পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - মহানবি (স)-এর জীবনাদর্শ ও অন্যান্য নবিগণের পরিচয় | NCTB BOOK

মহানবি (স) দশম হিজরিতে হজ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এটা ছিল তাঁর জীবনের শেষ হজ। তিনি এরপর আর হজ করার সুযোগ পাননি। তাই একে বিদায় হজ বলে।

মহানবি (স) লক্ষাধিক সাহাবি নিয়ে হজ আদায় করেন। এই হজেই তিনি আরাফাত ময়দানে জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে এক মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন। এটিই ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত।

এই ভাষণে মহানবি (স) সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন। যেমন—

১. সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। 

২. আজকের এদিন, এস্থান, এমাস যেমন পবিত্র, তেমনি তোমাদের পরস্পরের জানমাল ও ইজ্জত-আবরু পরস্পরের নিকট পবিত্র । 

৩. অধীনস্থদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমরা যা খাবে, তাদেরও তা খাওয়াবে। তোমরা যা পরবে তাদেরও তাই পরাবে। 

৪. একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেবে না । 

৫. ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সর্বপ্রকার সুদ হারাম করা হলো। সকল সুদের পাওনা বাতিল করা হলো। 

৬. নারীর ওপর পুরুষের যেমন অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও তেমন অধিকার আছে। 

৭. জাহেলি যুগের সকল কুসংস্কার ও হত্যার প্রতিশোধ বাতিল করা হলো 

৮. আমানতের খিয়ানত করবে না, গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকবে। মনে রাখবে একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। 

৯. আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী (আল কুরআন) এবং তাঁর রাসুলের আদর্শ (হাদিস) রেখে যাচ্ছি,তোমরা এই দুইটি যতদিন আঁকড়ে থাকবে, ততোদিন তোমরা বিপথগামী হবে না।

তিনি আরও অনেক মূল্যবান কথা বললেন।

এরপর মহানবি (স) আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আল্লাহ! তোমার বাণীকে আমি যথাযথভাবে মানুষের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি?”

উপস্থিত লক্ষ জনতা সমস্বরে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।”

মহানবি (স) বললেন, “হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো । ”

এরপর অবতীর্ণ হলো “আমি আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম । ইসলামকে তোমাদের জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৩)

বিদায় হজ থেকে ফেরার পর মহানবি (স) অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে হিজরি একাদশ সালের ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল (স) ইন্তিকাল করেন।

মদিনা শরিফে মসজিদে নববির এক পাশে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। বিশ্বের মুসলমানগণ ভক্তিভরে নবির রওজা জিয়ারত করেন।

মহানবি (স) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মানুষ। ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, সততা, সত্যবাদিতা, দয়া, দানে, কাজে-কর্মে, আচার-আচরণে, মানবতা ও মহত্ত্বে তিনি ছিলেন সর্বকালের সকল মানুষের জন্য উত্তম আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

বাংলা উচ্চারণ: লাকাদ কানা লাকুম ফী রাসুলিল্লাহি উসওয়াতুন হাসানাতুন। অর্থ ‘রাসুলুল্লাহ (স)-এর জীবনে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে।' (সূরা আহযাব, আয়াত : ২১) আমরা মহানবি (স)-এর জীবনাদর্শ মেনে চলব ।

Content added By

Promotion