Blog

G-20 কী? জি-২০ এর ১৮ তম সম্মেলনের অর্জন

গ্রুপ অব টোয়েনটি ফিন্যানস মিনিস্টারস অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নরস (জ়ি-২০, জি২০, গ্রুপ অব টোয়েনটি) হল বিশ্বের ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট বা গ্রুপ। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক আর্থিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন সম্পর্কিত নীতি আলোচনার লক্ষ্য নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিধর দেশের সমন্বয়ে গঠিত ‘জি-২০ (গ্রুপ অব টুয়েন্টি (এ-২০) এর ১৮-তম সম্মেলন’। এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার অতিথি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। সম্মেলনের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিন্ন ভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেন। শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচার’ শীর্ষক দুটি বক্তৃতা প্রদান করেন।
‘ওয়ান আর্থ’ ও ‘ওয়ান ফ্যামিলি’ সেশনে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারির পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, খাদ্য ও সারের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা তুলে ধরেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের মেয়াদকালে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিশ্বনেতাদের কাছে উপস্থাপন করেন। একইসঙ্গে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটি বিভক্ত ভূরাজনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যে চাপা বৈশ্বিক সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতাদের এ শীর্ষ সম্মেলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৯-১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩  দুদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিনে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন সদস্য দেশগুলোর নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে চলমান সম্মেলনে এমন অসামান্য ঐকমত্য সবার জন্যই বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা মারাত্মক দুরূহ হয়ে উঠেছিল। এমন সময় এ ঐকমত্য বেশ গুরুত্ব বহন করে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বসুবৈব কুটুম্বকম’। সংস্কৃত এই শব্দ দুটির অর্থ ‘পুরো বিশ্ব, একটি পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। মানুষ, প্রাণি, উদ্ভিদ ও অণুজীবসহ সব জীবনের মূল্য, পৃথিবী ও বিস্তৃত গ্রহে তাদের আন্তঃসম্পর্ককে কেন্দ্র করে এজেন্ডাটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরি বলেন, জি-২০’র দিল্লি ঘোষণায় মোট ৭৩টি সমঝোতা এবং ৩৯টি সংযুক্ত নথি রয়েছে, যা আগের সম্মেলনগুলোর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। সম্মেলনে খাদ্য নিরাপত্তা, ঋণ সমস্যা ও জলবায়ু বিষয়ে নীতি সমন্বয় হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, সম্মেলনের জন্য জড়ো হওয়া সমস্ত দেশ বিশ্বজুড়ে শান্তি নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে তিনি ‘বিশ্বব্যাপী বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে খাদ্য ও সার সংকটে ফেলেছে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব আস্থা ও বিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগছে, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে।’ উদ্বোধনী দিনে আফ্রিকান ইউনিয়নকে জোটের স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। 
এ সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল টেকসই উন্নয়ন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষা, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং প্রবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বৈষম্য, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সম্মেলনে স্থান পায়। ১৯৯৭ সালে এশিয়ান আর্থিক সংকটের পটভূমিতে ১৯৯৯ সালে জি-২০ গঠিত হয়েছিল। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল এশিয়ার অনেক দেশ। এ সংকট শেষে ১৯৯৯ সালে বিশ্বের বড় ২০টি দেশ একটি অর্থনৈতিক জোট গড়ে তোলে। সেটিই মূলত জি-২০, যা একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম।

3 2.3k
No bio avaliable
Author’s Profile
thanks author