখা। 'Geometry' শব্দটি গ্রীক geo - ভূমি (earth) metron পরিমাপ (measure) শব্দের সমন্বয়ে তৈরি। তাই ‘জ্যামিতি' শব্দের অর্থ ‘ভূমি পরিমাপ’। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার যুগে ভূমি পরিমাপের প্রয়োজনেই জ্যামিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তবে জ্যামিতি আজকাল কেবল ভূমি পরিম... পের জন্যই ব্যবহৃত হয় না, বরং বহু জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে জ্যামিতিক জ্ঞান এখন অপরিহার্য। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোতে জ্যামিতি চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন মিশরে আনুমানিক চার হাজার বছর আগেই ভূমি জরিপের কাজে জ্যামিতিক ধ্যান-ধারণা ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন মিশর, ব্যাবিলন, ভারত, চীন ও ইনকা সভ্যতার বিভিন্ন ব্যবহারিক কাজে জ্যামিতির প্রয়োগের নিদর্শন রয়েছে। পাক-ভারত উপমহাদেশে সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতায় জ্যামিতির বহুল ব্যবহার ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর খননে সুপরিকল্পিত নগরীর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। শহরের রাস্তাগুলো ছিল সমান্তরাল এবং ভূগর্ভস্থ নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল উন্নত। তাছাড়া ঘরবাড়ির আকার দেখে বোঝা যায় যে, শহরের অধিবাসীরা ভূমি পরিমাপেও দক্ষ ছিলেন। বৈদিক যুগে বেদি তৈরিতে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকার ও ক্ষেত্রফল মেনে চলা হতো। এগুলো প্রধানত ত্ৰিভুজ, চতুর্ভুজ ও ট্রাপিজিয়াম আকারের সমন্বয়ে গঠিত হতো।
তবে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার যুগেই জ্যামিতির প্রণালীবদ্ধ রূপটি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। গ্রিক গণিতবিদ থেলিসকে প্রথম জ্যামিতিক প্রমাণের কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি যুক্তিমূলক প্রমাণ দেন যে, ব্যাস দ্বারা বৃত্ত দ্বিবিভক্ত হয়। থেলিসের পরে পিথাগোরাস জ্যামিতিক তত্ত্বের বিস্তৃতি ঘটান। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিক পন্ডিত ইউক্লিড জ্যামিতির ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সূত্রগুলোকে বিধিবদ্ধভাবে সুবিন্যস্ত করে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Elements' রচনা করেন। তেরো খণ্ডে সম্পূর্ণ কালোত্তীর্ণ এই গ্রন্থটিই আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তিস্বরূপ। এই অধ্যায়ে ইউক্লিডের অনুসরণে যুক্তিমূলক জ্যামিতি আলোচনা করা হবে।
আমাদের চারপাশে বিস্তৃত জগত (space) সীমাহীন। এর বিভিন্ন অংশ জুড়ে রয়েছে ছোট বড় নানা রকম বস্তু। ছোট বড় বস্তু বলতে বালুকণা, আলপিন, পেন্সিল, কাগজ, বই, চেয়ার, টেবিল, ইট, পাথর, বাড়িঘর, পাহাড়, পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র সবই বুঝানো হয়। বিভিন্ন বস্তু স্থানের যে অংশ জুড়ে থাকে সে স্থানটুকুর আকার, আকৃতি, অবস্থান, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি থেকেই জ্যামিতিক ধ্যান-ধারণার উদ্ভব।
কোনো ঘনবস্তু (solid) যে স্থান অধিকার করে থাকে, তা তিন দিকে বিস্তৃত। এ তিন দিকের বিস্তারেই বস্তুটির তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) নির্দেশ করে। সেজন্য প্রত্যেক ঘনবস্তুই ত্রিমাত্রিক (three dimensional)। যেমন, একটি ইট বা বাক্সের তিনটি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) আছে। একটি গোলকের তিনটি মাত্রা আছে। এর তিন মাত্রার ভিন্নতা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও একে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিশিষ্ট খণ্ডে বিভক্ত করা যায়।
ঘনবস্তুর উপরিভাগ তল (surface) নির্দেশ করে অর্থাৎ, প্রত্যেক ঘনবস্তু এক বা একাধিক তল দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন, একটি বাক্সের ছয়টি পৃষ্ঠ ছয়টি সমতলের প্রতিরূপ। গোলকের উপরিভাগ ও একটি তল। তবে বাক্সের পৃষ্ঠতল ও গোলকের পৃষ্ঠ তল ভিন্ন প্রকারের। প্রথমটি সমতল (plane), দ্বিতীয়টি বক্রতল (curved surface)।
তল : তল দ্বিমাত্রিক (Two-dimensional)। এর শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে, কোনো উচ্চতা নাই। একটি বাক্সের দুইটি মাত্রা ঠিক রেখে তৃতীয় মাত্রা ক্রমশ হ্রাস করে শূন্যে পরিণত করলে, বাক্সটির পৃষ্ঠবিশেষ মাত্র অবশিষ্ট থাকে। এভাবে ঘনবস্তু থেকে তলের ধারণায় আসা যায়।
দুইটি তল পরস্পরকে ছেদ করলে একটি রেখা (line) উৎপন্ন হয়। যেমন, বাক্সের দুইটি পৃষ্ঠতল বাক্সের একধারে একটি রেখায় মিলিত হয়। এই রেখা একটি সরলরেখা (straight line)। একটি লেবুকে একটি পাতলা ছুরি দিয়ে কাটলে, ছুরির সমতল যেখানে লেবুর বক্রতলকে ছেদ করে সেখানে একটি বক্ররেখা (curved line) উৎপন্ন হয়।
রেখা : রেখা একমাত্রিক (One-dimensional)। এর শুধু দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই। বাক্সের একটি পৃষ্ঠ-তলের প্রস্থ ক্রমশ হ্রাস পেয়ে সম্পূর্ণ শূন্য হলে, ঐ তলের একটি রেখা মাত্র অবশিষ্ট থাকে। এভাবে তলের ধারণা থেকে রেখার ধারণায় আসা যায়।
দুইটি রেখা পরস্পর ছেদ করলে বিন্দুর উৎপত্তি হয়। অর্থাৎ, দুইটি রেখার ছেদস্থান বিন্দু (point) দ্বারা নির্দিষ্ট হয়। বাক্সের দুইটি ধার যেমন, বাক্সের এক কোণায় একটি বিন্দুতে মিলিত হয়।
বিন্দুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নাই, শুধু অবস্থান আছে। একটি রেখার দৈর্ঘ্য ক্রমশঃ হ্রাস পেলে অবশেষে একটি বিন্দুতে পর্যবসিত হয়। বিন্দুকে শূন্য মাত্রার সত্তা (entity) বলে গণ্য করা হয়।
উপরে তল, রেখা ও বিন্দু সম্পর্কে যে ধারণা দেওয়া হলো, তা তল, রেখা ও বিন্দুর সংজ্ঞা নয় বর্ণনা মাত্র। এই বর্ণনায় মাত্রা বলতে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ইত্যাদি ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো সংজ্ঞায়িত নয়। ইউক্লিড তাঁর ‘Elements' গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের শুরুতেই বিন্দু, রেখা ও তলের যে সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন তা-ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অসম্পূর্ণ। ইউক্লিড প্রদত্ত কয়েকটি বর্ণনা নিম্নরূপ :
১. যার কোনো অংশ নাই, তাই বিন্দু।
২. রেখার প্রান্ত বিন্দু নাই।
৩. যার কেবল দৈর্ঘ্য আছে, কিন্তু প্রস্থ ও উচ্চতা নাই, তাই রেখা।
৪. যে রেখার উপরিস্থিত বিন্দুগুলো একই বরাবরে থাকে, তাই সরলরেখা।
৫. যার কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে, তাই তল।
৬. তলের প্রান্ত হলো রেখা।
৭. যে তলের সরলরেখাগুলো তার ওপর সমভাবে থাকে, তাই সমতল।
লক্ষ করলে দেখা যায় যে, এই বর্ণনায় অংশ, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, সমভাবে ইত্যাদি শব্দগুলো অসংজ্ঞায়িতভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। ধরে নেয়া হয়েছে যে, এগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ধারণা রয়েছে। এসব ধারণার উপর ভিত্তি করে বিন্দু, সরলরেখা ও সমতলের ধারণা দেওয়া হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে, যেকোনো গাণিতিক আলোচনায় এক বা একাধিক প্রাথমিক ধারণা স্বীকার করে নিতে হয়। ইউক্লিড এগুলোকে স্বতঃসিদ্ধ (axioms) বলে আখ্যায়িত করেন। ইউক্লিড প্রদত্ত কয়েকটি স্বতঃসিদ্ধ :
১. যে সকল বস্তু একই বস্তুর সমান, সেগুলো পরস্পর সমান ।
২. সমান সমান বস্তুর সাথে সমান বস্তু যোগ করা হলে যোগফল সমান।
৩. সমান সমান বস্তু থেকে সমান বস্তু বিয়োগ করা হলে বিয়োগফল সমান।
৪. যা পরস্পরের সাথে মিলে যায়, তা পরস্পর সমান।
৫. পূর্ণ তার অংশের চেয়ে বড়।
আধুনিক জ্যামিতিতে বিন্দু, সরলরেখা ও সমতলকে প্রাথমিক ধারণা হিসাবে গ্রহণ করে এদের কিছু বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। এই স্বীকৃত বৈশিষ্ট্যগুলোকে জ্যামিতিক স্বীকার্য (postulate) বলা হয়। বাস্তব ধারণার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই স্বীকার্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউক্লিড প্রদত্ত পাঁচটি স্বীকার্য হলো :
স্বীকার্য ১. একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখা আঁকা যায়।
স্বীকার্য ২. খণ্ডিত রেখাকে যথেচ্ছভাবে বাড়ানো যায়।
স্বীকার্য ৩. যেকোনো কেন্দ্র ও যেকোনো ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্ত আঁকা যায়।
স্বীকার্য ৪. সকল সমকোণ পরস্পর সমান।
স্বীকার্য ৫. একটি সরলরেখা দুইটি সরলরেখাকে ছেদ করলে এবং ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণদ্বয়ের সমষ্টি দুই সমকোণের চেয়ে কম হলে, রেখা দুইটিকে যথেচ্ছভাবে বর্ধিত করলে যেদিকে কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের চেয়ে কম, সেদিকে মিলিত হয়।
ইউক্লিড সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ ও স্বীকার্যগুলোর সাহায্যে যুক্তিমূলক নতুন প্রতিজ্ঞা প্রমাণ করেন। তিনি সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ, স্বীকার্য ও প্রমাণিত প্রতিজ্ঞার সাহায্যে আবার নতুন একটি প্রতিজ্ঞাও প্রমাণ করেন। ইউক্লিড তার ‘ইলিমেন্টস' গ্রন্থে মোট ৪৬৫টি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিজ্ঞার প্রমাণ দিয়েছেন যা আধুনিক যুক্তিমূলক জ্যামিতির ভিত্তি।
লক্ষ করি যে, ইউক্লিডের প্রথম স্বীকার্যে কিছু অসম্পূর্ণতা রয়েছে। দুইটি ভিন্ন বিন্দু দিয়ে যে একটি অনন্য সরলরেখা অঙ্কন করা যায় তা উপেক্ষিত হয়েছে। পঞ্চম স্বীকার্য অন্য চারটি স্বীকার্যের চেয়ে জটিল। অন্যদিকে, প্রথম থেকে চতুর্থ স্বীকার্যগুলো এতো সহজ যে এগুলো ‘স্পষ্টই সত্য' বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এগুলো প্রমাণ করা যায় না। সুতরাং, উক্তিগুলো ‘প্রমাণবিহীন সত্য বা স্বীকার্য বলে মেনে নেয়া হয়। পঞ্চম স্বীকার্যটি সমান্তরাল সরলরেখার সাথে জড়িত বিধায় পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
পূর্বেই বিন্দু, সরলরেখা ও সমতল জ্যামিতির তিনটি প্রাথমিক ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের যথাযথ সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব না হলেও এদের সম্পর্কে আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা হয়েছে। বিমূর্ত জ্যামিতিক ধারণা হিসাবে স্থানকে বিন্দুসমূহের সেট ধরা হয় এবং সরলরেখা ও সমতলকে এই সার্বিক সেটের উপসেট বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ,
স্বীকার্য ১. জগত (space) সকল বিন্দুর সেট এবং সমতল ও সরলরেখা এই সেটের উপসেট।
এই স্বীকার্য থেকে আমরা লক্ষ করি যে, প্রত্যেক সমতল ও প্রত্যেক সরলরেখা এক একটি সেট, যার উপাদান হচ্ছে বিন্দু। জ্যামিতিক বর্ণনায় সাধারণত সেট প্রতীকের ব্যবহার পরিহার করা হয়। যেমন, কোনো বিন্দু একটি সরলরেখার (বা সমতলের) অন্তর্ভুক্ত হলে বিন্দুটি ঐ সরলরেখায় (বা সমতলে অবস্থিত অথবা, সরলরেখাটি (বা সমতলটি) ঐ বিন্দু দিয়ে যায়। একইভাবে, একটি সরলরেখা একটি সমতলের উপসেট হলে সরলরেখাটি ঐ সমতলে অবস্থিত, অথবা, সমতলটি ঐ সরলরেখা দিয়ে যায় এ রকম বাক্য দ্বারা তা বর্ণনা করা হয়।
সরলরেখা ও সমতলের বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ২. দুইটি ভিন্ন বিন্দুর জন্য একটি ও কেবল একটি সরলরেখা আছে, যাতে উভয় বিন্দু অবস্থিত।
স্বীকার্য ৩. একই সরলরেখায় অবস্থিত নয় এমন তিনটি ভিন্ন বিন্দুর জন্য একটি ও কেবল একটি সমতল আছে, যাতে বিন্দু তিনটি অবস্থিত।
স্বীকার্য ৪. কোনো সমতলের দুইটি ভিন্ন বিন্দু দিয়ে যায় এমন সরলরেখা ঐ সমতলে অবস্থিত।
স্বীকার্য ৫.
ক) জগতে (space) একাধিক সমতল বিদ্যমান
খ) প্রত্যেক সমতলে একাধিক সরলরেখা অবস্থিত।
গ) প্রত্যেক সরলরেখার বিন্দুসমূহ এবং বাস্তব সংখ্যাসমূহকে এমনভাবে সম্পর্কিত করা যায় যেন, রেখাটির প্রত্যেক বিন্দুর সঙ্গে একটি অনন্য বাস্তব সংখ্যা সংশ্লিষ্ট হয় এবং প্রত্যেক বাস্তব সংখ্যার সঙ্গে রেখাটির একটি অনন্য বিন্দু সংশ্লিষ্ট হয়।
মন্তব্য : স্বীকার্য ১ থেকে স্বীকার্য ৫ কে আপতন স্বীকার্য (incidence axiom) বলা হয়।
জ্যামিতিতে দূরত্বের ধারণাও একটি প্রাথমিক ধারণা। এ জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৬.
ক) P ও Q বিন্দুযুগল একটি অনন্য বাস্তব সংখ্যা নির্দিষ্ট করে থাকে। সংখ্যাটিকে P বিন্দু থেকে Q বিন্দুর দূরত্ব বলা হয় এবং PQ দ্বারা সূচিত করা হয়।
খ) P ও Q ভিন্ন বিন্দু হলে PQ সংখ্যাটি ধনাত্মক। অন্যথায়, PQ = 0 ।
গ) P থেকে Q এর দূরত্ব এবং Q থেকে P এর দূরত্ব একই। অর্থাৎ PQ = QP
PQ = QP হওয়াতে এই দূরত্বকে সাধারণত P বিন্দু ও Q বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্ব বলা হয়। ব্যবহারিকভাবে, এই দূরত্ব পূর্ব নির্ধারিত এককের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।
স্বীকার্য ৫ (গ) অনুযায়ী প্রত্যেক সরলরেখায় অবস্থিত বিন্দুসমূহের সেট ও বাস্তব সংখ্যার সেটের মধ্যে এক-এক মিল স্থাপন করা যায়। এ প্রসঙ্গে স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৭. কোনো সরলরেখায় অবস্থিত বিন্দুসমূহের সেট এবং বাস্তব সংখ্যার সেটের মধ্যে এমনভাবে এক-এক মিল স্থাপন করা যায়, যেন রেখাটির যেকোনো দুইটি বিন্দু P, Q এর জন্য PQ = \a – b হয়, যেখানে মিলকরণের ফলে P ও Q এর সঙ্গে যথাক্রমে a ও b বাস্তব সংখ্যা সংশ্লিষ্ট হয়।
এই স্বীকার্যে বর্ণিত মিলকরণ করা হলে, রেখাটি একটি সংখ্যারেখায় পরিণত হয়েছে বলা হয়। সংখ্যারেখায় P বিন্দুর সঙ্গে a সংখ্যাটি সংশ্লিষ্ট হলে P কে a এর লেখবিন্দু এবং a কে P এর স্থানাঙ্ক বলা হয়। কোনো সরলরেখাকে সংখ্যারেখায় পরিণত করার জন্য প্রথমে রেখাটির একটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক 0 এবং অপর একটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক 1 ধরে নেওয়া হয়। এতে রেখাটিতে একটি একক দূরত্ব এবং একটি ধনাত্মক দিক নির্দিষ্ট হয়। এ জন্য স্বীকার করে নেওয়া হয় যে,
স্বীকার্য ৮. যেকোনো সরলরেখা AB কে এমনভাবে সংখ্যারেখায় পরিণত করা যায় যে, A এর স্থানাঙ্ক 0 এবং B এর স্থানাঙ্ক ধনাত্মক হয়।
মন্তব্য : স্বীকার্য ৬ কে দূরত্ব স্বীকার্য, স্বীকার্য ৭ কে রুলার স্বীকার্য এবং স্বীকার্য ৮ কে রুলার স্থাপন স্বীকার্য বলা হয়।
জ্যামিতিক বর্ণনাকে স্পষ্ট করার জন্য চিত্র ব্যবহার করা হয়। কাগজের ওপর পেন্সিল বা কলমের সূক্ষ্ম ফোঁটা দিয়ে বিন্দুর প্রতিরূপ আঁকা হয়। সোজা রুলার বরাবর দাগ টেনে সরলরেখার প্রতিরূপ আঁকা হয় । সরলরেখার চিত্রে দুই দিকে তীরচিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয় যে, রেখাটি উভয়দিকে সীমাহীনভাবে বিস্তৃত। স্বীকার্য ২ অনুযায়ী দুইটি ভিন্ন বিন্দু A ও B একটি অনন্য সরলরেখা নির্দিষ্ট করে যাতে বিন্দু দুইটি অবস্থিত হয়। এই রেখাকে AB রেখা বা BA রেখা বলা হয়। স্বীকার্য ৫ (গ) অনুযায়ী এরূপ প্রত্যেক সরলরেখা অসংখ্য বিন্দু ধারণ করে।
স্বীকার্য (৫) (ক) অনুযায়ী জগতে একাধিক সমতল বিদ্যমান। এরূপ প্রত্যেক সমতলে অসংখ্য সরলরেখা রয়েছে। জ্যামিতির যে শাখায় একই সমতলে অবস্থিত বিন্দু, রেখা এবং এদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্যামিতিক সত্তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, তাকে সমতল জ্যামিতি (plane geometry) বলা হয়। এ পুস্তকে সমতল জ্যামিতিই আমাদের মূল বিবেচ্য বিষয়। সুতরাং, বিশেষ কোনো উল্লেখ না থাকলে বুঝতে হবে যে, আলোচ্য সকল বিন্দু, রেখা ইত্যাদি একই সমতলে অবস্থিত। এরূপ একটি নির্দিষ্ট সমতলই আলোচনার সার্বিক সেট। এছাড়া শুধু রেখা উল্লেখ করলে আমরা সরলরেখাই বুঝাবো।
যেকোনো গাণিতিক তত্ত্বে কতিপয় প্রাথমিক ধারণা, সংজ্ঞা এবং স্বীকার্যের উপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে ঐ তত্ত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন উক্তি যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করা হয়। এরূপ উক্তিকে সাধারণত প্রতিজ্ঞা বলা হয়। প্রতিজ্ঞার যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য যুক্তিবিদ্যার কিছু নিয়ম প্রয়োগ করা হয়। যেমন :
১. আরোহ পদ্ধতি (Mathematical Induction)
২. অবরোহ পদ্ধতি ((Mathematical Deduction)
৩. বিরোধ পদ্ধতি (Proof by contradiction) ইত্যাদি।
বিরোধ পদ্ধতি (Proof by contradiction)
দার্শনিক এরিস্টটল যুক্তিমূলক প্রমাণের এ পদ্ধতিটির সূচনা করেন। এ পদ্ধতির ভিত্তি হলো :
১. একই গুণকে একই সময় স্বীকার ও অস্বীকার করা যায় না।
২. একই জিনিসের দুইটি পরস্পরবিরোধী গুণ থাকতে পারে না।
৩. যা পরস্পরবিরোধী তা অচিন্ত্যনীয়
৪. কোনো বস্তু এক সময়ে যে গুণের অধিকারী হয়, সেই বস্তু সেই একই সময়ে সেই গুণের অনধিকারী হতে পারে না।
জ্যামিতিতে কতকগুলো প্রতিজ্ঞাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উপপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং অন্যান্য প্রতিজ্ঞা প্রমাণে ক্রম অনুযায়ী এদের ব্যবহার করা হয়। জ্যামিতিক প্রমাণে বিভিন্ন তথ্য চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়। তবে প্রমাণ অবশ্যই যুক্তিনির্ভর হতে হবে।
জ্যামিতিক প্রতিজ্ঞার বর্ণনায় সাধারণ নির্বচন (general enunciation) অথবা বিশেষ নির্বচন (particular enunciation) ব্যবহার করা হয়। সাধারণ নির্বচন হচ্ছে চিত্রনিরপেক্ষ বর্ণনা আর বিশেষ নির্বচন হচ্ছে চিত্রনির্ভর বর্ণনা। কোনো প্রতিজ্ঞার সাধারণ নির্বচন দেওয়া থাকলে প্রতিজ্ঞার বিষয়বস্তু বিশেষ নির্বচনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় চিত্র অঙ্কন করতে হয়। জ্যামিতিক উপপাদ্যের প্রমাণে সাধারণত নিম্নোক্ত ধাপগুলো থাকে :
১. সাধারণ নির্বচন
২. চিত্র ও বিশেষ নির্বচন
৩. প্রয়োজনীয় অঙ্কনের বর্ণনা এবং
৪. প্রমাণের যৌক্তিক ধাপগুলোর বর্ণনা।
যদি কোনো প্রতিজ্ঞা সরাসরিভাবে একটি উপপাদ্যের সিদ্ধান্ত থেকে প্রমাণিত হয়, তবে একে অনেক সময় ঐ উপপাদ্যের অনুসিদ্ধান্ত (corollary) হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা প্রমাণ করা ছাড়াও জ্যামিতিতে বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করার প্রস্তাবনা বিবেচনা করা হয়। এগুলোকে সম্পাদ্য বলা হয় । সম্পাদ্যে চিত্র অঙ্কন করে চিত্রাঙ্কনের বর্ণনা ও যৌক্তিকতা উল্লেখ করতে হয়।
সমতলীয় জ্যামিতির স্বীকার্য অনুযায়ী সমতলে সরলরেখা বিদ্যমান যার প্রতিটি বিন্দু সমতলে অবস্থিত। মনে করি, সমতলে AB একটি সরলরেখা এবং রেখাটির উপর অবস্থিত একটি বিন্দু C। C বিন্দুকে A ও B বিন্দুর অন্তবর্তী বলা হয় যদি A, C ও B একই সরলরেখার ভিন্ন ভিন্ন বিন্দু হয় এবং AC + CB = AB হয়। A, C ও B বিন্দু তিনটিকে সমরেখ বিন্দুও বলা হয়। A ও B এবং এদের অন্তবর্তী সকল বিন্দুর সেটকে A ও B বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ বা সংক্ষেপে AB রেখাংশ বলা হয় । A ও B বিন্দুর অন্তবর্তী প্রত্যেক বিন্দুকে রেখাংশের অন্তঃস্থ বিন্দু বলা হয়। আবার, C বিন্দু এবং C বিন্দু থেকে AB সরলরেখা বরাবর কোন একদিকে অসীম পর্যন্ত বিন্দুর সেটকে রশ্মি বলা হয়। C বিন্দু AB সরলরেখাকে CA ও CB রশ্মিতে বিভক্ত করে।
একই সমতলে দুইটি রশ্মির প্রান্তবিন্দু একই হলে কোণ তৈরি হয়। রশ্মি দুইটিকে কোণের বাহু এবং এদের সাধারণ বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলে। চিত্রে, OP ও OQ রশ্মিদ্বয় এদের সাধারণ প্রান্তবিন্দু O তে ∠POQ উৎপন্ন করেছে। O বিন্দুটি ∠POQ এর শীর্ষবিন্দু। OP এর যে পার্শ্বে Q আছে সেই পার্শ্বে এবং OQ এর যে পার্শ্বে P আছে সেই পার্শ্বে অবস্থিত সকল বিন্দুর সেটকে ∠POQ এর অভ্যন্তর বলা হয়। কোণটির অভ্যন্তরে অথবা কোনো বাহুতে অবস্থিত নয় এমন সকল বিন্দুর সেটকে এর বহির্ভাগ বলা হয়।
সরল কোণ (Straight angle)
দুইটি পরস্পর বিপরীত রশ্মি এদের সাধারণ প্রান্তবিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাকে সরল কোণ বলে। পাশের চিত্রে, AB রশ্মির প্রান্তবিন্দু A থেকে AB এর বিপরীত দিকে AC রশ্মি আঁকা হয়েছে। AC ও AB রশ্মিদ্বয় এদের সাধারণ প্রান্তবিন্দু A তে ∠BAC উৎপন্ন করেছে। ∠BAC কে সরল কোণ বলে। সরল কোণের পরিমাপ দুই সমকোণ বা 180°।
সন্নিহিত কোণ (Adjacent angle)
যদি সমতলে দুইটি কোণের একই শীর্ষবিন্দু হয় ও এদের একটি সাধারণ রশ্মি থাকে এবং কোণদ্বয় সাধারণ রশ্মির বিপরীত পাশে অবস্থান করে, তবে ঐ কোণদ্বয়কে সন্নিহিত কোণ বলে। পাশের চিত্রে, A বিন্দুটি ∠BAC ও ∠CAD এর শীর্ষবিন্দু। A বিন্দুতে ∠BAC ও ∠CAD উৎপন্নকারী রশ্মিগুলোর মধ্যে AC সাধারণ রশ্মি। কোণ দুইটি সাধারণ রশ্মি AC এর বিপরীত পাশে অবস্থিত। ∠BAC এবং ∠CAD পরস্পর সন্নিহিত কোণ।
লম্ব, সমকোণ (Right angle)
যদি একই রেখার উপর অবস্থিত দুইটি সন্নিহিত কোণ পরস্পর সমান হয়, তবে কোণ দুইটির প্রত্যেকটি সমকোণ বা 90°। সমকোণের বাহু দুইটি পরস্পরের উপর লম্ব। পাশের চিত্রে, BD রেখার A বিন্দুতে AC রশ্মি দ্বারা ∠BAC ও ∠DAC দুইটি কোণ উৎপন্ন হয়েছে। A বিন্দু কোণ দুইটির শীর্ষবিন্দু। ∠BAC ও ∠DAC উৎপন্নকারী বাহুগুলোর মধ্যে AC সাধারণ বাহু। কোণ দুইটি সাধারণ বাহু AC এর দুই পাশে অবস্থিত। ∠BAC এবং ∠DAC পরস্পর সমান হলে, এদের প্রত্যেকটিকে সমকোণ বলে। AC ও BD বাহুদ্বয় পরস্পরের উপর লম্ব।
সূক্ষ্মকোণ ও স্থূলকোণ (Acute angle and obtuse angle)
এক সমকোণ থেকে ছোট কোণকে সূক্ষ্মকোণ এবং এক সমকোণ থেকে বড় কিন্তু দুই সমকোণ থেকে ছোট কোণকে স্থূলকোণ বলা হয়। চিত্রে ∠AOC সূক্ষ্মকোণ এবং ∠AOD স্থূলকোণ। এখানে ∠AOB এক সমকোণ।
প্রবৃদ্ধ কোণ (Reflex angle)
দুই সমকোণ থেকে বড় কিন্তু চার সমকোণ থেকে ছোট কোণকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলা হয়। চিত্রে চিহ্নিত ∠AOC প্রবৃদ্ধ কোণ।
পূরক কোণ (Complementary angle)
দুইটি কোণের পরিমাপের যোগফল এক সমকোণ হলে কোণ দুইটির একটি অপরটির পূরক কোণ। পাশের চিত্রে, ∠AOB একটি সমকোণ। OC রশ্মি কোণটির বাহুদ্বয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এর ফলে ∠AOC এবং ∠COB এই দুইটি কোণ উৎপন্ন হলো। কোণ দুইটির পরিমাপের যোগফল ∠AOB এর পরিমাপের সমান, অর্থাৎ এক সমকোণ। ∠AOC এবং ∠COB পরস্পর পূরক কোণ।
সম্পূরক কোণ (Supplementary angle)
দুইটি কোণের পরিমাপের যোগফল দুই সমকোণ হলে কোণ দুইটি পরস্পর সম্পূরক কোণ। পাশের চিত্রে, O, AB সরলরেখার অন্তঃস্থ একটি বিন্দু। OC একটি রশ্মি যা OA রশ্মি ও OB রশ্মি থেকে ভিন্ন। এর ফলে ∠AOC এবং ZCOB এই দুইটি কোণ উৎপন্ন হলো। কোণ দুইটির পরিমাপের যোগফল ∠AOB কোণের পরিমাপের সমান, অর্থাৎ দুই সমকোণ, কেননা ∠AOB একটি সরলকোণ। ∠AOC এবং ∠COB পরস্পর সম্পূরক কোণ।
বিপ্রতীপ কোণ (Vertical angle)
কোনো কোণের বাহুদ্বয়ের বিপরীত রশ্মিদ্বয় যে কোণ তৈরি করে তা ঐ কোণের বিপ্রতীপ কোণ। চিত্রে OA ও OB পরস্পর বিপরীত রশ্মি। আবার OC ও OD পরস্পর বিপরীত রশ্মি। ∠BOD ও ∠AOC পরস্পর বিপ্রতীপ কোণ।
আবার ∠BOC ও ∠DOA একটি অপরটির বিপ্রতীপ কোণ। দুইটি সরলরেখা কোনো বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করলে, ছেদ বিন্দুতে দুই জোড়া বিপ্রতীপ কোণ উৎপন্ন হয়।
উপপাদ্য ১. একটি সরলরেখার একটি বিন্দুতে অপর একটি রশ্মি মিলিত হলে, যে দুইটি সন্নিহিত কোণ উৎপন্ন হয় এদের সমষ্টি দুই সমকোণ।
প্রমাণ : মনে করি, AB সরলরেখাটির O বিন্দুতে OC রশ্মির প্রান্তবিন্দু মিলিত হয়েছে। ফলে ZAOC ও LCOB দুইটি সন্নিহিত কোণ উৎপন্ন হল। AB রেখার উপর DO লম্ব আঁকি। সন্নিহিত কোণদ্বয়ের সমষ্টি
= ∠AOC + ∠COB = ∠AOD + ∠DOC + ∠COB
= ∠AOD + ∠DOB = 2 সমকোণ।
উপপাদ্য ২. দুইটি সরলরেখা পরস্পর ছেদ করলে, উৎপন্ন বিপ্রতীপ কোণগুলো পরস্পর সমান।
মনে করি, AB ও CD রেখাদ্বয় পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করেছে। ফলে O বিন্দুতে ∠AOC, ∠COB, ∠BOD, ∠AOD কোণ উৎপন্ন হয়েছে।
∠AOC বিপ্রতীপ ∠BOD এবং ∠COB = বিপ্রতীপ ∠AOD I
একান্তর কোণ, অনুরূপ কোণ, ছেদকের একই পার্শ্বস্থ অন্তঃস্থ কোণ (Alternate angle, Corresponding angle, Co-interior angle)
উপরের চিত্রে, AB ও CD দুইটি সরলরেখা এবং EF সরলরেখা এদেরকে P ও Q বিন্দুতে ছেদ করেছে। EF সরলরেখা AB ও CD সরলরেখাদ্বয়ের ছেদক। ছেদকটি AB ও CD সরলরেখা দুইটির সাথে ∠1, ∠2, ∠3, ∠4, ∠5, ∠6, ∠7, ∠8 মোট আটটি কোণ তৈরি করেছে। এ কোণগুলোর মধ্যে
ক) ∠1 এবং ∠5, ∠2 এবং ∠6, ∠3 এবং ∠7, ∠4 এবং ∠8 পরস্পর অনুরূপ কোণ।
খ) ∠3 এবং ∠6, ∠4 এবং 5 হলো পরস্পর একান্তর কোণ।
গ) ∠4, ∠6 ডানপাশের অন্তঃস্থ কোণ।
ঘ) ∠3, ∠5 বামপাশের অন্তঃস্থ কোণ৷
সমতলে দুইটি সরলরেখা পরস্পরকে ছেদ করতে পারে অথবা তারা সমান্তরাল। সরলরেখাদ্বয় পরস্পরছেদী হয়, যদি উভয়রেখায় অবস্থিত একটি সাধারণ বিন্দু থাকে। অন্যথায় সরলরেখা দুইটি সমান্তরাল। লক্ষণীয় যে, দুইটি ভিন্ন সরলরেখার সর্বাধিক একটি সাধারণ বিন্দু থাকতে পারে।
একই সমতলে অবস্থিত দুইটি সরলরেখার সমান্তরালতা নিম্নে বর্ণিত তিনভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় :
ক) সরলরেখা দুইটি কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না (দুই দিকে অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও)।
খ) একটি সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু অপরটি থেকে সমান ক্ষুদ্রতম দূরত্বে অবস্থান করে।
গ) সরলরেখা দুইটিকে অপর একটি সরলরেখা ছেদ করলে উৎপন্ন একান্তর কোণ বা অনুরূপ কোণগুলো সমান হয়।
সংজ্ঞা ক অনুসারে একই সমতলে অবস্থিত দুইটি সরলরেখা একে অপরকে ছেদ না করলে সেগুলো সমান্তরাল। দুইটি সমান্তরাল সরলরেখা থেকে যেকোনো দুইটি রেখাংশ নিলে, রেখাংশ দুইটিও পরস্পর সমান্তরাল হয়৷
সংজ্ঞা খ অনুসারে দুইটি সমান্তরাল সরলরেখার একটির যেকোনো বিন্দু থেকে অপরটির লম্ব-দূরত্ব সর্বদা সমান। লম্ব-দূরত্ব বলতে এদের একটির যেকোনো বিন্দু হতে অপরটির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্যকেই বুঝায়। আবার বিপরীতভাবে, দুইটি সরলরেখার একটির যেকোনো দুইটি বিন্দু থেকে অপরটির লম্ব-দূরত্ব পরস্পর সমান হলেও রেখাদ্বয় সমান্তরাল। এই লম্ব-দূরত্বকে দুইটি সমান্তরাল রেখাদ্বয়ের দূরত্ব বলা হয় । সংজ্ঞা গ ইউক্লিডের পঞ্চম স্বীকার্যের সমতুল্য। জ্যামিতিক প্রমাণ ও অঙ্কনের জন্য এ সংজ্ঞাটি অধিকতর উপযোগী।
লক্ষ করি, কোনো নির্দিষ্ট সরলরেখার উপর অবস্থিত নয় এরূপ বিন্দুর মধ্য দিয়ে ঐ সরলরেখার সমান্তরাল করে একটি মাত্র সরলরেখা আঁকা যায়।
উপপাদ্য ৩. দুইটি সমান্তরাল সরলরেখার একটি ছেদক দ্বারা উৎপন্ন
ক) প্রত্যেক অনুরূপ কোণ জোড়া সমান হবে।
খ) প্রত্যেক একান্তর কোণ জোড়া সমান হবে।
গ) ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণ দুইটি পরস্পর সম্পূরক।
চিত্রে, AB || CD এবং PQ ছেদক এদের যথাক্রমে E ও F বিন্দুতে ছেদ করেছে।
সুতরাং,
ক) ∠PEB = অনুরূপ ∠EFD [সংজ্ঞানুসারে]
খ) ∠AEF = একান্তর ∠EFD
গ)∠BEF + ∠EFD = দুই সমকোণ
কাজ : সমান্তরাল সরলরেখার বিকল্প সংজ্ঞার সাহায্যে সমান্তরাল সরলরেখা সংক্রান্ত উপপাদ্যগুলো প্রমাণ কর। |
উপপাদ্য ৪. দুইটি সরলরেখা অপর একটি সরলরেখাকে ছেদ করলে যদি
ক) অনুরূপ কোণগুলো পরস্পর সমান হয়, অথবা
খ) একান্তর কোণগুলো পরস্পর সমান হয়, অথবা
গ) ছেদকের একই পাশের অন্তঃস্থ কোণদ্বয়ের যোগফল দুই সমকোণের সমান হয়, তবে ঐ সরলরেখা দুইটি পরস্পর সমান্তরাল।
চিত্রে, AB ও CD রেখাদ্বয়কে PQ রেখা যথাক্রমে E ও F বিন্দুতে ছেদ করেছে এবং
ক) ∠PEB = অনুরূপ ∠EFD অথবা,
খ) ∠AEF একান্তর ∠EFD অথবা,
গ) ∠BEF + ∠EFD দুই সমকোণ।
সুতরাং, AB ও CD রেখা দুইটি পরস্পর সমান্তরাল।
অনুসিদ্ধান্ত ১. যেসব সরলরেখা একই সরলরেখার সমান্তরাল সেগুলো পরস্পর সমান্তরাল।
তিনটি রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ চিত্র একটি ত্রিভুজ। রেখাংশগুলোকে ত্রিভুজের বাহু বলে। যেকোনো দুইটি বাহুর সাধারণ বিন্দুকে শীর্ষবিন্দু বলা হয়। ত্রিভুজের যেকোনো দুইটি বাহু শীর্ষবিন্দুতে কোণ উৎপন্ন করে। ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ রয়েছে।
বাহুভেদে ত্রিভুজ তিন প্রকার: সমবাহু, সমদ্বিবাহু ও বিষমবাহু।
আবার কোণভেদেও ত্রিভুজ তিন প্রকার: সূক্ষ্মকোণী, স্থূলকোণী ও সমকোণী ।
ত্রিভুজের বাহু তিনটির দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে পরিসীমা বলে। ত্রিভুজের বাহুগুলো দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে ত্রিভুজক্ষেত্র বলে।
ত্রিভুজের যেকোনো শীর্ষবিন্দু হতে বিপরীত বাহুর মধ্যবিন্দু পর্যন্ত অঙ্কিত রেখাংশকে মধ্যমা বলে। আবার, যেকোনো শীর্ষবিন্দু হতে বিপরীত বাহু এর লম্ব- স্ব-দূরত্বই ত্রিভুজের উচ্চতা।
পাশের চিত্রে ABC একটি ত্রিভুজ। A, B, C এর তিনটি শীর্ষবিন্দু। AB, BC, CA এর তিনটি বাহু এবং ∠ABC, ∠BCA, ∠CAB এর তিনটি কোণ। AB, BC, CA বাহুর দৈর্ঘ্যের যোগফল ত্রিভুজটির পরিসীমা।
সমবাহু ত্রিভুজ (Equilateral triangle)
যে ত্রিভুজের তিনটি বাহু সমান তা সমবাহু ত্রিভুজ। পাশের চিত্রে ABC ত্রিভুজের AB = BC CA। অর্থাৎ বাহু তিনটির দৈর্ঘ্য সমান। ABC ত্রিভুজটি একটি সমবাহু ত্রিভুজ।
সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ (Isosceles triangle)
যে ত্রিভুজের দুইটি বাহু সমান তা সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ। পাশের চিত্রে ABC ত্রিভুজের AB = AC ≠ BC। অর্থাৎ দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান, যাদের কোনোটিই তৃতীয় বাহুর সমান নয়। ABC ত্রিভুজটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ।
বিষমবাহু ত্রিভুজ (Scalene triangle)
যে ত্রিভুজের তিনটি বাহুই পরস্পর অসমান তা বিষমবাহু ত্রিভুজ। পাশের চিত্রে ABC ত্রিভুজের AB, BC, CA বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য পরস্পর অসমান। ABC ত্রিভুজটি বিষমবাহু ত্রিভুজ।
সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ (Acute triangle)
যে ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণ সূক্ষ্মকোণ, তা সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ। ABC ত্রিভুজে ∠BAC, ∠ABC, ∠BCA কোণ তিনটির প্রত্যেকে সূক্ষ্মকোণ। অর্থাৎ প্রত্যেকটি কোণের পরিমাণ 90° অপেক্ষা কম। AABC একটি সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজ।
সমকোণী ত্রিভুজ (Right triangle)
যে ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ, তা সমকোণী ত্রিভুজ। DEF ত্রিভুজে ∠DFE সমকোণ, অপর কোণ দুইটি ∠DEF ও ∠EDF প্রত্যেকে সূক্ষ্মকোণ। ∠DER একটি সমকোণী ত্রিভুজ।
স্থূলকোণী ত্রিভুজ (Obtuse triangle)
যে ত্রিভুজের একটি কোণ স্থূলকোণ, তা স্থূলকোণী ত্রিভুজ। GHK ত্রিভুজে ∠GKH একটি স্থূলকোণ, অপর কোণ দুইটি ∠GHK ও ∠HGK প্রত্যেকে সূক্ষ্মকোণ। ∠GHK একটি স্থূলকোণী ত্রিভুজ।
ত্রিভুজের বহিঃস্থ ও অন্তঃস্থ কোণ (Exterior angles and interior angles of a triangle)
কোনো ত্রিভুজের একটি বাহু বর্ধিত করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় তা ত্রিভুজটির একটি বহিঃস্থ কোণ । এই কোণের সন্নিহিত কোণটি ছাড়া ত্রিভুজের অপর দুইটি কোণকে এই বহিঃস্থ কোণের বিপরীত অন্তঃস্থ কোণ বলে।
উপরের চিত্রে, ∠ABC এর BC বাহুকে D পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ∠ACD ত্রিভুজটির একটি বহিঃস্থ কোণ। ∠ABC, ∠BAC ও ∠ACB ত্রিভুজটির তিনটি অন্তঃস্থ কোণ। ∠ACB কে ∠ACD এর প্রেক্ষিতে সন্নিহিত অন্তঃস্থ কোণ বলা হয়। ∠ABC ও ∠BAC এর প্রত্যেককে ∠ACD এর বিপরীত অন্তঃস্থ কোণ বলা হয়।
উপপাদ্য ৫. ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। ত্রিভুজটির ∠BAC + ∠ABC + ∠ACB = দুই সমকোণ।
C বিন্দু দিয়ে CE আঁকি যাতে AB || CE হয়। এবার ∠ABC ∠ECD [অনুরূপ কোণ বলে]
এবং ∠BAC = ∠ACE [একান্তর কোণ বলে]
∠ABC + ∠BAC = ∠ECD + ∠ACE = ∠ACD
∠ABC + ∠BAC + ∠ACB = ∠ACD + ∠ACB দুই সমকোণ
অনুসিদ্ধান্ত ২. ত্রিভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয়, তা এর বিপরীত অন্তঃস্থ কোণদ্বয়ের সমষ্টির সমান।
অনুসিদ্ধান্ত ৩. ত্রিভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয়, তা এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণ দুইটির প্রত্যেকটি অপেক্ষা বৃহত্তর।
অনুসিদ্ধান্ত ৪. সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণদ্বয় পরস্পর পূরক।
কাজ : প্রমাণ কর যে, ত্রিভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয়, তা এর অন্তঃস্থ বিপরীত কোণ দুইটির প্রত্যেকটি অপেক্ষা বৃহত্তর। |
বাহু ও কোণের সর্বসমতা (Congruence of sides and angles)
দুইটি রেখাংশের দৈর্ঘ্য সমান হলে রেখাংশ দুইটি সর্বসম। আবার বিপরীতভাবে, দুইটি রেখাংশ সর্বসম হলে এদের দৈর্ঘ্য সমান।
দুইটি কোণের পরিমাপ সমান হলে কোণ দুইটি সর্বসম। আবার বিপরীতভাবে, দুইটি কোণ সর্বসম হলে এদের পরিমাপও সমান।
ত্রিভুজের সর্বসমতা (Congruence of triangles)
একটি ত্রিভুজকে অপর একটি ত্রিভুজের উপর স্থাপন করলে যদি ত্রিভুজ দুইটি সর্বতোভাবে মিলে যায়, তবে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হয় । সর্বসম ত্রিভুজের অনুরূপ বাহু ও অনুরূপ কোণগুলো সমান।
উপরের চিত্রে ∆ABC ও ∆DEF সর্বসম। ∆ABC ও ∆DEF সর্বসম হলে এবং A, B, C শীর্ষ যথাক্রমে D, E, F শীর্ষের উপর পতিত হলে AB = DE, AC = DF, BC = EF এবং ∠A = ∠D, ∠B = ∠E, ∠C = ∠F হবে। ∠ABC ও ∠DEF সর্বসম বোঝাতে ∠ABC ≅ ∠DEF লেখা হয়।
উপপাদ্য ৬. (বাহু-কোণ-বাহু উপপাদ্য)
যদি দুইটি ত্রিভুজের একটির দুই বাহু যথাক্রমে অপরটির দুই বাহুর সমান হয় এবং বাহু দুইটির অন্তর্ভুক্ত কোণ দুইটি পরস্পর সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম।
মনে করি, ∆ABC ও ∆DEF এ AB = DE, BC = EF এবং অন্তর্ভুক্ত ∠ABC অন্তর্ভুক্ত ∠DEF ।
তাহলে, ∆ABC ≅ ∆DEF |
উপপাদ্য ৭. যদি কোনো ত্রিভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান হয়, তবে এদের বিপরীত কোণ দুইটিও পরস্পর সমান হবে।
মনে করি, ABC ত্রিভুজে AB AC ।
তাহলে, ∠ABC = ∠ACB
উপপাদ্য ৮. যদি কোনো ত্রিভুজের দুইটি কোণ পরস্পর সমান হয়, তবে এদের বিপরীত বাহু দুইটিও পরস্পর সমান হবে।
বিশেষ নির্বচন : মনে করি, ABC ত্রিভুজে ∠ABC = ∠ACB
প্রমাণ করতে হবে যে, AB = AC ।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যদি AB = AC হয়, তবে (i) AB > AC অথবা (i) AB < AC হবে।
মনে করি, (i) AB > AC AB থেকে AC এর সমান AD কেটে নিই। এখন, ADC ত্রিভুজটি সমদ্বিবাহু। সুতরাং
∠ADC = ∠ACD [ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের ভূমি সংলগ্ন কোণদ্বয় সমান]
∆DBC এর বহিঃস্থ কোণ ∠ADC > ∠ABC [ বহিঃস্থ কোণ অন্তঃস্থ বিপরীত কোণ দুইটির প্রত্যেকটি অপেক্ষা বৃহত্তর]
∠ACD > ∠ABC । সুতরাং, ∠ACB > ∠ABC, কিন্তু তা প্রদত্ত শর্তবিরোধী।
ধাপ ২. অনুরূপভাবে, (ii) AB < AC হলে দেখানো যায় যে
∠ABC > ∠ACB, কিন্তু তাও প্রদত্ত শর্তবিরোধী।
ধাপ ৩. সুতরাং, AB > AC অথবা AB < AC হতে পারে না।
AB = AC (প্রমাণিত)
উপপাদ্য ৯. (বাহু-বাহু-বাহু উপপাদ্য)
যদি একটি ত্রিভুজের তিন বাহু অপর একটি ত্রিভুজের তিন বাহুর সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হবে।
মনে করি, ∆ABC এবং ∆DEF এ AB = DE, AC = DF এবং BC = EF তাহলে, AABC = ADEF |
উপপাদ্য ১০. (কোণ-বাহু-কোণ উপপাদ্য)
যদি একটি ত্রিভুজের দুইটি কোণ ও এদের সংলগ্ন বাহু যথাক্রমে অপর একটি ত্রিভুজের দুইটি কোণ ও তাদের সংলগ্ন বাহুর সমান হয়, তবে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হবে।
মনে করি, ∆ABC এবং ∆DEF-এ ∠B = ∠E, ∠C = ∠F এবং কোণদ্বয়ের সংলগ্ন BC বাহু = অনুরূপ EF বাহু। তবে ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম, অর্থাৎ ∆ABC ≅ ∆DEF
উপপাদ্য ১১. (অতিভুজ-বাহু উপপাদ্য)
দুইটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজদ্বয় সমান হলে এবং একটির এক বাহু অপরটির অপর এক বাহুর সমান হলে, ত্রিভুজদ্বয় সৰ্বসম।
∆ABC এবং ∆DEF সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ে অতিভুজ AC অতিভুজ DF এবং AB = DE । তাহলে, = ∆ABC = ∆DEF
ত্রিভুজের বাহু ও কোণের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক নিচের উপপাদ্য ১২ ও উপপাদ্য ১৩ এর প্রতিপাদ্য বিষয়।
উপপাদ্য ১২. কোনো ত্রিভুজের একটি বাহু অপর একটি বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর হলে, বৃহত্তর বাহুর বিপরীত কোণ ক্ষুদ্রতর বাহুর বিপরীত কোণ অপেক্ষা বৃহত্তর।
মনে করি, ∆ABC এ AC > AB । সুতরাং ∠ABC > ∠ACB
উপপাদ্য ১৩. কোনো ত্রিভুজের একটি কোণ অপর একটি কোণ অপেক্ষা বৃহত্তর হলে, বৃহত্তর কোণের বিপরীত বাহু ক্ষুদ্রতর কোণের বিপরীত বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর।
বিশেষ নির্বচন: মনে করি, ∠ABC এর ∠ABC > ∠ACB । প্রমাণ করতে হবে যে, AC > AB
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যদি AC বাহু AB বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর না হয়, তবে (i) AC = AB অথবা (ii) AC < AB হবে।
(i) যদি AC = AB হয়, তবে ∠ABC ∠ACB [সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের সমান বাহুদ্বয়ের বিপরীত কোণদ্বয় সমান]
কিন্তু শর্তানুযায়ী ∠ABC > ∠ACB, তা প্রদত্ত শর্তবিরোধী।
ii) আবার, যদি AC < AB হয়, তবে ∠ABC < ∠ACB হবে। [ক্ষুদ্রতর বাহুর বিপরীত কোণ ক্ষুদ্রতর]
কিন্তু তাও প্রদত্ত শর্তবিরোধী।
ধাপ ২. সুতরাং, AC বাহু AB এর সমান বা AB থেকে ক্ষুদ্রতর হতে পারে না।
AC > AB (প্রমাণিত)।
ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টি বা অন্তরের সাথে তৃতীয় বাহুর দৈর্ঘ্যের সম্পর্ক রয়েছে।
উপপাদ্য ১৪. ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টি এর তৃতীয় বাহুর দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বৃহত্তর।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। ধরি, BC ত্রিভুজটির বৃহত্তম বাহু। তাহলে, AB + AC > BC ।
অনুসিদ্ধান্ত ৫. ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের অন্তর এর তৃতীয় বাহুর দৈর্ঘ্য অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। ∆ABC এর যেকোনো দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের অন্তর এর তৃতীয় বাহুর দৈর্ঘ্য অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর। তাহলে, AB – AC < BC।
উপপাদ্য ১৫. ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখাংশ তৃতীয় বাহুর সমান্তরাল এবং দৈর্ঘ্যে তার অর্ধেক।
বিশেষ নির্বচন: মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। D ও E যথাক্রমে ত্রিভুজটির AB ও AC বাহুর মধ্যবিন্দু। তাহলে, প্রমাণ করতে হবে যে DE || BC এবং ।
অঙ্কন: D ও E যোগ করে বর্ধিত করি যেন EF = DE হয়। C, F যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. ∆ADE ও ∆CEF এর মধ্যে, AE = EC [দেওয়া আছে]
DE = EF [অঙ্কনানুসারে]
অন্তর্ভূক্ত ∠AED অন্তর্ভূক্ত ∠CEF [বিপ্রতীপ কোণ]
∆ADE ≅ ∆CEF [বাহু-কোণ-বাহু উপপাদ্য]
∠ADE = ∠EFC [একান্তর কোণ]
AD || CF
আবার, BD = AD = CF এবং BD || CF ।
সুতরাং BDFC একটি সামান্তরিক।
DF || BC বা DE || BC ।
ধাপ ২. আবার, DF = BC বা DE + EF = BC
বা DE + DE BC বা 2DE = BC বা
DE || BC এবং (প্রমাণিত)।
উপপাদ্য ১৬. পিথাগোরাসের উপপাদ্য (Pythagorean Theorem)
সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল অপর দুই বাহুর ওপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান
মনে করি, ABC সমকোণী ত্রিভুজের ∠ABC সমকোণ এবং AC অতিভুজ। তাহলে,
উদাহরণ ১. ∆ABC এর AB AC, BA কে D পর্যন্ত এমনভাবে বর্ধিত করা হল যেন AD = AC হয়। C, D যোগ করা হল।
ক) উদ্দীপকের ভিত্তিতে চিত্র আঁক।
খ) প্রমাণ কর যে, BC + CD > 2AC
গ) প্রমাণ কর যে, ∠BCD = এক সমকোণ।
সমাধান :
ক)
খ) দেওয়া আছে AB = AC এবং অঙ্কন অনুসারে AC = AD
∆BCD এ
BC + CD > BD [ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর সমষ্টি তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর]
বা, BC + CD > AB + AD
বা, BC + CD > AD + AD
বা, BC + CD > 2AD
BC + CD > 2AC [ AB = AC = AD]
গ) দেওয়া আছে AB = AC সুতরাং ∠ABC = ∠ACB
অর্থাৎ ∠DBC = ∠ACB
অঙ্কন অনুসারে AC = AD সুতরাং ∠ADC = ∠ACD
অর্থাৎ ∠BDC = ∠ACD
∆BCD এ
∠BDC + ∠DBC + ∠BCD = দুই সমকোণ [ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই কোণের সমান]
বা, ∠ACD + ∠ACB + ∠BCD = দুই সমকোণ
বা, ∠BCD + ∠BCD = দুই সমকোণ
∠BCD = এক সমকোণ।
উদাহরণ ২. PQR একটি ত্রিভুজ। PA, QB ও RC তিনটি মধ্যমা O বিন্দুতে ছেদ করেছে।
ক) প্রদত্ত তথ্যের আলোকে চিত্র আঁক।
খ) প্রমাণ কর যে, PQ + PR > QO + RO
গ) প্রমাণ কর যে, PA + QB + RC < PQ + QR + PR
সমাধান :
ক)
খ) চিত্র ‘ক’ থেকে প্রমাণ করতে হবে যে, PQ + PR > QO + RO
প্রমাণ : ত্রিভুজের যেকোনো দুই বাহুর সমষ্টি তার ৩য় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর
∆PQB এ PQ + PB > QB
আবার ∆BOR এ BR + BO > RO
PQ + PB + BR + BO > QB + RO
বা, PQ + PR+ BO > QO + OB + RO
PQ + PR > QO + RO
গ) অঙ্কন : PA কে D পর্যন্ত বর্ধিত করি যেন PA = AD হয়। Q, D যোগ করি।
প্ৰমাণ :
∆QAD এবং ∆PAR এ
QA = AR, AD = PA
এবং অন্তর্ভুক্ত ∠QAD = অন্তর্ভুক্ত ∠PAR
∆QAD = ∆PAR এবং QD = PR
এখন, ∆PQD এ PQ + QD > PD
বা, PQ + PR > 2PA [ A, PD এর মধ্যবিন্দু]
একইভাবে, PQ + QR > 2QB এবং PR + QR > 2RC
PQ + PR + PQ + QR + PR + QR > 2PA + 2QB + 2RC
বা, 2PQ + 2QR + 2PR > 2PA + 2QB + 2RC
বা, PQ + QR + PR > PA + QB + RC
PA + QB + RC < PQ + QR + PR
পূর্বের শ্রেণিতে জ্যামিতির বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণে ও অনুশীলনীতে চিত্র অঙ্কনের প্রয়োজন ছিল। সে সব চিত্র সূক্ষ্মভাবে অঙ্কন না করলে চলতো। কিন্তু কখনো কখনো জ্যামিতিক চিত্র সূক্ষ্মভাবে অঙ্কনের প্রয়োজন হয়। যেমন, একজন স্থপতি যখন কোনো বাড়ির নকশা করেন কিংবা প্রকৌশলী যখন যন্ত্রের বিভিন্ন অংশের চিত্র আঁ... েন। এ ধরনের জ্যামিতিক অঙ্কনে শুধু স্কেল ও পেন্সিল কম্পাসের সাহায্য নেওয়া হয়। এর আগে আমরা স্কেল ও পেন্সিল কম্পাসের সাহায্যে ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ আঁকতে শিখেছি। এ অধ্যায়ে বিশেষ ধরনের ত্রিভুজ ও চতুর্ভুজ অঙ্কনের আলোচনা করা হবে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
প্রত্যেক ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ রয়েছে। তবে কোনো ত্রিভুজের আকার ও আকৃতি নির্দিষ্ট করার জন্য সবগুলো বাহু ও কোণের প্রয়োজন হয় না। যেমন, ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ বলে এর যেকোনো দুইটি কোণের মান দেওয়া থাকলে তৃতীয় কোণটির মান বের করা যায়। আবার, ত্রিভুজের সর্বসমতা সংক্রান্ত উপপাদ্যগুলো থেকে দেখা যায় যে, কোনো ত্রিভুজের তিনটি বাহু ও তিনটি কোণ অর্থাৎ ছয়টির মধ্যে কেবলমাত্র নিম্নলিখিত তিনটি অপর এক ত্রিভুজের অনুরূপ তিনটি অংশের সমান হলেই ত্রিভুজ দুইটি সর্বসম হয়। অর্থাৎ, এ তিনটি অংশ দ্বারা নির্দিষ্ট আকারের অনন্য ত্রিভুজ আঁকা যায়। সপ্তম শ্রেণিতে আমরা নিম্নবর্ণিত উপাত্ত থেকে ত্রিভুজ আঁকতে শিখেছি।
১. তিনটি বাহু
২. দুইটি বাহু ও এদের অন্তর্ভুক্ত কোণ
৩. দুইটি কোণ ও এদের সংলগ্ন বাহু
৪. দুইটি কোণ ও একটির বিপরীত বাহু
৫. দুইটি বাহু ও এদের একটির বিপরীত কোণ
৬. সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ও অপর একটি বাহু
লক্ষণীয় যে, উপরের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ত্রিভুজের তিনটি অংশ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু যেকোনো তিনটি অংশ নির্দিষ্ট করলেই ত্রিভুজটি নির্দিষ্ট হয় না। যেমন, ত্রিভুজের তিনটি কোণ দেওয়া থাকলে বিভিন্ন আকারের অসংখ্য ত্রিভুজ আঁকা যায় (যাদের সদৃশ ত্রিভুজ বলা হয়)।
অনেক সময় ত্রিভুজ আঁকার জন্য এমন তিনটি উপাত্ত দেওয়া থাকে, যাদের সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্কনের মাধ্যমে ত্রিভুজটি নির্ধারণ করা যায়। এরূপ কয়েকটি সম্পাদ্য নিচে বর্ণনা করা হলো।
সম্পাদ্য ১. ত্রিভুজের ভূমি, ভূমি সংলগ্ন একটি কোণ ও অপর দুই বাহুর সমষ্টি দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
মনে করি, কোনো ত্রিভুজের ভূমি a, ভূমি সংলগ্ন একটি কোণ ∠x এবং অপর দুই বাহুর সমষ্টি s দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. যেকোনো একটি রশ্মি BE থেকে ভূমি a এর সমান করে BC রেখাংশ কেটে নিই। BC রেখাংশের B বিন্দুতে ∠x এর সমান ∠CBF আঁকি।
২. BF রশ্মি থেকে s এর সমান BD অংশ কাটি।
৩. C, D যোগ করি। C বিন্দুতে DC রেখাংশের যে পাশে B বিন্দু আছে সেই পাশে ∠BDC এর সমান ∠DCG আঁকি।
৪. CG রশ্মি BD কে A বিন্দুতে ছেদ করে।
তাহলে, ∆ABC ই উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
প্রমাণ : ∆ACD এ ∆ADC = ∆ACD [অঙ্কন অনুসারে]
AC = AD
এখন, ∆ABC এ ∆ABC = ∠x, BC = a [অঙ্কন অনুসারে]
এবং BA + AC = BA+ AD = BD = s I
অতএব, ∆ABC ই নির্ণেয় ত্রিভুজ।
বিকল্প পদ্ধতি : মনে করি, কোনো ত্রিভুজের ভূমি a, ভূমি সংলগ্ন একটি কোণ Zx এবং অপর দুই বাহুর সমষ্টি s দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. যেকোনো একটি রশ্মি BE থেকে ভূমি a এর সমান করে BC রেখাংশ কেটে নিই। রেখাংশের B বিন্দুতে ∠x এর সমান ∠CBF আঁকি।
২. BF রশ্মি থেকে এর সমান BD অংশ কাটি।
৩. C, D যোগ করি। CD এর লম্বদ্বিখণ্ডক PQ আঁকি।
8. PQ রশ্মি BD রশ্মিকে A এবং CD কে R বিন্দুতে ছেদ করে। AC যোগ করি।
তাহলে, ∆ABC ই উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
প্রমাণ : ∆ACR এবং ∆ADR এ CR = DR, AR = AR এবং অন্তর্ভুক্ত ∠ARC = অন্তর্ভুক্ত ∠ARD [সমকোণ]
∆ACR ≅ ∆ADR I
AC = AD
এখন, ∆ABC এ ∠ABC = ∠x, BC = a [অঙ্কন অনুসারে]
এবং BA + AC = BA + AD = BD = s ।
অতএব, ∆ABC ই নির্ণেয় ত্রিভুজ।
সম্পাদ্য ২. ত্রিভুজের ভূমি, ভূমি সংলগ্ন একটি সূক্ষ্মকোণ ও অপর দুই বাহুর অন্তর দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
মনে করি, কোনো ত্রিভুজের ভূমি a, ভূমি সংলগ্ন সূক্ষ্মকোণ Z এবং অপর দুই বাহুর অন্তর d দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. যেকোনো একটি রশ্মি BF থেকে ভূমি এর সমান করে BC রেখাংশ কেটে নিই। BC রেখাংশের B বিন্দুতে ∠x এর সমান ∠CBE আঁকি।
২. BE রশ্মি থেকে d এর সমান BD অংশ কেটে নিই।
৩. C, D যোগ করি। DC রেখাংশের যে পাশে E বিন্দু আছে সেই পাশে C বিন্দুতে ∠EDC এর সমান ∠DCA আঁকি।
CA রশ্মি BE রশ্মিকে A বিন্দুতে ছেদ করে। তাহলে, ∆ABC ই উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে, ∆ACD এ ∠ACD = ∠ADC
AD = AC
সুতরাং দুই বাহুর অন্তর, AB – AC = AB – AD = BD = d
এখন, ∆ABC এ BC = a, AB – AC = d এবং ∠ABC = ∠a
সুতরাং, ∆ABC ই নির্ণেয় ত্রিভুজ।
কাজ : ক) প্রদত্ত কোণ সূক্ষ্মকোণ না হলে, উপরের পদ্ধতিতে অঙ্কন করা সম্ভব নয়। কেন? এ ক্ষেত্রে ত্রিভুজটি আঁকার কোনো উপায় বের কর। খ) ত্রিভুজের ভূমি, ভূমি সংলগ্ন একটি সূক্ষ্মকোণ ও অপর দুই বাহুর অন্তর দেওয়া আছে। বিকল্প পদ্ধতিতে ত্রিভুজটি অঙ্কন কর। |
সম্পাদ্য ৩. ত্রিভুজের ভূমি সংলগ্ন দুইটি কোণ ও পরিসীমা দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
মনে করি, একটি ত্রিভুজের পরিসীমা p এবং ভূমি সংলগ্ন দুইটি কোণ ∠x ও y দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. যেকোনো একটি রশ্মি DF থেকে পরিসীমা p এর সমান করে DE অংশ কেটে নিই। D ও E বিন্দুতে DE রেখাংশের একই পাশে ∠x এর সমান ∠EDL এবং ∠y এর সমান ∠DEM আঁকি।
২. কোণ দুইটির দ্বিখণ্ডক DG ও EH আঁকি।
৩. মনে করি, DG ও EH রশ্মিদ্বয় পরস্পরকে A বিন্দুতে ছেদ করে। A বিন্দুতে ∠ADE এর সমান ∠DAB এবং ∠AED এর সমান ∠EAC আঁকি।
8. AB এবং AC রশ্মিদ্বয় DE রেখাংশকে যথাক্রমে B ও C বিন্দুতে ছেদ করে।
তাহলে, ∆ABC ই উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
প্রমাণ : ∆ABD এ ∠ADB = ∠DAB [অঙ্কন অনুসারে]
AB = DB
আবার, ∆ACE এ ∠AEC = ∠EAC
CA = CE
সুতরাং ∆ABC এ AB + BC + CA = DB + BC + CE = DE = p
এবং
সুতরাং ∆ABC ই নির্ণেয় ত্রিভুজ।
কাজ : ত্রিভুজের ভূমি সংলগ্ন দুইটি সূক্ষ্মকোণ ও পরিসীমা দেওয়া আছে। বিকল্প পদ্ধতিতে ত্রিভুজটি অঙ্কন কর। |
উদাহরণ ১. একটি ত্রিভুজ ABC আঁক, যার ∠B = 60°, ZC = 45° এবং পরিসীমা AB + BC + CA = 11 সে.মি. ।
অঙ্কন : নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করি :
১. রেখাংশ PQ = 11 সে.মি. আঁকি।
২. PQ রেখাংশের একই পাশে P এবং Q বিন্দুতে যথাক্রমে ∠QPL = 60° ও ∠PQM = 45° কোণ আঁকি।
৩. কোণ দুইটির দ্বিখণ্ডক PG ও QH আঁকি। মনে করি, PG ও QH রশ্মিদ্বয় পরস্পরকে A বিন্দুতে ছেদ করে।
8. PA, QA রেখাংশের লম্ব সমদ্বিখণ্ডক আঁকি যা PQ রেখাংশকে যথাক্রমে B ও C বিন্দুতে ছেদ করে।
৫. A, B এবং A, C যোগ করি।
তাহলে, ∆ABC ই উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
কাজ : সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ সংলগ্ন একটি বাহু এবং অতিভুজ ও অপর বাহুর অন্তর দেওয়া আছে। ত্রিভুজটি আঁক। |
উদাহরণ ২. একটি ত্রিভুজের ভূমি a = 3 সে.মি., ভূমি সংলগ্ন সূক্ষ্মকোণ 45° এবং অপর বাহু দুইটির সমষ্টি = 6 সে.মি.।
ক) উদ্দীপকের তথ্যগুলো চিত্রে প্রকাশ কর।
খ) ত্রিভুজটি অঙ্কন কর। (অঙ্কনের চিহ্ন ও বিবরণ আবশ্যক)
গ) একটি বর্গের পরিসীমা 28 হলে বর্গটি আঁক। (অঙ্কনের চিহ্ন ও বিবরণ আবশ্যক)
সমাধান:
ক)
খ)
AX যেকোনো রশ্মি থেকে AB = a কাটি। A বিন্দুতে ∠XAE = আঁকি, AE থেকে AD = s নেই। B, D যোগ করি। এবার B বিন্দুতে ∠ADB এর সমান করে ∠DBC আঁকি। BC রেখাংশ AD কে C বিন্দুতে ছেদ করে। ABC উদ্দিষ্ট ত্রিভুজ।
গ) মনে করি, একটি বর্গের পরিসীমা p = 2s দেওয়া আছে, বর্গটি অঙ্কন করতে হবে।
AX যেকোনো রশ্মি থেকে কেটে নেই। A বিন্দুতে AE ⊥ AB আঁকি। AE থেকে AD = AB কাটি।
এবার B ও D বিন্দুকে কেন্দ্র করে এর সমান C ব্যাসার্ধ নিয়ে ∠BAD এর অভ্যন্তরে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। বৃত্তচাপদ্বয় পরস্পর C বিন্দুতে ছেদ করে। B, C এবং C, D যোগ করি।
ABCD উদ্দিষ্ট বর্গক্ষেত্র।
আমরা দেখেছি যে, ত্রিভুজের তিনটি উপাত্ত দেওয়া থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই ত্রিভুজটি নির্দিষ্টভাবে আঁকা সম্ভব। কিন্তু চতুর্ভুজের চারটি বাহু দেওয়া থাকলেই একটি নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ আঁকা যায় না। নির্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ আঁকার জন্য পাঁচটি স্বতন্ত্র উপাত্ত প্রয়োজন হয়। নিম্নে বর্ণিত পাঁচটি উপাত্ত জানা থাকলে, নির্দিষ্ট চতুর্ভুজ আঁকা যায়।
১. চারটি বাহু ও একটি কোণ
২. চারটি বাহু ও একটি কর্ণ
৩. তিনটি বাহু ও দুইটি কর্ণ
৪. তিনটি বাহু ও এদের অন্তর্ভুক্ত দুইটি কোণ
৫. দুইটি বাহু ও তিনটি কোণ।
অষ্টম শ্রেণিতে উল্লেখিত উপাত্ত দিয়ে চতুর্ভুজ অঙ্কন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অঙ্কনের কৌশল লক্ষ করে দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি চতুর্ভুজ আঁকা হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে ত্রিভুজ অঙ্কনের মাধ্যমে চতুর্ভুজ আঁকা হয়। যেহেতু কর্ণ চতুর্ভুজকে দুইটি ত্রিভুজে বিভক্ত করে, সেহেতু উপাত্ত হিসাবে একটি বা দুইটি কর্ণ প্রদত্ত হলে ত্রিভুজ অঙ্কনের মাধ্যমে চতুর্ভুজ আঁকা সম্ভব হয়।
১. চারটি বাহু ও একটি কোণ
২. চারটি বাহু ও একটি কর্ণ
৩. তিনটি বাহু ও দুইটি কর্ণ
৪. তিনটি বাহু ও এদের অন্তর্ভুক্ত দুইটি কোণ
৫. দুইটি বাহু ও তিনটি কোণ।
বিশেষ ধরনের চতুর্ভুজ অঙ্কনের জন্য অনেক সময় এমন উপাত্ত দেওয়া থাকে যা থেকে নির্দিষ্ট চতুৰ্ভুজ আঁকার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি স্বতন্ত্র উপাত্ত পাওয়া যায়। তাহলে ঐ উপাত্তের সাহায্যেও চতুর্ভুজটি আঁকা যায়। যেমন, সামান্তরিকের দুইটি সংলগ্ন বাহু ও এদের অন্তর্ভুক্ত কোণটি দেওয়া থাকলে সামান্তরিকটি আঁকা যায়। এখানে তিনটি মাত্র উপাত্ত দেওয়া আছে। আবার বর্গের মাত্র একটি বাহু দেওয়া থাকলেই বর্গটি আঁকা যায়। কারণ, তাতে পাঁচটি উপাত্ত, যথা: বর্গের চার সমান বাহু ও এক কোণ (সমকোণ নির্দিষ্ট হয়।
সম্পাদ্য ৪. সামান্তরিকের দুইটি কর্ণ ও এদের অন্তর্ভুক্ত একটি কোণ দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে হবে।
মনে করি, সামান্তরিকের কর্ণ দুইটি a ও b এবং কর্ণদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি কোণ ∠x দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন: যেকোনো রশ্মি AE থেকে a এর সমান AC রেখাংশ নিই। AC এর মধ্যবিন্দু নির্ণয় করি। O বিন্দুতে ∠x এর সমান ∠AOP আঁকি। OP এর বিপরীত রশ্মি OQ অঙ্কন করি। OP ও OQ রশ্মিদ্বয় থেকে এর সমান যথাক্রমে OB ও OD রেখাংশদ্বয় নিই। A, B; A, D; C, B ও
C, D যোগ করি।
তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট সামান্তরিক।
প্রমাণ : ∆AOB ও ∆COD এ [অঙ্কনানুসারে]
এবং অন্তর্ভুক্ত ∠AOB অন্তর্ভুক্ত ∠COD [বিপ্রতীপ কোণ]
অতএব, ∆AOB ≅ ∆COD
সুতরাং, AB = CD এবং ∠ABO = ∠CDO; কিন্তু কোণ দুইটি একান্তর কোণ।
AB ও CD সমান ও সমান্তরাল।
অনুরূপভাবে, AD ও BC সমান ও সমান্তরাল।
সুতরাং, ABCD একটি সামান্তরিক যার কর্ণদ্বয় ও BD = BO + OD = এবং কর্ণ দুইটির অন্তর্ভুক্ত ∠AOB = ∠x
অতএব, ABCD ই নির্ণেয় সামান্তরিক।
সম্পাদ্য ৫. সামান্তরিকের দুইটি কর্ণ ও একটি বাহু দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে হবে।
মনে করি সামান্তরিকের দুইটি কর্ণ a ও b এবং একটি বাহু c দেওয়া আছে। সামান্তরিকটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন: a ও b কর্ণদ্বয়কে সমান দুইভাগে বিভক্ত করি। যেকোনো রশ্মি AX থেকে c এর সমান AB নিই। A ও B কে কেন্দ্র করে যথাক্রমে ও এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে AB এর একই পাশে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। মনে করি, বৃত্তচাপ দুইটি পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে। A, O ও B, O যোগ করি। AO কে AE বরাবর এবং BO কে BF বরাবর বর্ধিত করি। OE থেকে এবং OF থেকে নিই। A, D, D, C ও B, C যোগ করি।
তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট সামান্তরিক।
প্রমাণ: ∆AOB ও ∆COD এ
[অঙ্কনানুসারে]
এবং অন্তর্ভুক্ত ∠AOB = অন্তর্ভুক্ত ∠COD [বিপ্রতীপ কোণ]
∆AOB ≅ ∆COD I
AB = CD এবং ∠ABO = ∠ODC; কিন্তু কোণ দুইটি একান্তর কোণ।
AB ও CD সমান ও সমান্তরাল।
অনুরূপভাবে, AD ও BC সমান ও সমান্তরাল।
অতএব, ABCD ই নির্ণেয় সামান্তরিক।
উদাহরণ ৩. ট্রাপিজিয়ামের দুইটি সমান্তরাল বাহু এবং এদের মধ্যে বৃহত্তর বাহু সংলগ্ন দুইটি কোণ দেওয়া আছে। ট্রাপিজিয়ামটি আঁক।
মনে করি, ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহুদ্বয় a এবং b, যেখানে a > b এবং বৃহত্তর বাহু a সংলগ্ন কোণদ্বয় ∠x ও ∠y। ট্রাপিজিয়ামটি আঁকতে হবে।
অঙ্কন: যেকোনো রশ্মি AX থেকে AB = a নিই। AB রেখাংশের A বিন্দুতে ∠x এর সমান ∠BAY এবং B বিন্দুতে ∠y এর সমান ∠ABZ আঁকি।
এবার AB রেখাংশ থেকে AE = b কেটে নিই। E বিন্দুতে EC || AY আঁকি যা BZ রশ্মিতে C বিন্দুতে ছেদ করে। এবার CD || BA আঁকি। CD রেখাংশ AY রশ্মিকে D বিন্দুতে ছেদ করে। তাহলে, ABCD ই উদ্দিষ্ট ট্রাপিজিয়াম।
প্রমাণ : অঙ্কনানুসারে, AE || CD এবং AD || EC সুতরাং AECD একটি সামান্তরিক এবং CD = AE = b ।
এখন, চতুর্ভুজ ABCD এ AB = a, CD = b, AB || CD এবং ∠BAD = ∠x, ∠ABC - ∠y [অঙ্কন অনুসারে]
অতএব, ABCD ই নির্ণেয় ট্রাপিজিয়াম।
কাজ : রম্বসের পরিসীমা ও একটি কোণ দেওয়া আছে। রম্বসটি আঁক। |
উদাহরণ ৪. ABC ত্রিভুজের ∠B = 60°, ∠C = 45° এবং পরিসীমা 13 সে.মি.।
ক) স্কেল ও কম্পাস দিয়ে ∠B ও ∠C আঁক।
খ) ত্রিভুজটি অঙ্কন কর। (অঙ্কনের চিহ্ন ও বিবরণ আবশ্যক)
গ) একটি রম্বস আঁক যার বাহুর দৈর্ঘ্য এর সমান এবং একটি কোণ ZB এর সমান। (অঙ্কনের চিহ্ন ও বিবরণ আবশ্যক)
সমাধান :
ক)
খ)
যেকোনো রশ্মি RX থেকেRQ = p কেটে নেই। R বিন্দুতে এবং Q বিন্দুতে এর সমান করে যথাক্রমে ∠ERX ও ∠FQR আঁকি। ER ও FQ A বিন্দুতে ছেদ করে। এবার A বিন্দুতে ER এর যে পাশে ∠ERX অবস্থিত সে ই পাশে এবং FQ এর যে পাশে ∠FQR অবস্থিত সে ই পাশে আঁকি। AB ও AC রেখাংশ, RQ কে যথাক্রমে B C বিন্দুতে ছেদ করে।
গ) রম্বসের বাহুর দৈর্ঘ্য একটি কোণ ∠B = 60° দেওয়া আছে। রম্বসটি আঁকতে হবে।
BX যেকোনো রশ্মি থেকে BA = কয়টি। B বিন্দুতে ∠ABE 60° আঁকি। BE থেকে BC = AB নেই। আবার A ও C বিন্দুকে কেন্দ্ৰ করে এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে ∠ABC এর অভ্যন্তরে দুইটি বৃত্তচাপ আঁকি। বৃত্তচাপদ্বয় পরস্পর D বিন্দুতে ছেদ করে। A, D, C, D যোগ করি।
ABCD উদ্দিষ্ট রম্বস।
আমরা জেনেছি যে, বৃত্ত একটি সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্র যার বিন্দুগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। বৃত্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা যেমন কেন্দ্র, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, জ্যা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে সমতলে কোনো বৃত্তের চাপ ও স্পর্শক সম্পর্কিত প্রতিজ্ঞার আলোচনা করা হবে।
... p>এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
বৃত্ত একটি সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্র যার বিন্দুগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। নির্দিষ্ট বিন্দুটি বৃত্তের কেন্দ্র। নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে কোনো বিন্দু যে আবদ্ধ পথ চিত্রিত করে তাই বৃত্ত। কেন্দ্র হতে বৃত্তস্থ কোনো বিন্দুর দূরত্বকে ব্যাসার্ধ বলে।
মনে করি, O সমতলের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু এবং নির্দিষ্ট পরিমাপ। সমতলস্থ যে সকল বিন্দু O থেকে r দূরত্বে অবস্থিত, এদের সেট বৃত্ত, যার কেন্দ্র O ও ব্যাসার্ধ r । চিত্রে O বৃত্তের কেন্দ্র, A, B ও C বৃত্তস্থ বিন্দু। OA, OB ও OC এর প্রত্যেকটি বৃত্তটির ব্যাসার্ধ।
সমতলস্থ কতিপয় বিন্দুকে সমবৃত্ত বিন্দু বলা হয় যদি বিন্দুগুলো দিয়ে একটি বৃত্ত যায় অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত থাকে যাতে বিন্দুগুলো অবস্থিত হয়। উপরের চিত্রে A, B ও C সমবৃত্ত বিন্দু।
বৃত্তের অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ (Interior and exterior of a circle)
যদি কোনো বৃত্তের কেন্দ্র O এবং ব্যাসার্ধ । হয় তবে O থেকে সমতলের যে সকল বিন্দুর দূরত্ব r এর চেয়ে কম এদের সেটকে বৃত্তটির অভ্যন্তর এবং O থেকে সমতলের যে সকল বিন্দুর দূরত্ব r এর চেয়ে বেশি এদের সেটকে বৃত্তটির বহির্ভাগ বলা হয। বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ দুইটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ সম্পূর্ণভাবে বৃত্তের অভ্যন্তরেই থাকে।
কোনো বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ একটি বিন্দু ও বহিঃস্থ একটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ বৃত্তটিকে একটি ও কেবল একটি বিন্দুতে ছেদ করে। চিত্রে, P বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ একটি বিন্দু এবং Q বৃত্তের বহিঃস্থ একটি বিন্দু। PQ রেখাংশ বৃত্তটিকে কেবল R বিন্দুতে ছেদ করে।
বৃত্তের জ্যা ও ব্যাস (Chord and diameter of a circle)
বৃত্তের দুইটি ভিন্ন বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ বৃত্তটির একটি জ্যা। বৃত্তের কোনো জ্যা যদি কেন্দ্র দিয়ে যায় তবে জ্যাটিকে বৃত্তের ব্যাস বলা হয়। অর্থাৎ বৃত্তের কেন্দ্রগামী যেকোনো জ্যা হলো ব্যাস। চিত্রে, AB ও AC বৃত্তটির দুইটি জ্যা এবং বৃত্তটির কেন্দ্র O। এদের মধ্যে AC জ্যাটি ব্যাস; কারণ জ্যাটি বৃত্তটির কেন্দ্রগামী। OA ও OC বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ সুতরাং, বৃত্তের কেন্দ্র প্রত্যেক ব্যাসের মধ্যবিন্দু। অতএব প্রত্যেক ব্যাসের দৈর্ঘ্য 2r, যেখানে r বৃত্তটির ব্যাসার্ধ।
উপপাদ্য ১৭.বৃত্তের কেন্দ্র ও ব্যাস ভিন্ন কোনো জ্যা এর মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখাংশ ঐ জ্যা এর ওপর লম্ব।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC বৃত্তে ব্যাস নয় এমন একটি জ্যা AB এবং এই জ্যা এর মধ্য বিন্দু M । O, M যোগ করি। প্রমাণ করতে হবে যে, OM রেখাংশ AB জ্যা এর উপর লম্ব। অঙ্কন: O, A এবং O, B যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. ∆OAM এবং ∆OBM এ
AM = BM [ M, AB এর মধ্যবিন্দু]
OA = OB [ উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ ]
এবং OM = OM [সাধারণ বাহু]
সুতরাং, ∆OAM ≅ ∆OBM [বাহু-বাহু-বাহু উপপাদ্য]
∠OMA = ∠OMB
ধাপ ২. যেহেতু কোণদ্বয় রৈখিক যুগল কোণ এবং এদের পরিমাপ সমান।
সুতরাং, ∠OMA = ∠OMB = এক সমকোণ।
অতএব, OM ⊥ AB । (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ১. বৃত্তের যেকোনো জ্যা এর লম্বদ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী।
অনুসিদ্ধান্ত ২. যেকোনো সরলরেখা একটি বৃত্তকে দুইয়ের অধিক বিন্দুতে ছেদ করতে পারে না।
কাজ : উপপাদ্য ১৭ এর বিপরীত উপপাদ্যটি নিম্নরূপ : বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন অন্য কোনো জ্যা এর ওপর অঙ্কিত লম্ব ঐ জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। উপপাদ্যটি প্রমাণ কর। |
উপপাদ্য ১৮. বৃত্তের সকল সমান জ্যা কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং AB ও CD বৃত্তের দুইটি সমান জ্যা। প্রমাণ করতে হবে যে, O থেকে AB এবং CD জ্যাদ্বয় সমদূরবর্তী।
অঙ্কন : O থেকে AB এবং CD জ্যা এর উপর যথাক্রমে OE এবং OF লম্ব রেখাংশ আঁকি। O, A এবং O, C যোগ করি। প্ৰমাণ :
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. OE ⊥ AB এবং OF ⊥ CD
সুতরাং, AE = BE এবং CF = DF [ কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন যেকোনো জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্ব জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে]
এবং
ধাপ ২. কিন্তু AB = CD [ধরে নেয়া]
AE = CF
ধাপ ৩. এখন ∆OAE এবং ∆OCF সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ের মধ্যে
অতিভুজ OA = অতিভুজ OC [উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
এবং AE = CF [ধাপ ২]
∆OAE = ∆OCF [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা উপপাদ্য]
OE = OF
ধাপ ৪. কিন্তু OE এবং OF কেন্দ্র O থেকে যথাক্রমে AB জ্যা এবং CD জ্যা এর দূরত্ব।
সুতরাং, AB এবং CD জ্যাদ্বয় বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী। (প্রমাণিত)
উপপাদ্য ১৯. বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী সকল জ্যা পরস্পর সমান।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং AB ও CD দুইটি জ্যা। O থেকে AB ও CD এর উপর যথাক্রমে OE ও OF লম্ব। তাহলে OE ও OF কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে AB ও CD জ্যা এর দূরত্ব নির্দেশ করে। OE = OF হলে প্রমাণ করতে হবে যে, AB = CD
অঙ্কন : O, A ও O,C যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যেহেতু OE ⊥ AB ও OF ⊥ CD
সুতরাং, ∠OEA = ∠OFC = এক সমকোণ।
ধাপ ২. এখন, ∆OAE এবং ∆OCE সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ের মধ্যে
অতিভুজ OA = অতিভুজ OC [উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
এবং OE = OF [ধরে নেয়া]
∆OAE ≅ ∆OCF [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা উপপাদ্য]
AE = CF
ধাপ ৩. এবং [ কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন যেকোনো জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্ব জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে]
ধাপ ৪. সুতরাং
অর্থাৎ, AB = CD । (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৩. বৃত্তের ব্যাসই বৃহত্তম জ্যা।
বৃত্তের যেকোনো দুইটি বিন্দুর মধ্যের পরিধির অংশকে চাপ বলে। চিত্রে A ও B দুইটি বিন্দুর মাঝে বৃত্তের অংশগুলো লক্ষ করি। দেখা যায়, দুইটি অংশের একটি অংশ ছোট, অন্যটি তুলনামূলকভাবে বড় । ছোট অংশটিকে উপচাপ ও বড়টিকে অধিচাপ বলা হয়। A ও B এই চাপের প্রান্তবিন্দু এবং চাপের অন্য সকল বিন্দু তার অন্তঃস্থ বিন্দু। চাপের অন্তঃস্থ একটি বিন্দু R নির্দিষ্ট করে চাপটিকে ARB চাপ বলে অভিহিত করা হয় এবং ARB প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আবার কখনো উপচাপটি AB প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বৃত্তের দুইটি বিন্দু A ও B বৃত্তটিকে দুইটি চাপে বিভক্ত করে। উভয় চাপের প্রান্তবিন্দু A ও B এবং প্রান্তবিন্দু ছাড়া চাপ দুইটির অন্য কোনো সাধারণ বিন্দু নেই।
কোণ কর্তৃক খণ্ডিত চাপ
একটি কোণ কোনো বৃত্তে একটি চাপ খণ্ডিত বা ছিন্ন করে বলা হয় যদি
১. চাপটির প্রত্যেক প্রান্তবিন্দু কোণটির বাহুতে অবস্থিত হয়,
২. কোণটির প্রত্যেক বাহুতে চাপটির অন্তত একটি প্রান্তবিন্দু অবস্থিত হয় এবং
৩. চাপটির অন্তঃস্থ প্রত্যেকটি বিন্দু কোণটির অভ্যন্তরে থাকে। চিত্রে প্রদর্শিত কোণটি O কেন্দ্রিক বৃত্তে APB চাপ খণ্ডিত করে।
বৃত্তস্থ কোণ (Inscribed angle)
বৃত্তের দুইটি জ্যা পরস্পরকে বৃত্তের উপর কোনো বিন্দুতে ছেদ করলে এদের মধ্যবর্তী কোণকে বৃত্তস্থ কোণ বা বৃত্তে অন্তর্লিখিত কোণ বলা হয়। চিত্রে ∠ACB বৃত্তস্থ কোণ। প্রত্যেক বৃত্তস্থ কোণ বৃত্তে একটি চাপ খণ্ডিত করে। এই চাপ উপচাপ, অর্ধবৃত্ত অথবা অধিচাপ হতে পারে।
একটি বৃত্তস্থ কোণ বৃত্তে যে চাপ খণ্ডিত করে, কোণটি সেই চাপের ওপর দণ্ডায়মান এবং খণ্ডিত চাপের অনুবন্ধী চাপে অন্তর্লিখিত বলা হয়।
পাশের চিত্রে বৃত্তস্থ কোণটি APB চাপের ওপর দণ্ডায়মান এবং ACB চাপে অন্তর্লিখিত।
লক্ষণীয় যে, APB ও ACB একে অপরের অনুবন্ধী চাপ।
মন্তব্য : বৃত্তের কোনো চাপে অন্তর্লিখিত একটি কোণ হচ্ছে সেই কোণ যার শীর্ষবিন্দু ঐ চাপের একটি অন্তঃস্থ বিন্দু এবং যার এক একটি বাহু ঐ চাপের এক একটি প্রান্তবিন্দু দিয়ে যায়। বৃত্তের কোনো চাপে দণ্ডায়মান একটি বৃত্তস্থ কোণ হচ্ছে ঐ চাপের অনুবন্ধী চাপে অন্তর্লিখিত একটি কোণ।
কেন্দ্রস্থ কোণ (Central angle)
একটি কোণের শীর্ষবিন্দু কোনো বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থিত হলে, কোণটিকে ঐ বৃত্তের একটি কেন্দ্রস্থ কোণ বলা হয় এবং কোণটি বৃত্তে যে চাপ খণ্ডিত করে সেই চাপের ওপর তা দণ্ডায়মান বলা হয়। পাশের চিত্রের ∠AOB কোণটি একটি কেন্দ্রস্থ কোণ এবং তা APB চাপের ওপর দণ্ডায়মান। প্রত্যেক কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তে একটি উপচাপ খণ্ডিত করে। চিত্রে APB একটি উপচাপ। বৃত্তের কোনো উপচাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বলতে এরূপ কোণকেই বোঝায় যার শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং যার বাহুদ্বয় ঐ চাপের প্রান্তবিন্দু দুইটি দিয়ে যায়।
অর্ধবৃত্তের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বিবেচনার জন্য ওপরে উল্লেখিত বর্ণনা অর্থবহ নয়। অর্ধবৃত্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রস্থ কোণ ∠BOC সরলকোণ এবং বৃত্তস্থ কোণ ∠BAC সমকোণ।
উপপাদ্য ২০. বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC একটি বৃত্ত এবং তার একই উপচাপ BC এর ওপর দণ্ডায়মান ∠BAC বৃত্তস্থ এবং ∠BOC কেন্দ্ৰস্থ কোণ।
প্রমাণ করতে হবে যে, ∠BOC = 2∠BAC
অঙ্কন : মনে করি, AC রেখাংশ কেন্দ্রগামী নয়। এ ক্ষেত্রে A বিন্দু দিয়ে কেন্দ্রগামী রেখাংশ AD আঁকি।
প্ৰমাণ :
অন্যভাবে বলা যায়, বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক।
কাজ : O কেন্দ্র বিশিষ্ট ABC বৃত্তের AC রেখা কেন্দ্রগামী হলে উপপাদ্য ২০ প্রমাণ কর। |
উপপাদ্য ২১. বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং বৃত্তের BCD চাপের ওপর দণ্ডায়মান ∠BAD এবং ∠BED দুইটি বৃত্তস্থ কোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠BAD = ∠BED ।
অঙ্কন : O, B এবং O, D যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. এখানে BCD চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ ∠BOD ।
সুতরাং, ∠BOD = 2∠BAD এবং ∠BOD = 2∠BED [ একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
2∠BAD = 2∠BED
বা ∠BAD = ∠BED । (প্রমাণিত)
উপপাদ্য ২২. অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে AB একটি ব্যাস এবং ∠ACB একটি অর্ধবৃত্তস্থ কোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠ACB এক সমকোণ।
অঙ্কন : AB এর যে পাশে C বিন্দু অবস্থিত, তার বিপরীত পাশে বৃত্তের উপর একটি বিন্দু D নিই।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. ADB চাপের ওপর দণ্ডায়মান
বৃত্তস্থ (কেন্দ্রস্থ সরল কোণ ∠AOB) [ একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক]
ধাপ ২. কিন্তু সরলকোণ ∠AOB = দুই সমকোণ।
(দুই সমকোণ) = এক সমকোণ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৪. সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজকে ব্যাস ধরে বৃত্ত অঙ্কন করলে তা সমকৌণিক শীর্ষবিন্দু দিয়ে যাবে।
অনুসিদ্ধান্ত ৫. কোনো বৃত্তের অধিচাপে অন্তর্লিখিত কোণ সূক্ষ্মকোণ।
কাজ : প্রমাণ কর যে, কোনো বৃত্তের উপচাপে অন্তর্লিখিত কোণ স্থূলকোণ। |
বৃত্তীয় চতুর্ভুজ বা বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজ হলো এমন চতুর্ভুজ যার চারটি শীর্ষবিন্দু বৃত্তের উপর অবস্থিত। এ সকল চতুর্ভুজের বিশেষ কিছু ধর্ম রয়েছে। বিষয়টি অনুধাবনের জন্য নিচের কাজটি করি।
কাজ : বিভিন্ন আকারের কয়েকটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজ আঁক। কয়েকটি বিভিন্ন ব্যাসার্ধের বৃত্ত অঙ্কন করে প্রতিটির উপর চারটি করে বিন্দু নিয়ে চতুর্ভুজগুলো সহজেই আঁকা যায়। চতুর্ভুজের কোণগুলো মেপে নিচের সারণিটি পূরণ কর।
সারণি থেকে কী বোঝা যায়? |
উপপাদ্য ২৩. বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের যেকোনো দুইটি বিপরীত কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট একটি বৃত্তে ∠BCD চতুর্ভুজটি অন্তর্লিখিত হয়েছে। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠ABC + ∠ADC = দুই সমকোণ এবং ∠BAD + ∠BCD = দুই সমকোণ।
অঙ্কন : O, A এবং O, C যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. একই চাপ ADC এর উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ প্রবৃদ্ধ ∠AOC = 2 (বৃত্তস্থ ∠ABC)
অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধ ∠AOC = 2∠ABC [বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
ধাপ ২. আবার, একই চাপ ABC এর উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ ∠AOC = 2 (বৃত্তস্থ ∠ADC)
অর্থাৎ কোণ ∠AOC = 2∠ADC [বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
প্রবৃদ্ধ ∠AOC+কোণ ∠AOC = 2 ( ∠ABC + ∠ADC)
কিন্তু প্রবৃদ্ধ ∠AOC+ কোণ ∠AOC = চার সমকোণ
2(∠ABC + ∠ADC) = চার সমকোণ
∠ABC + ∠ADC= দুই সমকোণ।
একইভাবে, প্রমাণ করা যায় যে, ∠BAD + ∠BCD = দুই সমকোণ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৬. বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের একটি বাহু বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয় তা বিপরীত অন্তঃস্থ কোণের সমান।
অনুসিদ্ধান্ত ৭. বৃত্তে অন্তর্লিখিত সামান্তরিক একটি আয়তক্ষেত্র।
উপপাদ্য ২৪. কোনো চতুর্ভুজের দুইটি বিপরীত কোণ সম্পূরক হলে তার শীর্ষবিন্দু চারটি সমবৃত্ত হয়।
মনে করি, ABCD চতুর্ভুজে ∠ABC + ∠ADC দুই = সমকোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, A, B, C, D বিন্দু চারটি সমবৃত্ত। অঙ্কন : যেহেতু A, B, C বিন্দু তিনটি সমরেখ নয়, সুতরাং বিন্দু তিনটি দিয়ে যায় এরূপ একটি ও কেবল একটি বৃত্ত আছে। মনে করি, বৃত্তটি AD রেখাংশকে E বিন্দুতে ছেদ করে। C, E যোগ করি।
প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে ABCE বৃত্তস্থ চতুর্ভুজ।
সুতরাং ∠ABC + ∠AEC দুই সমকোণ [বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের যেকোনো দুইটি বিপরীত কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ]
কিন্তু ∠ABC + ∠ADC = দুই সমকোণ [দেওয়া আছে]
∠AEC = ∠ADC
কিন্তু তা অসম্ভব। কারণ চিত্রে ∆CED এর বহিঃস্থ ∠AEC > বিপরীত অন্তঃস্থ ∠ADC
সুতরাং E এবং D বিন্দুদ্বয় ভিন্ন হতে পারে না। E বিন্দু অবশ্যই D বিন্দুর সাথে মিলে যাবে।
অতএব, A, B, C, D বিন্দু চারটি সমবৃত্ত। (প্রমাণিত)
সমতলে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার পারস্পরিক অবস্থান বিবেচনা করি। এক্ষেত্রে নিচের চিত্রের প্রদত্ত তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে :
ক) বৃত্ত ও সরলরেখার কোনো সাধারণ বিন্দু নেই,
খ) সরলরেখাটি বৃত্তকে দুইটি বিন্দুতে ছেদ করেছে,
গ) সরলরেখাটি বৃত্তকে একটি বিন্দুতে স্পর্শ করেছে।
সমতলে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার সর্বাধিক দুইটি ছেদবিন্দু থাকতে পারে। সমতলস্থ একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার যদি দুইটি ছেদবিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি ছেদক বলা হয় এবং যদি একটি ও কেবল একটি সাধারণ বিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি স্পর্শক বলা হয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে, সাধারণ বিন্দুটিকে ঐ স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু বলা হয়। উপরের চিত্রে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার পারস্পরিক অবস্থান দেখানো হয়েছে।
চিত্র-ক এ বৃত্ত ও PQ সরলরেখার কোনো সাধারণ বিন্দু নেই, চিত্র-খ এ PQ সরলরেখাটি বৃত্তকে A ও B দুইটি বিন্দুতে ছেদ করেছে এবং চিত্র-গ এ PQ সরলরেখাটি বৃত্তকে A বিন্দুতে স্পর্শ করেছে। PQ বৃত্তটির স্পর্শক ও A এই স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু।
মন্তব্য : বৃত্তের প্রত্যেক ছেদকের ছেদবিন্দুদ্বয়ের অন্তবর্তী সকল বিন্দু বৃত্তটির অভ্যন্তরে থাকে।
সাধারণ স্পর্শক (Common tangent)
একটি সরলরেখা যদি দুইটি বৃত্তের স্পর্শক হয়, তবে একে বৃত্ত দুইটির একটি সাধারণ স্পর্শক বলা হয়। পাশের চিত্রগুলোতে AB উভয় বৃত্তের সাধারণ স্পর্শক। চিত্র-ক ও চিত্র-খ এ স্পর্শবিন্দু ভিন্ন ভিন্ন। চিত্র-গ ও চিত্র-ঘ এ স্পর্শবিন্দু একই।
দুইটি বৃত্তের কোনো সাধারণ স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু দুইটি ভিন্ন হলে স্পর্শকটিকে
ক) সরল সাধারণ স্পর্শক বলা হয় যদি বৃত্ত দুইটির কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের একই পার্শ্বে থাকে এবং
খ) তির্যক সাধারণ স্পর্শক বলা হয় যদি বৃত্ত দুইটির কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের বিপরীত পার্শ্বে থাকে।
চিত্র-ক এ স্পর্শকটি সরল সাধারণ স্পর্শক এবং চিত্র-খ এ স্পর্শকটি তির্যক সাধারণ স্পর্শক।
দুইটি বৃত্তের সাধারণ স্পর্শক যদি বৃত্ত দুইটিকে একই বিন্দুতে স্পর্শ করে তবে ঐ বিন্দুতে বৃত্ত দুইটি পরস্পরকে স্পর্শ করে বলা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে, বৃত্ত দুইটির অন্তঃস্পর্শ হয়েছে বলা হয় যদি কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের একই পার্শ্বে থাকে এবং বহিঃস্পর্শ হয়েছে বলা হয় যদি কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের বিপরীত পার্শ্বে থাকে। চিত্র-গ এ বৃত্ত দুইটির অন্তঃস্পর্শ এবং চিত্র-ঘ এ বহিঃস্পর্শ হয়েছে।
উপপাদ্য ২৫. বৃত্তের যেকোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর লম্ব।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট একটি বৃত্তের ওপরস্থ P বিন্দুতে PT একটি স্পর্শক এবং OP স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ। প্রমাণ করতে হবে যে, PT ⊥ OP.
অঙ্কন : PT স্পর্শকের ওপর যেকোনো একটি বিন্দু Q নিই এবং O,Q যোগ করি।
প্রমাণ: যেহেতু বৃত্তের P বিন্দুতে PT একটি স্পর্শক, সুতরাং ঐ P বিন্দু ব্যতীত PT এর ওপরস্থ অন্য সকল বিন্দু বৃত্তের বাইরে থাকবে। সুতরাং Q বিন্দুটি বৃত্তের বাইরে অবস্থিত।
OQ বৃত্তের ব্যাসার্ধ OP এর চেয়ে বড়, অর্থাৎ, OQ > OP এবং তা স্পর্শবিন্দু P ব্যতীত PT এর ওপরস্থ Q বিন্দুর সকল অবস্থানের জন্য সত্য।
কেন্দ্র O থেকে PT স্পর্শকের ওপর OP হল ক্ষুদ্রতম দূরত্ব।
সুতরাং PT ⊥ OP [কোনো সরলরেখার বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে উক্ত সরলরেখার উপর যতগুলো রেখাংশ টানা যায় তন্মধ্যে লম্ব রেখাংশটিই ক্ষুদ্রতম]
(প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৮. বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটিমাত্র স্পর্শক অঙ্কন করা যায়।
অনুসিদ্ধান্ত ৯. স্পর্শবিন্দুতে স্পর্শকের ওপর অঙ্কিত লম্ব কেন্দ্রগামী।
অনুসিদ্ধান্ত ১০. বৃত্তের কোনো বিন্দু দিয়ে ঐ বিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর অঙ্কিত লম্ব উক্ত বিন্দুতে বৃত্তটির স্পর্শক হয়।
উপপাদ্য ২৬. বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তে দুইটি স্পর্শক টানলে, ঐ বিন্দু থেকে স্পর্শ বিন্দুদ্বয়ের দূরত্ব সমান।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC বৃত্তের P একটি বহিঃস্থ বিন্দু এবং PA ও PB রেখাংশদ্বয় বৃত্তের A ও B বিন্দুতে দুইটি স্পর্শক । প্রমাণ করতে হবে যে, PA = PB
অঙ্কন : O, A; O, B এবং O, P যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যেহেতু PA স্পর্শক এবং OA স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ, সেহেতু PA ⊥ OA
∠PAO = এক সমকোণ। [ স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর লম্ব]
অনুরূপে ∠PBO = এক সমকোণ।
∆PAO এবং ∆PBO উভয়ই সমকোণী ত্রিভুজ।
ধাপ ২. এখন, ∆PAO এবং ∆PBO সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ে অতিভুজ PO = অতিভুজ PO এবং OA = OB [ একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
∆PAO ≅ ∆PBO [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা]
PA = PB । (প্রমাণিত)
মন্তব্য :
১. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, স্পর্শবিন্দু ছাড়া প্রত্যেক বৃত্তের অন্য সকল বিন্দু অপর বৃত্তের বাইরে থাকবে।
২. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে অন্তঃস্পর্শ করলে, স্পর্শবিন্দু ছাড়া ছোট বৃত্তের অন্য সকল বিন্দু বড় বৃত্তটির অভ্যন্তরে থাকবে।
উপপাদ্য ২৭. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, এদের কেন্দ্রদ্বয় ও স্পর্শ বিন্দু সমরেখ।
মনে করি, A ও B কেন্দ্রবিশিষ্ট দুইটি বৃত্ত পরস্পর O বিন্দুতে বহিঃস্পর্শ করে। প্রমাণ করতে হবে যে, A,O,B বিন্দু তিনটি সমরেখ।
অঙ্কন : যেহেতু বৃত্তদ্বয় পরস্পর O বিন্দুতে স্পর্শ করেছে, সুতরাং O বিন্দুতে এদের একটি সাধারণ স্পর্শক থাকবে। এখন O বিন্দুতে সাধারণ স্পর্শক POQ অঙ্কন করি এবং O, A ও O, B যোগ করি।
প্ৰমাণ :
A কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে OA স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ এবং POQ স্পর্শক।
সুতরাং ∠POA = এক সমকোণ। তদ্রূপ ∠POB = এক সমকোণ
∠POA + ∠POB = এক সমকোণ + এক সমকোণ = দুই সমকোণ।
বা ∠AOB দুই সমকোণ
অর্থাৎ, ∠AOB একটি সরলকোণ।
A, O, B বিন্দুত্রয় সমরেখ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ১১. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, কেন্দ্রদ্বয়ের দূরত্ব বৃত্তদ্বয়ের ব্যাসার্ধের সমষ্টির সমান।
অনুসিদ্ধান্ত ১২. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে অন্তঃস্পর্শ করলে, কেন্দ্রদ্বয়ের দূরত্ব বৃত্তদ্বয়ের ব্যাসার্ধের অন্তরের সমান।
কাজ : প্রমাণ কর যে, দুইটি বৃত্ত পরস্পর অন্তঃস্পর্শ করলে, এদের কেন্দ্রদ্বয় ও স্পর্শবিন্দু সমরেখ হবে। |
সম্পাদ্য ৬. একটি বৃত্ত বা বৃত্তচাপ দেওয়া আছে, কেন্দ্র নির্ণয় করতে হবে।
একটি বৃত্ত (চিত্র-১) বা বৃত্তচাপ (চিত্র-২) দেওয়া আছে, বৃত্তটির বা বৃত্তচাপটির কেন্দ্র নির্ণয় করতে হবে।
অঙ্কন : প্রদত্ত বৃত্তে বা বৃত্তচাপে তিনটি বিন্দু A, B ও C নিই। A, B ও B, C যোগ করি। AB ও BC জ্যা দুইটির লম্বদ্বিখণ্ডক। যথাক্রমে EF, GH রেখাংশ দুইটি টানি। মনে করি, তারা পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করে। সুতরাং, O বিন্দুই বৃত্তের বা বৃত্তচাপের কেন্দ্র। প্রমাণ: EF রেখাংশ AB জ্যা এর এবং GH রেখাংশ BC জ্যা এর লম্বদ্বিখণ্ডক। কিন্তু EF ও GH উভয়ে কেন্দ্রগামী এবং O এদের সাধারণ ছেদ বিন্দু। সুতরাং O বিন্দুই বৃত্তের বা বৃত্তচাপের কেন্দ্ৰ।
বৃত্তের স্পর্শক অঙ্কন
আমরা জেনেছি যে, বৃত্তের ভিতরে অবস্থিত কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তের স্পর্শক আঁকা যায় না। বিন্দুটি যদি বৃত্তের ওপর থাকে তাহলে উক্ত বিন্দুতে বৃত্তের একটিমাত্র স্পর্শক অঙ্কন করা যায়। স্পর্শকটি বর্ণিত বিন্দুতে অঙ্কিত ব্যাসার্ধের উপর লম্ব হয়। সুতরাং, বৃত্তস্থিত কোনো বিন্দুতে বৃত্তের স্পর্শক অঙ্কন করতে হলে বর্ণিত বিন্দুতে ব্যাসার্ধ অঙ্কন করে ব্যাসার্ধের উপর লম্ব আঁকতে হবে। আবার বিন্দুটি বৃত্তের বাইরে অবস্থিত হলে তা থেকে বৃত্তে দুইটি স্পর্শক আঁকা যাবে।
সম্পাদ্য ৭. বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটি স্পর্শক আঁকতে হবে।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে A একটি বিন্দু। A বিন্দুতে বৃত্তটিতে একটি স্পর্শক আঁকতে হবে।
অঙ্কন : O, A যোগ করি। A বিন্দুতে OA এর উপর AP লম্ব আঁকি। তাহলে AP নির্ণেয় স্পর্শক।
প্রমাণ : OA রেখাংশ A বিন্দুগামী ব্যাসার্ধ এবং AP তার ওপর লম্ব। সুতরাং, AP রেখাই নির্ণেয় স্পর্শক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটিমাত্র স্পর্শক আঁকা যায়।
সম্পাদ্য ৮. বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তটির স্পর্শক আঁকতে হবে।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তের P একটি বহিঃস্থ বিন্দু। P বিন্দু থেকে ঐ বৃত্তে স্পর্শক আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. P,O যোগ করি। PO রেখাংশের মধ্যবিন্দু M নির্ণয় করি।
২. এখন M কে কেন্দ্র করে MO এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে P একটি বৃত্ত আঁকি। মনে করি, নতুন অঙ্কিত বৃত্তটি প্রদত্ত বৃত্তকে A ও B বিন্দুতে ছেদ করে।
৩. A, P এবং B, P যোগ করি।
তাহলে, AP, BP উভয়েই নির্ণেয় স্পর্শক।
প্রমাণ : A, O ও B, O যোগ করি। APB বৃত্তে PO ব্যাস।
∠PAO = এক সমকোণ [ অর্ধবৃত্তস্থ কোণ সমকোণ]
সুতরাং, OA রেখাংশ AP রেখাংশের ওপর লম্ব। অতএব, O কেন্দ্রিক বৃত্তের A বিন্দুতে AP রেখাংশ একটি স্পর্শক। অনুরূপভাবে, BP রেখাংশও একটি স্পর্শক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে ঐ বৃত্তে দুইটি ও কেবল দুইটি স্পর্শক আঁকা যায়।
সম্পাদ্য ৯. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের পরিবৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। এর পরিবৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দু A, B ও C বিন্দু দিয়ে যায়।
অঙ্কন :
১. AB ও AC রেখাংশের লম্ব সমদ্বিখণ্ডক যথাক্রমে EM ও FN রেখাংশ আঁকি। মনে করি, তারা পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে।
২. A, O যোগ করি। O কে কেন্দ্র করে OA এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি।
তাহলে, বৃত্তটি A, B ও C বিন্দুগামী হবে এবং এই বৃত্তটিই ∆ABC এর নির্ণেয় পরিবৃত্ত।
প্রমাণ : B,O ও C,O যোগ করি। O বিন্দুটি AB এর লম্বদ্বিখণ্ডক EM এর ওপর অবস্থিত।
OA = OB, একইভাবে, OA = OC
OA = OB = OC
সুতরাং O কে কেন্দ্র করে OA এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে অঙ্কিত বৃত্তটি A, B ও C বিন্দু তিনটি দিয়ে যাবে। সুতরাং এই বৃত্তটিই ∆ABC এর পরিবৃত্ত।
কাজ : ওপরের চিত্রে একটি সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের পরিবৃত্ত আঁকা হয়েছে। স্থূলকোণী এবং সমকোণী ত্রিভুজের পরিবৃত্ত অঙ্কন কর। |
লক্ষণীয় যে, সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র ত্রিভুজের অভ্যন্তরে, স্থূলকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র ত্রিভুজের বহির্ভাগে এবং সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র অতিভুজের ওপর অবস্থিত।
সম্পাদ্য ১০. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের অন্তবৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ∆ABC একটি ত্রিভুজ। এর অন্তবৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, ∆ABC এর ভিতরে এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা BC, CA ও AB বাহু তিনটির প্রত্যেকটিকে স্পর্শ করে।
অঙ্কন : ∠ABC ও ∠ACB এর সমদ্বিখণ্ডক যথাক্রমে BL ও CM আঁকি । মনে করি, তারা O বিন্দুতে ছেদ করে। O থেকে BC এর ওপর OD লম্ব আঁকি এবং মনে করি, তা BC কে D বিন্দুতে ছেদ করে। O কে কেন্দ্র করে OD এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি। তাহলে, এই বৃত্তটিই নির্ণেয় অন্তবৃত্ত।
প্রমাণ : O থেকে AC ও AB এর ওপর যথাক্রমে OE ও OF লম্ব টানি। মনে করি, লম্বদ্বয় বাহুদ্বয়কে যথাক্রমে E ও F বিন্দুতে ছেদ করে।
O বিন্দু ∠ABC এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত।
OF = OD
অনুরূপভাবে, O বিন্দু ∠ACB এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত বলে OE = OD
OD = OF = OF
সুতরাং O কে কেন্দ্র করে OD এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্ত আঁকলে তা D, E ও F বিন্দু দিয়ে যাবে।
আবার, OD, OE ও OF এর প্রান্তবিন্দুতে যথাক্রমে BC, AC ও AB লম্ব।
সুতরাং বৃত্তটি ∆ABC এর ভিতরে থেকে এর বাহু তিনটিকে যথাক্রমে D, E ও F বিন্দুতে স্পর্শ করে।
অতএব, DEF বৃত্তটিই ∆ABC এর অন্তবৃত্ত হবে।
সম্পাদ্য ১১. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের বহির্বৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। এর বহির্বৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা ত্রিভুজের একটি বাহুকে এবং অপর দুই বাহুর বর্ধিতাংশকে স্পর্শ করে।
অঙ্কন: AB ও AC বাহুদ্বয়কে যথাক্রম D ও F পর্যন্ত বর্ধিত করি। ∠DBC ও ∠FCB এর সমদ্বিখণ্ডক BM ও CN আঁকি। মনে করি, E এদের ছেদবিন্দু। E থেকে BC এর ওপর EH লম্ব আঁকি এবং মনে করি তা BC কে H বিন্দুতে ছেদ করে। E কে কেন্দ্র করে EH এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি। তাহলে, এই বৃত্তটিই নির্ণেয় বহির্বৃত্ত।
প্রমাণ : E থেকে BD ও CF রেখাংশের ওপর যথাক্রমে EG ও EL লম্ব টানি। মনে করি, লম্বদ্বয় BD ও CF রেখাংশদ্বয়কে যথাক্রমে G ও L বিন্দুতে ছেদ করে।
E বিন্দুটি ∠DBC এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত EH = EG
অনুরূপভাবে, E বিন্দুটি ∆FCB এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত বলে EH = EL
EH = EG = EL
সুতরাং E কে কেন্দ্র করে EL এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে অঙ্কিত বৃত্ত H, G এবং L বিন্দু নিয়ে যাবে।
আবার, EH, EG ও EL এর প্রান্তবিন্দুতে যথাক্রমে BC, BD ও CF রেখাংশ তিনটি লম্ব।
সুতরাং বৃত্তটি রেখাংশ তিনটিকে যথাক্রমে H, G ও L বিন্দু তিনটিতে স্পর্শ করে।
অতএব, HGL বৃত্তটিই ∆ABC এর বহিবৃত্ত হবে।
মন্তব্য : কোনো ত্রিভুজের তিনটি বহির্বৃত্ত আঁকা যায়৷
কাজ : ত্রিভুজের অপর দুইটি বহির্বৃত্ত আঁক। |
আমরা প্রতিনিয়ত ত্রিভুজ, বিশেষ করে সমকোণী ত্রিভুজের ব্যবহার করে থাকি। আমাদের চারিদিকের পরিবেশে নানা উদাহরণ দেখা যায় যেখানে কল্পনায় সমকোণী ত্রিভুজ গঠন করা যায়। সেই প্রাচীন যুগে মানুষ জ্যামিতির সাহায্যে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নদীর প্রস্থ নির্ণয় করার কৌশল শিখেছিল। গাছে না উঠেও গাছের ছায়ার সঙ্গে লা... ির তুলনা করে নিখুঁতভাবে গাছের উচ্চতা মাপতে শিখেছিল। এই গাণিতিক কৌশল শেখানোর জন্য সৃষ্টি হয়েছে ত্রিকোণমিতি নামে গণিতের এক বিশেষ শাখা। Trigonometry শব্দটি গ্রিক শব্দ tri (অর্থ তিন), gon (অর্থ ধার) ও metron (অর্থ পরিমাপ) দ্বারা গঠিত। ত্রিকোণমিতিতে ত্রিভুজের বাহু ও কোণের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে পাঠদান করা হয়। মিশর ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ত্রিকোণমিতি ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে। মিশরীয়রা ভূমি জরিপ ও প্রকৌশল কাজে এর বহুল ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হয়। এর সাহায্যে জ্যোতির্বিদগণ পৃথিবী থেকে দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্রের দূরত্ব নির্ণয় করতেন। অধুনা ত্রিকোণমিতির ব্যবহার গণিতের সকল শাখায়। ত্রিভুজ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, নেভিগেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ত্রিকোণমিতির ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞান, ক্যালকুলাসসহ গণিতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাখায় ত্রিকোণমিতির ব্যবহার রয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর নামকরণ
আমরা জানি, সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলো অতিভুজ, ভূমি ও উন্নতি নামে অভিহিত হয়। ত্রিভুজের অনুভূমিক অবস্থানের জন্য এ নামসমূহ সার্থক। আবার সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণদ্বয়ের একটির সাপেক্ষে অবস্থানের প্রেক্ষিতেও বাহুগুলোর নামকরণ করা হয়। যথা :
১. ‘অতিভুজ (hypotenuse)', সমকোণী ত্রিভুজের বৃহত্তম বাহু যা সমকোণের বিপরীত বাহু
২. বিপরীত বাহু (opposite side)', যা হলো প্রদত্ত কোণের সরাসরি বিপরীত দিকের বাহু
৩. ‘সন্নিহিত বাহু (adjacent side)', যা প্রদত্ত কোণ সৃষ্টিকারী একটি রেখাংশ।
∠PON কোণের জন্য অতিভুজ OP, সন্নিহিত বাহু ON, বিপরীত বাহু PN | ∠OPN কোণের জন্য অতিভুজ OP, সন্নিহিত বাহু PN, বিপরীত বাহু ON |
জ্যামিতিক চিত্রের শীর্ষবিন্দু চিহ্নিত করার জন্য বড় হাতের বর্ণ ও বাহু নির্দেশ করতে ছোট হাতের বর্ণ ব্যবহার করা হয়। কোণ নির্দেশের জন্য প্রায়শই গ্রিক বর্ণ ব্যবহৃত হয়। গ্রিক বর্ণমালার ছয়টি বহুল ব্যবহৃত বর্ণ হলো :
প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত গণিতবিদদের হাত ধরেই জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতিতে গ্রিক বর্ণগুলোর ব্যবহার হয়ে আসছে।
উদাহরণ ১. θ কোণের জন্য অতিভুজ, সন্নিহিত বাহু ও বিপরীত বাহু চিহ্নিত কর।
সমাধান :
উদাহরণ ২. a ও β কোণের জন্য অতিভুজ, সন্নিহিত বাহু ও বিপরীত বাহুর দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধান :
সদৃশ সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলোর অনুপাতসমূহের ধ্রুবতা
মনে করি, ∠XOA একটি সূক্ষ্মকোণ। OA বাহুতে যেকোনো একটি বিন্দু P নিই। P থেকে OX বাহু পর্যন্ত PM লম্ব টানি। ফলে একটি সমকোণী ত্রিভুজ POM গঠিত হলো। এই ∆POM এর PM, OM ও OP বাহুগুলোর যে তিনটি অনুপাত পাওয়া যায় এদের মান OA বাহুতে নির্বাচিত P বিন্দুর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে না।
∠XOA কোণের OA বাহুতে যেকোনো বিন্দু P ও P1 থেকে OX বাহু পর্যন্ত যথাক্রমে PM ও P1M1 লম্ব অঙ্কন করলে ∆POM ও দুইটি সদৃশ সমকোণী ত্রিভুজ গঠিত হয়।
এখন, ∆POM ও সদৃশ হওয়ায়,
অর্থাৎ, অনুপাতসমূহের প্রত্যেকটি ধ্রুবক। এই অনুপাতসমূহকে ত্রিকোণমিতিক অনুপাত বলে।
মনে করি, ∠XOA একটি সূক্ষ্মকোণ। OA বাহুতে যেকোনো একটি বিন্দু P নিই। P থেকে OA বাহু পর্যন্ত PM লম্ব টানি। ফলে একটি সমকোণী ত্রিভুজ POM গঠিত হলো। এই ∠POM এর PM, OM ও OP বাহুগুলোর যে ছয়টি অনুপাত পাওয়া যায় এদের ZXOA এর ত্রিকোণমিতিক অনুপাত বলা হয় এবং এদের প্রত্যেকটিকে এক একটি সুনির্দিষ্ট নামে নামকরণ করা হয়।
∠XOA সাপেক্ষে সমকোণী ত্রিভুজ POM এর PM বিপরীত বাহু, OM সন্নিহিত বাহু, OP অতিভুজ। এখন ∠XOA = 6 ধরলে, θ কোণের যে ছয়টি ত্রিকোণমিতিক অনুপাত পাওয়া যায় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
চিত্র থেকে,
লক্ষ করি, sin θ প্রতীকটি θ কোণের সাইন-এর অনুপাতকে বোঝায়; sin ও θ এর গুণফলকে নয়। θ বাদে sin আলাদা কোনো অর্থ বহন করে না। ত্রিকোণমিতিক অন্যান্য অনুপাতের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য।
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর সম্পর্ক
মনে করি, ∠XOA = θ একটি সূক্ষ্মকোণ।
পাশের চিত্র সাপেক্ষে, সংজ্ঞানুযায়ী,
ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলি
উদাহরণ ৩. হলে, A কোণের অন্যান্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাতসমূহ নির্ণয় কর।
সমাধান : দেওয়া আছে, ।
কাজ : নিচের ত্রিকোণমিতিক সূত্রগুলো সহজে মনে রাখার জন্য তালিকা কর। |
উদাহরণ ৪. ABC সমকোণী ত্রিভুজের ∠B কোণটি সমকোণ। tan A = 1 হলে 2sin A.cos A = 1 এর সত্যতা যাচাই কর।
সমাধান : দেওয়া আছে, tan A = 1
অতএব, বিপরীত বাহু = সন্নিহিত বাহু = a
কাজ : ABC সমকোণী ত্রিভুজের ∠C সমকোণ, AB = 29 সে.মি., BC = 21 সে.মি. এবং ∠ABC = θ হলে, এর মান বের কর। |
উদাহরণ ৫. প্রমাণ কর যে,
সমাধান :
বামপক্ষ =
উদাহরণ ১০. প্রমাণ কর :
সমাধান :
30°, 45° ও 60° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
30° ও 60° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত :
ত্রিকোণমিতিক অনুপাতসমূহ বের করি :
45° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত :
পূরক কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
আমরা জানি যে, দুইটি সূক্ষ্মকোণের পরিমাপের সমষ্টি 90° হলে, এদের একটিকে অপরটির পূরক কোণ বলা হয়। যেমন, 30° ও 60° এবং 15° ও 75° পরস্পর পূরক কোণ।
সাধারণভাবে, θ কোণ ও ( 90° – θ) কোণ পরস্পরের পূরক কোণ
উপরের সূত্রগুলো নিম্নলিখিতভাবে কথায় প্রকাশ করা যায় :
পূরক কোণের sine = কোণের cosine
পূরক কোণের cosine = কোণের sine
পূরক কোণের tangent = কোণের cotangent ইত্যাদি।
0° ও 90° কোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাত
আমরা সমকোণী ত্রিভুজের সূক্ষ্মকোণ θ এর জন্য ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলো নির্ণয় করতে শিখেছি। এবার দেখি, কোণটি ক্রমশঃ ছোট করা হলে ত্রিকোণমিতির অনুপাতগুলো কীরূপ হয়। θ কোণটি যতই ছোট হতে থাকে, বিপরীত বাহু PN এর দৈর্ঘ্য ততই ছোট হয়। P বিন্দুটি N বিন্দুর নিকটতর হয় এবং অবশেষে θ কোণটি যখন 0° এর খুব কাছে অবস্থিত হয়, OP প্রায় ON এর সাথে মিলে যায়।
θ সূক্ষ্মকোণ হলে আমরা দেখেছি
0° কোণের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে এ সম্পর্কগুলো যাতে বজায় থাকে সে দিকে লক্ষ রেখে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
0 দ্বারা ভাগ করা যায় না বিধায় cosec 0° ও cot 0° সংজ্ঞায়িত করা যায় না।
আবার, যখন ৪ কোণটি 90° এর খুব কাছে, অতিভুজ OP প্রায় PN এর সমান। সুতরাং, sin θ এর মান প্রায় 1 । অন্যদিকে, θ কোণটি প্রায় 90° এর সমান হলে ON শূন্যের কাছাকাছি; cos 8 এর মান প্রায় 0।
দ্রষ্টব্য : ব্যবহারের সুবিধার্থে 0, 30, 45, 60° ও 90° কোণগুলোর ত্রিকোণমিতিক অনুপাতগুলোর মান নিচের ছকে দেখানো হলো :
লক্ষ করি : নির্ধারিত কয়েকটি কোণের জন্য ত্রিকোণমিতিক মানসমূহ মনে রাখার সহজ উপায়।
উদাহরণ ১৩. মান নির্ণয় কর :
সমাধান :
সমাধান :
অতি প্রাচীন কাল থেকেই দূরবর্তী কোনো বস্তুর দূরত্ব ও উচ্চতা নির্ণয় করতে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের প্রয়োগ করা হয়। বর্তমান যুগে ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে সব পাহাড়, পর্বত, টাওয়ার, গাছের উচ্চতা এবং নদ-নদীর প্রস্থ সহজে মাপা যায় না সে সব ক্ষেত্রে উচ্চতা ও প্রস... থ ত্রিকোণমিতির সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। এক্ষেত্রে সূক্ষ্মকোণের ত্রিকোণমিতিক অনুপাতের মান জেনে রাখা প্রয়োজন।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
ভূ-রেখা, ঊর্ধ্বরেখা এবং উল্লম্বতল (Horizontal Line, Vertical Line and Vertical Plane)
ভূ-রেখা হচ্ছে ভূমি তলে অবস্থিত যে কোনো সরলরেখা। ভূ-রেখাকে শয়নরেখাও বলা হয়। ঊর্ধ্বরেখা হচ্ছে ভূমি তলের উপর লম্ব যে কোনো সরলরেখা। একে উল্লম্ব রেখাও বলে।
ভূমি তলের উপর লম্বভাবে অবস্থিত পরস্পরচ্ছেদী ভূ-রেখা ও ঊর্ধ্বরেখা একটি তল নির্দিষ্ট করে। এ তলকে উল্লম্ব তল বলে।
চিত্রে ভূমি তলের কোনো স্থান C থেকে CB দূরত্বে AB উচ্চতা বিশিষ্ট একটি গাছ লম্ব অবস্থায় দন্ডায়মান। এখানে CB রেখা হচ্ছে ভূ-রেখা, BA রেখা হচ্ছে ঊর্ধ্বরেখা এবং ABC তলটি ভূমির উপর লম্ব যা উল্লম্বতল।
উন্নতি কোণ ও অবনতি কোণ (Angle of Elevation and Angle of Depression)
চিত্রটি লক্ষ করি, ভূমির সমান্তরাল AB একটি সরলরেখা। A, O, B, P, Q বিন্দুগুলো একই উল্লম্বতলে অবস্থিত। AB সরলরেখার উপরের P বিন্দুটি AB রেখার সাথে ∠POB উৎপন্ন করে। এখানে, O বিন্দুর সাপেক্ষে P বিন্দুর উন্নতি কোণ ∠POB ।
সুতরাং ভূভঙ্গের উপরের কোন বিন্দু ভূমির সমান্তরাল রেখার সাথে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে উন্নতি কোণ বলা হয়।
Q বিন্দু ভূ-রেখার সমান্তরাল AB রেখার নিচের দিকে অবস্থিত। এখানে, O বিন্দুর সাপেক্ষে Q বিন্দুর অবনতি কোণ হচ্ছে ∠QOB। সুতরাং ভুতলের সমান্তরাল রেখার নিচের কোন বিন্দু ভূ-রেখার সাথে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে অবনতি কোণ বলা হয়।
কাজ : চিত্রটি চিহ্নিত কর এবং ভূ-রেখা, ঊর্ধ্বরেখা, উল্লম্বুল, উন্নতি কোণ ও অবনতি কোণ নির্দেশ কর। |
বিশেষ দ্রষ্টব্য : এ অধ্যারে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আনুমানিক সঠিক চিত্র আবশ্যক। চিত্র অঙ্কনের সময় নিচের কৌশল অবলম্বন করা দরকার।
১. 30° কোণ অঙ্কনের ক্ষেত্রে ভূমি > লম্ব হবে।
২. 45° কোণ অঙ্কনের ক্ষেত্রে ভূমি = লম্ব হবে।
৩. 60° কোণ অঙ্কনের ক্ষেত্রে ভূমি << লম্ব হবে।
উদাহরণ ১. একটি টাওয়ারের পাদদেশ থেকে 75 মিটার দূরে ভূতলস্থ কোনো বিন্দুতে টাওয়ারের শীর্ষের উন্নতি 30° হলে, টাওয়ারের উচ্চতা নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, টাওয়ারের উচ্চতা AB = h মিটার, টাওয়ারের পাদদেশ থেকে BC = 75 মিটার দূরে ভূতল C বিন্দুতে টাওয়ারের শীর্ষ A বিন্দুর উন্নতি ∠ACB = 30°
উদাহরণ ২. একটি গাছের উচ্চতা 105 মিটার। গাছটির শীর্ষ ভূমির কোনো বিন্দুতে উন্নতি কোণ 60° তৈরি করলে, গাছটির গোড়া থেকে ভূতলস্থ বিন্দুটির দূরত্ব নির্ণয় কর।
সমাধান :
কাজ : ক) গাছটির উচ্চতা নির্ণয় কর। খ) গাছটির পাদদেশ থেকে ভূতলস্থ C বিন্দুর দূরত্ব নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ৩. 18 মিটার লম্বা একটি মই একটি দেওয়ালের ছাদ বরাবর ঠেস দিয়ে ভূমির সঙ্গে 45° কোণ উৎপন্ন করে। দেওয়ালটির উচ্চতা নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, দেওয়ালটির উচ্চতা AB = h মিটার, মইটির দৈর্ঘ্য AC = 18 মিটার এবং ভূমির সঙ্গে ∠ACB = 45° উৎপন্ন করে।
সুতরাং দেওয়ালটির উচ্চতা 12.73 মিটার (প্রায়)।
উদাহরণ ৪. ঝড়ে একটি গাছ হেলে পড়লো। গাছের গোড়া থেকে 7 মিটার উচ্চতায় একটি খুঁটি ঠেস দিয়ে গাছটিকে সোজা করা হলো। মাটিতে খুঁটিটির স্পর্শ বিন্দুর অবনতি কোণ 30° হলে, খুঁটিটির দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধান :
মনে করি, খুঁটিটির দৈর্ঘ্য BC : = মিটার, গাছের গোড়া থেকে AB 7 মিটার উচ্চতায় খুঁটিটি ঠেস দিয়ে আছে এবং অবনতি ∠DBC = 30°
∠ACB = ∠DBC = 30° [একান্তর কোণ বলে]
সমকোণী ∠ABC থেকে পাই,
BC = 14
খুঁটিটির দৈর্ঘ্য 14 মিটার।
কাজ : চিত্রে অবনতি ∠CAE = 60º, উন্নতি ∠ADB 30º, AC = 36 মিটার, AB ⊥ DC এবং D, B, C একই সরলরেখায় অবস্থিত হলে, AB, AD এবং CD বাহুর দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ৫. ভূতলস্থ কোনো স্থানে একটি দালানের ছাদের একটি বিন্দুর উন্নতি কোণ 60° । ঐ স্থান থেকে 42 মিটার পিছিয়ে গেলে দালানের ঐ বিন্দুর উন্নতি কোণ 45° হয়। দালানের উচ্চতা নির্ণয় কর।
সমাধান :
মনে করি, দালানের উচ্চতা AB = h মিটার এবং শীর্ষের উন্নতি ∠ACB = 60° এবং C স্থান থেকে CD = 42 মিটার পিছিয়ে গেলে উন্নতি ∠ADB = 45° হয়।
ধরি, BC = x মিটার।
h = 99.373 (প্রায়)
দালানটির উচ্চতা 99.37 মিটার (প্রায়)।
উদাহরণ ৬. একটি খুঁটি এমন ভাবে ভেঙে গেল যে, তার অবিচ্ছিন্ন ভাঙা অংশ দন্ডায়মান অংশের সাথে 30° কোণ উৎপন্ন করে খুঁটির গোড়া থেকে 10 মিটার দূরে মাটি স্পর্শ করে। খুঁটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য নির্ণয় কর।
সমাধান :
মনে করি, খুঁটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য AB = h মিটার, খুঁটিটি BC = x মিটার উচ্চতায় ভেঙে গিয়ে বিচ্ছিন্ন না হয়ে ভাঙা অংশ দণ্ডায়মান অংশের সাথে ∠BCD = 30° উৎপন্ন করে খুঁটির গোড়া থেকে BD = 10 মিটার দূরে মাটি স্পর্শ করে।
এখানে, CD = AC = AB – BC = (h – x) মিটার
△BCD থেকে পাই,
বা, h – x = 20 বা, h = 20 + x বা, h = [x এর মান বসিয়ে]
h = 37.321 (প্রায়)
খুঁটির দৈর্ঘ্য 37.32 মিটার (প্রায়)।
অনুপাত ও সমানুপাতের ধারণা থাকা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তম শ্রেণিতে পাটিগণিতীয় অনুপাত ও সমানুপাত বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে আমরা বীজগণিতীয় অনুপাত ও সমানুপাত সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমরা প্রতিনিয়তই নির্মাণ সামগ্রী ও বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সামগ্রী তৈরিতে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে, জমিত... সার প্রয়োগে, কোনোও কিছুর আকার-আয়তন দৃষ্টিনন্দন করতে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমের আরও অনেক ক্ষেত্রে অনুপাত ও সমানুপাতের ধারণা প্রয়োগ করে থাকি। ইহা ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যার সমাধান করা যায়।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
অনুপাত (Ratio)
একই এককে সমজাতীয় দুইটি রাশির পরিমাণের একটি অপরটির কত গুণ বা কত অংশ তা একটি ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই ভগ্নাংশটিকে রাশি দুইটির অনুপাত বলে।
দুইটি রাশি p ও q এর অনুপাতকে লিখা হয়। p ও q রাশি দুইটি সমজাতীয় ও একই এককে প্রকাশিত হতে হবে। অনুপাতে p কে পূর্ব রাশি এবং q কে উত্তর রাশি বলা হয়।
অনেক সময় আনুমানিক পরিমাপ করতেও আমরা অনুপাত ব্যবহার করি। যেমন, সকাল ৪ টায় রাস্তায় যে সংখ্যক গাড়ী থাকে, 10 টায় তার দ্বিগুণ গাড়ী থাকে। এ ক্ষেত্রে অনুপাত নির্ণয়ে গাড়ীর প্রকৃত সংখ্যা জানার প্রয়োজন হয় না। আবার অনেক সময় আমরা বলে থাকি, তোমার ঘরের আয়তন আমার ঘরের আয়তনের তিনগুণ হবে। এখানেও ঘরের সঠিক আয়তন জানার প্রয়োজন হয় না। বাস্তব জীবনে এরকম অনেক ক্ষেত্রে আমরা অনুপাতের ধারণা ব্যবহার করে থাকি।
সমানুপাত (Proportion)
যদি চারটি রাশি এরূপ হয় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় রাশির অনুপাত তৃতীয় ও চতুর্থ রাশির অনুপাতের সমান হয়, তবে ঐ চারটি রাশি নিয়ে একটি সমানুপাত উৎপন্ন হয়। a, b, c, এরূপ চারটি রাশি হলে আমরা লিখি a : b = c : d । সমানুপাতের চারটি রাশিই একজাতীয় হওয়ার প্রয়োজন হয় না। প্রত্যেক অনুপাতের রাশি দুইটি এক জাতীয় হলেই চলে।
উপরের চিত্রে, দুইটি ত্রিভুজের ভূমি যথাক্রমে a ও b এবং এদের প্রত্যেকের উচ্চতা h একক। ত্রিভুজদ্বয়ের ক্ষেত্রফল A ও B বর্গএকক হলে আমরা লিখতে পারি
অর্থাৎ, ক্ষেত্রফলদ্বয়ের অনুপাত ভূমিদ্বয়ের অনুপাতের সমান।
ক্রমিক সমানুপাতী (Continued proportion)
a, b, c ক্রমিক সমানুপাতী বলতে বোঝায় a : b=b : c l
a, b, c ক্রমিক সমানুপাতী হবে যদি এবং কেবল যদি হয়। ক্রমিক সমানুপাতের ক্ষেত্রে সবগুলো রাশি এক জাতীয় হতে হবে। এক্ষেত্রে c কে a ও b এর তৃতীয় সমানুপাতী এবং b কে a ও c এর মধ্যসমানুপাতী বলা হয়।
উদাহরণ ১. A ও B নির্দিষ্ট পথ অতিক্রম করে যথাক্রমে এবং মিনিট। A ও B এর গড় গতিবেগের অনুপাত নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, A ও B এর গড় গতিবেগ প্রতি মিনিটে যথাক্রমে 1 মিটার ও 2 মিটার। তাহলে, মিনিটে A অতিক্রম করে মিটার এবং মিনিটে B অতিক্রম করে মিটার।
প্রশ্নানুসারে,
এখানে গতিবেগের অনুপাত সময়ের ব্যস্ত অনুপাতের সমান।খ) x : y = 5 : 6 হলে 3x : 5y
কাজ : ক) 3.5 : 5.6 কে 1 : a এবং b : 1 আকারে প্রকাশ কর। খ) x : y = 5 : 6 হলে 3x : 5y = কত? |
অনুপাতের রূপান্তর
এখানে অনুপাতের রাশিগুলো ধনাত্মক সংখ্যা।
১. a : b = c : d হলে, b : a = d : c [ব্যস্তকরণ (Invertendo)]
প্রমাণ : দেওয়া আছে,
বা, ad = bc [উভয়পক্ষকে bd দ্বারা গুণ করে ]
বা, [উভয় পক্ষকে ac দ্বারা ভাগ করে যেখানে a, c এর কোনটিই শূন্য নয়]
বা,
অর্থাৎ, b : a = d : c
২. a : b = c : d হলে, a : c = b : d [একান্তরকরণ (Alternendo)]
প্রমাণ : দেওয়া আছে,
বা, ad = bc [উভয়পক্ষকে bd দ্বারা গুণ করে]
বা, [উভয় পক্ষকে cd দ্বারা ভাগ করে যেখানে c, d এর কোনটিই শূন্য নয়]
বা,
অর্থাৎ, a : c = b : d
কাজ : ক) মাতা ও কন্যার বর্তমান বয়সের সমষ্টি ৪ বছর। তাদের বয়সের অনুপাত t বছর পূর্বে ছিল r : p । x বছর পরে তাদের বয়সের অনুপাত কত হবে? খ) একটি ল্যাম্পপোস্ট থেকে p মিটার দূরে দাঁড়ানো ” মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এক ব্যক্তির ছায়ার দৈর্ঘ্য ৪ মিটার। ল্যাম্পপোস্টের উচ্চতা p, r ও s এর মাধ্যমে নির্ণয় কর। |
উদাহরণ ২. পিতা ও পুত্রের বর্তমান বয়সের অনুপাত 7 : 2 এবং 5 বছর পরে তাদের বয়সের অনুপাত ৪ : 3 হবে। তাদের বর্তমান বয়স কত?
সমাধান : মনে করি, পিতার বর্তমান বয়স a বছর এবং পুত্রের বর্তমান বয়স b বছর।
প্রশ্নের প্রথম ও দ্বিতীয় শর্তানুসারে যথাক্রমে পাই,
সমীকরণ (1) থেকে পাই,
সমীকরণ (2) থেকে পাই,
3 (a + 5 ) = 8 (b + 5)
বা, 3a + 15 = 8b + 40
বা, 3a - 8b = 40 – 15
বা, [(3) ব্যবহার করে]
বা,
বা, 5b = 50
b = 10
সমীকরণ (3) এ b = 10 বসিয়ে পাই,
পিতার বর্তমান বয়স 35 বছর এবং পুত্রের বর্তমান বয়স 10 বছর।
উদাহরণ ৩. যদি a : b = b : c হয়, তবে প্রমাণ কর যে,
সমাধান : দেওয়া আছে, a : b = b : c
উদাহরণ ৪. হলে, দেখাও যে,
সমাধান :
সমাধান : মনে করি, ax = by = cz = k
সমাধান :
মনে কর, রনির আয় 1000 টাকা, সনির আয় 1500 টাকা এবং সামির আয় 2500 টাকা। এখানে, রনির আয় : সনির আয় 1000 : 1500 = 2 : 3; সনির আয় : সামির আয় 1500: 2500 = 3:51 = সুতরাং রনির আয় : সনির আয় : সামির আয় = 2 : 3 : 5 ।
দুইটি অনুপাত যদি ক : খ এবং খ : গ আকারের হয়, তাহলে এদেরকে সাধারণত ক : খ : গ আকারে লেখা যায়। একে ধারবাহিক অনুপাত বলা হয়। যেকোনো দুই বা ততোধিক অনুপাতকে এই আকারে প্রকাশ করা যায়। এখানে লক্ষণীয় যে, দুইটি অনুপাতকে ক : খ : গ আকারে প্রকাশ করতে হলে প্রথম অনুপাতটির উত্তর রাশি, দ্বিতীয় অনুপাতটির পূর্ব রাশির সমান হতে হবে। যেমন, 2 : 3 এবং 4 : 3 অনুপাত দুইটি ক : খ : গ আকারে প্রকাশ করতে হলে প্রথম অনুপাতটির উত্তর রাশিটিকে দ্বিতীয় অনুপাতটির পূর্ব রাশির সমান করতে হবে। অর্থাৎ ঐ দুইটি রাশিকে এদের ল.সা.গু. এর সমান করতে হবে।
এখানে, 3, 4 এর ল.সা.গু. 12
অতএব 2 : 3 এবং 4 : 3 অনুপাত দুইটি ক : খ : গ আকারে হবে 8 : 12 : 9
লক্ষ করি যে, উপরের উদাহরণে সামির আয় যদি 1125 টাকা হয়, তাহলে তাদের আয়ের অনুপাতও 8 : 12: 9 আকারে লেখা যাবে।
উদাহরণ ১২. ক, খ ও গ এক জাতীয় রাশি এবং ক : খ = 3 : 4, খ : গ = 6 : 7 হলে, ক : খ : গ কত?
উদাহরণ ১৩. একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণের অনুপাত 3 : 4 : 5, কোণ তিনটি ডিগ্রিতে প্রকাশ কর।
সমাধান : মনে করি, প্রদত্ত অনুপাত অনুসারে কোণ তিনটি যথাক্রমে 3x, 4x এবং 5x। ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি = 180° ।
প্রশ্নানুসারে, 3x + 4x + 5x = 180° বা, 12x = 180° বা, x = 15°
অতএব, কোণ তিনটি হল,
3x = 3 x 15° : 45°
4x = 4 × 15° = 60°
এবং 5x = 5 x 15° = 75°
উদাহরণ ১৪. যদি কোনো বর্গক্ষেত্রের প্রত্যেক বাহুর পরিমাণ 10% বৃদ্ধি পায়, তবে তার ক্ষেত্রফল শতকরা কত বৃদ্ধি পাবে?
সমাধান : মনে করি, বর্গক্ষেত্রের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৫ মিটার। সুতরাং, বর্গক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল বর্গমিটার। 10% বৃদ্ধি পেলে প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য হয় (a + a এর 10% ) মিটার বা 1.10a মিটার।
কাজ : ক) তোমার শ্রেণিতে 35 জন ছাত্র ও 25 জন ছাত্রী আছে। বনভোজনে খিচুরি খাওয়ার জন্য প্রত্যেক ছাত্র ও ছাত্রীর প্রদত্ত চাল ও ডালের অনুপাত যথাক্রমে 3 : 1 এবং 5 : 2 হলে, মোট চাল ও মোট ডালের অনুপাত বের কর। খ) একজন কৃষকের জমিতে উৎপাদিত মসুর, সরিষা ও ধানের পরিমান যথাক্রমে 75 কে.জি. 100 কে.জি. এবং 525 কে.জি. । ফসলগুলো যথাক্রমে 100, 120 ও 30 টাকা করে বিক্রয় করলো। সব ফসল বিক্রি করার পর ঐগুলো হতে প্রাপ্ত আয়ের অনুপাত নির্ণয় কর। |
সমানুপাতিক ভাগ
কোনো রাশিকে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করাকে সমানুপাতিক ভাগ বলা হয়। S কে a : b : c : d অনুপাতে ভাগ করতে হলে, S কে মোট a + b + c + d ভাগ করে যথাক্রমে a, b, c ও d ভাগ নিতে হয়। অতএব,
এভাবে যেকোনো রাশিকে যেকোনো নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করা যায়।
উদাহরণ ১৫. একটি আয়তাকার জমির ক্ষেত্রফল 12 হেক্টর এবং কর্ণের দৈর্ঘ্য 500 মিটার। ঐ জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সঙ্গে অপর একটি জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত যথাক্রমে 3 : 4 এবং 2 : 3।
ক) প্রদত্ত আয়তাকার জমিটির ক্ষেত্রফল কত বর্গমিটার?
খ) অপর জমিটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
গ) প্রদত্ত জমিটির প্রস্থ নির্ণয় কর।
সমাধান :
ক) আমরা জানি, 1 হেক্টর = 10,000 বর্গমিটার
12 হেক্টর = 12 x 10,000 120000 বর্গমিটার
খ) দেওয়া আছে, প্রদত্ত জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের সঙ্গে অপর একটি জমির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত যথাক্রমে 3 : 4 এবং 2 : 3।
মনে করি, প্রদত্ত জমির দৈর্ঘ্য 3x মিটার এবং প্রস্থ 2y মিটার।
সুতরাং, অপর জমির দৈর্ঘ্য 4x মিটার এবং প্রস্থ 3y মিটার।
প্রদত্ত জমির ক্ষেত্রফল = 3x . 2y = 6xy বর্গমিটার
এবং অপর জমির ক্ষেত্রফল = 4x . 3y = 12xy বর্গমিটার
প্রশ্নমতে, 6xy = 120000 বা, xy = 20000
অপর জমির ক্ষেত্রফল = 12xy = 12 × 20000 = 240000 বর্গমিটার
গ) মনে করি, প্রদত্ত জমির দৈর্ঘ্য 3x মিটার এবং প্রস্থ 2y মিটার।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বীজগণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সমীকরণ। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আমরা সরল সমীকরণের ধারণা পেয়েছি এবং কীভাবে এক চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণ সমাধান করতে হয় তা জেনেছি। অষ্টম শ্রেণিতে সরল সমীকরণ প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতিতে এবং লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান করেছি। কীভাবে ব... স্তবভিত্তিক সমস্যার সরল সহসমীকরণ গঠন করে সমাধান করা হয় তাও শিখেছি। এ অধ্যায়ে সরল সহসমীকরণের ধারণা সম্প্রসারণ করা হয়েছে ও সমাধানের আরো নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ অধ্যায়ে লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সহসমীকরণ গঠন ও সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
সরল সহসমীকরণ বলতে দুই চলকবিশিষ্ট দুইটি সরল সমীকরণকে বুঝায় যখন এদের একত্রে উপস্থাপন করা হয় এবং চলক দুইটি একই বৈশিষ্টের হয়। আবার এরূপ দুইটি সমীকরণকে একত্রে সরল সমীকরণজোটও বলে। অষ্টম শ্রেণিতে আমরা এরূপ সমীকরণজোটের সমাধান করেছি ও বাস্তবভিত্তিক সমস্যার সহসমীকরণ গঠন করে সমাধান করতে শিখেছি। এ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমে আমরা 2x + y = 12 সমীকরণটি বিবেচনা করি। এটি একটি দুই চলকবিশিষ্ট সরল সমীকরণ। = সমীকরণটিতে বামপক্ষে x ও এর এমন মান পাওয়া যাবে কি যাদের প্রথমটির দ্বিগুণের সাথে দ্বিতীয়টির যোগফল ডানপক্ষের 12 এর সমান হয়, অর্থাৎ ঐ মান দুইটি দ্বারা সমীকরণটি সিদ্ধ হয়?
এখন, 2x + y = 12 সমীকরণটি থেকে নিচের ছকটি পূরণ করি :
সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। তার মধ্যে চারটি সমাধান : ( - 2, 16), (0, 12 ), ( 3, 6), ( 5, 2 ) ।
আবার, অন্য একটি সমীকরণ x - y = 3 নিয়ে নিচের ছকটি পূরণ করি :
সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। তার মধ্যে চারটি সমাধান : ( – 2, – 5), (0, – 3), ( 3,0), ( 5, 2 ) ।
যদি আলোচ্য সমীকরণ দুইটিকে একত্রে জোট হিসেবে ধরা হয়, তবে একমাত্র (5,2) দ্বারা উভয় সমীকরণ যুগপৎ সিদ্ধ হয়। আর অন্য কোনো মান দ্বারা উভয় সমীকরণ যুগপৎ সিদ্ধ হবে না।
অতএব, সমীকরণজোট 2x + y = 12 এবং x – y = 3 এর সমাধান: (x, y) = (5,2)
কাজ : x – 2y + 1 = 0 ও 2x + y - 3 = 0 সমীকরণদ্বয়ের প্রত্যেকটির পাঁচটি করে সমাধান লিখ যেন তন্মধ্যে সাধারণ সমাধানটিও থাকে। |
দুই চলকবিশিষ্ট সরল সহসমীকরণের সমাধান যোগ্যতা
ক)
সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে অনুপাতগুলো সমান নয়। এক্ষেত্রে ধ্রুবকপদ তুলনা করার প্রয়োজন হয় না।
খ)
এখানে, ১ম সমীকরণটির উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করলে ২য় সমীকরণটি পাওয়া যাবে। আবার, ২য় সমীকরণের উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করলে ১ম সমীকরণটি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, সমীকরণ দুইটি পরস্পর নির্ভরশীল।
আমরা জানি, ১ম সমীকরণটির অসংখ্য সমাধান আছে। কাজেই, ২য় সমীকরণটিরও ঐ একই অসংখ্য সমাধান আছে। এরূপ সমীকরণজোটকে সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল (dependent) সমীকরণজোট বলে। এরূপ সমীকরণজোটের অসংখ্য সমাধান আছে।
অর্থাৎ, সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে অনুপাতগুলো সমান হয়।
গ)
এখানে, ১ম সমীকরণটির উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করে পাই, 4x + 2y = 24
২য় সমীকরণটি, 4x + 2y = 5
বিয়োগ করে পাই, 0 = 19 যা অসম্ভব।
কাজেই বলতে পারি, এ ধরনের সমীকরণজোট সমাধান করা সম্ভব নয়। এরূপ সমীকরণজোট অসমঞ্জস (inconsistent) ও পরস্পর অনির্ভরশীল। এরূপ সমীকরণজোটের কোনো সমাধান নেই ।
এখানে সমীকরণ দুইটির x ও y এর সহগ এবং ধ্রুবক পদ তুলনা করে পাই,
অর্থাৎ, অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোটের ক্ষেত্রে চলকের সহগের অনুপাতগুলো ধ্রুবকের অনুপাতের সমান নয়।
এখন, যদি কোনো সমীকরণজোটে উভয় সমীকরণে ধ্রুবক পদ না থাকে, অর্থাৎ, হয়, তবে ছকের
উদাহরণ ১. নিচের সমীকরণজোটগুলো সমঞ্জস/অসমঞ্জস, নির্ভরশীল/অনির্ভরশীল কি না ব্যাখ্যা কর এবং এদের সমাধানের সংখ্যা নির্দেশ কর।
সমাধান :
অতএব, সমীকরণজোটটি সমঞ্জস ও পরস্পর নির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির অসংখ্য সমাধান আছে।
সমীকরণজোটটি সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির একটিমাত্র (অনন্য সমাধান আছে।
সমীকরণজোটটি অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল। সমীকরণজোটটির কোনো সমাধান নেই।
কাজ : x – 2y + 1 = 0, 2x + y - 3 = 0 সমীকরণজোটটি সমঞ্জস কি না, পরস্পর নির্ভরশীল কি না যাচাই কর এবং সমীকরণজোটটির কয়টি সমাধান থাকতে পারে তা নির্দেশ কর। |
আমরা শুধু সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সরল সহসমীকরণের সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করবো। এরূপ সমীকরণজোটের একটিমাত্র (অনন্য) সমাধান আছে।
এখানে, সমাধানের চারটি পদ্ধতির উল্লেখ করা হলো :
১. প্রতিস্থাপন পদ্ধতি ২. অপনয়ন পদ্ধতি ৩. আড়গুণন পদ্ধতি ও ৪. লৈখিক পদ্ধতি।
আমরা অষ্টম শ্রেণিতে প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান কীভাবে করতে হয় জেনেছি। এ দুই পদ্ধতির একটি করে উদাহরণ দেওয়া হলো :
উদাহরণ ২. প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + y = 8
3x - 2y = 5
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y = 8 ... (1)
3x - 2y = 5 ... (2)
সমীকরণ (1) হতে পাই, y = 8 – 2x ... (3)
সমীকরণ (2) এ y এর মান ৪ – 2x বসিয়ে পাই,
3x - 2(8 – 2x) = 5
বা, 3r - 16 + 4x = 5
বা, 7x = 5 + 16
বা, 7x = 21
বা, x = 3
x এর মান সমীকরণ (3) এ বসিয়ে পাই,
y = 8 - 2 × 3
বা, y = 8 – 6
বা, y = 2
সমাধান (x, y) = (3, 2)
প্রতিস্থাপন পদ্ধতি (Substitution method): সুবিধামত একটি সমীকরণ থেকে একটি চলকের মান অপর চলকের মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রাপ্ত মান অপর সমীকরণে বসালে এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ পাওয়া যায়। অতঃপর সমীকরণটি সমাধান করে চলকটির মান পাওয়া যায়। এই মান প্রদত্ত সমীকরণের যে কোনোটিতে বসানো যেতে পারে। তবে যেখানে একটি চলককে অপর চলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বসালে সমাধান সহজ হয়। এখান থেকে অপর চলকের মান পাওয়া যায়।
উদাহরণ ৩. অপনয়ন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + y = 8
3x - 2y = 5
দ্রষ্টব্য : প্রতিস্থাপন ও অপনয়ন পদ্ধতির পার্থক্য বুঝাতেই উদাহরণ ২ এর সমীকরণদ্বয়ই উদাহরণ ৩ এ নেয়া হলো।
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y = 8 ... (1)
3x - 2y = 5 ... (2)
সমীকরণ (1) এর উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করে, 4x + 2y = 16 ... (3)
সমীকরণ (2) ও (3) যোগ করে পাই,
7x = 21
বা, x = 3
x এর মান সমীকরণ (1) এ বসিয়ে পাই,
2 × 3 + y = 8
বা, y = 8 – 6
বা, y = 2
সমাধান (x, y) = (3, 2)
অপনয়ন পদ্ধতি (Elimination method) : সুবিধামত একটি সমীকরণকে বা উভয় সমীকরণকে এরূপ সংখ্যা দিয়ে গুণ করতে হবে যেন গুণনের পর উভয় সমীকরণের যেকোনো একটি চলকের সহগের পরমমান সমান হয়। এরপর প্রয়োজনমত সমীকরণ দুইটিকে যোগ বা বিয়োগ করলে সহ সমানকৃত চলকটি অপনীত বা অপসারিত হয়। তারপর সমীকরণটি সমাধান করলে বিদ্যমান চলকটির মান পাওয়া যায়। ঐ মান সুবিধামত প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের যেকোনোটিতে বসালে অপর চলকটির মান পাওয়া যায়।
আড়গুণন পদ্ধতি (Cross multiplication method) :
আড়গুণন পদ্ধতিকে বজ্রগুণন পদ্ধতিও বলে।
নিচের সমীকরণ দুইটি বিবেচনা করি :
সমীকরণ (1) কে b2 দিয়ে ও সমীকরণ (2) কে দিয়ে গুণ করে পাই,
সমীকরণ (3) থেকে সমীকরণ (4) বিয়োগ করে পাই,
আবার, সমীকরণ (1) কে দিয়ে ও সমীকরণ (2) কে দিয়ে গুণ করে পাই,
সমীকরণ (6) থেকে সমীকরণ (7) বিয়োগ করে পাই,
সমীকরণ (5) ও (8) থেকে পাই,
x ও y এর এরূপ সম্পর্ক থেকে এদের মান নির্ণয়ের কৌশলকে আড়গুণন পদ্ধতি বলে।
x ও y এর উল্লেখিত সম্পর্ক থেকে পাই,
লক্ষ করি :
দ্রষ্টব্য : প্রদত্ত উভয় সমীকরণের ধ্রুবক পদ ডানপক্ষে রেখেও আড়গুণন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে চিহ্নের কিছু পরিবর্তন হবে। কিন্তু সমাধান একই পাওয়া যাবে।
উদাহরণ ৪. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
6x – y = 1
3x + 2y = 13
সমাধান : পক্ষান্তর প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের ডানপক্ষ 0 (শূন্য) করে পাই,
6x – y – 1 = 0
3x + 2y – 13 = 0
সমীকরণদ্বয়কে যথাক্রমে
এর সাথে তুলনা করে পাই,
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
উদাহরণ ৫. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
3x - 4y = 0
2x - 3y = - 1
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
উদাহরণ ৬. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর :
সমাধান: প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়কে ax + by + c = 0 আকারে সাজিয়ে পাই,
সমীকরণদ্বয়
3x + 2y - 48 = 0
5x - 12y + 12 = 0
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
সমাধানের শুদ্ধি পরীক্ষা: প্রাপ্ত x ও y এর মান প্রদত্ত সমীকরণে বসিয়ে পাই,
সমাধান শুদ্ধ হয়েছে।
উদাহরণ ৭. আড়গুণন পদ্ধতিতে সমাধান কর : ax - by = ab = bx - ay
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়,
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
লৈখিক পদ্ধতি (Graphical Method)
দুই চলকবিশিষ্ট একটি সরল সমীকরণে বিদ্যমান চলক x ও y এর সম্পর্ককে চিত্রের সাহায্যে প্ৰকাশ করা যায়। এই চিত্রকে ঐ সম্পর্কের লেখচিত্র বলে। এ জাতীয় সমীকরণের লেখচিত্রে অসংখ্য বিন্দু থাকে। এরূপ কয়েকটি বিন্দু স্থাপন করে এদের পরস্পর সংযুক্ত করলেই লেখচিত্র পাওয়া যায়।
সরল সহসমীকরণের প্রত্যেকটির অসংখ্য সমাধান রয়েছে। প্রত্যেকটি সমীকরণের লেখ একটি সরলরেখা। সরলরেখাটির প্রত্যেকটি বিন্দুর স্থানাঙ্ক সমীকরণটিকে সিদ্ধ করে। কোনো লেখ নির্দিষ্ট করতে তিন বা ততোধিক বিন্দু আবশ্যক। এখন আমরা নিচের সমীকরণজোটটি সমাধান করার চেষ্টা করবো :
2x + y = 3 … (1)
4x + 2y = 6 ... (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, y=3-2x ।
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
x | -1 | 0 | 3 |
---|---|---|---|
y | 5 | 3 | -3 |
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, 5), (0, 3) ও (3, − 3 ) ।
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপে মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
x | -2 | 0 | 6 |
---|---|---|---|
y | 7 | 3 | -9 |
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (−2, 7), (0, 3 ) ও ( 6, 9 )।
মনে করি, ছক কাগজে XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও Y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু।
ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গক্ষেত্রের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, 5), (0, 3) ও (3, − 3) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
আবার, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (−2, 7), (0, 3) ও (6, – 9 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
তবে লক্ষ করি, সরলরেখা দুইটি পরস্পরের উপর সমাপতিত হয়ে একটি সরলরেখায় পরিণত হয়েছে। আবার, সমীকরণ (2) এর উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করলে সমীকরণ (1) পাওয়া যায়। এ কারণে সমীকরণদ্বয়ের লেখ পরস্পর সমাপতিত হয়েছে।
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, – 6), (0, – 4), ( 4, 4)।
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
4x – 2y = 12, বা, 2x – y = 6 [উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা ভাগ করে]
বা, y = 2x – 6
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (0, – 6), (3,0), (6, 6) ।
মনে করি, ছক কাগজে XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গক্ষেত্রের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরে সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, – 6), (0, – 4 ) ও ( 4, 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
আবার, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (0, – 6), (3,0), (6, 6) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
চিত্রে লক্ষ করি, প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়ের পৃথকভাবে প্রত্যেকটির অসংখ্য সমাধান থাকলেও জোট হিসেবে এদের সাধারণ সমাধান নেই। আরও লক্ষ করি যে, প্রদত্ত সমীকরণ দুইটির লেখচিত্র দুইটি পরস্পর সমান্তরাল সরলরেখা। অর্থাৎ, রেখা দুইটি কখনো একে অপরকে ছেদ করবে না। অতএব, এদের কোনো সাধারণ ছেদ বিন্দু পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলি যে, এরূপ সমীকরণজোটের কোনো সমাধান নেই। আমরা জানি, এরূপ সমীকরণজোট অসমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল।
আমরা এখন লেখচিত্রের সাহায্যে সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সমীকরণজোট সমাধান করবো।
দুই চলকবিশিষ্ট দুইটি সমঞ্জস ও পরস্পর অনির্ভরশীল সরল সমীকরণের লেখ একটি বিন্দুতে ছেদ করে। ঐ ছেদ বিন্দুর স্থানাঙ্ক দ্বারা উভয় সমীকরণ সিদ্ধ হবে। ছেদবিন্দুটির স্থানাঙ্কই হবে সমীকরণদ্বয়ের সমাধান।
উদাহরণ ৮. সমাধান কর ও সমাধান লেখচিত্রে দেখাও :
2x + y = 8
3x - 2y – 5
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + y – 8 = 0 ... (1)
3x - 2y 5 = 0 ...(2)
আড়গুণন পদ্ধতিতে পাই,
সমাধান : (x, y) = (3, 2)
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি দুই বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরে (3,2) বিন্দুটি স্থাপন করি।
উদাহরণ ৯. লেখচিত্রের সাহায্যে সমাধান কর :
3x - y = 3
5x + y = 21
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
3x – y = 3 . . . (1)
5x + y = 21 . . . (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, 3x - y = 3, বা, y = 3x - 3
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (–1, – 6), (0, – 3), (3, 6)
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই, 5x + y = 21, বা, y = 21 – 52
সমীকরণটিতে x এর কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (3, 6), ( 4, 1), (5, – 4) ।
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু। ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন ছক কাগজে সমীকরণ (1) হতে প্রাপ্ত (–1, – 6), (0, – 3), ( 3, 6 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। লেখটি একটি সরলরেখা।
একইভাবে, সমীকরণ (2) হতে প্রাপ্ত (3, 6), ( 4, 1 ), ( 5, – 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও এদের পরস্পর সংযুক্ত করি। এক্ষেত্রেও লেখটি একটি সরলরেখা।
মনে করি, সরলরেখাদ্বয় পরস্পর P বিন্দুতে ছেদ করেছে। চিত্র থেকে দেখা যায়, P বিন্দুর স্থানাঙ্ক (3, 6)
সমাধান: (x, y) = ( 3, 6)
উদাহরণ ১০. লৈখিক পদ্ধতিতে সমাধান কর :
2x + 5y = −14
4x – 5y = 17
সমাধান : প্রদত্ত সমীকরণদ্বয়
2x + 5y = - 14 . . . (1)
4x - 5y = 17. . . (2)
সমীকরণটিতে x এর সুবিধামত কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটিতে x এর সুবিধামত কয়েকটি মান নিয়ে y এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
আবার, সমীকরণ (2) এ x-এর কয়েকটি মান নিয়ে y-এর অনুরূপ মান বের করি ও নিম্নের ছকটি তৈরি করি :
সমীকরণটির লেখের উপর তিনটি বিন্দু (1, 4), (2, 0 ), ( 3, –4)
মনে করি, XOX' ও YOY' যথাক্রমে x-অক্ষ ও y-অক্ষ এবং O মূলবিন্দু৷ ছক কাগজের উভয় অক্ষ বরাবর ক্ষুদ্রতম বর্গের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরি। এখন, ছক কাগজে সমীকরণ (1) থেকে প্রাপ্ত (−2, 6), (0, 3), (2, 0 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করি ও বিন্দুগুলো পরপর সংযুক্ত করি। তাহলে, লেখটি হবে একটি সরলরেখা।
একইভাবে, সমীকরণ (2) থেকে প্রাপ্ত (1, 4), (2, 0), (3, – 4 ) বিন্দুগুলো স্থাপন করে এগুলো পরপর সংযুক্ত করি। তাহলে, লেখটি হবে একটি সরলরেখা।
মনে করি, সরলরেখাদ্বয় পরস্পর P বিন্দুতে ছেদ করে। চিত্রে দেখা যায়, P ছেদবিন্দুটির স্থানাঙ্ক (2, 0) I
সমাধান : x = 2
কাজ : 2x - y - 3 = 0 সমীকরণের লেখের উপর ছকের মাধ্যমে চারটি বিন্দু নির্ণয় কর। = অত:পর ছক কাগজে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের একক নিয়ে বিন্দুগুলো স্থাপন কর ও এদের পরস্পর সংযুক্ত কর। লেখটি কি সরলরেখা হয়েছে? |
দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু গাণিতিক সমস্যা আছে যা সমীকরণ গঠনের মাধ্যমে সমাধান করা সহজতর হয়। এ জন্য সমস্যার শর্ত বা শর্তাবলি থেকে দুইটি অজ্ঞাত রাশির জন্য দুইটি গাণিতিক প্রতীক, প্রধানত চলক x, y ধরা হয়। অজ্ঞাত রাশি দুইটির মান নির্ণয়ের জন্য দুইটি সমীকরণ গঠন করতে হয়। গঠিত সমীকরণদ্বয় সমাধান করলেই অজ্ঞাত রাশি দুইটির মান পাওয়া যায়।
উদাহরণ ১২. দুই অঙ্কবিশিষ্ট কোনো সংখ্যার অঙ্কদ্বয়ের সমষ্টির সাথে 5 যোগ করলে যোগফল হবে সংখ্যাটির দশক স্থানীয় অঙ্কের তিনগুণ। আর সংখ্যাটির অঙ্কদ্বয় স্থান বিনিময় করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, তা মূল সংখ্যাটি থেকে 9 কম হবে। সংখ্যাটি নির্ণয় কর।
সমাধান : মনে করি, নির্ণেয় সংখ্যাটির দশক স্থানীয় অঙ্ক x এবং একক স্থানীয় অঙ্ক y। অতএব, সংখ্যাটি 10x + y ।
১ম শর্তানুসারে, x + y + 5 = 3x . . . (1)
এবং ২য় শর্তানুসারে, 10y + x = (10x + y) – 9 . . . (2)
সমীকরণ (1) থেকে পাই, y - 3x - x – 5, বা, y = 2x – 5 . . . (3)
আবার, সমীকরণ (2) থেকে পাই,
10y – y + x - 10x + 9 = 0
বা, 9y – 9x + 9 = 0
বা, y − x + 1 = 0
বা, 2x – 5 – x + 1 = 0 [(3) হতে y এর মান বসিয়ে পাই]
বা, x = 4
(3) এ x এর মান বসিয়ে পাই, y = 2 × 4 – 5 = 8 – 5 = 3
নির্ণেয় সংখ্যাটি হবে 10x + y 10 × 4 + 3 = 40 + 3 = 43
উদাহরণ ১৩. আট বছর পূর্বে পিতার বয়স পুত্রের বয়সের আটগুণ ছিল। দশ বছর পর পিতার বয়স পুত্রের বয়সের দ্বিগুণ হবে। বর্তমানে কার বয়স কত?
সমাধান : মনে করি, বর্তমানে পিতার বয়স x বছর ও পুত্রের বয়স y বছর।
বর্তমানে পিতার বয়স 32 বছর ও পুত্রের বয়স 11 বছর।
উদাহরণ ১৪. একটি আয়তাকার বাগানের প্রস্থের দ্বিগুণ, দৈর্ঘ্য অপেক্ষা 10 মিটার বেশি এবং বাগানটির পরিসীমা 100 মিটার। বাগানটির সীমানার বাইরে চারদিকে 2 মিটার চওড়া রাস্তা আছে। রাস্তাটি ইট দিয়ে তৈরি করতে প্রতি বর্গ মিটারে 110 টাকা খরচ হয়।
ক) বাগানটির দৈর্ঘ্য x মিটার ও প্রস্থ y মিটার ধরে সমীকরণজোট গঠন কর।
খ) বাগানটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ণয় কর।
গ) রাস্তাটি ইট দিয়ে তৈরি করতে মোট কত খরচ হবে?
সমাধান :
ক)
আয়তাকার বাগানটির দৈর্ঘ্য x মিটার ও প্রস্থ y মিটার।
১ম শর্তানুসারে, 2y = x + 10 (1)
এবং ২য় শর্তানুসারে, 2(x + y) = 100 . . . (2)
খ) সমীকরণ (2) হতে পাই, 2x + 2y = 100
বা, 2x + x + 10 100 [(1) হতে 2y এর মান বসিয়ে]
বা, 3x = 90
বা, x = 30
(1) হতে পাই, 2y = 30 + 10 [x এর মান বসিয়ে]
বা, 2y = 40
বা, y = 20
বাগানটির দৈর্ঘ্য 30 মিটার ও প্রস্থ 20 মিটার।
গ)
রাস্তাসহ বাগানের দৈর্ঘ্য = (30+ 4) মি. = 34 মি. এবং রাস্তাসহ বাগানের প্রস্থ = (20 + 4) মি. = 24 মি.
রাস্তার ক্ষেত্রফল = রাস্তাসহ বাগানের ক্ষেত্রফল - বাগানের ক্ষেত্রফল
= (34 × 24 - 30 × 20) বর্গমিটার।
= (816 – 600) বর্গমিটার।
= 216 বর্গমিটার।
ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করার খরচ = (216 × 110) টাকা = 23760 টাকা
উদাহরণ ১৫. ঘড়ির ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটা কতবার একটির উপরে আরেকটি বসে? সময়গুলো নির্ণয় কর।
সমাধান: মনে করি, টা y মিনিটে ঘণ্টা ও মিনিটের কাঁটা একটি আরেকটির উপরে বসে। মনে রাখতে হবে x (সুবিধার্থে x 0,1, . . . 11 যেখানে 0 প্রকৃতপক্ষে 12 বোঝাবে) পূর্ণসংখ্যা হলেও y কিন্তু পূর্ণসংখ্যা নাও হতে পারে। আমরা জানি মিনিটের কাঁটা ঘণ্টার কাঁটার তুলনায় 12 গুণ বেশি দ্রুত চলে। x টার সময় ঘণ্টার কাঁটা ঠিক x লেখার উপরে এবং মিনিটের কাঁটা 12 এর উপরে ছিল। মিনিটে ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটা y ঘর অতিক্রম করবে। তাই
প্রথম ও শেষ সময় দুইটি একই সময় বলে কাঁটা দুইটি 11 বার মিলিত হবে এবং সময়গুলো হলো x টা মিনিট।