পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আখলাক বা চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ | NCTB BOOK

মানুষের অধিকারকে মানবাধিকার বলা হয়। মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বৃদ্ধ-যুবক ও শিশু সবাই একসাথে বসবাস করে। আবার এদের মধ্যে অনেকে পঙ্গু, বিকলাঙ্গ ও ইয়াতীম। এরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকে। এসব মানুষের অধিকার রয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন। ভাষা, বর্ণ, বংশ ও অঞ্চলবিশেষে মানুষের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সবাই মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত । মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সকলেই সমান। সকলের সমান অধিকার রয়েছে। ইসলাম সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার দান করেছে।

ইসলামপূর্ব যুগে মানুষ বেচাকেনা হতো। তারা কেনা গোলামের ওপর নির্মম অত্যাচার করত। কেনা গোলামের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সে বেতনও পেত না। মালিকের খেয়াল-খুশিমতো তাকে চলতে হতো। মালিক তার ওপর নির্মম অত্যাচার করলেও সে কোনো প্রতিবাদ করতে পারত না। সব অত্যাচার সহ্য করতে হতো। এহেন কেনা গোলামের সাথে মহানবি (স) এবং সাহাবিগণ অত্যন্ত মধুর আচরণ করেছেন। হযরত বেলাল (রা) এবং আরও অনেক কেনা গোলামকে তাঁরা মুক্ত করে দিয়েছিলেন। হযরত যায়িদ (রা) ছিলেন হযরত খাদিজা (রা)-এর কেনা গোলাম। মহানবি (স) তাঁকে নিজ পুত্রের ন্যায় স্নেহ করতেন এবং তাঁকে সেনাপতির পদ দান করেছিলেন। এভাবে ইসলাম মানবাধিকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এটাই নৈতিক মূল্যবোধের অবিস্মরণীয় ইতিহাস ।

মানবাধিকার সম্পর্কে একটি আদর্শ কাহিনী

একদিন মহানবি (স) দেখলেন যে রাস্তার ওপর একটি বালক শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে। তার পরনে ছিল ছেঁড়া নোংরা জামা-কাপড়। মাথায় ছিল ভারী লাকড়ির বোঝা। তাকে দেখে মহানবি (স)-এর মনে দয়া হলো। তিনি বালকটিকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে বালকটির পিতা-মাতা নেই। সে রোজ জঙ্গল থেকে লাকড়ি কুড়িয়ে আনে। আর তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। বালকটির কষ্টের কাহিনী শুনে মহানবি (স)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি বালকটিকে আদর করলেন এবং তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসলেন। তিনি বালকটিকে হযরত খাদিজা (রা)-এর কাছে দিয়ে বললেন, ‘বালকটি ইয়াতীম, তুমি একে স্বীয় পুত্রের ন্যায় স্নেহযত্ন দিয়ে লালন-পালন করবে।' মহানবি (স) এভাবে বালকটিকে আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের আদর্শ স্থাপন করেছেন।

পৃথিবীর সকল মানুষের আদি পিতা হযরত আদম (আ) এবং মাতা হাওয়া (আ) । আমরা সকলে আদম (আ) এবং হাওয়া (আ)-এর সন্তান। অতএব, আমরা সকল মানুষ ভাই ভাই। মানব জাতি হযরত আদম (আ)-এর বংশধর। আস্তে আস্তে এই মানব জাতি পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং বসবাস করছে। এদের আকৃতি ও বর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। তবুও এরা ভাই ভাই। বিশ্বের সকল মানুষ ভাই ভাই। এরা সবাই আদম (আ) হতে সৃষ্ট।

আমরা বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ও কলহ-বিবাদ ভুলে যাব। বিশ্বের সবাই ভাই ভাই হিসেবে মিলেমিশে বসবাস করব। সকল দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করে বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হব। আর কোনো হিংসাবিদ্বেষ করব না। কারো কোনো অনিষ্ট করব না । একে অপরের উপকার করব।

মহানবি (স) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে আদম (আ) হতে,আর আদম (আ) মাটি হতে (সৃষ্ট)।’

আমরা বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়ব। মানবাধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করব। সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।

পরিকল্পিত কাজ : শিক্ষার্থীরা মানবাধিকার এবং বিশ্বভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা খাতায় সুন্দর করে লিখবে।

Content added || updated By