অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - খ্রিষ্টান ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

অষ্টম অধ্যায়

খ্রিষ্টমণ্ডলী

আমরা জানি যে, খ্রিষ্টমগুলী হলো খ্রিষ্টের দ্বারা স্থাপিত মণ্ডলী খ্রিষ্টকে কেন্দ্র করে খ্রিষ্টবিশ্বাসী ভক্তগণ একত্রে ভালোবাসার মিলন বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবন যাপন করে। খ্রিষ্টমণ্ডলী হলো খ্রিষ্টের সাথে মানুষের অন্তরঙ্গভাবে মিলনের প্রকাশ। এই অধ্যায়ে খ্রিষ্টের সাথে খ্রিষ্টমণ্ডলীর বিরাজমান घनষ্ঠ বা অন্তরঙ্গ সম্পর্কটি সম্পর্কে জানব। এ বিষয়ে জানার জন্য আমরা মানবদেহের মস্তক ও অন্যান্য অংশের তুলনার মাধ্যমে খ্রিষ্টের মস্তকের সাথে দেহের সম্পর্ক জানার চেষ্টা করব। আমরা কীভাবে এই মণ্ডলীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হয়ে উঠতে পারি তা নিয়েও আমরা আলোচনা করব ।

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা

খ্রিষ্টের দেহরূপ মণ্ডলীর বর্ণনা দিতে পারব;

• খ্রিষ্টমণ্ডলীর মস্তক হিসাবে খ্রিষ্টের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে পারব;

• খ্রিষ্টদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হিসাবে খ্রিষ্টভক্তদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারব;

মণ্ডলীর অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হব।

পাঠ ১ খ্রিষ্টমণ্ডলী একটি দেহ

আমাদের নিজ নিজ দেহ সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি জ্ঞান আছে। মানুষ হিসাবে আমাদের দেহ একটি ঈশ্বর কত সুন্দর করেই না আমাদের এই দেহকে সৃষ্টি করেছেন। যে অংশটি যেখানে থাকার কথা তা তিনি সেখানে সুন্দর করে স্থাপন করে দিয়েছেন। আমাদের এই দেহ একটি, কিন্তু এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক । সব অঙ্গই দেহের সাথে যুক্ত রয়েছে

কাজ : খ্রিষ্টমণ্ডলীকে বুঝানোর জন্য সবাই নিজ নিজ খাতায় একটি মানবদেহের ছবি অঙ্কন কর। তুমি মণ্ডলীর কোন অঙ্গটি হতে চাও এবং তা হয়ে কী কাজ করতে চাও তা লেখ ।

খ্রিষ্টের দেহ

খ্রিষ্টমণ্ডলী খ্রিষ্টেরই দেহ। যারা প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর সাথে সংযুক্ত হয় তারা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবেই তাঁর সাথে মিলিত হয়। যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তাদের দেহ-মন-আত্মায় খ্রিষ্টের জীবন সঞ্চারিত হয়। পবিত্র সংস্কারগুলোর দ্বারা খ্রিষ্টের যাতনাভোগ এবং মহিমার সঙ্গে খ্রিষ্টমণ্ডলীর অদৃশ্য অথচ বাস্তব সংযোগ ঘটে। দীক্ষায়ান সংস্কারের মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টমণ্ডলী খ্রিষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সহভাগী হয়। পবিত্র খ্রিষ্টপ্রসাদ সংস্কারের মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টমণ্ডলী খ্রিষ্টের দেহকে বাস্তবে খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

গ্রহণ করে । এর মধ্য দিয়ে খ্রিষ্টমন্ডলী খ্রিস্টের সাথে ও একে অপরের সাথে মিলন বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যীশু বলেছেন, যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে বাস করে আর আমি তার অন্তরে বাস করি

দেহরূপ খ্রিস্টের সাথে খ্রিস্টমণ্ডলীর এই একতা ভক্তদের অন্তরে ভ্রাতৃপ্রেম সৃষ্টি করে এবং এই প্রেমের বা একতার বন্ধনে জীবন যাপন করতে সবাইকে উদ্দীপিত করে। সাধু পল এই একতাকে মানবদেহের সাথে তুলনা করে বলেছেন আমাদের দেহ এক অথচ তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেক এবং দেহের অঙ্গগুলো অনেক হয়েও সবকটি মিলে এক দেহই হয়। তেমনি আমরা একই পবিত্র আত্মার শক্তিতে সকলেই দীক্ষাস্নাত হয়ে একই দেহের অঙ্গ হয়ে উঠেছি। তাই আমাদের উৎস এক। আমরা খ্রিষ্টের মধ্যে এক। সেই কারণে তিনি বলেছেন, "আমি যেমন তোমাদের অন্তরে রয়েছি, তেমনি তোমরা আমাতে থাক। আমি হলাম দ্রাক্ষালতা, তোমরা হলে শাখাপ্রশাখা” (যোহন ১৫:৪-৫)।

কাজ : মাথা দিয়ে আমরা যে সব কাজ করি দলে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর ও পরে প্রত্যেক দল থেকে একজন প্রতিবেদন পেশ কর। প্রতিবেদন থেকে যে কাজের নামগুলো উঠে আসবে সেগুলো একটি পোস্টারে লিখে ঝুলিয়ে রাখ ।

পাঠ ২। দেহের মস্তক খ্রিষ্ট

সব কিছুর মধ্যে একটি প্রধান বা প্রথম অংশ থাকে। তা সংখ্যার দিক থেকে হতে পারে। আবার গুরুত্ব বা ভূমিকার দিক থেকেও হতে পারে। একটি পরিবারের প্রধান বা কর্তা হলেন পিতা বা মাতা। পরিবারের প্রধান বা মস্তক হিসাবে তাঁর ভূমিকা অনেক। মানবদেহের প্রধান অংশ হলো মস্তক। মাথা মানবদেহের জন্য কত কাজ যে করে থাকে তা বলে শেষ করা যাবে না।

মণ্ডলীর মস্তক খ্রিষ্ট

যীশু খ্রিষ্ট হলেন মন্ডলীর মস্তকস্বরূপ। পিতার সাথে সংযুক্ত থেকে পিতার গৌরবে তিনি সব কিছুর শীর্ষে রয়েছেন। খ্রিষ্ট তাঁর নিস্তার রহস্যে আমাদেরকে একত্রিত করেন। এই কারণে আমরা তাঁর জীবন রহস্যে প্রবেশ করি। মন্তকরূপ খ্রিস্টের সাথে যুক্ত থাকার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁর কষ্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমরা তাঁর কষ্টের সহভাগী হয়েছি যেন তাঁর গৌরবেও গৌরবান্বিত হতে পারি।

খ্রিষ্ট হলেন মণ্ডলীর মত্তক

 

খ্রিষ্টমণ্ডলী

৭৫

মস্তকরূপ খ্রিষ্টের সাথে যুক্ত থাকার মধ্য দিয়ে আমরা বৃদ্ধি লাভ করি। সেই কারণে তিনি তাঁর দেহরূপ মণ্ডলীকে বিভিন্ন দান ও সহায়তা দিয়ে থাকেন। তাঁর সহায়তা লাভের মধ্য দিয়ে আমরা পরিত্রাণ লাভের পথে এগিয়ে যাই। একে অন্যের সাহায্য করে থাকি। এভাবে মস্তকরূপ খ্রিষ্ট ও দেহরূপ মণ্ডলী মিলে গড়ে তোলে পরিপূর্ণ খ্রিষ্টকে

কাজ : দলীয় আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসা মস্তকের কাজগুলোর সাথে মণ্ডলীর মস্তক খ্রিষ্টের একটি সম্পর্ক দেখাও ।

পাঠ ৩ : দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

মানবদেহে অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে। প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ ভিন্ন ভিন্ন। সাধু পল বলেন আমাদের দেহ কেবল মাত্র একটি অঙ্গ নিয়ে নয়। দেহের মধ্যে অনেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে। মানবদেহের এই বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর কাজও বিভিন্ন রকম। ঈশ্বর সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে এক জায়গায় বসিয়ে দেন নি। তাঁর পছন্দমতো অঙ্গগুলোকে বিভিন্ন উপযুক্ত ও ঠিক ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যেক অঙ্গের গুরুত্বের দিক দিয়েও একটি থেকে অন্যটি কম নয়। একটি অঙ্গ অন্য অঙ্গকে বলতে পারে না তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া একটি অঙ্গ ব্যথা পেলে সবাই কষ্ট ভোগ করে। অন্য দিকে একটি অঙ্গ যদি সমাদর বা আনন্দ পায় তাহলে অন্যগুলোও আনন্দে আনন্দিত হয় ।

কাজ : দেহের চোখ, কান, নাক, মুখ, হাত, পা ইত্যাদি দিয়ে আমরা কী কী কাজ করি দলে তার একটি তালিকা প্রস্তুত কর ও পরে প্রত্যেক দল থেকে একজন করে তার প্রতিবেদন পেশ কর। প্রতিবেদন থেকে যে কাজের নামগুলো উঠে আসবে সেগুলো একটা পোস্টারে লিখে শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে রাখ

মণ্ডলীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

মানবদেহের মতো খ্রিষ্টমণ্ডলী একটি দেহ এবং দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ন্যায় প্রত্যেক খ্রিষ্টভক্ত এক একটি অঙ্গ। সাধু পল বলেন, পরমেশ্বর মণ্ডলীতে যাদের বিশেষ পদে বসিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রথমে আছেন প্রেরিতদূতেরা, তারপর প্রবক্তারা, তারপর শিক্ষাগুরুরা; তারপর রয়েছেন তারাই যাদের তিনি দিয়েছেন অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা বা রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা কিংবা পরকে সাহায্য করার বিশেষ গুণ বা তাদের পরিচালনা করার বিশেষ ক্ষমতা অথবা নানা অজ্ঞাত ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা, অন্য কাউকে আবার সেই ভাষা বুঝিয়ে দেবার ক্ষমতা। সুতরাং দেখা যায়, ঈশ্বর মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন দান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি চান মানুষ যেন তাদের দানের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে ও দান অনুসারে কাজ করে। যাকে ঈশ্বর যে দান দিয়েছেন বা যাকে যে কাজের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন সেই কাজ প্রত্যেকেরই সুন্দরভাবে করতে হবে।

Content added || updated By