পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - মহানবি (স)-এর জীবনাদর্শ ও অন্যান্য নবিগণের পরিচয় | NCTB BOOK

মক্কার কাফির-মুশরিকরা চেয়েছিল ইসলাম ও মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে। মদিনায় ইসলামের উত্তরোত্তর উন্নতি দেখে তারা হিংসায় জ্বলে ওঠে। মদিনার ইহুদিরা তাদের প্ররোচিত করছিল। আবার আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার গুজব উঠেছিল।

কাফেররা মদিনা আক্রমণের জন্য রওয়ানা হলো। সংবাদ পেরে রাসুল (স) ৩১৩ জন সাহাবিসহ মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক স্থানে উপস্থিত হন । দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমযান (৬২৪ খ্রিস্টাব্দ) বদর প্রান্তরে দুই পক্ষ পরস্পর মুখোমুখী হলো। কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা এক হাজার। অস্ত্রশস্ত্র বেশুমার। মুসলিমদের সংখ্যা নগণ্য। অস্ত্রশস্ত্র তেমন কিছু নেই। কিন্তু তাঁরা ইমানের বলে বলীয়ান। তাদের আল্লাহর ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস ও ভরসা। তুমুল যুদ্ধ হলো। মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হলো।

বদর যুদ্ধে কুরাইশ নেতা আবু জাহেল, ওলীদ, উৎবা ও শায়বাসহ ৭০ জন মারা যায় এবং ৭০ জন বন্দি হয়। মুসলিম পক্ষে ১৪ জন শহিদ হন, কেউ বন্দি হন নি। রাসুল (স) মুসলিমগণ যুদ্ধ বন্দিদের সাথে উদার ও মানবিক আচরণ করেছিলেন। নিজেরা না খেয়ে বন্দিদের খাওয়াতেন। নিজেরা পায়ে হেঁটে বন্দিদের বাহনের ব্যবস্থা করতেন। বদি যুক্তির চমৎকার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিক্ষিত বন্দিদের মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ জন করে নিরক্ষর মুসলিম বালক-বালিকাদের শিক্ষিত করা। এটি শিক্ষাবিস্তারে রসুল (স)-এর প্রচেষ্টারই অংশ। এ যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। স্বল্পসংখ্যক মুসলিম বাহিনীর হাতে কাফেরদের বিরাট বাহিনী পরাজিত হয়। এতে কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়।

বদর যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের পরেও কাফেররা দমে গেল না। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণ চালাতে লাগল । এরমধ্যে ওহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ। এসব যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হলেও ওহুদ যুদ্ধে সামান্য ভুলের জন্য মুসলমানদের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ৭০ জন সাহাবা শাহাদত বরণ করেন। মহানবি (স)-এর পবিত্র দাঁত ভেঙে যায় ।

Content added By