Subject Content

ADDED

কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষ একত্রিত হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকে মানব বসতি বলে। প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে উপযোগী করে চলার এটাই প্রথম অবস্থা। পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অভিযোজনের প্রথম পদক্ষেপ হলো বসতি স্থাপন। মানুষ প্রাকৃতিক অনুকূল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার ... ন্য মানব বসতি গড়ে তোলে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক ভিন্নতার জন্য বিভিন্ন ধরনের বসতি গড়ে উঠেছে, যেমন- যে দেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের এস্কিমোরা বরফের ঘরে এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামীণ বসতিতে দোচালা ও চৌচালা ধরনের ঘরে বাস করতে দেখা যায়। আর বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বসতিতে আধুনিক নকশা ও নির্মাণসামগ্রী প্রয়োগ করে উচ্চ অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রামীণ ও শহর উভয় স্থানে বসতি বৃদ্ধির হার বেড়েই চলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশ দূষণ ব্যাপকভাবে হচ্ছে।


ADDED

মানুষের প্রাত্যহিক চাহিদা মেটানোর জন্য সম্পদ প্রয়োজন এবং এটি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সম্পদের ব্যবহারের ভিঞ্চিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ ভৌগোলিকভাবে কোন কোন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যাবলির সঙ্গে জড়িত তা জানা যাবে। আর এ থেকে জানা যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ কী ধরনের অর্থনৈতিক কর্ম... ার্ডের সঙ্গে জড়িত ाচ্ছে। ान ওঠা কোন কোন নিয়ামকের উপর নির্ভর করে এবং বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা কেন হয়, তা আমরা জানতে পারব।


ADDED

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কর্কটক্রান্তি রেখা এ দেশের মধ্যভাগ দিরে অতিক্রম করেছে। এখানকার বিভিন্ন ধরনের ভূপ্রকৃতি, অনেক নদ-নদী, বঙ্গোপসাগরের অবস্থান এবং ঋতুভিত্তিক পরিবর্তিত জলবায়ু নানান বৈচিত্র্য আনয়ন করেছে।

বাংলাদেশের অবস্থানঃ ... /strong>এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশ ২০° ৩৪' উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে এবং ৮৮°০১′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে ১২°৪১′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে।

আয়তন (Area) : বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমানা চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই দু'দেশের মধ্যে পারস্পরিক ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের মোট ভূখন্ডে ১০,০৪১.২৫ একর জমি যোগ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১৯৯৬-৯৭ সালের তথ্য অনুসারে দেখা যায়, বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন ৯,৪০৫ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চলের আয়তন ২১,৬৫৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে উপকূল অঞ্চলে বিশাল এলাকা ক্রমান্বয়ে জেগে উঠেছে। ভবিষ্যতে দক্ষিণ অংশের প্রসার ঘটলে বাংলাদেশের আয়তন আরও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের টেরিটোরিয়াল সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল, অর্থনৈতিক একান্ত অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল এবং সামুদ্রিক মালিকানা মহীসোপানের শেষ সীমানা পর্যন্ত ।

  মিয়ানমার ও ভারতের দাবিকৃত সমদূরত্ব পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাতে বাংলাদেশ পেত ৫০,০০০ বর্গকিলোমিটারের কম জলসীমা। বঙ্গোপসাগরের জলসীমা নির্ধারণ ও সমুদ্র | সম্পদের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ১৪ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে মিয়ানমারের বিপক্ষে জার্মানির হামবুর্গে | অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক ট্রাইব্যুনালে এবং ভারতের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত সালিশ ট্রাইব্যুনালে মামলা | দায়ের করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গত ১৪ই মার্চ, ২০১২ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মামলায় আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশের ন্যায্যভিত্তিক দাবির পক্ষে ঐতিহাসিক রায় পায়। এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ প্রায় এক লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি জলসীমা পেয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপকে উপকূলীয় বেজলাইন ধরে ১২ নটিক্যাল মাইল রাষ্ট্রাধীন | সমুদ্র এলাকা (Territorial sea) এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল বা একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive economic zone) পেয়েছে। প্রাপ্ত এই জলরাশি ও তলদেশে এবং তার বাইরে মহীসোপান এলাকার সকল খনিজ সম্পদে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। এই হিসেবে উপকূল থেকে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সাগরের তলদেশে বাংলাদেশের মহীসোপান রয়েছে (১ নটিক্যাল মাইল = ১.৮৫২ কিলোমিটার)। অর্থাৎ বাংলাদেশের | উপকূলীয় ভূখণ্ড সমুদ্রে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে, যার ভৌগোলিক নাম মহীসোপান ।

সীমা : বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও আসাম রাজ্য; পূর্বে আসাম, ত্রিপুরা, মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানমার; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বমোট সীমারেখা ৪,৭১১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের সীমারেখার দৈর্ঘ্য ৩,৭১৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমারেখার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তটরেখার দৈর্ঘ্য ৭১৬ কিলোমিটার (চিত্র ১০.১)। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা নদী এবং দক্ষিণ- পূর্বে নাফ নদী ভারত ও মিয়ানমারের সীমানায় অবস্থিত।

কাজ : নিচের ছকটি জোড়া দলে পূরণ কর।

 বাংলাদেশের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত

অবস্থান কত?

বাংলাদেশের আয়তন কত?

অর্থনৈতিক একান্ত অঞ্চলের ব্যাপ্তি কত?

টেরিটোরিয়াল সমুদ্রসীমার ব্যাপ্তি কত?   বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক সঙ্গে মালিকানা বাংলাদেশের  তটরেখার দৈর্ঘ্য কত?
 
 সামুদ্রিক মালিকানা মহীসোপানের কোন অংশ পর্যন্ত 

 

         

 


ADDED

একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নর নির্ভর করে সম্পদ ও শিল্পের উপর। প্রাকৃতিক সম্পদকে সরাসরি অথবা অন্যান্য সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে ব্যবহার করা হয়। কৃষিজ ও বনজ সম্পদ, জি, প্রাকৃতিক গ্যাস, করলা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ দেশে নিজের গুরু... ্ব অপরিসীম। পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট  অবদান রাখছে ।


ADDED

যোগাযোগ ব্যবস্থা যাত্রী- পণ্য পরিবহণ করে অভ্যন্ত্রীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থনীতিতে কার্যকরী অবদান রাখে। দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে কাঁচামাল ও লোকজনের নিয়মিত চলাচল, উৎপাদিত দ্রব্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ, উৎপাদনের উপকরণসমূহের গতিশীলতা বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনয়ন প্রভৃতি ক্ষ... ত্রে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে থাকে। এই যোগ ব্যবস্থা প্রতাশিত করে বাণিজ্যকে। বাণিজ্য দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কৃষি  শিল্প প্রভৃতির ভারসাম্য আনে ।


ADDED

প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিটি উপাদান একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ, ক্ষুদ্রজীব, প্রাণী ও মানুষ প্রত্যেকে পরিবেশের একটি সহনশীল অবস্থায় বসবাস করে। তার পরিবেশের সহনশীল অবস্থার পরিবর্তন হলে এই নির্ভরশীলতা ব্যাহত হয়। যে কোনো দেশের জন্য উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন নির্ভর করে অর্থনৈতিক কার্... াবলির উপর। যা আমাদের দেশে এখনও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সবকিছুই করতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। টেকসই ও উন্নয়ন পরিবেশ সমন্বিত করে গড়ে তুলতে হবে।


ADDED

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছরই আমাদের জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতিসাধন করে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এসব দুর্যোগের অন্যতম কারণ।

দুর্যোগ ও বিপর্যয় (Disaster and Hazard )

... p>আমাদের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিপর্যয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। দুর্যোগ হচ্ছে এরূপ ঘটনা, যা সমাজের স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রচণ্ডভাবে বিঘ্ন ঘটায় এবং জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ক্ষতিগ্রস্ত সমাজের পক্ষে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এই ক্ষতি মোকাবিলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। দুর্যোগ কোনো স্থানের জনবসতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে ঐ জনবসতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। এর জন্য বাইরের সাহায্য বা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বিপর্যয় বলতে বোঝানো হয়েছে কোনো এক আকস্মিক ও চরম প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট ঘটনাকে। এই ঘটনা জীবন, সম্পদ ইত্যাদির উপর প্রতিকূলভাবে আঘাত করে।


ADDED

আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ গঠিত হওয়ার পর থেকে এর উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে সংস্থাটি অনেক সাফল্য লাভ করেছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে সকলের সম্ভাবনা, মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করতে জাতিসং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের সমন্বয়ে 'টেকসই উন্নয়ন অতীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে জাতিসংঘ... কাজ করে যাচ্ছে। পূর্ববর্তী শ্রেণিতে আমরা এসডিজি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। জাতিসংঘ নির্ধারিত এসডিজি অর্জনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশও সমান ভালে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ কাজ খুব সহজ নয়। এ কাজে সরকার ও জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ অধ্যায়ে এসডিজি অর্জনে অংশীদারিত্বের গুরুত্ব, এসডিজি অর্জনের ফলাফল, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানব।

  • টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পোস্টার ডিজাইন করতে পারব;
  •  টেকসই উন্নয়ন অতীষ্ট বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হব ।

ADDED

মানুষ প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে অভিগমন করে। বাংলাদেশের বহু মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গমন করেছে। একটু ভেবে দেখ কেন করেছে ?
যে সমস্ত কারণ নতুন কোনো স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত বা প্ররোচিত করে সেগুলোকে গন্তব্যস্থলের টান বা আকর্ষণমূলক কারণ (Pull factors) বলে... যে সমস্ত কারণে মানুষকে পুরাতন বাসস্থান পরিত্যাগ করে অন্যস্থানে যেতে বাধ্য করা হয় সেগুলোকে উৎসস্থলের ধাক্কা বা বিকর্ষণমূলক কারণ (Push factors) বলে। তাহলে, অভিগমনের কারণগুলো হলো :
আকর্ষণমূলক কারণ

(১) আত্মীয়স্বজন ও নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের নৈকট্য লাভ
(২) কর্মস্থান ও অধিকতর আর্থিক সুযোগ সুবিধা
(৩) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহ-সংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তাগত সুবিধা (৪) বিশেষ দক্ষতার চাহিদা ও বাজারের সুবিধা
(৫) বিবাহ ও সম্পত্তি প্রাপ্তিমূলক ব্যক্তিগত সুবিধা

বিকর্ষণমূলক কারণ
(১) প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি
(২) জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা
(৩) সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য
(৪) অর্থনৈতিক মন্দা
(৫) ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমাগত ক্ষয়ক্ষতি

অভিবাসনের সুফল ও কুফল (Merits and demerits of migration)

অভিবাসনের স্বাভাবিক ফলাফল হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন বা অবস্থানিক পরিবর্তন। বস্তুত বিশ্বের জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্য আনয়নের ক্ষেত্রে অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ। অবস্থানগত পরিবর্তন ছাড়াও অভিবাসনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জনবৈশিষ্ট্যগত যে পরিবর্তন হতে পারে তা আলোচনা করা হলো :

১। অর্থনৈতিক ফলাফল (Economic impact) : অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্যই মানুষ অভিবাসনে আগ্রহী হয়। উৎস ও গন্তব্যস্থলে ভূমি ও সম্পত্তির শরিকানা, মজুরির হার, বেকারত্ব, জীবনযাত্রার মান, বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্য, অর্থনৈতিক উৎপাদন ও উন্নয়ন ধারা প্রভৃতির পরিবর্তন হতে পারে। স্বল্পশিক্ষিত লোক সঠিক পদ্ধতিতে যদি অভিগমন না করে তবে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে কোথায় গমন করছি সে স্থানে যেয়ে কী করব তার যথার্থতা যাচাই করে অন্যত্র গমন করতে হবে। লোক মুখে শুনে প্ররোচিত হয়ে গমন করলে অন্যদেশের আইন দ্বারা সে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে নিজের ও দেশের অর্থনৈতিক কোনো লাভ না হয়ে ক্ষতি হয়। আবার বলপূর্বক অভিবাসন উদ্বাস্তুদের অর্থনৈতিক সুবিধার চেয়ে দুর্ভোগই বেশি হয়।
২। সামাজিক ফলাফল ( Social impact) : অভিবাসনের ফলে সামাজিক, আচার আচরণের আদান- প্রদান হয়। সামাজিক অনেক রীতিনীতি একদেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণির জনগণের মধ্যে ভাব, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান হয়। ফলে জনগণের গুণগত পরিবর্তন সম্ভব হবে। গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে পার্থক্য কমে আসে। তবে অধিকভাবে অন্য কালচার রপ্ত করার কারণে নিজের দেশের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ হয় ।
৩। জনবৈশিষ্ট্যগত ফলাফল (Impact on population) : অভিবাসনের ফলে উৎসস্থলে জনসংখ্যা কমে এবং গন্তব্যস্থলের মোট জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। শিক্ষিত, যুবক ও পেশাজীবী অভিবাসন করলে গন্তব্যস্থলে জনসংখ্যার কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। এর ফলে উভয় স্থানের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাত ও নির্ভরশীলতার অনুপাত ব্যাপক পরিবর্তিত হয়। অনেক সময় শিক্ষিত ও মেধাবী শ্রেণির লোক অভিগমন করে আর দেশে ফিরে আসে না এতে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক দেশে জনসংখ্যা কম থাকায় তারা অন্যদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে জনসংখ্যার ভারসাম্য আনে, এতে তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন— অস্ট্রেলিয়া, কুয়েত। উন্নয়নশীল দেশসমূহ যেমন- বাংলাদেশ শ্রম বাজারে জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।

সরকারি নীতি (Government Policy) : ২০১২ সালের জনসংখ্যা নীতি রূপরেখায় মা ও শিশুর উন্নত স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ এবং উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। পরিবারের আকার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমকে সার্বিক সামাজিক পুনর্গঠন ও জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অত্যাবশ্যক উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের করণীয়

অধিক জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য জনসংখ্যার পরিমাণ ও বৃদ্ধির হার হ্রাস করার জন্য কিছু নীতি গ্রহণ করতে হয়। কোনো দেশের জনসংখ্যা সংকোচন প্রধানত দুইভাবে কার্যকর করা যেতে পারে ।

১। জন্মহার হ্রাস
২। উদ্বাস্তু আগমন বন্ধ অথবা বহির্গমন বৃদ্ধি

প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত কোনো দেশের জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব নয়। সামাজিক- অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে কোনো দেশের জন্মহার স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যাপক প্রচার ও জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রীসমূহ জনসাধারণের নিকট সহজলভ্য করা প্রয়োজন। সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর বিলি-বণ্টনের সুষ্ঠু নীতি গ্রহণ করা ছাড়া অন্যান্য আরও কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

১। আইন করে বিবাহের বয়স বৃদ্ধি করা।
২। সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার জন্য জনগণের উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশে বিভিন্ন প্রকার আইন প্রণয়ন করা
৩। সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৪। মহিলাদের জন্য অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ।
৫। বৃদ্ধ বয়স, সংকট ও দুর্দশার সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা

অর্থনৈতিক কারণে কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত বিদেশি লোক নিয়োগ করে কোনো দেশ তার জনশক্তির অভাব সাময়িকভাবে পূরণ করতে পারে। এছাড়া মৃত্যুহার হ্রাস করে এবং জন্মহার বৃদ্ধি করে জনসংখ্যার সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়।


ADDED

জনসংখ্যা ঘনত্ব (Population density) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা এবং মোট ভূমির পরিমাণ বা
লায়তনের যে অনুপাত (Ratio) তা জনবসতির ঘনত্ব। পৃথিবীর এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনবসতির
ঘনত্ব জানতে হলে মোট জনসংখ্যা ও দেশের আয়তন জানতে হবে।

জনসংখ্যা ঘনত্ব= মোট জনসংখ্যা ...  মোট ভূমির আয়তন

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪,৯৭,৭২,৩৬৪ জন এবং এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার

. জনসংখ্যা ঘনত্ব =১৪,৯৭,৭২,৩৬৪/১,৪৭,৫৭০
                           = ১,০১৫ জন (প্রতি বর্গকিলোমিটার)
উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় আয়তন বড় হলে তার জনসংখ্যা ঘনত্ব কমে আসে আবার ঘনত্ব বেশি হলে তা ভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করে (চিত্র ৭.৩)।

মানুষ- ভূমি অনুপাত (Man land ratio) : যে সকল তুমি মানুষের কাজে লাগে এবং সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে, তাকে কার্যকর ভূমি বলে। মানুষ ভূমি অনুপাত বলতে এই কার্যকর ভূমির অনুপাতকে ধরা হয়।

মানুষ-ভূমি অনুপাত =মোট জনসংখ্যা /মোট কার্যকর ভূমির আয়তন

প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশের ভূমির উপর জনসংখ্যার চাপ কী রকম তা জানতে হলে সেই দেশের জনসংখ্যা ঘনত্বের পরিবর্তে মানুষ-ভূমি অনুপাত কত তা জানা প্রয়োজন ।
কাম্য জনসংখ্যা (Optimum population) : কোনো দেশের মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির অনুপাতে ভারসাম্য থাকলেই তাকে কাম্য জনসংখ্যা বলে। ঐ দেশের উৎপন্ন সম্পদের দ্বারা জনগণের ভোগ-সুখের বন্দোবস্ত যতক্ষণ বজায় রাখা যায়, ততক্ষণই সেই দেশের কাম্য জনসংখ্যা বিদ্যমান। মোট জনসংখ্যা ও কার্যকর ভূমির আদর্শ অনুপাতের ভারসাম্য যখন নষ্ট হয় তখনই কোথাও অতি-জনাকীর্ণতা আবার কোথাও জনসংখ্যা স্বল্পতা দেখা দেয়।

অতি-জনাকীর্ণতা (Over population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ অল্প থাকলে তাকে অতি- জনাকীর্ণতা বলে। এর ফলে মোট উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ, তথা মাথাপিছু উৎপাদিত সম্পদের পরিমাণ অল্প হয়। যা মাথাপিছু উৎপাদন ও ভোগের পরিমাণ হ্রাস করে।

জনস্বল্পতা (Under population) : জনসংখ্যার তুলনায় কার্যকর ভূমির পরিমাণ বেশি থাকলেও জনসংখ্যার
স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত সম্পদ এবং ভূমি ব্যবহার না করা গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই অবস্থাকে
জনস্বল্পতা বলে। যেমন— অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে ভূমির তুলনায় জনসংখ্যা কম।

জনসংখ্যা বণ্টন (Population distribution) : জনসংখ্যা ঘনত্ব বা আকারগত তারতম্য থেকে তোমরা এটা সহজেই বুঝতে পারছ যে ভূপৃষ্ঠে জনসংখ্যা সমভাবে বিস্তৃত নয়। স্থানভেদে জনসংখ্যার অবস্থানগত বিস্তৃতি বা বিন্যাস হচ্ছে জনসংখ্যা বণ্টন। কোথাও মানুষের বিপুল ঘন সমাবেশ। আবার কোথাও জনমানবহীন। ভূপৃষ্ঠের ৫০-৬০ শতাংশের মতো এলাকায় মাত্র শতকরা প্রায় ৫ ভাগ লোকের বসতি। স্থলভাগের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ এলাকায় পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস।


জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক

তোমার নিজের দেশের কোনো অঞ্চলে জনসংখ্যা বেশি, কোথাও একদম কম। এ বিষয়ে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে কিছু প্রাকৃতিক, কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে যা জনসংখ্যা ঘনত্ব কম বা বেশি হতে সাহায্য করে। এই বিষয়গুলোকে আমরা জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বণ্টনের প্রভাবক বলছি। প্রথমত একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) প্রাকৃতিক প্রভাবক ও (২) অপ্রাকৃতিক প্রভাবক।

১। প্রাকৃতিক প্রভাবক (Physical factors)
ভূপ্রকৃতি : মানুষ স্বভাবতই সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষি ও শিল্প গড়ে তোলা যায় সেখানে বসবাস করতে চায়। তাই পৃথিবীর সমভূমি অঞ্চলে ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আবার পাহাড়ি জঙ্গলময় অঞ্চলে জীবন ধারণ অনেক কষ্ট ফলে ঐ সকল অঞ্চলে জনবসতি কম। আমাদের দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব খুবই কম।
জলবায়ু : জলবায়ুর প্রভাব জনবসতির বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর চেয়ে সমভাবাপন্ন জলবায়ুতে মানুষ বসবাস করতে পছন্দ করে।
মৃত্তিকা : মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য মানব বসতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। উর্বর মৃত্তিকা কৃষিকাজের উপযুক্ত
হওয়ায় এ সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। পানি : যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া যায় সেখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি হয়। এজন্য নদীর উপকূলবর্তী
অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।
খনিজ : খনিজ প্রাপ্তির উপরও জনসংখ্যা ঘনত্ব নির্ভর করে।

২। অপ্রাকৃতিক প্রভাবক (Non- physical factors)

সামাজিক : খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের জন্য যেখানে বেশি সুযোগ রয়েছে সে সকল অঞ্চলে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি হয়। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার মতো দেশসমূহে প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধা না থাকলেও সামাজিক সুবিধাবলি পাওয়ার জন্য অভিবাসনের মাধ্যমে জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক : শিক্ষা, সংস্কৃতি আজকের যুগে মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও
বিকাশের সুযোগ যেসব অঞ্চলে বেশি, সেসব অঞ্চলে জনবসতিও বেশি হয়।

অর্থনৈতিক : শিল্পাঞ্চলে, যেখানে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং যেসব অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায় সেখানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি। যেমন— জাপানের ওসাকা, ভারতের মুম্বাই প্রভৃতি স্থানে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেশি।